Published : 09 Feb 2017, 12:37 PM
রাজনীতি স্থির বিষয় নয়। এটি খরস্রোতা নদীর পানির মতো। খুব সূক্ষ্ম দৃষ্টি ছাড়া এই নদীর পানির নিত্য পরিবর্তন পর্যবেক্ষণ সম্ভব নয়। নির্দিষ্ট একটি সময় পরপর রাজনীতিতে পরিবর্তনের সীমারেখা আমরা হয়তো স্পষ্ট দেখতে পাই। কিন্তু পরিবর্তনটি ঘটে প্রতিটি মুহূর্তে, সময়ের প্রত্যেক বাঁকে বাঁকে।
যেমন ধরুন, আমরা ১৯৯১-১৯৯৬ সালের বিএনপির রাজনীতিকে দলটির ২০০১-২০০৬ সালের রাজনীতির সাপেক্ষে মূল্যায়ন করে একটি উপসংহারে উপনীত হতে পারি। উপসংহারটি এমন, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শাসনামলে বিএনপি জঙ্গিবান্ধব হয়ে ও0ঠে। এটিও বলা যায় যে, গত দেড় দশক ধরে জঙ্গি ম্যানুফ্যাকচারার জামায়াত-শিবির নামক সর্পটির বিষে বিএনপি নীলতর হয়ে উঠেছে।
কিন্তু বিএনপির হৃদয়ে ধর্মীয় উগ্রবাদীদের জন্য নির্ধারিত স্থানের উপস্থিতি ১৯৯১-১৯৯৬ সালেই ভালো করে দেখা গিয়েছিল। ধর্মীয় উগ্রবাদীরা খালেদা জিয়ার প্রথম সরকারের সময়েই রাজপথ কাঁপায়। ভারতবিরোধী রাজনীতি ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর দুই বছরব্যাপী সাম্প্রদায়িক হামলার মধ্য দিয়ে বিএনপির রাজনীতির নিউক্লিয়াসটি আবারও পরীক্ষিত হয়। সেই সময় বিএনপির ছাত্র সংগঠনের নেতৃত্বেই শত শত ধর্মীয় মন্দির ভাঙচুর করা হয়। তবে বিএনপির রাজনীতির নিউক্লিয়াস ও ধর্মীয় উগ্রবাদী গোষ্ঠীর কর্মকাণ্ডের নিউক্লিয়াসের ভিতরে একই ধরনের বিভাজক বিদ্যমান তা পরিষ্কারভাবে বুঝার জন্য সাধারণ জনগণকে ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে।
আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রেও এমন একটি উদাহরণ দেওয়া যায়। তারা ১৯৬৪ সালের ধর্মীয় সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে মিছিল মিটিং করেছিল। সেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদেরকে রাজাকার ও একাত্তরের ঘাতক দেলোয়ার হোসেন সাঈদীর রায়-উত্তর সারা বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপর সিস্টেমেটিক হামলার সময় নীরব থাকতে দেখা যায়। সেই সময়ের খবরের কাগজগুলি খুলে দেখুন, একজন সংসদ সদস্য কিংবা নেতাকেও পাবেন না যারা ধর্মব্যবসায়ী জামায়াত-শিবিরের জঙ্গিপনা মোকাবেলা করার জন্য জনগণকে নিয়ে মাঠে ছিল। ফলে আওয়ামী লীগের আদর্শের অবস্থানগত অশ্বীকরণ প্রতিদিনই ঘটছে, সেটি সাদা চোখে নির্ধারণ করা দুরুহ। নির্ধারণ করতে গেলে প্রয়োজন প্রায়োগিক প্যারামিটারের সাহায্যে দলটির কর্মসূচী ও প্রতিক্রিয়ার নির্মোহ বিশ্লেষণ।
আওয়ামী লীগের এই বিপরীতমুখী রাজনৈতিক আচরণ হঠাৎ করে হয়নি। ১৯৭৫ সালের পর থেকেই দলটির ভিতরে সেই পরিবর্তনের বীজ স্থান করে নেয়। মাঠের বাস্তবতা সামনে রেখে সেই পরিবর্তন দলটি মেনে নেয়। বাস্তবতা হল, রাজনীতি নামক খরস্রোতা নদীর পানির রঙ কেমন হবে সেটি নির্ভর করে নদীর তলদেশের মাটির চাহিদার উপর।
রাজনীতি নামক সেই খরস্রোতা নদীর পানির রঙ পরিবর্তনের প্রতিটি সময় বর্ণচোরারা পানির রঙের সঙ্গে মিশে যায়। বিশেষ করে যে রাজনীতির আদর্শটি দেশ পরিচালনার দায়িত্বে থাকে সেই রাজনীতির সঙ্গে। এই মিশে যাওয়া সম্প্রদায়টি মূলত দূষণকারী, এরা রাজনীতির খরস্রোতা নদীর রঙ নষ্ট করে ফেলে। রাজনীতিতে এই সম্প্রদায়টি আকারে যত বড় এবং প্রভাবশালী হয়, আদর্শ ততই দূষিত হয়।
আওয়ামী লীগ না চাইলেও এমনি একটি দূষণ প্রক্রিয়ায় মধ্য দিয়ে বর্তমানে রাজনীতি করতে হচ্ছে। দলটি একাধারে দুই টার্ম ক্ষমতায়। বাংলাদেশের সংসদীয় গণতন্ত্রের নির্বাচনের ইতিহাসে একাধারে দুই টার্ম ক্ষমতায় থাকার ঘটনা এটি প্রথম।
দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক দলগুলির সাংগঠনিক সক্ষমতা, আদর্শিক এজেন্ডা এবং পরিবর্তনশীল বিশ্বের প্রত্যাশার সঙ্গে দলগুলির সেই আদর্শিক এজেন্ডার সামঞ্জস্যতার প্রশ্ন, আঞ্চলিক ও ভূরাজনীতির নতুন প্রয়োজনের সাপেক্ষে আওয়ামী লীগের ক্ষমতাকেন্দ্রিক অবস্থান একটি নতুন বাস্তবতা। এ অবস্থায় দলের নানান ফাঁকফোকর দিয়ে দলের আদর্শে বিশ্বাসী নয় এমন বহু নীরব ঘাতক দলটিতে স্থান করে নিচ্ছে।
আওয়ামী লীগের ক্ষমতাকেন্দ্রিক বাস্তবতার সঙ্গে আরও দুটি বড় ধরনের ফ্যাক্টর এই নীরব ঘাতক সম্প্রদায়কে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে অনুপ্রবেশ করতে অনুপ্রাণিত করছে। প্রথমটি হল, আদর্শিক কাঠামোতে বায়োজলিক্যাল রোগে আক্রান্ত বিএনপির সাংগঠনিক কর্মতৎপরতা নেই বললেই চলে। দলটির পুষ্টিহীনতা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আগামীর স্বপ্ন দেখাতে পারছে না। একই সঙ্গে, জঙ্গি ম্যানুফ্যাকচারার জামায়াত-শিবিরের উপর বর্তমান সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে দলটির নেতাকর্মীদের একটি অংশ নানান মুখোশ পরে আওয়ামী লীগে ভিড় করার চেষ্টা করছে এবং অনেক ক্ষেত্রে সফলও হয়েছে।
বর্তমান বাস্তবতায় আওয়ামী লীগ একটি নিরাপদ অবস্থানে রয়েছে কথাটি সত্য; তবে দলটির নানান স্তরে সেই রঙ দূষণকারী উপাদানের উপস্থিতি দলটির ভবিষ্যতের জন্য হুমকি হিসেবে দেখা দেওয়ার জোর সম্ভাবনা রয়েছে। এই দূষণকারীদের সংখ্যা দলে যত বেশি বাড়বে, দলটির রাজনৈতিক আচরণের মিউটেশনটি তত বেশি স্পষ্ট হবে। নির্মোহভাবে বলতে গেলে, দলটি এখন কিছুটা হলেও দূষণকারীদের চ্যালেঞ্জের প্রারম্ভিক পর্যায়ে রয়েছে। দলটির আদর্শিক কর্মসূচি কিছুটা হলেও এড়িয়ে চলার আত্নঘাতী প্রবণতা কিংবা যা করা দরকার তা না করার প্রবণতা প্রায়শই প্রতীয়মান হয়।
এ অবস্থায় আওয়ামী লীগের রাজনীতি তিন ধরনের সম্প্রদায়ের দ্বারা আগামীতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। সম্প্রদায় তিনটি হল: অনুপ্রবেশকারী, হাইব্রিড ও সেলফিবাজ।
অনুপ্রবেশকারীর ইংরেজি পরিভাষা হল, infiltrator– যারা নিজেদের মৌলিক উদ্দেশ্য গোপন রেখে অন্য একটি দলে প্রবেশ করে দলের তথ্য সংগ্রহ করে অথবা দলের রাজনীতি নিজেদের আদর্শিক পন্থায় প্রভাবিত করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখে তারাই অনুপ্রবেশকারী। বর্তমান রাজনৈতিক নব্য বাস্তবতায় ভিন্ন দলের অগণিত নেতাকর্মী আওয়ামী লীগে সুযোগ পেলেই স্থান করে নিচ্ছে– যাদের রাজনৈতিক আদর্শ আওয়ামী লীগের আদর্শের একেবারেই পরিপন্থী।
অনুপ্রবেশকারীর সংজ্ঞা অনুযায়ী আওয়ামী লীগে এই আগন্তুকেরাই অনুপ্রবেশকারী। এটি রাজনীতি করার বিষয় নয়, রক্তের বিষয়। রক্তে আওয়ামী লীগের লোহিত রক্ত কণিকা না থাকলে উদ্বুদ্ধ হওয়া যায় না। আওয়ামী লীগের রাজনীতি একটি কালচারের বিষয়। দীর্ঘ সময়ের চর্চা ছাড়া বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক হওয়া যায় না। ফলে সকাল বিকাল যারা অন্যান্য দল থেকে আওয়ামী লীগে যোগদান করছেন কিংবা সমর্থক বলে মার্কেটিং করছেন, তারা কোনো মানদণ্ডেই আওয়ামী লীগের রাজনীতি হৃদয়ে ধারণ করেন না।
৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে যে সকল অনুপ্রবেশকারী আওয়ামী লীগে প্রবেশ করেছে, মোটা দাগে তাদের অধিকাংশের উদ্দেশ্য ছিল দুটি। সরকারি দলে নাম রেজিস্টার করে টাকা পয়সা উপার্জন করা ও নিজেদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলায় প্রশাসনিক ও বিচার বিভাগীয় সুবিধা নেওয়া। অনুমানযোগ্য, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে অনুপ্রবেশকারীদের সংখ্যা নির্বাচনের পরের সময়ের তুলনায় অতি নগণ্য।
যারা ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পরে আওয়ামী লীগে যারা যোগদান করেছেন ও সমর্থক বলে প্রমাণে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন, ধারণাযোগ্য যে, তাদের প্রায় শতভাগই অনুপ্রবেশকারী। গণমাধ্যমের প্রকাশিত প্রতিবেদন ও সংবাদের উপর নির্ভর করে বলা যায়, এই স্লটে যে সকল অনুপ্রবেশকারী আওয়ামী লীগে যোগদান করেছে কিংবা আদর্শের সমর্থক বলে মুখে ফেনা তুলছেন তাদের অধিকাংশের উদ্দেশ্য টাকা পয়সা উপার্জন ও মামলা হামলা থেকে বাঁচা নয়।
তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য হল, আওয়ামী লীগ নামক সংগঠনটির আদর্শিক প্রোটিনগুলিতে দীর্ঘমেয়াদী একটি মিউটেশন ঘটানো। সময় ও সুযোগ বুঝে আওয়ামী লীগের ভিতরে থেকেই দলটি বিতর্কিত করা। এক কথায় বললে বলা যায়, দলটির ভিতরে থেকেই ধ্বংস করার প্রেক্ষাপট বিনির্মাণ করা। অনুমানযোগ্য যে, সেই 'উইদ-ইন' পদ্ধতিটি আওয়ামী লীগের বহু স্তরে ফলদায়ক হিসেবে ভালো কাজ করছে।
বর্তমানে অনুপ্রবেশকারীরা দুটি উৎস থেকে আওয়ামী লীগে বেশি প্রবেশ করছে। উৎস দুটি হল: জামায়াত-শিবির ও বিএনপির ভিতরে জামায়াত শিবিরের অংশটি। প্রসঙ্গত, আওয়ামী লীগের কথিত ওলামা লীগও অনুপ্রবেশকারীদের বৈশিষ্ট্য ধারণকারী। সোজাভাবে বলা যায়, ওলামা-লীগ জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির স্রেফ বর্ধিত একটি অংশ মাত্র।
যাহোক, আমরা খুব সহজেই সেই সকল অনুপ্রবেশকারীদের শনাক্ত করতে পারি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যদি সেই সকল অনুপ্রবেশকারীরা বিচরণ করে থাকেন, তাদের লুকায়িত লেজ খুব বেশি দিন লুকিয়ে রাখতে পারে না। এক সময় লেজ বের হয়ে যায়। একজন মানুষ সব সময় অভিনয় করতে পারে না, এটি অসম্ভব। সূক্ষ্মভাবে পর্যবেক্ষণ করলে একটি মানুষের আদর্শিক অবস্থান শনাক্ত করা খুব কঠিন বিষয় নয়। কে সুশীল, আর কে ক্যামেলিয়ন তা সহজেই বুঝা যায়।
ফেসবুকের কভার পিকে বঙ্গবন্ধুর ছবি ব্যবহার করে জামায়াত-শিবিরের সঙ্গে মোলাকাতে অনেকেই কোনো দোষ দেখেন না। আবার অনেকেই জামায়াত-শিবিরের চিহ্নিত পেইজগুলির কনটেন্ট শেয়ার করে ধর্মীয় উগ্রবাদ প্রসারে আওয়ামী লীগের আদর্শের ঘাটতি দেখছেন না। আবার ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মালাউন গালি দিয়ে, রাষ্ট্রের ধর্ম মেনে নিয়ে, কাদের মোল্লাদের ফাঁসিতে ইনিয়ে বিনিয়ে গোস্বা প্রকাশ করে কিংবা ১৫ ও ২১ আগস্টের ঘটনা ভুলে গিয়ে মিলেমিশে দেশগড়ার কথিত স্বপ্ন দেখা অনেকেই যৌক্তিক মনে করছেন। অনুমানযোগ্য, এদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগে নতুন যোগদানকারী, মানে অনুপ্রবেশকারী।
যারা দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত থাকার পরও উপরে উল্লিখিত মানসিকতা লালন-পালন করেন, নির্মোহ বিচার্যে তারাও অনুপ্রবেশকারী। কারণ এই ধরনের উগ্রমুখী আদর্শ আওয়ামী লীগের আদর্শের একেবারেই বিপরীত। এ অবস্থায় বলা যায়, তারাও আওয়ামী লীগের আদর্শের আদর্শ বিচ্যুতির বাইরে রয়েছেন।
হাইব্রিড সম্প্রদায় অনুপ্রবেশকারী সম্প্রদায়ের মতো ভয়ঙ্কর নয়। কারণ এরা অনুপ্রবেশকারীদের মতো নিজেদের আদর্শের কৌশলী জাল বিস্তারের জন্য দলে প্রবেশ করে না। এরা মূলত সমগোত্রীয় আদর্শের রাজনীতি থেকে উঠে আসে। হাইব্রিড নেতাকর্মীরা দলের অভ্যন্তরীন নেতৃত্ব তৈরির কাঠামোর সীমাবদ্ধতা পুঁজি করে উপরের স্তরের নেতাদের আশীর্বাদে ত্বরিত নেতৃত্বে চলে আসেন। অনেক ক্ষেত্রে দলের প্রয়োজনে হাইব্রিড নেতৃত্ব তৈরি করা হয়। হাইব্রিড নেতা তৈরির প্রসেসটি সাধারণত নির্বাচনের সময় জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।
এই হাইব্রিড সম্প্রদায় রাজনীতির স্বাভাবিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে আগ্রহী নয়। হাইব্রিড নেতাকর্মীরা সব সময় সমগোত্রীয় রাজনৈতিক দল থেকেই উঠে আসে, বিষয়টি তা নয়। রাজনীতির বাইরের থাকা সমগোত্রীয় আদর্শিক চিন্তার মানুষেরাও হঠাৎ দলের বড় নেতা হয়ে যান। মজার বিষয় হল, এরা দলে স্থান করে নিয়ে দলটির মূলধারার নেতাকর্মীদের এড়িয়ে চলেন এবং বড় বড় বাণী দিতে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন। দুঃখজনক হচ্ছে, দল যখন সঙ্কটে পড়ে, এই হাইব্রিড নেতাকর্মীদের খুঁজেও পাওয়া যায় না।
আওয়ামী লীগের ভিতর এমন একটি হাইব্রিড সম্প্রদায় বেশ প্রতিধ্বনিশীল। দলটির দুর্দিনে যে সকল নেতাকর্মী দলের পাশে নিবেদিতপ্রাণ হিসেবে ছিল, তাদের মুখে প্রায়ই শোনা যায় সেই সকল হাইব্রিড নেতাদের নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের কাহিনি। হাইব্রিডদের অনেকেই দলের কারণে প্রভাবশালী হয়ে দলের নেতাকর্মীদের কেবল এড়িয়ে চলার মধ্যেই সীমারেখা টানেন না, মামলা-হামলা পর্যন্ত চালিয়ে যান।
ডিজিটাল বাংলাদেশ দর্শনটি বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে আমূল ও অবিশ্বাস্য পরিবর্তন এনেছে। এখন বাংলাদেশের প্রত্যন্ত ভাটি অঞ্চলের গ্রামবাসীদের সঙ্গেও ভিডি কনফারেন্স করা যায়। এটি সত্যি অবিশ্বাস্য! দেড় দশক আগেও নেত্রকোনার মতো জেলা শহরে চারটি ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট লাইন ছিল। আমরা রাতে অফ-পিক সময়ে ষাট টাকা ঘণ্টা ব্যবহার করতাম। এখন গ্রামের সবজি বিক্রেতাও ভিডিও কলে প্রবাসে কথা বলেন।
এই ডিজিটাল বাংলাদেশ দর্শনটির প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের রাজনীতিতে সেলফি রাজনীতি নামক আরেকটি রাজনীতির সাইড-ডিশ স্থান করে নেয়। দলের কোনো সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে কোনো-না-কোনোভাবে কয়েকটি ছবি তুলতে পারলেই হল। ফেসবুকে ছবি পোস্ট করে ক্যাপশনে 'অমুক ভাইয়ের সাথে কিছুটা সময়' লিখে নিজের পদমর্যাদা বাড়ানোর ধান্দায় থাকে। এতে পরবর্তী সময়ে নিজের ওয়ালে যে কোনো স্যাম্পিলিংএ লাইকের সংখ্যা বেড়ে যায়। বড় নেতাদের সঙ্গে সম্পর্কের কারণে অনেকেই সমীহ করে কথা বলে। অনেকেই নাকি আবার নেতাদের সঙ্গে তোলা সেলফি কাজে লাগিয়ে মানুষের কাছ থেকে সেবা দেওয়ার নামে টাকা পয়সা নেয়। প্রবণতাটি সাধারণত প্রবাসে বেশি দেখা যায়।
খুব সম্ভবত বছর খানেক আগে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ছবির সঙ্গে নিজের ছবি এডিট করে ঢাকার দক্ষিণের কোনো এক যুবলীগ নেতা ধরা খেয়ে যান। তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতেও হয়েছিল। ফলে সেলফি বর্তমান রাজনীতিতে একটি বড় ফ্যাক্টর, বিশেষ করে তরুণদের মধ্যে। যারা সিনিয়র ও প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে সেলফি তুলে নিজেদের ব্যক্তিস্বার্থে অপব্যবহার করছে তারাই সেলফিবাজ নামে পরিচিত। আওয়ামী লীগ ও দলটির অঙ্গ সংগঠনের মধ্যে সেলফিবাজদের সংখ্যা বেড়েই চলছে। বাংলাদেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের সংখ্যা যত বাড়বে সেলফিবাজদের তোড়জোড় সমান্তরালভাবেই বাড়বে বলে আমার বিশ্বাস।
সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। বাংলাদেশের গন্তব্য কোথায় হবে এবং কোন ধরনের বাংলাদেশ হবে সেটির পূর্ণাঙ্গ চিত্রটি ২০১৯ সালেই পরিষ্কার হয়ে যাবে। সঙ্গে সঙ্গে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে অনুপ্রবেশকারী, হাইব্রিড ও সেলফিবাজদের ভূমিকা কী হবে না হবে সেটিও স্পষ্ট হয়ে উঠবে।