Published : 27 Oct 2023, 03:02 PM
ক্যান্সার শনাক্তের পর স্তনের আক্রান্ত টিস্যু অপসারণ করা এক নারী তার এই অভিজ্ঞতা থেকে সবার কাছে একটাই অনুরোধ জানাচ্ছেন, সবাই যেন ম্যামোগ্রাম করেন।
যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসের কর্মী ক্যাথরিন কাউলি স্তনে কোনো রকম পিণ্ড বা অন্য উপসর্গ দেখেননি। কিন্তু গত বছর জুলাই মাসে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় ধরা পড়ে তার স্তনে ক্যান্সার প্রকৃতির টিউমার রয়েছে।
অক্টোবরে ওই টিউমার অপসারণ করেন তিনি। এরপর রেডিওথেরাপি নিতে হচ্ছে তাকে।
কাউলি বলেন, “আমি তো নিজেকে বড় করে ধন্যবাদ দিতে চাই যে আমি পরীক্ষা করাতে এসেছিলাম। কখনও কখনও আমরা এসব বিষয় আমলে সিই না। কিন্তু আমি একেবারে ঠিক সময়েই এসেছিলাম। ধরা পড়ার পরপরই এর চিকিৎসা হল কালক্ষেপণ না করেই।”
ম্যামোগ্রাম পরীক্ষা খুব দ্রুত একটি পদ্ধতি বলে জানালেন ৫৭ বছর বয়সী এই নারী। তিনি বলেন, ”আমার মনে হয় প্রত্যেকের আসা দরকার। এখানে ভয় পাওয়ার কিছু নেই।”
যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিস কর্তৃপক্ষ বলছে, স্তন পরীক্ষায় এক্স-রে ব্যবহার করা হয়। ম্যামোগ্রাম নামে এই পরীক্ষা স্তনে ক্যান্সার আছে কি না তা শনাক্ত করতে পারে। নারী স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এই পরীক্ষা পরিচালনা করেন, যাদের ম্যামোগ্রাফারস বলা হয়।
৫০ থেকে ৭১ বছর বয়সী নারীদের প্রতি তিন বছর পর পর ম্যামোগ্রাম করানোর পরামর্শ দেওয়া হয়।
বয়স ৪০ হলেই দুই বছর অন্তর নারীর ম্যামোগ্রাম করার প্রস্তাব যুক্তরাষ্ট্রে
‘পুরুষের স্তনও পরীক্ষা করা জরুরি’
স্তন ক্যান্সার: জানতে হবে নিজের শরীরকে
চেস্টারফিল্ড রয়্যাল হসপিটালের স্তন ক্যান্সার পরীক্ষা বিভাগের ম্যানেজার ক্যাটি অ্যাংগুলো বলেন, “অনেক কারণেই লোকজন শেষ পর্যন্ত আর আসে না। হয়ত এই পরীক্ষা তাদের কাছে অস্বস্তিকর। আমরা স্তনে চাপ দিয়ে পরীক্ষা করে থাকি। আর তা করা খুব জরুরি এই পরীক্ষায়।
“পরীক্ষায় প্রতিবার ছবি নেওয়ার সময় পাঁচ সেকেন্ডের জন্য এভাবে স্তনে চাপ দেওয়া হয়। একটু অসুবিধা বোধ করলেও পরীক্ষার জন্য এমন করতেই হয়।”
তিনি বলেন, ”আমাদের অনুমান বলছে, পরীক্ষায় প্রতি একশ জনে একজন নারীর ক্যান্সার ধরা পড়ে। একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে চিকিৎসার মাধ্যমে ক্যান্সার সারিয়ে তোলা সম্ভব। স্তন পরীক্ষা অনেক জীবন বাঁচাতে পারে – এ কথা তো আমরা জানি।”
নিয়মিত স্তন পরীক্ষা হচ্ছে ক্যান্সার শনাক্তের সবচেয়ে কার্যকর পন্থা। ক্যান্সারের কোষ বা টিউমার ছোট হলে স্তনে হাত দিয়ে বোঝা না গেলেও পরীক্ষায় সাধারণত ধরা পড়ে।
বিবিসি লিখেছে, যুক্তরাজ্যে স্তন পরীক্ষার কারণে প্রতি বছর ১৩০০ জীবন বেঁচে যায়। সময়মত পরীক্ষা হলে চিকিৎসায় সফলতা পাওয়ার হার যেমন বাড়ে, তেমনি কমে যায় স্তন অপসারণের ঝুঁকি। সব মিলিয়ে ক্যান্সারের সাথে লড়াই করে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
ক্যান্সার প্রাণঘাতি হয়ে উঠবে কি না তা সব সময় চিকিৎসকের পক্ষে ধারণা করা সম্ভব নয়। এই সীমাবদ্ধতার কারণে স্তন ক্যান্সার ধরা পড়লে চিকিৎসার পরামর্শ দেওয়া হয়। এতে করে অনেক সময় প্রাণঘাতি নয় এমন অনেক ক্যান্সারেও চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হয়।
কখনও কখনও ম্যামোগ্রামেও ক্যান্সার ধরা পড়ে না, এটাও একটি সীমাবদ্ধতা। আবার যদি প্রতি তিন বছর পর পর হিসাবে টানা ২০ বছর ম্যামোগ্রাম করা হয়, তাহলে এই পরীক্ষার এক্স-রে থেকেও পরবর্তী জীবনে ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি থাকে।