‘কো-ওয়াশিং’ হল শ্যাম্পু না করে কন্ডিশনার দিয়ে চুল পরিষ্কার করার পদ্ধতি।
Published : 09 Mar 2024, 06:08 PM
সাধারণত শ্যাম্পু করার পর চুলে মসৃণভাব ধরে রাখতে কন্ডিশনার ব্যবহার করা হয়।
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কন্ডিশনার ব্যবহারে চুল হয় কোমল, মসৃণ। বিশেষ করে কোঁকড়া বা ঢেউ খেলানো কেশ আগলে রাখতে সহজ হয়।
তবে কন্ডিশনার শুধু চুলের খসখসেভাব দূর করতেই সাহায্য করে না, ময়লাও পরিষ্কার করতে পারে।
কারণ বেশিরভাগ কন্ডিশনারে অল্প মাত্রায় ‘ক্যাটিওনিক সার্ফ্যাক্ট্যান্টস’ নামক ডিটার্জেন্ট থাকে, সংক্ষেপে বলে ‘কোয়াটস’।
“সেট্রিমোনিয়াম’ ও ‘বেহেন্ট্রিমোনিয়াম ক্লোরাইড’ নামে খুব সাধারণ ধরনের এই উপাদানগুলো কন্ডিশনারের বোতলে উপাদানের তালিকায় লেখা থাকেই”- রিয়েলসিম্পল ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন নিউ ইয়র্ক’য়ের ‘রিটা হাজান স্যালন’য়ের জ্যেষ্ঠ কেশসজ্জাকর নিকোল ট্রেস।
পানিতে মেশানোর ফলে ‘কোয়াটস’ খানিকটা ময়লা তুলে ফেলতে পারে। যে কারণে শ্যাম্পু বিহীন চুলে কন্ডিশনার ব্যবহার করলে মনে হয় অল্প হলেও পরিষ্কার হয়েছে।
ট্রেস আরও বলেন, “এছাড়া শ্যাম্পু বিহীন চুলে দেহের প্রাকৃতিক তেলের পরিমাণ বেশি থাকে। এক্ষেত্রে কন্ডিশনার ব্যবহারে চুল আরও বেশি সিল্কি ও মসৃণ অনুভূত হয়।”
আর শ্যাম্পু করা ছাড়া শুধু কন্ডিশনার দিয়ে কেশ পরিষ্কারের এই পদ্ধতিকে বলা হচ্ছে ‘কো-ওয়াশিং’।
কো-ওয়াশিং’য়ের উপকারিতা
চুলের প্রাকৃতিক তেল রক্ষা করে।
মাথার ত্বক আর্দ্র রাখে।
চুলের ভঙ্গুরতা রোধ করতে পারে।
জট পাঁকা কমায়।
তাপের কারণে চুলের শুষ্কভাব ও ক্ষতি কমাতে পারে।
গোসলে সময় বাঁচায়।
আর শ্যাম্পু খরচের পরিমাণ কমায়।
কত ঘনঘন কো-ওয়াশ করা যায়?
যাদের চুল বেশি ঘন, শুষ্ক বা তাপের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তারা দুতিন দিন পর পর কো-ওয়াশ করতে পারে। যদি চুলের কোনো প্রসাধনী ব্যবহারের পর ধোয়ার প্রয়োজন হয় তবে এই পদ্ধতি অনুসরণ করা যায়।
তবে বেশি ঘনঘন ‘কো-ওয়াশ’ না করাই ভালো। কারণ কন্ডিশনার চুলের গোড়া ও মাথার ত্বক গভীর থেকে পরিষ্কার করতে পারে না।
কো-ওয়াশ করার পদ্ধতি
প্রথমে সম্পূর্ণ চুল ভালো মতো পানিতে ভিজিয়ে নিতে হবে। এতে আলগা থাকা চুল পানির সাথে চলে যাওয়ার পাশাপাশি কন্ডিশনার মাখতে সুবিধা হবে।
যথেষ্ট পরিমাণে কন্ডিশনার চুলের আগা থেকে গোড়া পর্যন্ত মাখতে হবে। মানে প্রায় টেবিল-টেনিস বলের সমপরিমাণ লাগতে পরে। মনে হতে পারে এই পরিমাণটা অনেক। তবে বুঝতে হবে এখানে ‘কন্ডিশনিং’ করা হচ্ছে না, হচ্ছে পরিষ্কার করা।
ভালো মতো মাথার ত্বকে কন্ডিশনার ঘষে উপর থেকে নিচ পর্যন্ত চুলের সব জায়গায় কন্ডিশনার ভালো মতো মাখতে হবে। এর ফলে চুলে থাকা কোনো প্রসাধনী ও তেল ভেঙে গিয়ে পরিষ্কার হবে। এরপর চুলে কন্ডিশনার শোষণের জন্য তিন থেকে পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। যদি চুল বেশি শুষ্ক হয় তবে এর চেয়েও বেশি সময় অপেক্ষা করতে হবে। অনেকটা চুলে ‘মাস্ক’ ব্যবহারের মতো।
এরপর ভালো মতো ধুয়ে চুল শুকিয়ে নিতে হবে। হয়ত এরপর খেয়াল করবেন চুল অনেক বেশি মসৃণ হয়েছে।
যেসব চুলে কো-ওয়াশিং উপকারী
শ্যাম্পু ব্যবহারে অভ্যস্ত বলে, অনেকের কাছে বিষয়টা অস্বস্তিকর লাগতে পারে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কয়েক ধরনের চুলের ক্ষেত্রে কো-ওয়াশিং উপকারী।
ঢেউ খেলানো ও কোঁকড়া: এই ধরনের চুল শুষ্ক হয় বেশি আর জটও তৈরি হয়। এক্ষেত্রে কো-ওয়াশিং চুলের মসৃণভাব বাড়ায় ফলে জটলা হয় কম।
রং করা চুল: লস অ্যাঞ্জেলেস’য়ের সেলিব্রেটি হেয়ার স্টাইলিস্ট জেন অ্যাটকিন এক্ষেত্রে বলেন, “কো-ওয়াশিংয়ে চুলের রং স্থায়ী বেশিদিন টেকে। কারণ কন্ডিশনার রংয়ের ক্ষতি কম করে।”
সঠিক কন্ডিশনার বাছাই
কারও চুল বেশি ঘন হলে, সিলিকনস সমৃদ্ধ কন্ডিশনার এড়াতে হবে। এমন উপাদানের মধ্যে আছে ‘ডিমেথিকন’, যা কন্ডিশনার বোতলে উপাদানের তালিকায় লেখা থাকবে। যদি শ্যাম্পু করা না হয় তবে সিলিকন চুল আরও ভারী করে দেয়।
যাদের চুল বেশি ঘন নয় তাদের ‘কো-ওয়াশিং’ করা যায় এমন কন্ডিশনার বেছে নিতে হবে। এসবে ‘কন্ডিশন’ করার উপাদানের চাইতে প্রকৃতিক পরিষ্কারক বেশি থাকে, যেমন- অ্যালো ভেরা সমৃ্দ্ধ কন্ডিশনার।
আরও পড়ুন