“সব চোরের পদবি মোদী হয় কী করে?,” চার বছর আগে কর্ণাটকের এক জনসভায় করা এই মন্তব্যের জন্য গুজরাটের এক আদালত তাকে দোষী সাব্যস্ত করে এই সাজা দিয়েছে।
Published : 23 Mar 2023, 12:28 PM
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বংশগত নাম বা পদবি নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে চার বছর আগে করা এক মানহানির মামলায় কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীকে দুই বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে গুজরাটের সুরাটের একটি আদালত।
সাজা হলেও রাহুল জামিন পেয়েছেন, তাকে আপিল করার সুযোগ দিতে রায় ৩০ দিনের জন্য স্থগিতও রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে এনডিটিভি।
“সব চোরের পদবি মোদী হয় কী করে?,” রাহুলের এই মন্তব্যের জেরে বিজেপি বিধায়ক ও গুজরাটের সাবেক মন্ত্রী পুর্নেশ মোদী কংগ্রেসের সাবেক সভাপতির বিরুদ্ধে এই মামলাটি করেছিলেন।
ওয়েনাদ থেকে নির্বাচিত এমপি রাহুল ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে কর্ণাটকের কোলারে এক জনসভায় পলাতক ব্যবসায়ী নীরব মোদী ও ললিত মোদীর সঙ্গে নরেন্দ্র মোদীর নামের মিল থেকে প্রধানমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে ওই মন্তব্য করেছিলেন।
বৃহস্পতিবার রায়ের পর প্রথম প্রতিক্রিয়ায় রাহুল টুইটারে মহাত্ম গান্ধীকে উদ্ধৃত করে লিখেছেন, “আমার ধর্মের ভিত্তি হচ্ছে সত্য ও অহিংসা। সত্যই আমার ঈশ্বর, অহিংসা তাকে পাওয়ার উপায়।”
রায়ের আগে সকালে তিনি সুরাট যান, সেখানে কংগ্রেসের গুজরাট শাখার শীর্ষ নেতারা তাকে অভ্যর্থনা জানান।
শহরের বিভিন্ন অংশে কংগ্রেসের কর্মী-সমর্থকদের ব্যাপক জমায়েতও দেখা গেছে। তাদের অনেকের হাতে ছিল রাহুল ‘শের-ই-হিন্দুস্তান’ লেখা পোস্টার; কারও কারও হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল ‘বিজেপির স্বৈরতন্ত্রের সামনে কংগ্রেস মাথা নত করবে না’।
রায়ের পর অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ও আম আদমি পার্টির (এএপি) নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সমর্থনও পেয়েছেন রাহুল।
কেজরিওয়াল তার টুইটে লিখেছেন, তিনি এ রায়ের সঙ্গে ‘একমত নন’।
“অ-বিজেপি নেতা ও দলগুলোর ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন চালিয়ে তাদেরকে নিশ্চিহ্ন করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। কংগ্রেসের সঙ্গে আমাদের মতপার্থক্য থাকতে পেো, কিন্তু রাহুল গান্ধীকে এভাবে মানহানির মালায় ফাঁসানো ঠিক হল না। জনগণ এবং বিরোধীদের কাজই হচ্ছে প্রশ্ন করা। আদালতকে শ্রদ্ধা করলেও এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত নই,” লিখেছেন তিনি।
সুরাটের মুখ্য বিচারিক হাকিম এইচএইচ ভার্মার আদালতে গত সপ্তাহে শুনানি শেষ হওয়ার পর বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণার দিন ঠিক হয়েছিল।
“সত্যকে বারবার হয়রানি ও পরীক্ষার মুখে পড়তে হয়, কিন্তু শেষ পর্যন্ত কেবল সত্যই জেতে। রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে অনেকগুলো মিথ্যা মামলা হয়েছে, কিন্তু এগুলো সবগুলোকে পেছনে ফেলে তিনি এগিয়ে যাবেন। আমরা ন্যায়বিচার পাবো,” বলেছেন কংগ্রেসের ঊর্ধ্বতন নেতা ও বিধায়ক অর্জুন মোধওয়াদিয়া।
জবানবন্দি দিতে রাহুল সর্বশেষ ২০২১ সালে সুরাটের ওই আদালতে গিয়েছিলেন।
সাবেক কংগ্রেস সভাপতির বিরুদ্ধে করা অভিযোগে পুর্নেশ মোদী বলেন, ২০১৯ সালের ওই নির্বাচনী জনসভায় করা মন্তব্য সমগ্র মোদী সম্প্রদায়ের মানহানি করেছে।
অন্যদিকে রাহুলের আইনজীবীরা মামলাটিকে শুরু থেকেই ‘ত্রুটিপূর্ণ’ অভিহিত করে আসছিলেন। তাদের যুক্তি ছিল, বিধায়ক পুর্নেশ মোদী নয়, মামলায় অভিযোগকারী হিসেবে থাকা উচিত ছিল নরেন্দ্র মোদীর, কেননা ভারতের প্রধানমন্ত্রী-ই রাহুলের বক্তব্যের মূল ‘টার্গেট’ ছিলেন।