Published : 21 Jun 2023, 04:17 PM
গোসলের পর শুকনা পরিষ্কার তোয়ালে দিয়ে গা মুছতে বেশ লাগে। আর তারপরেই সেটা হয়ে যেতে পারে জীবাণুর আখড়া।
কারণ শরীর মোছার পর তোয়ালে ভিজে থাকে। আর ভেজা অবস্থায় সেখানে ব্যাক্টেরিয়া ও ফাঙ্গাস জন্মানোর পরিবেশ সৃষ্টি হয়ে যায়।
আর শরীর থেকেই বিভিন্ন ধরনের জীবাণু তোয়ালেতে স্থানান্তরিত হয়।
তাই যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অফ ওয়েস্টমিনিস্টার’য়ের মেডিকেল মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক মানাল মোহাম্মেদ, সপ্তাহে অন্তত একবার তোয়ালে ধোয়ার পরামর্শ দেন।
সিএনএন ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তিনি বলেন, “তোয়ালে ধোয়ার ক্ষেত্রে এটাই সাধারণ চলতি রীতি।”
তোয়ালে একবার ব্যবহারের পর না ধুয়ে পুনরায় ব্যবহার করা কি উচিত?
না ধুয়ে কয়েকবার ব্যবহার করাই যায়। আর সেটা পরিবেশের জন্যও ভালো।
“তবে তোয়ালে থেকে কোনো অদ্ভূত গন্ধ পেলেই বুঝতে হবে অবশ্যই ধোয়ার সময় হয়ে গেছে। এই গন্ধই নির্দেশ করে, সেখানে ব্যাক্টেরিয়া ও ফাঙ্গাসের বিস্তার ঘটছে”, বলেন মোহাম্মেদ।
তিনি বলেন, “যতটা মনে করা হয়, ততটা পরিষ্কার থাকেনা তোয়ালে। এই কারণে করোনাভাইরাস মহামারীর সময় আক্রান্ত রোগীর সব কিছুর সাথে তোয়ালেও আলাদা করে রাখতে বলা হত। তাছাড়া সবসময়ের জন্য মনে রাখতে হবে একটি তোয়ালে থেকে পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মাঝেও জীবাণু ছড়ানোর সমূহ সম্ভাবনা থাকে।”
তোয়ালেতে যেভাবে জীবাণু জন্মায়
প্রতিবার ব্যবহার বা স্পর্শ করার মাধ্যমে শরীর থেকে জীবাণু তোয়ালেতে লেগে যায়। যে কারণে করোনাভাইরাস মহামারীর আগে থেকেই ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান পানি দিয়ে হাত ধোয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
মোহাম্মেদ বলেন, “২০ সেকেন্ড ধরে হাত না ধুলে, বিশেষ করে টয়লেট করে আসার পর- হাত ভর্তি জীবাণু বিচরণ করতে থাকে। যা কি-না সহজেই তোয়ালেতে স্থানান্তরিত হয়।”
আর সঠিকভাবে তোয়ালে ধোয়া না হলে আরও বেশি নোংরা হতে পারে।
যে কোনো অন্তর্বাসের সঙ্গে ধুলে জীবাণু আরও বেশি তোয়ালেতে লেগে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যেখান থেকে চর্ম ও যৌন রোগের মতো ছোঁয়াচে সংক্রমণ ছড়ানোর সম্ভাবনা বাড়ে।
একই কারণে বমি ও শরীরের যে কোনো তরল লেগে থাকা কাপড়ের সঙ্গেও তোয়ালে ধোয়া উচিত না।
ধোয়ার পাশাপাশি তোয়ালে ভালো মতো শুকানোর প্রয়োজনও আছে। না হলে সেখানে জীবাণু জন্মানোর সুন্দর পরিবেশ তৈরি হয়।
মোহাম্মেদ বলেন, “ব্যবহার করা ভেজা তোয়ালে স্যাঁতস্যাঁতে বাথরুমের পরিবেশে জীবাণু জন্মাতে সাহায্য করে। যদিও এসব জীবাণুর বেশিরভাগই ক্ষতিকর নয়। তবে কিছু ব্যাক্টেরিয়া স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া ফেলতে পারে, হতে পারে সংক্রমণ। বিশেষ করে কোনো কাটাছেড়া থাকলে কিংবা যাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল।”
তোয়ালে কতটা নোংরা হতে পারে?
মোহাম্মেদ জানান, একই তোয়ালে কয়েকজন ব্যবহার করলে ফাঙ্গাসসহ যেসব জীবাণু চুলকানি সৃষ্টি করে সেগুলো ছড়ায়। ‘অ্যাথলেট’স ফুট’ সংক্রমণ তৈরি করে অর্থাৎ দাউদের মতো চর্মরোগ ছড়ায় ‘ডার্মাটোপ্যাথিক ফাঙ্গি’ থেকে।
“তাই প্রিয় খেলোয়াড়ের ঘামে ভেজা তোয়ালে সংগ্রহ করার মতো উত্তেজনা পরিহার করাই উচিত হবে”, বলেন এই অধ্যাপক।
কিছু সংক্রমণ বিপজ্জনক মাত্রায় পৌঁছাতে পারে। যেমন ‘স্ট্যাফেলোককাস ব্যাক্টেরিয়া’, এটা সাধারণত আমাদের ত্বকেই বাস করে। তবে কোনো ক্ষতর মধ্যে প্রবেশ করলে অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী অবস্থার তৈরি করে।
ব্রণ সৃষ্টিকারী ব্যাক্টেরিয়া ছড়াতে পারে তোয়ালে থেকে। তাই মোহাম্মেদ, অন্যদের সাথে তোয়ালে ভাগাভাগি না করার পরামর্শ দেন।
এছাড়া চোখ লাল হওয়া, চোখ ওঠা বা ‘কনজাংটিভাইটস’সের মতো রোগও হয়, যদি ব্যবহার করা তোয়ালে মুখ ও চোখের সংস্পর্শে আসে।
তোয়ালে বেশিরভাগ সময় বাসার সবচেয়ে জীবাণু মুখর স্থানে থাকে। সেটা হল বাথরুম বা টয়লেট। আর কমোড ‘ফ্লাশ’ করার পর জীবাণু, যেমন- ই.কোলি- বাতাসে ভেসে বেড়ায় আর যেসবের আশ্রয় হয় তোয়ালে।
এই ধরনের ব্যাক্টেরিয়া সাধারণভাবে আমাদের হজমতন্ত্রেই বসবাস করে। তবে এগুলো মলসংক্রান্ত সমস্যা, খাদ্যে বিষক্রিয়া ও মূত্রনালীর প্রদাহের জন্য দায়ী।
রান্নাঘরে ব্যবহার করা তোয়ালে ও গোসলের তোয়ালে আলাদা ধোয়ার মাধ্যমে জীবাণু ছড়ানোর ঝুঁকি কমানো যায়।
তোয়ালে পরিষ্কার রাখতে
প্রথম ধাপ হচ্ছে তোয়ালে কারও সাথে ভাগাভাগি না করা। হাত মোছার জন্য যেসব তোয়ালে রাখা হয়, সেগুলো প্রতিদিন পরিষ্কার করতে হবে। এক্ষেত্রে নিরাপদ হল টিস্যু ব্যবহার।
সম্ভব হল অন্য কোনো কিছুর সাথে তোয়ালে ধোয়া পরিহার করতে হবে। অন্তত অন্তর্বাসের সাথে ধোয়া যাবে না।
ধোয়ার ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে হবে গরম পানি।
মোহাম্মেদ বলেন, “ওয়াশিং মেশিনে গরম পানির ব্যবস্থা থাকলে, অবশ্যই গরম পানি ব্যবহার করতে হবে। হাতে ধোয়ার ক্ষেত্রে পানি ফুটিয়ে ব্যবহার করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। যদি সাধারণ সাবান দিয়ে ধোয়া হয় তবে পানি গরম করা উচিত হবে ৯০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায়। তবে ব্লিচ সমৃদ্ধ পরিষ্কারক ব্যবহারে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস মাত্রায় পানি গরম থাকা উচিত।”
আর ধোয়ার পর প্রতিবার ব্যবহারের ক্ষেত্রে তোয়ালে ভালোমতো শুকনা থাকতে হবে।
আরও পড়ুন:
হয়ত তোয়ালেগুলো ঠিক মতো পরিষ্কার করছেন না