অর্থ Money টাকা!

টাকা বা মুদ্রা কিংবা এম-ওয়ান অর্থব্যবস্থার একটি অতি ক্ষুদ্র অংশ মাত্র। অর্থব্যবস্থা যদি নিমজ্জিত হিমশৈল হয়, তবে টাকা, মুদ্রা বা এম-ওয়ান হবে এর শীর্ষদেশ।

শিশির ভট্টাচার্য্যশিশির ভট্টাচার্য্য
Published : 4 Nov 2022, 08:57 AM
Updated : 4 Nov 2022, 08:57 AM

আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামে। প্রমিত বাংলা উপভাষার ‘মানে’ শব্দটি আমাদের সীতাকুণ্ড-মিরেরসরাই এলাকার উপভাষায় ‘মানি’, যার উচ্চারণ অনেকটা টাকার ইংরেজি প্রতিশব্দের মতো। শৈশবে মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে প্রমিত বাংলা শব্দের অর্থ মুখস্ত করতাম: ‘অর্থ অর্থ টাকা’ কিংবা ‘অর্থ মানি টাকা’। ইংরেজি ‘মানি’ মানে যে ‘টাকা’ তখনও শেখা হয়ে উঠেনি।

‘অর্থ’ মানি কি আসলেই টাকা? বাংলায় ‘অর্থ’, ‘টাকা’, ‘মুদ্রা’ ইত্যাদি পরস্পরের প্রতিশব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হয় বটে, কিন্তু শব্দগুলো সবক্ষেত্রে সমার্থক নয়। ‘টঙ্ক’ শব্দ থেকে ‘টাকা’ শব্দের উদ্ভব হয়েছে বলে দাবি করা হয়ে থাকে। ‘টঙ্ক’ শব্দের অর্থ রৌপ্য মুদ্রা। সেদিক থেকে দেখলে বাংলা ‘টাকা’ এবং হিন্দি/উর্দু ‘রূপি’ সমার্থক। ইবনে বতুতা (১৩০৪-১৩৬৯) তার ভ্রমণকাহিনীতে বলেছেন, বঙ্গ অঞ্চলে ‘অর্থ’ বোঝাতে ‘দিনার’-এর পরিবর্তে ‘টাকা’ শব্দ ব্যবহৃত হতো।

অর্থশাস্ত্রে ‘অর্থ’ এবং মুদ্রার মধ্যে পার্থক্য করা হয়। ইংরেজিতে বললে, ‘মানি’ এবং ‘কারেন্সি’ এক কথা নয়। ইংরেজি ‘মানি’ শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ হতে পারে ‘অর্থ’। কারেন্সি শব্দের বাংলা প্রতিশব্দ ‘টাকা’ বা ‘মুদ্রা’। কাগজের টাকাকে ইংরেজিতে ‘নোট’ বা (আমেরিকায়) ‘বিল’ এবং ‘মুদ্রা’-কে ‘কয়েন’ বলা হয়। নোট আর মুদ্রা মিলিয়ে ‘কারেন্সি’, বাংলায় বলা যেতে পারে: ‘টাকাপয়সা’।

‘মানি’ শব্দটা রোমান দেবী জুনোর ডাক নাম ‘মনেতা’ থেকে এসেছে বলে ধারণা করা হয়। এই দেবীর মন্দিরে বা মন্দিরের আশেপাশে নাকি মুদ্রা ‘মিন্ট’ বা ‘মুদ্রিত’ হতো। ‘কারেন্সি’ শব্দটা এসেছে ল্যাটিনমূল ফরাসি ক্রিয়া, Courir থেকে, যার অর্থ ‘দৌড়ানো’। একই ক্রিয়া থেকে ‘কুরিয়ার’ (সার্ভিস), কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘কোর্স’। কাগজের ‘টাকা’ এবং ধাতব ‘মুদ্রা’ উভয়কেই অবশ্য ‘মুদ্রা’ বলা হয় বাংলায়। সেদিক থেকে ‘কারেন্সি’-র বাংলা প্রতিশব্দ ‘মুদ্রা’।

আশা করি বাংলা ‘অর্থ’, ‘টাকা’ এবং ‘মুদ্রা’ এবং ইংরেজি ‘মানি’, ‘কারেন্সি’ এবং ‘কয়েন’-এর পার্থক্য মোটামুটি বোঝা গেছে। এর বাইরেও অর্থের প্রকারভেদ রয়েছে। যে টাকা বাজারে চলে, কারেন্সি বা মুদ্রা, তাকে বলা হয় M-১ (এম ওয়ান)। যে টাকা ব্যাংকে জমা থাকে, তাকে বলা হয় M-২ (এম টু)। যে টাকা ব্যাংক খদ্দেরকে ঋণ দেয়, তাকে বলা হয় M-৩ (এম থ্রি)। ধরা যাক, ব্যাংক আপনাকে এক কোটি টাকা ঋণ দিল। এই টাকা ব্যাংক আপনার হাতে তুলে দেবে না। টাকাটা ব্যাংকেই থাকবে। বাস্তবে এই অর্থ হাতে নেবার বা অনেকগুলো স্যুটকেসে ভরে বাড়ি নিয়ে যাবার প্রয়োজন নাও হতে পারে। চেক বা ডেবিট/ক্রেডিট কার্ড দিয়ে এই অর্থ আপনি তুলতে বা খরচ করতে পারেন। এম-টু ও এম-থ্রি এর কোনো মূর্ত প্রকাশ নেই, শুধু সংখ্যা আছে। চেক লিখে কিছু অর্থ যখন তুলবেন, তখন দুই ভাবে সেটা আপনি পেতে পারেন: কাগজের (বা কানাডায় প্লাস্টিকের) ফালি, যাকে আমরা বলি ‘টাকা’, কিংবা (সাধারণত গোলাকার) ধাতব চাকতি যার নাম ‘মুদ্রা’। ডেবিট বা ক্রেডিড কার্ড দিয়ে এটিএম মেশিন থেকে আপনি এম ওয়ান বা শুধু কাগজ-প্ল্যাস্টিকের ফালিই আপনি তুলতে পারেন।

মানুষ যদি শেয়ার মার্কেটে টাকা বিনিয়োগ করে, তবে বাজারে এম-টু কমে যায়। সরকার প্রদেয় সুদের হার বাড়িয়ে দেয়, যাতে লোকজন ঋণ কম নেয়। ঋণ কম নিলে এম-থ্রি কমে যায়। সেই অংশ যদি কমে, তবে দৃশ্যমান অংশ এম-ওয়ানও কমে। বাজারে এম-ওয়ান এবং এম-টু এর পরিমাণ কমানোর জন্য সরকারগুলো বন্ড বা সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে। যারা শেয়ার কেনার ঝুঁকি নিতে চায় না, তারা সঞ্চয়পত্র কিনতে পারে। শেয়ারের ব্যবসা করে রাতারাতি বড়লোক হওয়া অসম্ভব নয়, তবে তাতে ঝুঁকিও রয়েছে। সেদিক থেকে বন্ড বা সঞ্চয়পত্রে টাকা খাটানো অপেক্ষাকৃত নিরাপদ। সরকার, ধরা যাক, বন্ড বা সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগকারীকে বছরে ১০% টাকা সুদ (বা লাভ) দেয়, মূলধন ৫ বছরের জন্য বিনিয়োগ করলে।

মাঝে মাঝেই মাটি খুঁড়ে প্রাচীন যুগের মুদ্রা পাওয়া যায়। এই মুদ্রা ওই যুগের অর্থব্যবস্থার সম্পূর্ণ প্রতিনিধিত্ব করে ভাবলে ভুল ভাবা হবে। মুদ্রা অর্থব্যবস্থার অতি ক্ষুদ্র একটি অংশমাত্র এবং সেটা যেকোনো যুগে। পাথর, পুঁতি, রৌপ্য, স্বর্ণ, কাগজ ইত্যাদি যখন বিনিময়ের মাধ্যম ছিল, তখন সেগুলোও হিমশৈলের দৃশ্যমান অংশ মাত্র ছিল। মানুষ যে পরিমাণ লেনদেন করে, তার একটি অতি ক্ষুদ্র অংশ বিনিময়ের মাধ্যম, টাকা বা মুদ্রায় প্রকাশিত হয়।

ইতিহাসে এর প্রমাণ আছে। মধ্যযুগে লন্ডনে ওয়েস্ট মিনিস্টার ভবনের আশেপাশে টেমস নদীর তীরে উইলো গাছ প্রচুর জন্মাত। এই গাছের কাটা ডালকে বলা হতো ‘ট্যালি’। এই সব ‘ট্যালি’ ব্যবহার করা হতো হিসাব লেখার জন্যে। কোনো আমলাকে দেওয়া ঘুসের হিসাবও লেখা থাকত ট্যালিতে, ধরা যাক: ‘রাজার সুনাম খাতে ২০ পাউন্ড’। হিসাবের ট্যালিগুলো ছিল যেন হিসাব খাতার একেকটি পাতা। বাংলাদেশের পাটশিল্পে কিছুদিন আগেও ‘ট্যালিক্লার্ক’ নামে একটি পদ ছিল।

ডালের যে দিকটা গাছের সঙ্গে লাগানো থাকে, যে দিকটা একটু মোটামতো হয়, তাকে বলা হতো ‘স্টক’। এ থেকে আমরা পেয়েছি যৌথমূলধন কোম্পানির ‘স্টক’ শব্দটা। অপেক্ষাকৃত চিকন দিকটা, যেদিকে পাতা জন্মায়, তার নাম ছিল ‘ফয়েল’। ‘ফয়েল’ কথাটার অর্থ ‘পাতা’। ডাবল এন্ট্রি বুক কিপিং ব্যবস্থা অনুসারে পাওনাদারের (ক্রেডিটর) বিবরণ লেখা হতো স্টকের দিকে এবং দেনাদারের (ডেবিটর) বিবরণ লেখা হতো ফয়েলের দিকে।

মধ্যযুগের ইংল্যান্ডে বিভিন্ন মুদ্রা অবশ্যই ব্যবহৃত হতো। কিন্তু যে পরিমাণ অর্থের লেনদেন হয়েছিল, মুদ্রাগুলো তার অতি ক্ষুদ্র একটি অংশ মাত্র। এর বাইরে যে হাজার হাজার লেনদেন, সেগুলো লেখা ছিল ট্যালিগুলোতে। পুনর্জাগরণের যুগেও যে পরিমাণ স্বর্ণমুদ্রা বাজারে চালু ছিল, তার শতগুণ, হাজারগুণ লেনদেন হতো সমাজে। বর্তমানেও যত টাকা বাজারে আছে, তা মোট অর্থের অতি সামান্য একটি অংশ মাত্র। ২০২১ সালে সারা পৃথিবীতে ইউরো-ডলার-রুবল-টাকা মিলিয়ে ৪০ ট্রিলিয়ল নগদ টাকা ছিল, ২০২২ সালে মার্কির সরকারের মুদ্রিত ডলারের পরিমাণ ছিল ১৮ কোয়াড্রিলিয়ন। আসল টাকার পরিমাণ ছিল এর বহুগুণ বেশি, কয়েক শ কোয়াড্রিলিয়ন হবে।

টাকা বা মুদ্রা কিংবা এম-ওয়ান অর্থব্যবস্থার একটি অতি ক্ষুদ্র অংশ মাত্র। অর্থব্যবস্থা যদি নিমজ্জিত হিমশৈল হয়, তবে টাকা, মুদ্রা বা এম-ওয়ান হবে এর শীর্ষদেশ। এম-টু আর এম-থ্রি মিলে মুদ্রার বেশির ভাগ, হিমশৈলের ডুবন্ত অংশ। যখন থেকে বিনিময়ের মাধ্যম বা মুদ্রার প্রচলন হয়েছে পৃথিবীতে, তখন থেকেই এটা সত্য যে মুদ্রা কখনোই সম্পূর্ণ অর্থব্যবস্থার প্রতিনিধিত্ব করে না।

অর্থের কাজটা কী? উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের কোনো একটি অর্থনীতির বইয়ে একটি শ্লোক ছিল বলে মনে পড়ছে– ‘অর্থের চারিটি কাজ শোন দিয়া মন: বিনিময়ের মাধ্যম, মূল্যের একক, মূল্যের আধার, সঞ্চয়ের বাহন।’ রাম রহিমকে একটি গরু দিলে বিনিময়ে রহিমের পক্ষ থেকে রামকে একাধিক বাছুর বা মুরগি নয়, নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিলেই চলবে। গরুর মূল্য নির্ধারিত হবে নির্দিষ্ট সময়ে মূল্যের একক টাকায়। এভাবেই টাকা যুগপৎ মূল্যের একক এবং বিনিময়ের মাধ্যম।

টাকাকে এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় পাঠানো যায় এবং স্থান পরিবর্তন হলেও মূল্য একই থাকে। গরুর বিনিময়ে দেয় টাকা রহিম তৎক্ষণাৎ রামকে দিতে পারে কিংবা কয়েক দিন বা কয়েক সপ্তাহ পরেও দিতে পারে। যদিও কাল পরিবর্তনে সুদ জমে টাকার পরিমাণ বাড়তে পারে কিংবা মুদ্রাস্ফীতির কারণে কমে যেতে পারে টাকার মূল্য, আমরা ধরে নিতে পারি যে সুতরাং কাল পরিবর্তনেও মূল্য কমবেশি স্থির থাকে। এর মানে হচ্ছে, টাকা মূল্যের আধার কিংবা মূল্য টাকাতে সংহত থাকে। এ জন্যে টাকাকে ‘বিলম্বিত পরিশোধের মাধ্যম’ও বলা হয়।

রাম ওই টাকা দিয়ে তৎক্ষণাৎ একাধিক বাছুর কিনতে পারে কিংবা দূর বা অদূর ভবিষ্যতে ভোগের জন্যে জমিয়েও রাখতে পারে। এভাবে টাকা ‘সঞ্চয়ের বাহন’। রহিমের কাছ থেকে প্রাপ্ত টাকা জমিয়ে না রেখে রাম করিমকে টাকাটা ঋণ দিতে পারে। এ কারণে টাকাকে ‘ঋণের বাহন’ বা ‘ঋণের এককও’ বলা হয়। অবশ্য মূল্যের আধার বলেই টাকা সঞ্চয় ও ঋণের বাহন হিসেবে ব্যবহৃত হতে পারে।

সঞ্চয় বিনিয়োগের ভিত্তি। বিনিয়োগ কী? ব্যক্তি বা ব্যষ্টিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিনিয়োগ সম্পদ বৃদ্ধি করার উপায়। সেটা সম্পদ ক্রয় করার মাধ্যমে হতে পারে, আবার সম্পদ সৃষ্টিও করা যেতে পারে। সম্পদ কী? যা কিছুরই মূল্য আছে, তাই সম্পদ। সম্পদ থেকে আয় আসে এবং সম্পদের মূল্য বাড়ার মাধ্যমেও আয় হতে পারে। সম্পদের মূল্য, সম্পদ থেকে আয়, আয়বৃদ্ধি ইত্যাদি সবই মুদ্রায় প্রকাশিত হয়।

সম্পদ বিনিয়োগ করে নতুন কোনো উৎপাদনকর্মের সূচনা করা যায়। যেকোনো উৎপাদন প্রক্রিয়া শুরু করতে কমপক্ষে চারটি সত্তার প্রয়োজন হয়: ১. জমি, ২. শ্রম, ৩. মূলধন এবং ৪. সংগঠন। জমি ব্যবহারের বিনিময়ে দিতে হয় ‘খাজনা’, শ্রমের বিনিময়ে দিতে হয় ‘মজুরি’, মূলধনের জন্যে দিতে হয় ‘সুদ’ এবং সংগঠনের জন্য দিতে হয় ‘লাভ’। লাভ পরে দিলেও চলে, কিন্তু খাজনা, সুদ এবং মজুরি অনতিবিলম্বে, বিনিয়োগ থেকে আয় আসার আগেই দিতে হয়। লাভের আশায় উৎপাদনের প্রস্তুতিকালীন মজুরি, খাজনা, সুদ পরিশোধ করাকে এক কথায় বলা যেতে পারে ‘বিনিয়োগ’। সামষ্টিক অর্থনীতির দৃষ্টিকোণ থেকে বিনিয়োগ অর্থনীতির ভিত্তি। নিজের বা অপরের সঞ্চয় দিয়ে এইসব প্রাথমিক খরচ মেটানো হয় বলে সঞ্চয় আদিকাল থেকে বিনিয়োগের অন্যতম উৎস।

একাধারে (পণ্য ও সেবার) মূল্যের প্রতীক/বাহন, বিনিময়ের মাধ্যম, সঞ্চয়ের বাহন হিসেবে ব্যবহৃত হয় মুদ্রা। গত হাজার পাঁচেক বছরে মুদ্রা হয়ে উঠেছে অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। কিন্তু মুদ্রাকে অপরিহার্য মনে করা ঠিক হবে না, কারণ মুদ্রার অনুপস্থিতিতে দ্রব্যবিনিময় প্রথা দিয়ে বেশ কাজ চলতে পারে। যেমন চলেছিল চল্লিশের দশকে, আউসভিৎযের কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে, যেখানে হয়তো একটি হাতঘড়ির বিনিময়ে একটি কেক পাওয়া যেত। বিশ্বের বিভিন্ন কারাগারে এখনও কয়েদিদের মধ্যে বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে সিগারেট শলাকা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানিতে যখন হিটলারের আমলের টাকা বাতিল হয়ে গিয়েছিল, সিগারেট শলাকা বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছিল।

মুদ্রাহীন, ব্যাংকহীন জীবনও যে সম্ভব তারও প্রমাণ আছে। ১৯৭০ সালের মে থেকে নভেম্বর– সাত মাস আয়ারল্যান্ডে সব ব্যাংক বন্ধ ছিল কর্মচারী-ধর্মঘটের কারণে। খুব যে সমস্যা হয়েছিল তা কিন্তু নয়। বন্ধের আগে আগে নিজ নিজ একাউন্ট থেকে সব টাকা তুলে নিয়েছিল আমানতকারীরা, যার যার চেকবইও ছিল। ওই টাকা এবং চেকবইয়ের পাতা যখন ফুরিয়ে গেছে, মানুষ নিজেই তখন টাকা সৃষ্টি করেছে। এর নাম ‘আই-ও-ইউ’ যার মানে ‘আই ওও ইউ’ বা ‘আমি তোমার কাছে ধারি’। ‘আমি তোমার কাছে ২০০ পাউন্ড ধারি’ বা ‘তুমি আমার কাছে ২০০ পাউন্ড পাও’ লিখে তার নিচে ঠিকানা, ফোন নম্বর এবং স্বাক্ষর দেওয়া কাগজ পরিচিত জনের মধ্যে বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে গৃহীত হয়েছিল। নভেম্বর মাসে ব্যাংক খোলার পর ধীরে ধীরে সব হিসাব চুকানোর পর দেখা গিয়েছিল যে ওই ছয় মাসে আয়ারল্যান্ডের অর্থনীতির কোনো প্রকার ক্ষতি নয়, বরং ভালো রকম প্রবৃদ্ধি হয়েছিল।