পাকবাহিনীকে বহুবার পদর্যুস্ত করেছিলেন ক্যাপ্টেন শচীন কর্মকার

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Dec 2016, 06:55 PM
Updated : 27 Dec 2016, 06:57 PM

ক্যাপ্টেন শচীন কর্মকার ৯ নাম্বার সেক্টরে যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। ২৫ শে মার্চ মধ্য রাতের পরে তিনি এবং রাজনীতিবিদ ওবায়দুর রহমান মোস্তফা পিকভ্যানে করে বরিশাল শহরে টহলে বেড়িয়েছিলেন। তারা গিয়েছিলেন তৎকালীন এমএলএর বাসায়। ভোর হতে তখন ঘন্টাখানেক বাকি ছিল। বরিশাল পুলিশ লাইনের এসপি তাদের অস্ত্রাগার খুলে দিয়েছিলেন এবং ক্যাপ্টেন শচীন কর্মকারসহ ১১ জন সেখান থেকে একটা করে রাইফেল সংগ্রহ করেছিলেন। তারা শপথ নিয়েছিলেন যে দেশ স্বাধীন না হওয়া পর্যন্ত তারা ঘরে ফিরবেন না।

পরদিন সকালেই ক্যাপ্টেন শচীন কর্মকার বরিশালের একটা স্পর্শকাতর এলাকার (বর্তমান এয়ারপোর্ট) নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছিলেন। পরবর্তীতে একাধিক অপারেশনে অংশগ্রহণ করেন তিনি। সর্ষিনার কাছে শতদশকাঠি এলাকায় তারা একটা অপারেশন পরিচালনা করেছিলেন। যার ফলে ছয়জন পাকিস্তানি সেনা এবং দুইজন মুক্তিযোদ্ধা মারা গিয়েছিল। এই হামলায় বেজায় চটেছিল পাকবাহিনী। তারা পরদিনই প্রায় হাজার খানেক সৈন্য নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের উপর হামলা চালিয়েছিল। ওই হামলায় ২৫০-৩০০ জন মানুষ মারা গিয়েছিল। ফলে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটতে বাধ্য হয়েছিল।

তখন মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্প কমান্ডার ছিলেন ক্যাপ্টেন মাহফুজ আলম বেগ। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের ৬ জনের এক একটা গ্রুপে ভাগ করে দিলেন। ক্যাপ্টেন শচীন কর্মকার ৬ জনের একটা গ্রুপের কমান্ডার হলেন। এরপর তাদের গ্রুপটি খুলনা হয়ে ভারতে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। পথিমধ্যে তাদের দেখা হয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মেজব ওহাবের সঙ্গে। মেজর ওহাব তাদের ৩০০ টাকা দিয়েছিলেন, যেন তারা ভারতে গিয়ে কোন কাছের ক্যাম্পে রিপোর্ট করতে পারেন। এরপর একজন স্কুল শিক্ষকও ক্যাপ্টেন শচীন কর্মকারের গ্রুপকে ভারতে যাওয়ার ব্যাপারে সাহায্য করেন।

দুটো ঘটনা মনে পড়ে যায় ক্যাপ্টেন শচীন কর্মকারের। সরূপকাঠি পেয়ারাবাগানের কিছু কুলাঙ্গার বাঙালি, পাকস্তানি সেনা সেজে লুটপাট এবং ধর্ষণ চালাচ্ছিল। সেসময়ে মুক্তিযোদ্ধারা তাদের সমূলে উৎপাটন করেছিল। আর একবার সুন্দরবনের শরণখোলায় এক জেলে তাদের পাকিস্তানি বাহিনীর কাছে ধরিয়ে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু জেলের অভিপ্রায় টের পেয়ে তারা আগেই সরে যেতে সক্ষম হয়েছিলেন।

সাতক্ষীরার কালীগঞ্জ পাকিস্তানী বাহিনীর কাছ থেকে মুক্ত হয়েছিল ২০ শে নভেম্বর। এ সময়ে মুক্তিযোদ্ধারা সদলবলে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল পাকিস্তানি বাহিনীর উপর। এ অপারশনের সমন্বয়ক ছিলেন ক্যাপ্টেন নুরুল হুদা। লেঃ মোহাম্মদ আলী, লেঃ আহসানউল্লাহ এবং শচীন কর্মকার তিনটা অপারেশনাল গ্রুপে ভাগ হয়েছিলেন। প্রচন্ড আক্রমণের মুখে পাকিস্তানি বাহিনী পিছু হটেছিল। তারা কালন্দী নদীর ওপারে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের উপর মর্টার হামলা চালায়। এতে দু’জন মুক্তিযোদ্ধা মারা যায়। মুক্তিযোদ্ধারা নদীর ওপারে গিয়ে পাকিস্তানী বাহিনীকে চ্যালেঞ্জ করে। কিন্তু পাকবাহিনী ডজ ট্র্যাক নিয়ে খুলনার দিকে পালিয়ে যায়।

ছেলে যুদ্ধে যোগ দেওয়ার অপরাধে ক্যাপ্টেন শচীন কর্মকারের বাবাকে নির্মমভাবে হত্যা করে পাকিস্তানি বাহিনী। বাবা হারানোর শোক এখনও তাড়া করে তাকে।

নতুন প্রজন্মের উদ্দেশ্যে ক্যাপ্টেন শচীন কর্মকার বলেন, ‘আমরা একটা স্বাধীন দেশ এবং মানচিত্র পেয়েছি। কিন্তু আমাদের মধ্যে বিভক্তি ক্রমেই বাড়ছে। তাই নতুন প্রজন্মের মূল দায়িত্ব হবে সমষ্টিগতভাবে একটা জাতিতে রূপান্তরিত হওয়ার সংগ্রামে নিজেদের আত্ননিয়োগ করা।’

Also Read: ক্যাপ্টেন সাহাবুদ্দিনের চোখের সামনেই বাংলার আকাশ শত্রুমুক্ত হয়েছিল

Also Read: ‘বিমানবাহিনীর অকুতোভয় যোদ্ধা ক্যাপ্টেন আলমগীর সাত্তার’

Also Read: ‘আবুল হাশেমের চোখের সামনেই মারা যান বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান’

Also Read: ‘শরীরে গুলি লাগার পরেও আব্দুল শহীদ যুদ্ধ চালিয়ে গিয়েছিলেন’

Also Read: ভুল বুঝে আক্কু চৌধুরীকে মুক্তিযোদ্ধারা ধরে নিয়েছিলেন

Also Read: ‘অপারেশন হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল - হিট এ্যান্ড রান’

Also Read: চোখে যখন প্রতিশোধের আগুন

Also Read: কবরস্থানের গর্তে দিনরাত লুকিয়ে প্রাণ বাঁচান মুক্তিযোদ্ধা খোরশেদ

Also Read: হাত-মুখে গুলি লাগার পরেও লড়াই চালিয়ে যান ফরিদ মিয়া

Also Read: বাঘা হান্নানের অ‌্যাম্বুশে ধরাশায়ী পাকিস্তানি মিলিশিয়া

Also Read: যুদ্ধের স্মৃতি এখনও আলোড়িত করে শফিকুলকে

Also Read: মুক্তির আহ্বান