‘গুলিহীন যুদ্ধ’ যাপনের একমাস

ইউক্রেইনে রাশিয়া আর ন্যাটো জোটের ভয়াল যুদ্ধবাস্তবতাকে ছাপিয়ে বিশ্বজুড়ে এই গুলিহীন যুদ্ধ যাপিত হয়েছে একমাস ধরে। সংবাদমাধ্যম বলুন, সোশ্যাল মিডিয়া বলুন কিংবা টেলিভিশন নেটওয়ার্কের কথা! সবখানেই মিসাইল-ড্রোনের যুদ্ধ ছাপিয়ে রাজত্ব করেছে কাতার বিশ্বকাপ!

বাধন অধিকারীবাধন অধিকারী
Published : 28 Dec 2022, 02:46 PM
Updated : 28 Dec 2022, 02:46 PM

হুম, বিশ্বকাপ ফুটবলের কথাই বলছি। শিরোনাম দেখে আঁতকে উঠছেন তো? সদ্য সমাপ্ত বিপুল উৎসাহ-উন্মাদনার ওই আয়োজনকে কীভাবে যুদ্ধের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলছি, তাই ভাবছেন? সত্যি করে বলি, এইসব স্পোর্টস ইভেন্ট আসলে যুদ্ধই। সুবিখ্যাত ব্রিটিশ লেখক অরওয়েলের চিন্তা ধার করে আপনি একে বলতে পারেন ওয়ার মাইনাস শ্যুটিং। মানে গুলিহীন যুদ্ধ। ইউক্রেইনে রাশিয়া আর ন্যাটো জোটের ভয়াল যুদ্ধবাস্তবতাকে ছাপিয়ে বিশ্বজুড়ে এই গুলিহীন যুদ্ধ যাপিত হয়েছে একমাস ধরে। সংবাদমাধ্যম বলুন, সোশ্যাল মিডিয়া বলুন কিংবা টেলিভিশন নেটওয়ার্কের কথা! সবখানেই মিসাইল-ড্রোনের যুদ্ধ ছাপিয়ে রাজত্ব করেছে কাতার বিশ্বকাপ! আসলে আমিও তাই খানিকটা অপেক্ষা করছিলাম, উন্মাদনা কখন একটু থিতিয়ে আসতে শুরু করবে। তার আগে কে শুনবে আমার এসব কথা! 

আপনার-আমার, আমাদের যাদের ইন্টারনেটে প্রবেশগম্যতা রয়েছে, আমরা যারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দিন/রাত যাপন করি, আর টুকটাক খবর পড়ি ইন্টারনেট মিডিয়া-টেলিভিশন কিংবা সংবাদপত্রে; সেই তারা সবাই যুদ্ধটা কিন্তু দেখেছি। কে সেরা– ব্রাজিল নাকি আর্জেন্টিনা? ফ্রান্স নাকি পর্তুগাল? মেসি নাকি এমবাপ্পে? নেইমার নাকি রোদালদো? কে বেশি নান্দনিক? কোন স্টাইল ভালো– ল্যাতিন নাকি ইউরোপীয়? কে ক-বার জিতে নিয়েছে? কার বর্ণবাদের ইতিহাস রয়েছে? কার রয়েছে পানিতে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খাওয়ানোর কুৎসিৎ অতীত? কারা হাতে গোল করে বিশ্বকাপ জিতেছিল? কোন দেশের সমর্থকরা বেশি জ্ঞানী? কোন দেশের সমর্থকরা মুর্খ, কিচ্ছু বোঝে না? এইসব আলাপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে একটা ভার্চুয়াল যুদ্ধক্ষেত্র করে রেখেছিল বিশ্বকাপ চলার দিনগুলোতে। এখনও তার রেশ কাটেনি। মূলধারার সংবাদমাধ্যমও তাদের ক্রীড়া-কাভারেজে একইরকমের প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছে। আমার ব্যক্তিগত ফেইসবুক অ্যাকাউন্টের বন্ধুদের বেশিরভাগ মানুষই সংবেদনশীল বলে আমার অনুমান। তবুও আমি আমার অভিজ্ঞতায় দেখেছি, বিভিন্ন সমর্থক গোষ্ঠী তৈরি, একে অপরকে পঁচানো, বাজেভাবে আক্রমণ, পরাজিতদের পরিস্থিতি নাজেহাল করা, আলাপে না পেরে একে অন্যকে ব্লক করা, গালাগালি, ট্রল করা, ঘৃণা আর বিদ্বেষের বেসাতি যেন! সবকিছু বহুদূরের ইউরোপ-আমেরিকার ফুটবল দলকে নিয়ে। কেন এমন হয়?

কে না জানে, ফিফা র‌্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান তলানিতে। তবুও বহুদূরের ইউরোপ কিংবা ল্যাতিন আমেরিকার দেশগুলোকে নিয়ে আমাদের উচ্ছ্বাসের কমতি ছিল না। প্রতি বিশ্বকাপের মতোই আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলের পতাকায় ছেয়ে গিয়েছিল আমাদের সারাটা দেশ। গরু কেটে, ছাগল কেটে, কেক কেটে উদযাপন করা হয়েছে ফুটবলের বৈশ্বিক আসরকে। এ পর্যন্ত হলে সমস্যা ছিল না। দেশের একটি সংবাদমাধ্যম গত ১৪ ডিসেম্বর খবর দিয়েছে, বিশ্বকাপ উন্মাদনার খেসারতে ওইদিন পর্যন্ত জীবন দিতে হয়েছে ১২ জনকে। খবর অনুযায়ী, ফুটবল নিয়ে তর্ক-বিতর্কের জের ধরে সংঘর্ষে, পতাকা টানাতে গিয়ে ছাদ থেকে পড়ে কিংবা বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে, খেলা দেখার সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ১২ জন মারা গেছেন। আর বিভিন্ন জেলায় সংঘর্ষে সে পর্যন্ত আহত হয়েছেন অন্তত ২৭ জন। হতাহতদের সবাই বিশ্ব ফুটবলের প্রতিদ্বন্দ্বী দুই দল ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার সমর্থক। কেবল বাংলাদেশেই নয়, ইউরোপ-আফ্রিকায় কিংবা পাশ্ববর্তী ভারতেও এই বিশ্বকাপকে ঘিরে সংঘাত ঘটেছে। ভেবে দেখুন তো, এই ফুটবল বিশ্বকাপ যদি খেলাই হয়ে যাকে, সেটা যদি হয়ে থাকে আমাদের ছেলে/মেয়েবেলার দাড়িয়াবান্দা কিংবা গোল্লাছুট কিংবা হাড়িপাতিল খেলা, তাহলে এ নিয়ে এত মাতামাতি, এত বিদ্বেষী বাস্তবতা, এত টক্সিক আলাপ কেন? কেন সংঘাত, কেন খুনোখুনি? কেন হৃদয়ে এমন হন্তারক চোট?

বলতে হয়, আমার ফেইসবুক বন্ধুরাই এই লেখার প্রেরণা। তাদের একাংশ, যাদের মধ্যে আমার শিক্ষক গোত্রের লোকজনও আছেন, আমার কমরেডরাও আছেন; স্পোর্টস পছন্দ করা, ফুটবল পছন্দ করা এইসব মানুষ ভিন্ন কথাও হাজির করতে চেয়েছেন। খেলাটা পছন্দ, তারাও কোনো না কোনো দলের সমর্থক, তবে যা ঘটেছে খেলা নিয়ে, তাতে তাদের আপত্তি। তারা চেয়েছেন তর্কের সুস্থতা, চেয়েছেন অন্যের প্রতি বিদ্বেষী না হয়ে নিজ দলের প্রতি সমর্থন। তবে এই চাওয়া পূরণ হওয়ার নয়। কেননা দুটি দলের একটির সমর্থক হয়ে জয় কামনার মানেই অন্যের প্রতি বিদ্বেষ। এই বিদ্বেষ ছাড়া নিজ পছন্দের জয় রচিত হয় না। কেননা খেলাটা আসলে যুদ্ধ, আর প্রতিপক্ষের প্রতি বিদ্বেষী না হয়ে যুদ্ধের পাটাতনই নির্মিত হতে পারে না। 

এইযে ফেয়ার প্লে-টে বলা হয়, এগুলো আসলে যুদ্ধের সময় যুদ্ধনীতি মানার মতোই। জিনিসটা যুদ্ধই, অস্ত্র হাতে থাকলে খুন করতে পারবা, কিন্তু অস্ত্র সমর্পণ করলে ছেড়ে দাও। পুরুষ মারো, পারলে নারী-বৃদ্ধ-শিশু মের না। গুলি করে মার, কিন্তু লাশটা নিয়ে উদযাপন করো না, অযথা খুচিয়ে লাশটাকে ক্ষতবিক্ষত করো না। মানে, যুদ্ধ করো কিন্তু যুদ্ধাপরাধ করো না। কিন্তু ভেবে দেখুন তো, যুদ্ধে কোন অপরাধ বাকি থাকে? কোন যুদ্ধে নারীরা যৌন নিপীড়নের শিকার হয় না, কোন যুদ্ধে বৃদ্ধরা ভিক্টিম হয় না? ফেয়ার প্লে জিনিসটাও তেমনই। হিংসা-বিদ্বেষসমেত একটা যুদ্ধই হবে, তবে উপরিতলে একটা ফেয়ার ফেয়ার ভাব বজায় থাকবে। আলাপ আলোচনাতেও ফেয়ার ফেয়ার একটা অবস্থা বিরাজ করবে। নিজে/নিজের দল হেরে গেলেও প্রতিপক্ষকে অভিনন্দন জানাতে হবে এক বুক জ্বালা নিয়ে। সবথেকে যাদের সঙ্গে শত্রুতা, তারা জিতলেও বলতে হবে হুম ভালো খেলে জিতেছে। কিন্তু ভেতরকার যে বিদ্বেষী মন, তার কী হবে? অরওয়েল তাই যথার্থই বলেছেন: Serious sport has nothing to do with fair play. It is bound up with hatred, jealousy, boastfulness, disregard of all rules and sadistic pleasure in witnessing violence. In other words, it is war minus the shooting.

ব্রিটিশ ক্রীড়া ইতিহাসবিদ টনি কলিন্স তার স্পোর্টস ইন ক্যাপিটালিস্ট সোসাইটি: অ্যা শর্ট হিস্টরি নামের বইতে বলছেন, ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে নারী-পুরুষ সবসময় খেলাধুলার সঙ্গে ছিল। গান করার আকাঙ্ক্ষা, কিংবা আঁকাআঁকির তাগিদ অথবা গল্প বলার/শোনার আকাঙ্ক্ষার মতো করেই খেলাধুলাও সবসময়ই মানবসংস্কৃতির অপরিহার্য অংশ হয়ে ছিল। শারীরিক উৎকর্ষ, গোষ্ঠী সংহতি কিংবা নিছক আনন্দের একটি রূপ হিসাবে, ইতিহাসের প্রায় সমস্ত সময়কালে সমস্ত সমাজেই ছিল খেলাধুলা। টনি কলিন্স জানাচ্ছেন, খেলাগুলো প্রকৃতিকে আয়ত্ত করার এবং জীবনকে টিকিয়ে রাখার জন্য মানবীয় প্রচেষ্টা থেকে বিকশিত হয়েছে। এই যেমন পশু শিকার বা শত্রুদের তাড়ানোর প্রয়োজন থেকে তীর নিক্ষেপ, পশুদের ধরা কিংবা ভিন্ন ভিন্ন বসতির মধ্যে পারস্পরিক যোগাযোগের তাগিদ থেকে দৌঁড়ের মতো খেলার উদ্ভব হয়েছে। কাজ আর অবসরের মধ্যে তখন পার্থক্য তেমন একটা ছিল না। জীবনই তখন কাজ, কাজই ছিল জীবন। এই সম্পর্ক যতটুকু সময় স্থগিত থাকত, তখন মানুষ খেলত। যেমন ধরুন, ফসল কাটা শেষ হলে মানুষ খেলত। প্রয়োজনের চেয়ে উপভোগ যখন ক্ষণস্থায়ী অগ্রাধিকার পেত। কলিন্স বলছেন, প্রাচীন অলিম্পিকের মতো বিরল ব্যতিক্রমগুলোর কথা বাদ দিলে প্রাক শিল্পযুগে তখনকার খেলা (পড়ুন গেম) আধুনিক ক্রীড়ার (পড়ুন স্পোর্টস) মতো কিছু ছিল না। খেলা ছিল তখন প্রতিযোগিতাহীন, কখনও কখনও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের মতো। আলাদা করে দক্ষতা কিংবা জয়পরাজয়ের কোনো ব্যাপার ছিল না। 

তবে শিল্পযুগ পরবর্তী পুঁজিবাদী বাস্তবতায় খেলা (গেম) আর আগের জায়গায় থাকেনি। তা ক্রীড়ায় (স্পোর্টস) রূপ নিয়েছে। একইসঙ্গে রূপ নিয়েছে যুদ্ধে। কমব্যাট গেমগুলো আসলে সামরিকতার স্টাইলেই বিকশিত হয়েছে। যে ফুটবল নিয়ে আমাদের আলাপ, তা পুরনোকালের যুদ্ধের আদলেই বিকশিত। স্টেডিয়ামকে যদি আপনি একটা যুদ্ধক্ষেত্র ভাবেন, তো সেখানে দুই দলের ক্যাপ্টেনকে আপনি বলতে পারেন কমান্ডার। যে কোচরা থাকেন, তারা হলেন যুদ্ধের কৌশলবিদ, বলতে পারেন জেনারেল। আর রেফারি? আপনি তাকে জেনেভা কনভেনশন হিসেবে দেখতে পারেন, যিনি মাঠের মানবতাবিরোধী অপরাধ খতিয়ে দেখেন। খেলার ফরমেশনটাও যুদ্ধের মতো। সেখানে আক্রমণ ও রক্ষণভাগ থাকে। খেলোয়াড়রা যেন যুদ্ধরত দুই পক্ষ, রক্ষণ বাঁচিয়ে পরস্পরকে আক্রমণ শানায়। মেডিকেল স্টাফ থাকে যুদ্ধের মতোন, আহত সৈনিকের মতো যারা আহত খেলোয়াড়দের সুস্থ করে তোলার চেষ্টা করে। আমাদের ক্রীড়া সংবাদের নির্মাণ প্রক্রিয়াটা খেয়াল করেছেন নিশ্চয়? আমরা লিখি অমুক-তমুক মহারণ। আমরা লিখি ওমুককে গুড়িয়ে দিলো তমুক। একাই লড়ে জিতিয়ে দিলেন জনাব ক। কেবল ক্রীড়া নিয়ে লেখার প্রক্রিয়া নয়, খোদ ক্রীড়া জিনিসটার সঙ্গেই যুদ্ধের যোগাযোগটা ঘনিষ্ঠ। টিম কর্নেল ও থমাস অ্যালেন তাদের ২০০২ সালে প্রকাশিত ‌ওয়ার অ্যান্ড গেম বইতে বলছেন, প্রতিযোগিতামূলক খেলাগুলো ব্যক্তি কিংবা দলগত প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে কমবেশি সচেতনভাবেই যুদ্ধপদ্ধতির অনুকরণ করে। খেলা সংক্রান্ত ভাষায় এই সত্যটি স্পষ্টতই প্রতিফলিত হয়। 

ফুটবল কিংবা যে কোনো ক্রীড়া আর যুদ্ধ; দুইটাই জাতীয় গৌবরের সঙ্গে সম্পৃক্ত। জাতিরাষ্ট্রের সঙ্গে জাতিরাষ্ট্রের যুদ্ধের প্রশ্ন যেমন জাতীয় গৌরবের প্রশ্ন, দেশপ্রেমের প্রশ্ন, বীরত্বের প্রশ্ন; ফুটবলও তেমনই। জাতীয়তাবাদ ও দেশপ্রেম জাগিয়ে তোলার হাতিয়ার হিসেবে ক্রীড়াকে দীর্ঘদিন ধরেই ব্যবহার করা হচ্ছে। এটিকে সরকারি নীতির প্রচার, প্রোপাগান্ডা ছড়ানো কিংবা সামরিক আগ্রাসনের ন্যায্যতা প্রতিপন্নেরও হাতিয়ার করা হয়। ২০১৫ সালে প্রকাশিত কমিউনিকেশন অ্যান্ড স্পোর্টস: সার্ভেইং দ্য ফিল্ড নামের বইতে অ্যান্ড্রু বিলিংস, মাইকেল বাটারওর্থ ও পল ডেভিড টারমান তেমনই একটি উদাহরণ হাজির করেছেন। তা হলো ইরাকে মার্কিন আগ্রাসন চলার সময় সে দেশের ফুটবল দলের অসামান্য সাফল্যের প্রসঙ্গ। আগ্রাসন চলাকালীন ইরাক ২০০৪ সালে গ্রীস্মকালীন অলিম্পিকে কোয়ালিফাই করে এবং অসামান্য সাফল্য অর্জন করে। ওই সময়কার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ তখন দাবি করেন, মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন সামরিক পদক্ষেপের কারণেই ইরাকি দল এমন সাফল্য পেয়েছে। বিলিংস, বাটারওর্থ ও টারমান জানাচ্ছেন, বুশের এই দাবি অবশ্য ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে এবং খোদ ইরাকি দলের বেশিরভাগ সদস্য বুশের মন্তব্যকে মেনে নেননি। তাতে কী হয়েছে? আমাদের উপমহাদেশের ক্রিকেট বাস্তবতার কথা ধরুন। কেউ কি অস্বীকার করতে পারবে বিশ্ব ক্রিকেটে ভারত-পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কা আর বাংলাদেশের উচ্চতর আসনে থাকার নেপথ্যে ব্রিটিশ উপনিবেশের বড় ভূমিকা রয়েছে? ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে তাই এই দেশগুলোর ক্রিকেট জয়কে উপনিবেশবিরোধিতার জয় আকারে ফিল করা হয়! তাতে কিন্তু মনোজগতের উপনিবেশ একটুও সরে না! 

খেলার বড় বড় আন্তর্জাতিক আয়োজনগুলো সবসময়ই সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক চরিত্র ধারণ করে: এগুলো জাতীয়তাবাদ এবং দেশপ্রেমের একটি শক্তিশালী উৎস। রাষ্ট্রনেতাদের একাংশ অত্যন্ত আক্রমণাত্মক বিদেশি নীতির সমর্থন বাড়ানোর জন্য জাতীয়তাবাদী মনোভাব ব্যবহার করে থাকেন। খেলাধুলা এবং জাতীয়তাবাদ উভয়ই প্রতিপক্ষ দেশ, জাতি এবং ধর্মের প্রতি জনগণের দৃষ্টিভঙ্গি সাময়িকভাবে বদলে দেয়। এতে জনগণও আরও ক্ষ্যাপাটে হয়ে উঠতে পারে। জনগণের দৃষ্টিভঙ্গিতে এই পরিবর্তনগুলো নেতাদের সামরিক শক্তি ব্যবহার করার এবং আরও আক্রমণাত্মক উদ্দেশ্যগুলোকে এগিয়ে নেওয়ার সুযোগ ও প্রণোদনা তৈরি করতে পারে।

খেলাধুলার বড় ইভেন্টের সময় চাপা থাকা রাজনৈতিক উত্তেজনা কী ধরনের সহিংস পথে নিয়ে যেতে পারে তার আরেকটি উদাহরণ হলো ১৯৬৯ সালের একটি ঘটনা, যা ‘ফুটবল যুদ্ধ’ নামে কুখ্যাত। অভিবাসন সমস্যা ও ভূমির বণ্টন নিয়ে রাজনৈতিক উত্তেজনার মধ্যেই ওই বছর ফুটবল বিশ্বকাপ বাছাইয়ের ম্যাচে মুখোমুখি হওয়ার কথা ছিল দুই মধ্য-আমেরিকান দেশ হন্ডুরাস ও এল সালভাদরের। অভিবাসন ও ভূমি বণ্টনের ঝামেলার কারণে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কটা কখনোই উষ্ণ ছিল না। এ কারণে ১৯৭০ বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে যখন দুই দেশ মুখোমুখি হয়, উত্তেজনা চরমে পৌঁছে যায়। ১৯৬৯ সালের ৮ জুনের ম্যাচে স্বাগতিক হন্ডুরাস জেতে ১-০ গোলে। ওই ম্যাচেও দুই দলের সমর্থকদের মধ্যে কিছু সংঘর্ষ হয়েছিল। সাত দিন পর সালভাদরের রাজধানী সান সালভাদরে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ম্যাচের আগে হন্ডুরান খেলোয়াড়দের ভয়ংকর অভিজ্ঞতার মধ্য দিতে যেতে হয়েছিল। ১৯৭৮ সালে পোলিশ সাংবাদিক রিজার্ড কাপুসিনস্কির লেখা বই ‘দ্য সক্যার ওয়ার’ থেকে জানা যায়, হন্ডুরান খেলোয়াড়েরা সেই ম্যাচের আগের দিন রাতে এক ফোঁটাও ঘুমোতে পারেননি। যে হোটেলে তাঁরা ছিলেন, পুরো রাত ধরে সেটিতে পঁচা ডিম, ইঁদুরের মরদেহ আর দুর্গন্ধযুক্ত কাপড় ছুড়ে মেরেছিলেন সালভাদর–সমর্থকেরা। ম্যাচেও হন্ডুরান খেলোয়াড়দের ওপর ইচ্ছাকৃতভাবে ফাউলের পর ফাউল করা হয়েছিল। পুরো ম্যাচেই হন্ডুরাসের জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সংগীত নিয়ে গ্যালারি থেকে উল্টা–পাল্টা স্লোগান দিয়ে গেছে সালভাদোরিয়ানরা। দাঙ্গা–হাঙ্গামা হয়েছে ম্যাচের পরেও, যাতে প্রাণ যায় তিন সালভাদরিয়ানের। সালভাদর সেই খেলায় ৩-০ গোলে হন্ডুরাসকে হারিয়ে দেয়। এর ১২ দিন পর, ২৭ জুন, দুই দল মেক্সিকো সিটিতে মুখোমুখি হয় প্লে-অফে। প্রতিবেশী দেশ দুটির মধ্যে উত্তেজনা এতটাই চরমে পৌঁছেছিল যে ম্যাচের দিনই এল সালভাদরের সঙ্গে সব ধরনের কূটনৈতিক সম্পর্ক বাতিল করে হন্ডুরাস। উত্তেজনা ছিল ম্যাচেও। অতিরিক্ত সময়ে গড়ানো সেই ম্যাচে ৩-২ গোলে জিতে এলো সালভাদর। ম্যাচের ১৬ দিন পর, ১৪ জুলাই, হন্ডুরাস আক্রমণ করে বসে এল সালভাদর। শুরু হয়ে যায় যুদ্ধ, রক্তের হোলি। ছয় দিন ধরে চলা সেই যুদ্ধে প্রাণ হারায় প্রায় দুই হাজার মানুষ, আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে লাখ খানেক। 

১৯৩৪ সালের বিশ্বকাপ ফুটবল ছিল ফ্যাসিস্ট মুসোলিনির ক্ষমতা সংহত আর উদযাপন করার উপলক্ষ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ডামাডোলের মধ্যে অনুষ্ঠিত ১৯৩৮ সালের বিশ্বকাপ ছিল হিটলারের, তার দখলদারিত্বে অস্ট্রিয়া সুযোগ পেয়েও খেলতে পারেনি। স্বৈরশাসক হোর্হে ভিদেলা আর্জেন্টিনায় ক্ষমতা সংহত করতে ৭৮ বিশ্বকাপ জয় করতে যা-তা করেছেন! ইংল্যান্ড ১৯৬৬-এর আয়োজক, ওই সময় সমকাম নিষিদ্ধ ছিল সেখানে। ২০১৮ সালে বিশ্বকাপ হয়েছে কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্র রাশিয়ায়, ভ্লাদিমির পুতিনের দেশে মানবাধিকার হরণ আর সমকামীদের প্রতি বৈষম্য ভয়াবহ হওয়া সত্ত্বেও। এবারের আয়োজক কাতারও একটা কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্র, তারাও এই আয়োজনের মধ্য দিয়ে নিজেদের প্রাইডকে (পড়ুন ব্যাটাগিরির হ্যাডম) প্রদর্শন করেছে বিশ্ববাসীর সামনে। এবারের বিশ্বকাপে সমকামীদের প্রবেশযোগ্যতা, নারীদের পোশাকে বিধি আরোপ নিয়ে কথা হয়েছে অবশ্য জোরেশোরে। পশ্চিমা মিডিয়া এসব নিয়ে সমালোচনাত্মক কাভারেজ করেছে, অনেকাংশে এজন্য যে আয়োজক কাতার অপশ্চিমারা ও তারা পশ্চিমা ধারার সাংস্কৃতিক চর্চায় নেই!

আজকের বাংলাদেশের বাস্তবতাকে বিবেচনায় নিন। আমাদের দেশের ক্রিকেটীয় সাফল্যগুলো সবকিছুকে ছাপিয়ে জনগোষ্ঠীর অন্তত মধ্যবিত্ত-শিক্ষিত অংশের মনোযোগের কেন্দ্রে অবস্থান করে সবসময়। সংবাদমাধ্যমগুলোরও অলিখিত সম্পাদকীয় নীতি: খেলায় বাংলাদেশের জয় মানেই তা ফ্রন্ট পেজের লিড/সেকেন্ড লিড। তারমানেই জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য বিষয়ের আড়াল হওয়া। মত প্রকাশের স্বাধীনতা নেই, তো কী হয়েছে? খেলা তো জিতেছি। ড্রাকুলা ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টে কোনো একজন অ্যাকটিভিস্ট গ্রেফতার হয়েছে, ফেইসবুকে তাকে নিয়ে ক্যাম্পেইন চলছে হয়তো; তবে খেলায় বাংলাদেশ জিতলে সেই ক্যাম্পেইন উবে যাবে। আপনার হোমপেজজুড়ে রাজত্ব করবে দেশের বিজয়গাথা! সাড়া জাগানো মার্কিন বুদ্ধিজীবী নোম চমস্কি সেই কবেই আমাদের বলেছেন, ‘আমাদের কিংবা অন্যান্য সমাজে পেশাদার খেলাধুলার মতো বিষয়গুলোর অন্যতম ভূমিকা হলো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় থেকে জনগণের মনযোগ সরানোর একটা ক্ষেত্র তৈরি করা যেন ক্ষমতাশালীরা জনগণের কোনো হস্তক্ষেপ ছাড়াই যা খুশি তাই করতে পারে।’ 

ক্রিকেটের কথা থাক। আবার ফিরি বিশ্বকাপ ফুটবলে। আমাদের উন্মাদনার মধ্যেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাবেক শিক্ষকের গাড়িতে চাপা পড়ে মরতে হয়েছে এক নারীকে। সেদিনও ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে খেলা দেখা হয়েছে প্রবল উৎসাহে। আমাদের উন্মত্ততার মধ্যেই অস্ত্র ব্যবসা, আঞ্চলিক আধিপত্য আর সাম্রাজ্যের জন্য লড়ছে পরাশক্তিরা, আর মানবিক বিপর্যয় বাড়ছে। ইউক্রেইনকে যুদ্ধক্ষেত্র বানিয়ে পশ্চিমাদের সঙ্গে রাশিয়ার এই যুদ্ধ এরইমধ্যে কেড়েছে বহু সাধারণ মানুষের প্রাণ। আর যারা দেশপ্রেমের দিনমজুর, ইউক্রেইন আর রাশিয়া দুইপক্ষের সেই সেনারা মরছে কাতারে কাতারে। আর এই বিশ্বকাপের আগেই একটা ব্যর্থ ধরীত্রী রক্ষা সম্মেলন হয়েছে স্বৈরশাসক ফাত্তাহ আল সিসির মিসরে। পৃথিবীকে আরও উষ্ণ ও বিপন্ন হওয়া থেকে, এর ধ্বংসযজ্ঞ থেকে রক্ষার জন্য বলতে গেলে কিচ্ছুই করা যায়নি জীবাশ্ম জ্বালানির দালালদের দৌরাত্নের কারণে। আমাদের এই উন্মত্ততার মধ্যেই বাংলাদেশের ব্যাংক থেকে লাখ লাখ বিলিয়ন ডলার নিজেদের করায়ত্ত করেছে ক্ষমতাশালীরা। পাচার করে দিয়েছে দেশের বিপুল সম্পদ। তবে খেলার মাসটি আমাদের সমস্ত উন্মাদনা ছিল বিশ্বকাপের মাঠকে ঘিরে। 

খেলার নামে এই যে ছদ্ম যুদ্ধবাস্তবতা, পুঁজিবাদী বাজারব্যবস্থায় একে বিক্রি করা হয় চড়া দামে। পুঁজিবাদে ক্রীড়া পণ্য, মানে প্রোডাক্ট; কেন্দ্রীয় বিবেচনা তাই ক্রীড়াকেন্দ্রিক অর্থনীতি। শুরুর দিকে এই অর্থনীতি ছিল প্রত্যক্ষ দর্শক-নির্ভর। তবে ক্রীড়া-অর্থনীতিতে জোয়ার আসে ষাটের দশকে, টেলিভিশনবাহিত হয়ে। প্রত্যক্ষ দর্শক-নির্ভরতা নাই হয়ে যায়। টেলিভিশনবাহিত হয়ে খেলা দেখার দিগন্ত বিস্তৃত হয় বিশ্বজুড়ে। সৃষ্টি হয় নতুন বাস্তবতা। স্টেডিয়ামের দর্শক বাস্তবতা অতিক্রম করে সৃষ্টি হয় লক্ষ-কোটি গ্রাহক। আবার অন্যদিক থেকে বললে, টেলিভিশন জিনিসটা বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় হয় স্পোর্টসের কারণেই। এনবিসির ক্রীড়া পরিচালক হ্যারি কইলি জানাচ্ছেন, ১৯৪৭ সালের ওয়ার্ল্ড সিরিজের আর্মি-নেভি ম্যাচ সম্প্রচারের পর টেলিভিশনের বেচাবিক্রি দ্বিগুণ হয়ে যায়। আর এখন তো ইন্টারনেট যুগ, রয়েছে নিউ মিডিয়া আর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। সবমিলে ক্রীড়া অর্থনীতির রমরমা। যুদ্ধ-কাভারেজের যেমন বেচাবিক্রি, এক্ষেত্রে তার চেয়েও বেশি। প্রতিযোগিতা বিক্রি, জয়-পরাজয় বিক্রি, বিদ্বেষ বিক্রি। টেলিভাইজড স্পোর্টস তাই প্রতিযোগিতা-যুদ্ধ-বিদ্বেষের পুঁজিবাদের ধর্মভাই যেন, যেন প্রাণভোমরা। টিকিট বিক্রি, টেলিভিশন কিংবা ডিজিটাল স্ট্রিমিং, এর সাবক্রিপশন বিক্রি আর ক্লাব ফুটবলের রমরমা বাস্তবতায় খেলোয়াড়দেরও বেচাবিক্রি চলছে প্রত্যক্ষভাবে। নব্য উদারবাদী যুগপর্বে মেসি-নেইমাররা আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলেরও আগে পরিচিত হচ্ছে বার্সালোনা কিংবা পিএসজির নামে। আর্জেন্টিনার সমর্থক নন, এমন অনেকেই এবার লিওনেল মেসির হাতে বিশ্বকাপ দেখতে চেয়েছেন মন থেকে। এটা গুরুত্বপূর্ণ সিম্বল। ক্লাব ফুটবলের দাপট প্রভাবিত করছে খোদ জাতীয়তাবাদী চৈতন্যকেও! এই দাপট তো জাতিরাষ্ট্রের ছায়াতলে পুষ্ট হওয়া করপোরেট পুঁজিরই দাপট। 

সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, কাতার বিশ্বকাপ থেকে ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ফিফার আয় অতীতের সব রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। এবার তারা আয় করেছে ৭.৫ বিলিয়ন বা ৭৫০ কোটি ডলার, যা রাশিয়ায় অনুষ্ঠিত ২০১৮ সালের বিশ্বকাপের চেয়ে ১০০ কোটি ডলার বেশি। আয়ের ৫৬ শতাংশ এসেছে সম্প্রচার স্বত্ব বিক্রির মাধ্যমে। খেলা দেখানোর অধিকার কিংবা সম্প্রচার স্বত্ব বাংলাদেশেও বিক্রি হয়েছে তো! ফিফার কাছে বাংলাদেশের দর্শকদের উচ্ছ্বাসের খবর তাই জরুরি বটে, কেননা এদেশের ফুটবলপাগল মানুষেরা তাদের সরাসরি গ্রাহক। ফিফা ওই কারণেই বাংলাদেশের সমর্থকদের ছবিকে সামনে আনে! এটা বেচাবিক্রি-বিজ্ঞাপনেরই অংশ।

বিশ্বকাপ ফুটবল মানেই উচ্ছেদ। হোক ব্রাজিল, হোক দক্ষিণ আফ্রিকা আর হোক কাতার। গরীব-বস্তিবাসী উচ্ছেদ না করে বিশ্বকাপ হয় না। কাতারে কত মানুষকে যে উচ্ছেদ হতে হয়েছে, তার হিসাব জানি না। তবে বিশ্বকাপের আরেক অপরিহার্য উপাদান সস্তা শ্রমের শ্রমিকদের কথা খানিকটা জানি। প্রভাবশালী ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশ হওয়া এক প্রতিবেদনে জানায়, বিশ্বকাপের আয়োজক দেশ কাতারে আগের ১০ বছরে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল ও শ্রীলঙ্কার সাড়ে ছয় হাজারেরও বেশি অভিবাসী শ্রমিক মারা গেছে। কেনিয়া কিংবা ফিলিপাইন্সের মতো দেশগুলোকে বিবেচনায় নিলে এই মৃত্যুর সংখ্যা আরও বেশি হবে বলে জানায় তারা। 

ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বকাপের পেছনে কাতার খরচ করেছে ২২৯ বিলিয়ন ডলার। কাতার বিশ্বকাপ ২০২২-এর সিইও নাসের আল খাতের আশা প্রকাশ করেছেন, এ বিশ্বকাপ থেকে কাতারের আয় দাঁড়াবে ১৭০০ কোটি ডলার। তবে এই বিনিয়োগ তাদের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার অংশ। গবেষণা প্রতিষ্ঠান নাইট ফ্রাংক বলছে, ফুটবল বিশ্বকাপ ২০২২ উপলক্ষে কাতারে ১৫ লাখ দর্শনার্থীর সমাগম হয়। পরের বছর দেশটিতে অনুষ্ঠিত হবে ‘এশিয়ান কাপ-২০২৩’। ফলে পর্যটক বাড়তেই থাকবে। এমনকি ২০৩০ সাল পর্যন্ত দেশটির হোটেল ও হসপিটালিটি খাতে প্রবৃদ্ধি ১২ শতাংশ করে হবে। এ খাতের মূল্য দাঁড়াবে ৫৫ বিলিয়ন ডলার। যা কাতারের জিডিপিতে ১২ শতাংশ অবদান রাখবে। কিন্তু বিশ্বকাপের আয়োজন নিশ্চিত করতে যে অভিবাসী শ্রমিকরা মারা গেছে, তাদের কাছে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা ম্যাচের মানে কী ছিল, ভেবে দেখেছেন একবার? নেইমার-এমবাপ্পে নিয়ে তর্কাতর্কি তাদের কাছে কী অর্থে হাজির হয়, ভেবেছেন সে কথা? 

পুতিনের মিসাইলের আঘাতে অন্ধকার নেমে এনেছে ইউক্রেইনে, শীতে কাঁপছে ইউরোপ, ঘরের কাপড় জ্বালিয়ে শীত রুখতে চেষ্টা করছে আমেরিকার আদিবাসীরা। আফগানিস্তান থেকে আফ্রিকা, উত্তর কোরিয়া থেকে ইয়েমেন, শ্রীলঙ্কা থেকে যুক্তরাজ্য, ক্ষুধায় কাতরাচ্ছে মানুষ। সংঘাতের বিদ্বেষী বোমায় ঘুম ভাঙছে মধ্যপ্রাচ্যের শিশুর, গুলতি নিয়ে প্রতিরোধ গড়তে গিয়ে পরাক্রান্ত সেনাদের হাতে খুন হচ্ছে ফিলিস্তিনি শিশু। আর আমাদের এই বাংলাদেশের সমস্ত মেহনত লুট করে বিদেশে পাচার করে যাচ্ছে রাক্ষসেরা। ওদিকে পরবর্তী বিশ্বকাপ নিয়ে মুনাফার হিসাব কষছে ফিফা আর আমেরিকা-মেক্সিকো-কানাডা। মেসি-নেইমার-এমবাপ্পেদের বেচাবিক্রির নতুন পরিকল্পনাও নিশ্চয় চলছে নিশ্চয় ক্লাবগুলোতে! আমরা তো দর্শক, গুলিসমেত আর গুলিহীন যুদ্ধ দেখাই আমাদের কাজ!