Published : 23 Oct 2023, 09:08 AM
শরীরে স্তন ক্যান্সার বাসা বাঁধল কি না, তা যাচাই করার ঘরোয়া উপায় কী?
যদি স্তনে হাত দিয়ে ভেতরে চাকা চাকা বা পিণ্ডর মত কিছু অনুভব করাই ঘরোয়া পরীক্ষার প্রথম ও শেষ উপায় হয়, তাহলে আরও জরুরি কিছু রয়ে যাচ্ছে অগোচরে। নতুন গবেষণা বলছে, এমন অবহেলা করছেন আরও অনেকেই।
ওই গবেষণার বরাত দিয়ে সিএনএন জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে ৯৩ শতাংশ প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ শুধু স্তনের তলে দলা অনুভব করলে তা স্তন ক্যান্সারের লক্ষণ বলে মনে করেন। এর অর্ধেক মানুষ অন্যান্য উপসর্গ নিয়ে ভাবেন।
দ্য ওহিও স্টেট ইউনিভার্সিটি কমপ্রিহেনসিভ ক্যান্সার সেন্টার, আর্থার জি জেমস ক্যান্সার হসপিটাল এবং রিচার্ড জে সোলোভ রিসার্চ ইনস্টিটিউট (ওএসইউসিসিসি-জেমস) এই গবেষণা চালিয়েছে।
সমীক্ষায় অংশ নেওয়া অর্ধেকেরও কম ব্যক্তি স্তন ক্যান্সারের অন্যান্য উপসর্গ নিয়ে জানেন। তারা ঝুলে যাওয়া স্তনের বোটা, দুই হাত উপরে তোলার সময় স্তন কুঁচকে যাওয়া, স্তনের কোথাও কোথাও অবশ বোধ করা, স্তনের ত্বক মোটা হয়ে যাওয়া, স্তনবৃন্ত থেকে তরল বের হওয়ার মত উপসর্গ সম্পর্কে অবগত।
ওএসইউসিসিসি-জেমসের ব্রেস্ট ক্যান্সার সাইভাইভরশিপ সার্ভিসেসের পরিচালক এবং মেডিকেল অনকোলজিস্ট অ্যাশলে প্যারিসার জানান, সমীক্ষায় অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ছিল এক হাজারের বেশি। তাদের মধ্যে মাত্র ৩১ শতাংশ জানেন যে দেবে যাওয়া স্তনবৃন্তও ক্যান্সারের লক্ষণ হতে পারে।
জরিপে দেখা গেছে, ৩৯ শতাংশ উত্তরদাতা স্তন কুঁচকে যাওয়া, ৪১ শতাংশ স্তনে অবশ বোধ করা, ৪৫ শতাংশ স্তনের ত্বক পুরু হয়ে যাওয়া এবং ৫১ শতাংশ স্তন থেকে তরল বের হওয়ার উপসর্গের কথা জানান।
চিকিৎসক প্যারিসার বলেন, “আমাদের জানার অভাব রয়েছে। দুঃশ্চিন্তার বিষয় হল, হাতের স্পর্শে স্তনের তলে দলা অনুভব করার পদ্ধতিতে অনেকের বেলাতেই ক্যান্সার ধরা পড়ে না।
”আমরা চাই মানুষ তার নিজের শরীরকে জানুক। শরীরে স্বাভাবিকতা কী তা জানা তাদের দরকার। স্তনের অনেক পরিবর্তন হয় বয়স ও সন্তান প্রসবের কারণে। তবে স্তন ক্যান্সার কিন্তু নানাভাবে শরীরে বাস করতে পারে।”
এই অনকোলজিস্ট বলেন, “সময় মত চিকিৎসকের সামনে শারীরিক পরিবর্তনগুলো নিয়ে কথা বলতে পারাটা খুব দরকার। আমরা স্তন ক্যান্সার শনাক্ত ও চিকিৎসায় অনেক আগেই দারুণ অগ্রগতি করেছি।”স্তন ক্যান্সার: সচেতন হোন ৩০ থেকেই
স্তন ক্যান্সার হতে পারে পুরুষেরও
স্তন ক্যান্সার: সচেতন হোন ৩০ থেকেই
স্তন ক্যান্সার: নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিও সামলাতে হয় নারীকে
ত্বকের ক্যান্সারের পরই নারীর স্তন ক্যান্সার ধরা পড়ার ঘটনা বেড়ে চলেছে। এ বছর আরও তিন লাখ মানুষ স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারেন এবং ৪৩ হাজার মৃত্যু হতে পারে বলে ধারণা করছে আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটি।
প্যারিসার বলেন, ”স্তন ক্যান্সারে শনাক্ত ও চিকিৎসার আমরা যতই উন্নত হই না কেন, দুর্ভাগ্য যে আমরা এমন এক বিশ্বে বাস করি, যেখানে স্তন ক্যান্সার মানুষের কাছে এখনও উৎকণ্ঠার বিষয়।”
স্তন ক্যান্সার শনাক্ত করতে হবে গোড়াতেই
স্তন ক্যান্সার নিয়ে অজ্ঞতা ভাবাচ্ছে জন হপকিনস ইউনিভার্সিটির অনকোলজি ও এপিডেমিওলজির অধ্যাপক অটিস ব্রাউলেকেও।
তিনি বলেন, “স্তন ক্যান্সার থেকে তখনই সেরে ওঠা সম্ভব... যদি তা একেবারে প্রাথমিক পর্যায়েই শনাক্ত করা যায়।”
একেবারে গোড়াতেই স্তন ক্যান্সার শনাক্তে ম্যামোগ্রাম পরীক্ষায় গুরুত্ব দিচ্ছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তাহলে চিকিৎসার মধ্যে দিয়ে সেরে ওঠা সম্ভব।
প্যারিসার বলেন, এ জন্য নারীকে তার নিজের স্তনের স্বাভাবিকতা নিয়ে জানতে হবে।
”স্তন ক্যান্সার একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্তের সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে কোনো পরিবর্তন দেখামাত্র তা আমলে নেওয়া। যদিও স্তনে পরিবর্তন দেখার আগেই স্তন ক্যান্সার শনাক্ত করা জরুরি।”
চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে
সবাইকে স্তন ক্যান্সারের উপসর্গ নিয়ে সচেতন করার অর্থ এর পরের প্রথম ধাপটিই হচ্ছে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
কিন্তু যাদের ইনস্যুরেন্স করা নেই, বা আর্থিক ভাবে অসচ্ছল, তাদের অনেকেই চিকিৎসকের কাছে যেতে চান না। ফলে স্বাস্থ্য পরীক্ষারও সুযোগ হয় না।
ব্রাউলে বলেন, ”মানুষকে নিজের শরীর নিয়ে জানতে হবে। সেই সঙ্গে মনের জোর থাকতে হবে। তাকে চিকিৎসকের কাছে গিয়ে বলতে হবে, সমস্যা বোধ করছি। পরীক্ষা করে দেখুন কী হয়েছে।”
স্তন ক্যান্সারের বেলায় পুরুষকেও এই মনোবল দেখাতে হবে বলে মনে করেন প্যারিসার।
তিনি বলেন, “যদিও পুরুষের বেলায় স্তন ক্যান্সার খুব কম হয়। এক শতাংশ পুরুষ স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়।
”এই ক্যান্সার স্তনবৃন্তে পরিবর্তন আনে। তাই পুরুষকে এই পরিবর্তন আমলে নিয়ে চিকিৎসকের কাছে তা বলতে হবে। বিশেষ করে যদি ওই পুরুষের পরিবারে আগে কারো স্তন ক্যান্সার হয়ে থাকে।”