Published : 28 Aug 2022, 01:19 PM
মাঠ কি আছে? কেমন আছে? মাঠগুলো থাকবে তো? আমার মতো অনেকের মনেই হয়তো এই ধরনের একটা আশঙ্কা কাজ করছে। আশঙ্কাটা নিতান্তই অমূলক নয়। মাঠ আছে। কিন্তু সারাদেশে মাঠের মোট সংখ্যা কত? কেউ কি বলতে পারবেন? জানা মতে, এর সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কতগুলো মাঠ আছে– শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এ জাতীয় কোনো জরিপ করা হয়েছে বলেও আমার অন্তত জানা নেই। স্থানীয় প্রশাসন এ সম্পর্কিত তথ্য রাখলেও তা কতটা হালনাগাদ তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তবে প্রথম সারির জাতীয় দৈনিক পত্রিকাসমূহে প্রকাশিত তথ্য অনুসারে এটা সুস্পষ্ট যে, মাঠের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে। এই কমে যাওয়াটা কি ঠেকানো জরুরী?
আবার মাঠের প্রকৃতিগত পরিবর্তনও ঘটানো হচ্ছে যেমন, মাঠে মেলা আয়োজন করার জন্য পাকা স্থাপনা, টাওয়ার ও ঘর নির্মাণ করা, মাঠে জলাশয় খনন করা কিংবা মাঠের মধ্যে বনায়ন করা ইত্যাদি। সম্প্রতি এ ধরনের ঘটনাসমূহ নিশ্চয়ই প্রত্যেকেই আমরা জাতীয় গণমাধ্যমে লক্ষ্য করেছি। এগুলো প্রয়োজনীয় উদ্যোগ মনে হলেও এর বিপরীতে যা হচ্ছে সেটা কি পরিমাণ ক্ষতির মুখোমুখি আমাদেরকে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে– তা কি ভেবে দেখছি আমরা?
আইন থাকার পরও নদীগুলোর অবস্থা এবং প্রাণীদের হত্যা ও বিপন্নতা দেখে অনেকসময় মনে হয়– তারা যেন অসহায়ের মতো মানুষের অত্যাচার শুধু সহ্যই করে যায়। কিন্তু মাঠের ক্ষেত্রটা অবশ্য একটু ব্যতিক্রম, কারণ মাঠের মালিক আছে, অর্থাৎ নির্দিষ্ট মাঠের জায়গার নির্দিষ্ট মালিকানা কিংবা কর্তৃপক্ষ থাকাটাই স্বাভাবিক। সেই মালিক কিংবা কর্তৃপক্ষ ওইসব মাঠের ব্যবহার ও ভবিষ্যতের ব্যাপারে কী ধারণা পোষণ করেন? আমরা কি কখনো সেগুলো জানার চেষ্টা করেছি? তাই এ বিষয়টি নিয়ে বিস্তৃত গবেষণার প্রয়োজন আছে এবং তা খুবই জরুরী বলেই আমার কাছে মনে হয়।
সম্প্রতি ঢাকার বাইরের একজন প্রবীণ শিক্ষক কথা প্রসঙ্গে উদাহরণ হিসেবে মোবাইলকে বেছে নিয়ে বলছিলেন, “আমরা তরুণ প্রজন্মের হাতে অনেকটা অস্ত্রের মতো মোবাইল তুলে দিয়েছি, কিন্তু এই অস্ত্রের উপযুক্ত ব্যবহার তো আমরা তাদেরকে শেখাইনি।” কিশোর ও তরুণ প্রজন্মের সামনে প্রযুক্তির এখন অবাধ ও অবারিত মাঠ। সেই মাঠে কি তারা শুধু খেলবে? কি খেলবে? কতটুকু সময় সেখানে তারা খেলাধুলা করবে? নাকি পাশাপাশি বাস্তবের মাঠগুলোতেও তাদের খেলাধুলা করার প্রয়োজন আছে? শিশুরা তাদের বেড়ে ওঠার সময়কালে শুধুই কি ঘরোয়া গেমস আর নানান অনুষঙ্গে বিচরণ করবে, নাকি তাদের মুক্ত বাতাসে খেলাধুলা করার ও দেশিয় খেলায় উজ্জীবিত হয়ে ওঠারও প্রয়োজন আছে?
আমাদের দেশে বয়স্ক মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। দেশের সর্বশেষ জনশুমারি ও গৃহগণনা বলছে, দেশের মানুষের গড় আয়ু বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রবীণ মানুষের সংখ্যাও বাড়ছে। দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কম। অন্যদিকে প্রবীণ জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বেশি। জাতিসংঘের জনসংখ্যা উন্নয়ন তহবিলের প্রাক্কলন বলছে, ২০২৫–২৬ সালে প্রবীণের সংখ্যা হবে ২ কোটি। ২০৫০ সালে ওই সংখ্যা হবে সাড়ে ৪ কোটি, যা তখনকার জনসংখ্যার ২১ শতাংশ হবে। ফলে এই বয়স্ক মানুষদের মানসিক ও স্বাস্থ্যগত ভাবনা থেকে তাদের জন্য আলাদাভাবে হাঁটা-চলার জায়গা আদৌ কি রাখার প্রয়োজন আছে? এরকম অজস্র প্রশ্ন আমার মতো আশা করি অনেকের মনেই ঘোরাফেরা করে, কিন্তু মালিক কিংবা কর্তৃপক্ষের মনেও কি এ ধরনের প্রশ্ন আদৌ জন্ম নেয়?
যদি এ ধরনের প্রশ্ন জন্ম নিত, আর এ বিষয়ে সচেতনতা কিংবা ভবিষ্যত ও পরিবেশ আঙ্গিক বিবেচনায় কোনো সুষ্ঠু পরিকল্পনা যদি থাকত তাহলে হয়ত সাম্প্রতিক সময়ে মাঠ নিয়ে বিভিন্ন অপ্রত্যাশিত ঘটনা আমাদেরকে দেখতে কিংবা শুনতে হতো না। যে মাঠে খেলাধুলা বন্ধ রেখে মেলার প্রস্তুতি নেওয়া হয়, মেলার সময়ও মাসব্যাপী খেলাধুলা বন্ধ থাকে, যে মাঠে পাকা স্থাপনা করা হয় মেলা শেষ হলে সেই মাঠ কি আবার সহজেই স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়া যেতে পারে? প্রস্তুতির সময় থেকে শুরু করে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসতে যতটুকু সময় লাগে তাতে কি পরিমাণ কিশোর ও তরুণদের আচার-আচরণ পাল্টে যাচ্ছে, তারা সেই সময়ে খেলাধুলার পরিবর্তে কোন কাজে সময় ব্যয় করছে– সেটা কি আদৌ আমরা খুঁজে দেখেছি? তরুণ সমাজের আজকের মাদকাসক্তি ও নানা ধরনের অবক্ষয়ের কারণ যদি প্রকৃত পক্ষে উন্মোচন করতে হয়, তাহলে আমি বলব মাঠকে স্বাভাবিক রাখার পরিবর্তে ভিন্ন কাজে লাগানোটাও অন্যতম একটা কারণ। ফলে এদিকটাতে আমাদের সবারই গুরুত্ব দেওয়ার সময় এখন এসেছে।
গত বছরের (২০২১) অগাস্ট মাসের আরেকটা ঘটনা। নিশ্চয়ই সবার মনে আছে। নওগাঁর রানীনগর উপজেলার পাইলট সরকারি মডেল উচ্চবিদ্যালয়ের মাঠ। শেওলা আর কচুরিপানায় ভরপুর জায়গাটা দেখলেই মনে হবে একটি জলাশয়। অথচ করোনাকালের আগে খেলার আসরে মুখর থাকতো মাঠটি। এটি শুধু স্কুলের মাঠই নয়, গোটা সদরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খেলার মাঠ। জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত (১২ অগাস্ট, ২০২১) সংবাদ অনুসারে, “মাঠটির চারপাশে অপরিকল্পিতভাবে ঘরবাড়ি নির্মাণ এবং খাল দখলের কারণে আশপাশের পানি কোথাও যেতে পারে না। ফলে মাঠটিতে পানি জমে থাকে। শুকনা মৌসুমে মাটি ফেলে মাঠটি উঁচু করতে হবে। আর খাল অবমুক্ত করে পানি বের হওয়ার জায়গা করে দিতে হবে।”
স্থানীয় তরুণ সমাজ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের সাম্প্রতিক (১৮ অগাস্ট, ২০২২) অভিমত অনুসারে, এ বছরের শুরুর দিকে মাটি দিয়ে মাঠটি উঁচু করা হলেও মাঠটি তার স্বাভাবিক চেহারায় ফিরে আসতে আরও অনেকটা সময় লাগবে। এ বছরের শেষদিক থেকে খেলাধুলা শুরু করা যেতে পারে। অর্থাৎ এ থেকে এটা সুস্পষ্ট যে, একটা মাঠেরও স্বাভাবিক গতিপ্রবাহ থাকে অর্থাৎ বছরের পর বছর ধরে একটা মাঠ ও মাঠের পরিবেশ তৈরি হয়। প্রজন্মের পর প্রজন্ম সেই মাঠে খেলাধুলা, হাঁটাচলা, গল্প-আড্ডা, সাহিত্য চর্চা ইত্যাদি করে থাকে। এছাড়া খেলাধুলা সম্পর্কিত প্রতিযোগিতা আয়োজন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি ইত্যাদি সৃজনশীল ও জীবনমুখি কর্মকাণ্ডও পরিচালিত হয়ে থাকে। ফলে সত্যি সত্যিই যদি আমরা সুস্থ ও সুন্দর ভবিষ্যত প্রজন্ম গড়ে তুলতে চাই তাহলে মাঠকে মাঠের মতোই থাকতে দিতে হবে। মাঠের আশেপাশের কর্মকাণ্ডগুলোকেও তাই বিশেষভাবে পরিকল্পনার আওতার এনেই বাস্তবায়ন করতে হবে, যাতে মাঠের স্বাভাবিকতা কিংবা স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড কোনোভাবেই ব্যাহত না হয়।
অনেকে হয়তো মনে করেন মাঠ ফাঁকা জায়গা, সেখানে যা ইচ্ছে তাই করা যায়। আমরা ঐতিহ্যবাহী মাঠে কাঠের ব্যবসা হতে দেখেছি, দেখেছি কোরবানির পশুর হাট বসতে কিংবা ফলের আড়ত বসতে, শতবর্ষী মাঠে আশ্রয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগও আমরা উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি। এ ধরনের অসংখ্য ঘটনা প্রতিনিয়তই সারাদেশে ঘটছে। এ সকল কাজে প্রশাসন ও কর্তৃপক্ষের সংশ্লেষের বিষয়টিও আমরা গুরুত্ব সহকারে মিডিয়ায় উঠে আসতে দেখেছি, যা সত্যি সত্যিই অনাকাঙ্ক্ষিত। এর পরিবর্তন প্রয়োজন।
সম্প্রতি রাজধানীর কলাবাগানে তেঁতুলতলা মাঠ নিয়ে তুলকালাম কাণ্ড আমরা দেখেছি। সে ঘটনায় সরকারের সিদ্ধান্তে সারা দেশের খেলার মাঠ রক্ষায় গুরুত্ব তৈরি হয়। কিন্তু বিষয়টি প্রশাসনিকভাবে যতটা মনোযোগ পাওয়ার কথা, ততটা কি আদৌ পেয়েছে? যদি পেত তাহলে হয়তো প্রায়ই আমরা মাঠ দখলের খবর দেখতে পেতাম না। আশা ও বিশ্বাস করি, অচিরেই এই অবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তন হবে।
যে সকল এলাকায় পরিবর্তনের সূচনা হয়েছে, সে সকল উদ্যোগগুলোকেও আমরা আন্তরিকভাবে সাধুবাদ জানাই। যেমন চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে প্রশাসনের হস্তক্ষেপে মাঠ ভাগ হওয়া থেকে রক্ষা পেয়েছে। এছাড়া শিক্ষামন্ত্রী সম্প্রতি যে মন্তব্যটি করেছেন সেটিও প্রণিধানযোগ্য। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠে সামাজিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয়– যেকোনো অনুষ্ঠান আয়োজন প্রসঙ্গে মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী বলেছেন, “সবার কাছে আহ্বান করব, যদি এ ধরনের অনুষ্ঠান করা হয়, তাহলে যেন ছুটির দিনে করা হয় এবং ওই প্রাঙ্গণ নষ্ট বা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, তার নিশ্চয়তা বিধান করেই যেন করা হয়।”
প্রযুক্তির উৎকর্ষতার এই যুগে প্রযুক্তির সুষ্ঠু ব্যবহার অবশ্যই প্রয়োজন হবে। আর একই সাথে প্রয়োজন হবে শারিরীক ও মানসিক সুস্থতাও। বাংলাদেশের মনোরোগ চিকিৎসার জীবন্ত কিংবদন্তি; উপমহাদেশ খ্যাত মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. হেদায়েতুল ইসলামের সাথে ব্যক্তিগত আলাপচারিতার এক পর্যায়ে মাঠ বিষয়ে কথা হলে তিনি বলেন, “মাঠের উপযোগীতা বোঝে না এমন লোক কম আছে। মাঠের প্রয়োজনীয়তা আমরা সবাই উপলব্ধি করি কিন্তু বাস্তবতা হলো, আমাদের মতো এতো ছোট দেশে এতো লোকের জন্য স্থান সংকুলান করে মাঠ রাখা সম্ভব হচ্ছে না। তবুও বাস্তবতার আলোকে আমাদের পরিকল্পনা অনুসারে প্রত্যেক এলাকার জন্য নির্ধারিত কিছু খেলার জায়গা, বেড়ানোর জায়গা, হাঁটার জায়গা, বিশ্রামের জায়গা এবং নির্মল বাতাস খাওয়ার মতো পরিবেশ সৃষ্টি করা অত্যন্ত জরুরি বলেই আমি বিবেচনা করি। মানসিক এবং শারীরিক তথা সুস্বাস্থ্যের জন্য এটা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।” প্রসঙ্গত তিনি এ কথাও বলেন যে, বিদেশে যেমন ইংল্যান্ডের অনেক দেশে অনেক খোলা মাঠ ও পার্ক আছে।
ফলে এটা সুস্পষ্ট যে, মানুষের সুস্বাস্থ্যের জন্য মাঠের বিকল্প নেই। আর কোভিড-১৯ এর সবচেয়ে সংকটাপূর্ণ মুহূর্তে আমরা এটাও লক্ষ্য করেছি যে, অন্যান্য দিকের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে যত্ন নেওয়াটা কতটা জরুরী।
মাঠ কমে যাবার কারণে আমাদের অনেক ঐতিহ্যও আমরা হারিয়ে ফেলছি। অথচ এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও প্রশাসন উদ্যোগ নিলে এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশনা থাকলে দেশিয় ঐতিহ্য সুসংহতকরণে ও মাঠকেন্দ্রিক ঐতিহ্যসমূহকে ধারণ করে সেগুলোকে আরও বৈশিষ্ট্যপূর্ণ করে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে আমাদের তরুণ প্রজন্ম।
একটু উদাহরণ দিলে বিষয়টা অনেকটাই পরিষ্কার হবে। হারিয়ে যাচ্ছে অনেক এলাকার ঐতিহ্যবাহী গ্রামীণ সব খেলাধুলা। খেলা বলতেই আমরা এখন বুঝি ক্রিকেট, ফুটবল, হ্যান্ডবল, হকিসহ নানা আধুনিক খেলাধুলার কথা। এগুলোর ভিড়ে হাডুডু, গোল্লাছুট, কানামাছি, গাদল, বৌচি, কুতকুত, দাড়িয়াবান্ধা, ইচিংবিচিং, এলাটিং-বেলাটিং, রুমাল চুরি, লাঠিখেলা ও পাতাখেলাসহ বহু ঐহিত্যবাহী গ্রামীণ কৃষ্টি ও লোকজ ক্রীড়াঙ্গনের জনপ্রিয় খেলাগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। ফলে মাঠ শুধু থাকলেই চলবে না প্রযুক্তির মতোই মাঠেরও সুষ্ঠু ব্যবহার শেখাতে হবে, মাঠের সুষ্ঠু ব্যবহারের জন্য উপযুক্ত পদক্ষেপসমূহ নিয়মিতভাবে নিতে হবে।
আরেকটা বিষয় বলা প্রয়োজন, মাঠ শুধু জাতীয় পর্যায়ের খেলার জন্য থাকলে চলবে না। জাতীয় পর্যায়ে খেলার জন্য তৈরি হতে হলে আগে খেলতে হবে। বর্তমানে দেশের অনেক জায়গায় নতুন নতুন স্টেডিয়াম হচ্ছে। কিন্তু স্টেডিয়াম কি শিশু-কিশোর ও তরুণ সমাজের স্বাভাবিক ও সাধারণ খেলাধুলার চাহিদাকে পূরণ করতে পারবে? ফলে শিশু-কিশোর ও তরুণ সমাজ ইচ্ছে হলেই যাতে খেলতে যেতে পারে ওই ধরনের অবাধ ও সুষ্ঠু পরিবেশ থাকা প্রয়োজন। তা না হলে তাদের পরিপূর্ণ বিকাশ নিঃসন্দেহে বাধাগ্রস্থ হবে, ব্যাহত হবে।
তাই মাঠগুলোকে রক্ষার জন্য সবার আগে প্রয়োজন হবে দেশব্যাপী সকল মাঠসমূহের একটি পূর্ণাঙ্গ তালিকা তৈরি করা। শিক্ষা মন্ত্রণালয় আলাদাভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের মাঠগুলো নিয়েও একটি জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে। প্রযুক্তির ব্যবহার করেই আধুনিক উপায়ে এই কার্যক্রমটি পরিচালনা করা যেতে পারে। আর দেশব্যাপী পরিচালিত এই গবেষণা কর্মকাণ্ডের ওপর ভিত্তি করে সদূরপ্রসারী পরিকল্পনাসমূহের আওতায় নিয়মিত নানামুখি খেলাধুলা ও সুস্থ কর্মকাণ্ড পরিচালনা করার প্রয়োজন হবে। তরুণ প্রজন্মকে মাঠমুখি করতে নিতে হবে নানামুখি পরিকল্পনা যেমন, খেলাধুলার শিক্ষক রাখার বিষয়টি প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিশ্চিত করা, শিক্ষার্থীদের বাধ্যতামূলকভাবে খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করার বিষয়টিতে বিশেষ উৎসাহ প্রদান করা ইত্যাদি।
এছাড়া মাঠগুলোর প্রকৃতি যাতে কোনোভাবেই পরিবর্তন না হতে পারে সেদিকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে। যে মাঠগুলো অবৈধভাবে দখল হয়ে আছে সেগুলোকেও দ্রুত দখলমুক্ত করাটাও জরুরী হবে।
সার্বিকভাবে মাঠ সুরক্ষার লক্ষ্যে জাতীয় একটি কর্মসূচির আওতায় যদি আমরা এ সকল প্রয়োজনীয় কর্মকাণ্ডসমূহ পরিচালনা করতে পারি, তাহলে মাঠ থাকার সুফলটাও আমরা সত্যি সত্যিই ভোগ করতে পারব।
পরিশেষে, প্রযুক্তির এই উৎকর্ষতার যুগে যত লোভনীয় সময় কাটানোর উপাদানই থাকুক না কেন, বাস্তবতা বিবেচনায় রেখে প্রত্যেক এলাকার জন্যই আমাদেরকে মাঠ নির্দিষ্ট করতে হবে, মাঠের জন্য জায়গা রাখতে হবে। তাহলে কিশোর ও তরুণ প্রজন্ম যেভাবে মাদক ও অবক্ষয়ের দিকে ধাবিত হচ্ছে, তা থেকে তাদেরকে বিরত রাখার কাজটা অনেকখানিই সহজ হবে। সহজ হবে মানসিক, শারিরীক সবভাবে মানুষের সুস্থতা নিশ্চিত করাটাও। একই সাথে সুন্দর ও নির্মল পরিবেশ রচনার পথটাও সুগম হবে। আমরা গুরুত্ব দিয়ে করণীয় ঠিক করব এবং সেদিকেই অগ্রসর হবো– সেটাই সবার একান্ত প্রত্যাশা থাকবে।