Published : 01 Mar 2011, 12:07 AM
'তারা কোথায়?'
-এই অত্যন্ত সহজ প্রশ্নটি অনেককাল আগে ১৯৫০এর দশকে এক দুপুরে লাঞ্চ-টেবিলে তুলেছিলেন প্রখ্যাত পরমাণু-বিজ্ঞানী এনরিকো ফার্মি। 'তারা' বলতে তিনি বোঝাতে চাইছিলেন বহির্বিশ্বের বুদ্ধিমান প্রাণীকুল। তাঁর যুক্তি খুব সহজ- যদি আমাদের এই ছায়াপথে একশ বিলিয়ন তারা থাকে, তাহলে সূর্যের মতো একটি মাঝারি সাইজের তারাকে ঘিরে ঘূর্ণ্যমান গ্রহমন্ডলী থাকার কি কোনো সম্ভাবনাই নেই? সেই রকম উপযুক্ত গ্রহমন্ডলীতে পৃথিবীর মতো প্রাণোপযুক্ত পরিবেশধারী গ্রহের সংখ্যা কি এতোই নগণ্য? ভাবতে কষ্ট হয় যে, এই ছায়াপথের এই সুবিপুল নক্ষত্রপুঞ্জে আর কোথাও প্রাণের অস্তিত্ব নেই। বরঞ্চ এটাই স্বাভাবিক যে কোথাও-না-কোথাও প্রাণের বিকাশ ঘটেছে, সে যত সূক্ষ্ম ও নগণ্যই হোক না কেন। আমরা যদি এ কথা বিবেচনা করি যে পৃথিবীর বয়স চারশত ষাট কোটি বছর আর প্রাণের সবচেয়ে প্রাচীনতম ফসিল তিনশত আশি কোটি বছরের পুরনো। তাহলে পৃথিবীতে অনুকূল পরিবেশ পেয়ে (মোটামুটি দেড়শ কোটি বছরের মধ্যেই প্রথম এককোষী প্রাণীর আবির্ভাব ঘটেছে।) অর্থাৎ উপযুক্ত রাসায়নিক পরিবেশ পেলে প্রাণ সৃষ্টি হতে বেশি বেগ পেতে হয়না। তাই স্বভাবতই আশা করা যায় একশ বিলিয়ন তারার কোথাও না কোথাও অনুকূল পরিবেশ পেয়ে প্রাণ বিকশিত হয়েছে। অনেক বিজ্ঞানী অবশ্য আরো একটু আশাবাদী। তাঁরা মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন, শুধু প্রাথমিক এককোষী প্রাণীই নয়, আমাদের ছায়াপথে অবশ্যই অনেক বুদ্ধিমান প্রাণী বাস করে। আর তাই ফার্মি কৌতুকচ্ছলে প্রশ্ন করেছেন, সংখ্যা যদি এতোই বেশি হয়, সম্ভাবনা যদি অতোই বেশি হয়, তাহলে বহিবির্শ্বের বুদ্ধিমান প্রাণীরা কোথায়, তারা দেখা দিচ্ছে না কেন, রেডিও মেসেজই বা দিচ্ছে না কেন।
১৯৫৩ সালে স্ট্যানলি মিলার একটা কাঁেচর পাত্রে হাইড্রোজেন, মেথেন, নাইট্রোজেন, পানি-বাষ্প ইত্যাদি ভরে তার মধ্যে উপর্যুপরি বৈদ্যুতিক স্ফুলিঙ্গ চালনা করেন। মনে করা হয়, এই বিজারণ-আবহ বা বিজারক গ্যাসভর্তি পরিবেশ পৃথিবীর আদীম বাতাবরণের অনুরূপ ছিল। এক সপ্তাহ পর স্ট্যানলি দেখতে পেলেন যে এই গ্যাস-মিশ্্রণের বিক্রিয়ায় অ্যামিনো অ্যাসিড, নিউক্লিওটাইড ও অন্যান্য জৈব যৌগের সৃষ্টি হয়েছে। এই পরীক্ষা থেকে প্রাণের রাসায়নিক উৎপত্তি সংক্রান্ত ভাবনা-চিন্তা শুরু হয়। অনেকেই ভাবতে শুরু করলেন যে, যদি বিভিন্ন উপযুক্ত গ্যাসের সংমিশ্্রণ ঘটানো যায় এবং তার উপর উপযুক্ত প্রভাবক (পানি-বাষ্প ও বিদ্যুৎ স্ফুলিঙের অতি-বেগুনি রশ্মি) কাজ করে, তবে পর্যাপ্ত দীর্ঘকাল পর এই পরিবেশে প্রাণের উপযোগী সকল জটিল যৌগই তৈরি হতে পারে। তাহলে এই পরিবেশ যদি গ্রহান্তরের কোথাও থাকে, তাহলে সেখানে কি প্রাণের উদ্ভব হতে পারে না? নোবেল-জয়ী বিজ্ঞানী ক্রিস্টিয়ান ডি ডিউভ এ কারণেই উচ্ছ্বসিত উক্তি করেছেন, "প্রায় চার বিলিয়ন বছর পূর্বেকার পৃথিবীর অনুরূপ ভৌত শর্ত অন্য কোথাও থাকলে প্রাণের উদ্ভব অবশ্যম্ভাবী।" সেজন্যই ফার্মির উক্ত প্রশ্ন, তারা সব গেল কই?
কাছাকাছি সময়ে ১৯৫৯ সালে ফিলিপ মরিসন ও গিউসেপ্পি কোক্কোনি 'নেচার' প্রত্রিকায় একটি বিখ্যাত পেপার প্রকাশ করেন। এই পেপারে ওঁরা বহির্বিশ্বের বুদ্ধিমান প্রাণীদের সাথে যোগাযোগের সম্ভাব্য উপায় হিসাবে রেডিও যোগাযোগ স্থাপনের কথা বলেন। এই দুই ঘটনায় অনুপ্রাণিত হয়ে ফ্র্যাঙ্ক ড্রেক এবং তাঁর সহযোগীরা ১৯৬০ সালে ন্যাশনাল রেডিও অ্যাস্ট্রনমি অবজার্ভেটরিতে দুটি নিকটবর্তী নক্ষত্রের দিকে অ্যান্টেনা তাক করে রেডিও বার্তা শোনার চেষ্টা করেন। এই প্রকল্পের নাম ছিল 'ওজমা প্রজেক্ট'। সেই থেকে বহির্বিশ্বে প্রাণ সন্ধানের এই সকল কর্মকান্ডকে একত্রে 'সার্চ ফর একস্ট্রাটেরেস্ট্রিয়াল ইন্টেলিজেন্স' বা 'সেটি' বলা হয়। দূরান্তের বুদ্ধিদীপ্ত সংকেত শুনতে রেডিও সবচেয়ে উপযোগী যন্ত্র, কারণ একমাত্র রেডিও-তরঙ্গই লক্ষ আলোকবর্ষ-ব্যাপী ব্যাপ্ত আন্তঃনাক্ষত্রিক স্থানের গ্যাস ও ধূলিকণা দ্বারা প্রভাবিত হয় না। তার কারণ, এদের তরঙ্গদৈর্ঘ্য খুব বড় হয়, কিন্তু কম তরঙ্গদৈর্ঘ্যর তরঙ্গের বিক্ষেপ বেশি হয়। পরবর্তীতে নভোযান প্রযুক্তির উন্নতির সাথে সাথে রেডিও-তরঙ্গ ছাড়াও প্রত্যক্ষ পর্যবেক্ষণের সুযোগ সৃষ্টি হয়। এইসব নভোযান (ল্যান্ডার, অর্বিটার ইত্যাদি) অন্তত আমাদের সৌরজগতের অন্যান্য গ্রহ উপগ্রহ থেকে নমুনা সংগ্রহ ও উপাত্ত বিশ্লেষণে সক্ষম। কিন্তু এই মাধ্যমটি শুধুই আমাদের সৌরজগতেই সীমাবদ্ধ এবং এখনো আন্তঃনাক্ষত্রিক চরিত্র পেতে আরো সময় লাগবে। আমরা যদি নিজেরাই নিজেদের ধ্বংস করে না ফেলি তাহলে সুদুর ভবিষ্যতে কয়েক মিলিয়ন বছরের মধ্যে একশ আলোকবর্ষের মধ্যে অবস্থিত তারকাপুঞ্জের গ্রহগুলিতে আমরা আবাস বানাতে পারবো। তখন এই প্রত্যক্ষ পর্যবেক্ষণ আরো অর্থপূর্ণ হবে।
রেডিও-অ্যান্টেনা দিয়ে বিভিন্ন কম্পাঙ্কের চ্যানেলে পর্যবেক্ষণ চালানো হয়। বিশেষ করে এক দশমিক চার দুই গিগাহার্জ কম্পাঙ্কে (একুশ সেন্টিমিটার তরঙ্গদৈর্ঘ্য) রেডিও-তরঙ্গ প্রেরণ করা হয়, কারণ এটি হাইড্রোজেনের বর্ণালির নিঃসরণ রেখা নির্দেশ করে। যেহেতু হাইড্রোজেন মহাবিশ্বের সবচেয়ে প্রাচুর্যময় মৌল, তাই এই কম্পাঙ্কে বুদ্ধিমান বার্তা প্রেরণ করলে অপরাপর বুদ্ধিমান প্রাণী এই কম্পাঙ্কেই বেশি নজর দেবে বলে মনে হয় এবং তাহলে এই বার্তা তাদের নজর কাড়ার সম্ভাবনা বেশি। এই ফ্রিকোয়ন্সি ছাড়াও অন্যান্য কম্পাঙ্কেও রেডিও বার্তা প্রেরণ ও সন্ধান করা হয়। তবে এক থেকে তিন গিগাহার্জ ব্যান্ডটি বেশি পছন্দের। বেতার তরঙ্গ প্রেরণ করতে একটি রেডিও- অ্যান্টেনার শক্তির প্রয়োজন। যতো দূরে আমি তথ্য পাঠাতে চাইব, ততো বেশি শক্তি খরচ হবে আমার। বেতার-নিঃসরণের শক্তির উপর নির্ভর করে প্রযুক্তি-সভ্যতার একটা শ্রেণীবিন্যাস করা যায়। এই শ্রেণীকরণের পুরোধা ব্যক্তি ছিলেন রুশ জ্যোতির্বিদ নিকোলাই কার্দাশেভ এবং পরে কার্ল সেগান একে পরিমার্জনা করেন। এই বিন্যাস অনুযায়ী একটি টাইপ-ওয়ান প্রযুক্তির সভ্যতার বুদ্ধিমান প্রাণী তার গ্রহের উপর নিকটতম নক্ষত্র থেকে মোট যে পরিমাণ শক্তি এসে পড়ে, সেই পরিমাণ শক্তি রেডিও-অ্যান্টেনা দিয়ে ট্রান্সমিট করতে সক্ষম। এই কথার অর্থ হলো এই সভ্যতা সেই পর্যায়ে পৌঁছেছে যাতে সে তার গ্রহের উপর আপতিত পুরো শক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করতে শিখছে। পৃথিবীর জন্য ওই শক্তির পরিমাণ ১০১৬ ওয়াট। ১০১৬ ওয়াট শক্তি একটি বিপুল শক্তি, তুলনীয় পৃথিবীতে মোট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ১.৫১০১৩ ওয়াট (এনারডেটা, ২০১০)। পরবর্তী টাইপ-টু সভ্যতা তার পুরো নক্ষত্রকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। তাই সে ১০২৭ ওয়াট পরিমাণ শক্তি বিকিরণ করতে সক্ষম হবে। উচ্চতম শ্রেণীর টাইপ-থ্রি সভ্যতা ১০৩৮ ওয়াট শক্তি বেতারে প্রেরণ করতে পারবে। কারণ, এই পর্যায়ের সভ্যতা তার পুরো গ্যালাক্সিকেই নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হবে। এর মাঝামাঝি সভ্যতার মাপকাঠি লগারিদমের স্কেলে নির্ধারিত হয়। যেমন আমাদের সবচেয়ে শক্তিশালী আরেসিবো রেডিও-অ্যান্টোনাটির শক্তি আউটপুট বিবেচনা করে আমাদের সভ্যতার শ্রেণী শূন্য দশমিক সাত স্থির হয়েছে। যা-হোক, মনে করা হতো টাইপ-টু-বা থ্রি জাতীয় সুপার-সভ্যতা খুঁেজ পাওয়া দুষ্কর হবে না। তারা যদি নিজেদেরকে লুকিয়ে রাখতে চায়, সেক্ষেত্রে আমরা অন্তত তাদের হিট ডিসপোজাল বা অপচয়িত শক্তিকে অবলোহিত তরঙ্গে দেখতে পাবো। কেউ যদি শক্তি ব্যবহার করে তাহলে তাকে খরচ এবং অপচয় করতেই হবে। কাজেই তাপগতিবিদ্যা অনুযায়ী তাদের বর্জ্য শক্তির একটা চিহ্ন থাকর কথা। কিন্তু জাপানি গবেষকরা দেখিয়েছেন আশি আলোকবর্ষের মধ্যে এমন কোনো কিছুর চিহ্ন নেই। এই মুহূর্তে আমাদের জানা প্রযুক্তি ব্যবহার করে উপরিউক্ত পরিমাণ শক্তি মহাশূন্যের নিঃসীম শূন্যস্থানের অনন্ত দূরত্বে পাঠানো সম্ভব নয়। তাই বেতার-বার্তা প্রেরণের তুলনায় গ্রহণই অধিকতর যুক্তিযুক্ত। আমাদেও সভ্যতার অনুরূপ বা টাইপ-ওয়ানের কাছাকাছি অপরাপর সভ্যতার প্রেরিত রেডিও-সংকেত আজো আমরা নিশ্চিতভাবে পাইনি।
ফ্রাঙ্ক ড্রেক একটি সূত্র প্রস্তাব করেছিলেন যা দিয়ে যোগাযোগ করতে সক্ষম এমন গ্যালাকটিক সভ্যতার সংখ্যা নির্ণয় করা যায়। এই সূত্রে গ্যালাক্সিতে মোট তারার সংখ্যা, যেসব তারায় গ্রহের সম্ভাব্য সংখ্যা, সেইসব গ্রহে প্রাণের উদ্ভবের সম্ভবনা, উদ্ভূত প্রাণের দীর্ঘস্থায়ী সভ্যতা সৃষ্টির সম্ভাবনা এবং সেইসব সভ্যতার স্থায়িত্ব বা আয়ুষ্কাল কতখানি ইত্যাদি সবকিছু গুণন করে তবেই সম্ভাব্য গ্যালাকটিক সভ্যতার সংখ্যা নির্ণয় করা য়ায়। এই সূত্রকে সরলীকৃত করে দেখানো যায় যে, কোনো সময় এই ব্রহ্মা-ে কয়টি সভ্যতা বিরাজ করে তার সংখ্যা সভ্যতার উদ্ভবের হার ও তাদের আয়ুষ্কালের উপর নির্ভর করে। সমস্যা হলো, প্রতিটি সম্ভাবনার মান একেক বিজ্ঞানীর কাছে একেক রকম মনে হয়। সভ্যতার আয়ুষ্কালও নির্ভর করে সমাজবিজ্ঞান, অর্থনীতি, রাষ্ট্রনীতি, নৃতত্ত্ব, ধর্মশাস্ত্র ইত্যাদি জটিল বিষয়ের উপর। কাজেই গ্যালাকটিক সভ্যতার প্রকৃত সংখ্যা নির্ণয় বেশ কষ্টসাধ্য, বিষয়টি অত্যন্ত স্পেকুলেটিভ। যেমন ফ্র্যাঙ্ক ড্রেকের নিজের মতে এই সংখ্যা দশ হাজার। পল হরোউৎজের (হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয়) মতে প্রতি একহাজার আলোকবর্ষে একটি রেডিও-সক্ষম সভ্যতা বাস করে। তাহলে পুরো গ্যালাক্সিতেই সম্ভাব্য সভ্যতার সংখ্যা হয় প্রায় এক হাজার। এই সব বিতর্ক ফার্মির সেই পুরাতন সাদামাটা প্রশ্নটিকেই আরো উস্কে দিয়েছে। আজকাল ফার্মির প্রশ্নটিকে আর প্রশ্ন বলে না, বলে প্যারাডক্স বা কূটাভাস।
তাহলে আকাশে সেই প্রশ্ন করা যাক, 'তারা কোথায়?' দেখি না কেন তাদের? এর কয়েকটি সম্ভাব্য সমাধান আছেÑ
ক) আন্তঃনাক্ষত্রিক স্পেস ফ্লাইট সম্ভব নয়, তাই কোনো বুদ্ধিমান প্রাণীই আকাশ পাড়ি দিতে পারেনি। তাছাড়া আলোর ধ্রুব-গতির কারণে স্পেস-ট্র্যাভেল অত্যন্ত দীর্ঘমেয়াদী হয় এবং সম্ভবত সেই দীর্ঘ সময় ব্যাপী প্রাণীর জীবনধারণ সম্ভবপর হয় না।
খ) সম্ভবত বুদ্ধিমান প্রাণীরা সত্যিই অনুসন্ধান করছে, কিন্তু এদিক পানে এখনো এসে পৌঁছোননি।
গ) সম্ভবত স্পেসফ্লাইট সম্ভব, কিন্তু বুদ্ধিমান প্রাণীরা তা বাজে খরচ বলে মনে করেন।
ঘ) সম্ভবত বুদ্ধিমান প্রাণীরা নিজেদেরকে লুকিয়ে রাখতে চান। তারা জানেন যে আমরা আছি, কিন্তু আমাদের জানান না তাদের অস্তিত্ব।
ঙ) পৃথিবীর বাইরে আর কোনো বুদ্ধিমান সত্তার আস্তিত্ব নেই।
আধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কে আমরা যা জানি বা বুঝি, তার নিরিখে বলতে পারি যে প্রথমোক্ত কারণটি নিঃসন্দেহে খারিজ করা যায়। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির এমন কোনো মৌলিক বাধা নেই যা বলে যে স্পেস-ট্র্যাভেল অসম্ভব। সমস্যা হচ্ছে, প্রপালশন বা নভোযান চালনার বিদ্যাটি এখনো আমাদের তেমনটা করায়ত্ত হয়নি। অর্থাৎ প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা ছাড়া স্পেস-ট্র্যাভেলে তাত্ত্বিক কোনো বাধা নেই। দ্বিতীয় কারণটিও বাদ দেওয়া যায়। তার কারণ হলো যদি আমাদের ছায়াপথে সত্যিই কোনো বুদ্ধিমান সভ্যতা থেকে থাকে এবং তারা অত্যাধুনিক স্পেসফ্লাইটে সক্ষম হয়, তাহলে তাদের পক্ষে পুরো গ্যালাক্সি 'দখল' করতে বা কলোনাইজ করতে সর্বোচ্চ সময় লাগার কথা মাত্র পাঁচ কোটি বছর। শুনতে অভাবনীয় মনে হলেও এই সময়কাল পুরো গ্যালাক্সির জীবনকালের মাত্র শূন্য দশমিক শূন্য পাঁচ শতাংশ। তারপরও একটি বুদ্ধিমান সভ্যতার উপনিবেশ বানানোর পর্যায় যেতে সময় লাগে। সবচেয়ে আশাবাদী হিসাব অনুযায়ী এই সময়কাল পাঁচ হাজার বছর। কিন্তু এ বিষয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। মানবসভ্যতার বয়স দশ হাজার বছর হলেও আমরা কবে ঐ পর্যায়ে পৌঁছব সেটা অনিশ্চিত। উপরে (গ)ও (ঘ)-এ যে সম্ভাবনার কথা বলা হলো সেগুলি আসলে সভ্যতার সামাজিক বৈশিষ্ট্য, তাদের নৃতত্ত্ব, আচরণবিধি ইত্যাদির উপর নির্ভর করে। একটি সভ্যতা অনেক উন্নত হয়ে উঠল, কিন্তু তাদের নিজস্ব নৈতিকতা, নিজস্ব ভাবনা-চিন্তা তাদেরকে অন্যত্র অনুসন্ধানের বিপরীত অবস্থানে নিয়ে যেতে পারে। ফলে সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও তারা নিজেদেরকে সামাজিকভাবে গুটিয়ে রাখার সিন্ধান্ত নিতে পারে। অথবা উল্টোটাও ঘটতে পারে যেমন স্টিফেন হকিং বলেছেন। অতি অগ্রসর সভ্যতা অত্যন্ত আগ্রাসী হয়ে উঠতে পারে যেটা আমাদের মতো সভ্যতার জন্য ভয়ানক আকাল হয়ে দেখা দেবে। উদাহরণস্বরূপ তিনি উল্লেখ করেছেন, মধ্যযুগে স্পেনীয়রা যেভাবে আমেরিকা মহাদেশের তৎকালীন আজটেক সভ্যতাকে খতম করেছে ঠিক সেইরকমই আমাদের ক্ষেত্রেও ঘটতে পারে। সেই সময়ে স্পেনীয়রা গুটিবসন্তের বীজাণু আমেরিকার আদিবাসীদের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়।্ এই রোগের সাথে আতাহুয়ালপার (ইনকা রাজা) লোকজনের পরিচয় ছিল না। তাই শুধু অজানা রোগে ভুগেই বহু আদিবাসী মারা যায়। তাই বুলেটের চেয়েও ক্ষতিকর বিজাণু ভীষণ ধ্বংসাত্মক হতে পারে। এই পরিণতি যে আমাদের ক্ষেত্রে হবে না, তা কে বলতে পারে। উন্নত সভ্যতা যে বিশুদ্ধ কল্যাণকামী হবে তার গ্যারান্টি কোথায়? শেষতম যে যুক্তিটি ব্যবহৃত হয়েছে তা কিছু কিছু বিজ্ঞানীর অত্যন্ত প্রিয়। ২০০৩ সালে প্রকাশিত পিটার ওয়ার্ড ও ডোনাল্ড ব্রাউনলি তাদের 'রেয়ার আর্থ' বইয়ে এই কথাই বলেছেন। তাঁদের মতো অনেকেরই বক্তব্য এই যে, ব্রহ্মা-ের অন্যত্র প্রাণের উদ্ভব হলেও তা অণুজীব বা অত্যন্ত প্রাথমিক পর্যায়েই সীমাবদ্ধ রয়েছে। জটিল প্রাণসত্তা বলতে আমরা যা বুঝি তা সম্ভবত পৃথিবীতেই সীমাবদ্ধ। জটিল জীবন-ব্যবস্থার জন্য রাসায়নিক ও ভৌত শর্তাদি শুধু বিশেষ কিছু জায়গাতেই সীমাবদ্ধ। কেউ কেউ তাই বলছেন পৃথিবীর বাইরে সম্ভবত আর কোথাওই এইভাবে ঐসব শর্তপূরণ সম্ভব হয়নি। ব্র্যান্ডন কার্টার মন্তব্য করেছেন, "গ্যালাক্সি জুড়ে আমাদের গ্রহের অনুরূপ পরিবেশ অপ্রতুল না হলেও আমাদের মতো সভ্যতা খুবই অপ্রতুল হবার সম্ভবনাই বেশি।" তাই আপতত ফার্মির সেই প্যারাডক্সের কোনো সমাধান হবার সম্ভবনা দেখা যাচ্ছে না। মড়ার-উপর-খাড়ার-ঘা'র মতো আছে রেডিও যোগাযোগের সীমাবদ্ধতা Ñ মহাশূন্যে জ্যোতিষ্করা এতো দূরে অবস্থিত যে কোনো বুদ্ধিমান সংকেত পৃথিবীর আসতে বা পৃথিবী থেকে যেতে হাজার-কোটি বছর লেগে যাবে। তার উপর আছে রেডিও তরঙ্গের মহাজাগতিক প্রসারণ-জনিত রক্তিম-সরণ এবং মহাবিশ্বের ত্বরিত প্রসারণ।
এবার আসা যাক আরেকটি প্রসঙ্গে। আমরা সৌরজগতের বিভিন্ন কোনে বিভিন্ন রকম নভোযান পাঠিয়েছি। তারা বিভিন্ন গ্রহ-উপগ্রহ সম্পর্কে কী হদিস পাঠিয়েছে সেটা আমরা পর্যালোচনা করে দেখা উচিত। এ বিষয়ে একটি কৌতূহলোদ্দীপক বিষয় আমরা উল্লেখ করব। ১৯৯০ সালের ডিসেম্বর মাসে 'গ্যালিলেও' নভোযানটি পৃথিবীর পাশ দিয়ে উড়ে যায়। এই ঘটনাটি উল্লেখযোগ্য এ কারণে যে এই নভোযানটি পৃথিবীকে কীভাবে দেখেছে সেটা অন্য কোনো গ্রহ/উপগ্রহে প্রাণী আছে কি-না, থাকলে আমরা কী ধরনের সংকেত পেতে পারি Ñ সে সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ আভাস দিয়ে থাকে। বিদ্যুৎ-চুম্বক বর্ণালির বিভিন্ন অংশে 'গ্যালিলেও' নভোযানটি পৃথিবীকে পর্যবেক্ষণ করে। এখানে আমরা সেই পর্যবেক্ষণগুলো লিপিবদ্ধ করছিÑ
এক. শূন্য দশমিক সাত ছয় মাইক্রোমিটার তরঙ্গদৈর্ঘ্যে পৃথিবীর উজ্জ্বলতার প্রাবল্য আকস্মিক হ্রাস পায়। এই তরঙ্গদৈর্ঘ্য আণবিক অক্সিজেনের শোষণ রেখা নির্দেশ করে। এই শোষণের পরিমাণ অন্য যেকোনো গ্রহ থেকে অনেক বেশি। তার অর্থ এই যে, পৃথিবীর বাতাবরণে প্রচুর অক্সিজেন আছে। এটা আমরা সবাই জানি। পৃথিবীর ভূ-ত্বকে যে শিলাস্তরগুলো আছে তা অক্সিজেনের সাহায্যে জারিত হয়। এই জারণ-ক্রিয়ায় অক্সিজেন শোষিত হয়। এছাড়াও আরো কিছু প্রক্রিয়া আছে যাদেও সাহায্যে অক্সিজেন শোষিত হতে পারে। কিন্তু বাতাবরণে অক্সিজেনের এই বিপুল সম্ভারের জন্য চাই সবুজ-জীবন যা সালোক-সংশ্লেষণের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত অক্সিজেন সরবরাহ করছে।
দুই. পৃথিবীর মহাদেশগুলোর বর্ণালি রেখায় শূন্য দশমিক সাত মাইক্রোমিটার তরঙ্গদৈর্ঘ্যে একটি শক্তিশালী শোষণ-রেখা দেখা যায়। এটি সবুজ রঙের ক্লোরোফিল যাকে ব্যবহার করে দৃশ্যমান বর্ণালির আলোক-কণা বা ফোটন পানিকে ভেঙে আণবিক অক্সিজেন বিমুক্ত করে। এটাই সবুজ-জীবন; এরা সবুজ কেননা ক্লোরোফিল লাল ও নীল তরঙ্গ শোষণ কওে, কিন্তু সবুজ তরঙ্গ প্রতিফলন করে। ক্লোরোফিলের উপরোক্ত লাল-আলোর শোষণ-রেখাটি তাই একই সাথে অক্সিজেনের প্রাধান্য এবং 'সবুজ-জীবনের' প্রতিনিধিত্ব করে।
তিন. 'গ্যালিলেও' নভোযানের অবলোহিত স্পেক্ট্রোমিটারে অতিসামান্য (এক মিলিয়ন ভাগের এক ভাগ) মেথেনের আস্তিত্ব ধরা পড়ে। বাতাবরণে যে মেথেন থাকে তা অক্সিজেনের দ্বারা জারিত হয়ে পানি ও কার্বন-ডাই-অক্সাইড তৈরি করে। তাই সাধারণ অবস্থায় বায়ুমন্ডলে একটু ফোটাও মেথেন থাকার কথা নয়। কিন্তু তাহলে এরা আসছে কোত্থেকে? আজ আমরা জানি, বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়ার বিপাক-ক্রিয়ার অংশ হিসেবে মেথেন তৈরি হয়। এরাই বায়ুমন্ডলে মেথেন ছড়িয়ে দেয়। তাই মেথেনের এই অসামঞ্জস্যপূর্ণ উপস্থিতি প্রাণের অস্তিত্ব বোঝায়।
চার. নভোযানটির প্লাজমা-ওয়েভ যন্ত্র ন্যারো-ব্যান্ড এ.এম. রেডিও সংকেত ডিটেক্ট করেছে। এটি আর কিছুই নয় আমাদের সার্বজনীন রেডিও সম্প্রচার। আয়নমন্ডল ভেদ করে এইসব সম্প্রচারের কিছু অংশ মহাশূন্যে ছাড়িয়ে পড়ে। কাজেই পৃথিবীর পাশ দিয়ে কোনো নভোযান গেলে সে এইসব কৃত্রিম রেডিও তরঙ্গ ধরতে পারবে। এবং বুঝবে এই গ্রহে রেডিও-সম্প্রচারে সক্ষম বুদ্ধিমান সভ্যতার অস্তিত্ব আছে।
কাজেই 'গ্যালিলেও' নভোযান যে কন্ট্রোল এক্সপেরিমেন্টটি পৃথিবীর উপর করল তা থেকে প্রাণের উপস্থিতির চারটি সুন্দর লক্ষণ আমরা জানতে পারলাম। অন্যান্য গ্রহের বেলাতেও আমরা এই জ্ঞান প্রয়োগ করতে পারব। প্রথমেই মঙ্গলগ্রহের কথা মনে আসে। মঙ্গল গ্রহে প্রাণের সম্ভাবনা নিয়ে যুগযুগ ধরে লেখক-ঔপন্যাসিক-বিজ্ঞান-লেখককে রোমান্টিক চিন্তায় বুঁদ হতে দেখা যায়। মঙ্গলের আবহাওয়া এমন যে তা প্রাণের জন্য খুব আরামপ্রদ না হলেও একেবারে বৈরী নয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে মঙ্গলে একাধিক নভোযান, ল্যান্ডার, অর্বিটার পাঠিয়ে প্রাণ সম্পর্কে সুনিশ্চিত কোনো তথ্য বা প্রমাণ আমরা পাইনি। প্রথমত, এর বাতাবরণে এমন কোনো রাসায়নিক স্বাক্ষর পাওয়া যায় না যার পরিমাণ স্বাভাবিক রাসায়নিক সাম্যাবস্থায় যেটুকু থাকার কথা তার বিপরীত। দ্বিতীয়ত, এর পৃষ্ঠের বর্ণালিতে আমরা লালচে রঙ শোষণকারী কোনো পিগমেন্টের উপস্থিতি পাইনি। তৃতীয়ত, মঙ্গল থেকে কোনো মডুলায়িত রেডিও বার্তা আমরা পাইনি। শেষত, মঙ্গলে প্রেরিত ল্যান্ডার ও আর্বিটারসমূহ এমন কোনো রাসায়নিক সংকেত দেখায়নি, যা প্রশ্নাতীতভাবে জীবনের উপস্থিতি নির্দেশ করে। মঙ্গলের পর বৃহস্পতির উপগ্রহ ইউরোপা এবং শনির উপগ্রহ টাইটানে সম্ভাব্য জীবনের উৎস খোজার চেষ্টা অব্যাহত আছে। ইউরোপার পৃষ্ঠ বরফাচ্ছাদিত। কিন্তু বরফাচ্ছাদিত ভূ-ত্বকের অভ্যন্তরে একটি ঈষদুষ্ণ তরল সমুদ্র আছে বলে মনে হয়। বৃহস্পতি গ্রহের প্রবল টানা-পোড়নে যে জোয়ার-বলের সৃষ্টি হয়, সেটা ইউরোপাকে ভূ-গাঠনিক ভাবে সক্রিয় রাখে। তাই এই উপগ্রহে টেকটোনিক সক্রিয়তা বেশি। এই সক্রিয়তাই এর ভূ-অভ্যন্তরকে গরম রাখে। এই রকম পরিবেশে প্রাথমিক জীবনের উদ্ভব সম্ভব। শনির উপগ্রহ টাইটানের বাতাবরণ পৃথিবীর তুলনায় প্রায় দেড়গুণ বেশী চাপ দেয়, এতে আণবিক নাইট্রোজেনের আধিক্য দেখা যায়, সর্বোচ্চ প্রায় দশ শতাংশের মতো নাইট্রোজেনের উপস্থিতি দেখা যায়। এর আকাশ লালচে-কমলা রঙের অস্বচ্ছ কুয়াশায় আচ্ছন্ন দেখা যায়। এর পৃষ্ঠ তাপমাত্রা মাইনাস একশত ঊন-আশি সেন্টিগ্রেড, বাতাবরণে হাইড্রোকোর্বন ও নাইট্রাইল যৌগের উপস্থিতি দেখা যায়। এরকম একটি পরিবেশে জটিল জৈব-যৌগ তৈরি হতে বাধ্য এবং কার্ল সেগান ও তাঁর সহযোগীরা দেখিয়েছেন যে, বিশেষ এক ধরনের জটিল জৈব-যৌগের উপস্থিতি টাইটানের বর্ণালি রেখার সুন্দর ব্যাখ্যা দিতে সক্ষম। দেখা গেছে, টাইটানের বায়ুমন্ডলের হাইড্রোজেন নিচের দিকে অর্থাৎ ভূ-ত্বকের দিকে পড়তে থাকে। হাইড্রোজেনের এই নিম্নমুখী প্রবাহ কিন্তু পৃষ্ঠে এসে রহস্যজনক ভাবে হারিয়ে যায়। ড্যারেল স্ট্রোবেল দেখিয়েছেন, টাইটানের হ্রদগুলোতে যদি মেথেন-খেকো প্রাণী থাকে তবেই হাইড্রোজেনের এই হারিয়ে যাওয়ার ব্যাখ্যা দেওয়া সম্ভব। এই বিষয়ে আরো প্রত্যক্ষ পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন। মঙ্গল, ইউরোপা ও টাইটান ছাড়া সৌরজগতের অন্যত্র প্রাণের সম্ভাবনা বিরল। যদিও গ্রহাণু ও উল্কাতে জৈব পাওয়া গেছে কিন্তু তারপরও মনে হয় না এরা প্রাণ সৃষ্টির উপযোগী। কার্ল সেগানের মতে,
"আন্তঃনাক্ষত্রিক স্থানের হাড়-কাপানো শীতে এবং শুষ্ক পরিবেশে যেখানে প্রতিনিয়ত অতিবেগুনি রশ্মি ও কসমিক রে হানা দিচ্ছে, সেখানে জৈব যৌগ থাকলেও তা প্রাণসৃষ্টির জন্য উপযোগী নয়, প্রাণের জন্য তরল পানির প্রয়োজন এবং তা শুধু গ্রহ (বা তাদের উপগ্রহেই) পাওয়া সম্ভব।"
আন্তঃনাক্ষত্রিক ধূলিতে চার ডজনেরও বেশি জৈব যৌগের নিশ্চিত উপস্থিতি পাওয়া গেছে Ñ বিভিন্ন ধরনের পলিসাইক্লিক অ্যারোম্যাটিক হাইড্রোজেন, ফরমালিন অ্যামাইন, অ্যালকোহল ইত্যাদি।
ইদানিং সূর্য ছাড়াও অন্যান্য নক্ষত্রের চারপাশে গ্রহ পাওয়া গেছে। সেসব গ্রহেও অনুকূল রাসায়নিক পরিবেশে প্রাণ সৃষ্টির সমূহ সম্ভাবনা আছে। বুদ্ধিমান প্রাণী না হলেও অন্তত অণুজীব তো থাকতেই পারে। দূর-ভবিষ্যতে হয়ত এসব তারার গ্রহের উদ্দেশ্যে অত্যাধুনিক নভোযান ছুটে যাবে। এইসব নভোযান একসময়ে ফার্মির প্রশ্নের উত্তর নিয়ে আসবে সে হ্যাঁ-ই হোক অথবা না। তবে এটুকু বোধহয় বলা যায়, আমাদের জীবদ্দশায় ফার্মির প্রশ্নটা কূটাভাসের স্তরেই থেকে যাবে বলে মনে হয়।
পৃথিবীর ক্ষেত্রে যেমনটি দেখা গেছে, পৃথিবী সৃষ্টির প্রায় দেড়শত মিলিয়ন বছরের মধ্যেই প্রাচীনতম এককোষী প্রাণীর উদ্ভব হয়ে গিয়েছিল। অর্থাৎ প্রাণসৃষ্টির জন্য তুলনামূলকভাবে কম সময় লাগে। শুধু অনুকূল পরিবেশটি চাই। কিন্তু বহুকোষী প্রাণীর উদ্ভব ঘটতে সময় লেগেছে দুই থেকে আড়াই বিলিয়ন বছর। ততোদিনে ক্লোরোফিল আদিম পৃথিবীর বিষময় বাতাসকে আক্সিজেন রূপান্তরিত করে ফেলেছে। মনে হয়, বুদ্ধিমান প্রাণীর জন্য উপযোগী বিপাকীয় ক্রিয়ার জন্য অক্সিজেন দরকার। অক্সিজেন-সমৃদ্ধ মেটাবোলিক প্যাথওয়ে বা বিপাকীয় ক্রিয়ায় যে পরিমাণ শক্তি উৎপাদিত হয়, তা অন্য পথে সম্ভব নয়। তাই প্রাণের উৎপত্তি ও বুদ্ধিমান প্রাণীর উদ্ভব দুটো আলাদা বিষয়। অন্তত পৃথিবীর ক্ষেত্রে দেখা যায়, বিনা অক্সিজেনে বুদ্ধিমান প্রাণী বাঁচে না। তাই এককোষী থেকে বহুকোষী পর্যায়ে রূপান্তরে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হয়েছে। ততোদিনে পৃথিবীর বাতাবরণ অক্সিজেন-সমৃদ্ধ হয়ে গিয়েছে।
তথ্যপঞ্জি:
১/ ইয়ান ক্রফোর্ড, "হোয়ার আর দে?", সায়েন্টিফিক অ্যামেরিকান, জুলাই ২০০।
২/ জর্জ সোয়েন্সন,"ইন্টারগ্যালাকটিকালি স্পিকিং," সায়েন্টিফিক অ্যামেরিকান, জুলাই ২০০০।
৩/ কার্ল সেগান, " দ্য সার্চ ফর এক্সট্রাটেরেস্ট্রিয়াল লাইফ," সায়েন্টিফিক অ্যামেরিকান, অক্টোবর ১৯৯৪।
৪/ পথিক গুহ, "প্রতীক্ষার পঞ্চাশ বছর," শারদীয় দেশ ১৪১৭ (বাংলা), (সেপ্টেম্বর২০১০)।
৫/ রেজাউর রহমান, 'মহাবিশ্বে জীবনের সন্ধান', প্রথমা প্রকাশন, ঢাকা ২০০৯।
ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী: