চুল কোমল ও মসৃণ রাখতে কন্ডিশনার ব্যবহারের প্রয়োজন হয়।
Published : 10 Jan 2024, 10:24 AM
শ্যাম্পু মাথার ত্বকের ঘাম ও ময়লা দূর করে। আর কন্ডিশনার চুল কোমল ও আর্দ্র রাতে সহায়তা করে।
যাদের চুল শুষ্ক ও রুক্ষ তাদের জন্য কন্ডিশনার ব্যবহার বিশেষভাবে প্রয়োজন। প্রাকৃতিক কন্ডিশনার চুলের কোনো রকম ক্ষতি ছাড়াই এর আর্দ্রতা ধরে রাখতে সহায়তা করে।
যেসব কারণে চুল শুষ্ক ও রুক্ষ হয়
আবহাওয়ার শুষ্কতা ও বাতাস এবং সূর্যালোক বেশি পড়ে এমন জায়গায় থাকার ফলে চুলের আর্দ্রতা হারিয়ে যেতে পারে।
খুব কম অথবা খুব বেশি মাত্রার আর্দ্রতা চুলকে শুষ্ক ও রুক্ষ করে তোলে। কম আর্দ্রতা চুলের আর্দ্রভাব কেড়ে নেয়। অন্যদিকে, পরিবেশের বাড়তি আর্দ্রতার ফলে চুল অতিরিক্ত আর্দ্রতা শোষণ করে। ফলে কোঁকড়ানো ও রুক্ষ হয়ে যায় চুল- জানান ভারতীয় কসমেটোলজিস্ট এবং ত্বক বিশেষজ্ঞ ডা. যতিন মিত্তাল।
খুব ঘন ঘন চুল ধোয়ার ফলে এর প্রাকৃতিক তেল নষ্ট হয়। ফলে চুল রুক্ষ হয়ে পড়ে।
শ্যাম্পু, কন্ডিশনার এবং অন্যান্য স্টাইলিং সামগ্রীর কড়া রাসায়নিক চুলকে রুক্ষ ও শুষ্ক করে দেয়।
চুলে ঘন ঘন তাপীয় স্টাইলিং যন্ত্রের ব্যবহার যেমন- আয়রন বা ব্লো ড্রায়ার চুলের আর্দ্রতা শোষণ করে অনেক বেশি রুক্ষ করে ফেলে।
বিভিন্ন ধরনের ট্রিটমেন্ট যেমন- স্থায়ীভাবে চুল সোজা করা অথবা কোঁকড়া করা চুলকে দুর্বল করে ফেলে। আর চুলকে অনেক বেশি ভঙ্গুর ও রুক্ষ করে দেয়।
রাসায়নিক উপাদান যেমন- চুলে রং করা বা ব্লিচ করা ক্ষতিকর। ফলে চুলে জট বাঁধে ও রুক্ষ হয়ে যায়।
অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, পুষ্টির ঘাটতি, ভিটামিন ও প্রোটিনের অভাব চুলের স্বাস্থ্যকে দুর্বল করে ফেলে।
অনেকের চুল প্রাকৃতিকভাবেই শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে থাকে। এটা বংশগতির কারণে হয়।
পর্যাপ্ত পানি পানের অভাবে সার্বিক স্বাস্থ্য তথা চুলের স্বাস্থ্য খারাপ হতে পারে।
চুলের প্রতি অসহিষ্ণু আচরণ, অতিরিক্ত চুল আঁচড়ানো অথবা ভুল চিরুনীর ব্যবহারের ফলে কিউটিকল ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যায়। ফলে চুল নিস্তেজ হয়ে যেতে পারে।
কড়া পানি বা উচ্চমাত্রার ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ পানি ব্যবহার চুলকে রুক্ষ করে ফেলে।
রুক্ষ চুলের জন্য প্রাকৃতিক কন্ডিশনার
“শুষ্ক চুল নিয়ন্ত্রণের প্রধান উপায় হল কন্ডিশনার ব্যবহার”- হেল্থশটস ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে মন্তব্য করেন ডা. মিত্তাল।
তার মতে প্রাকৃতিক কন্ডিশনার ব্যবহার চুলের ক্ষতি ছাড়া কোমল ও মসৃণ রাখতে সহায়তা করে।
প্রাকৃতিকভাবে চুল ‘কন্ডিশন’ করে এমন কয়েকটি উপাদানের মধ্যে আছে-
অ্যালো ভেরার জেল: অ্যালো ভেরার তাজা পাতা থেকে জেল আলাদা করে সরাসরি চুলে ব্যবহার করতে হবে। ১৫ থেকে ২০ মিনিট অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলতে হবে।
দই ও ডিম: এক কাপ দইয়ের সাথে একটি ডিম ফেটে নিতে হবে। মিশ্রণটি চুলে মেখে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করে সাধারণ পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
অ্যাপল সাইডার ভিনিগার: সামান্য পরিমাণ অ্যাপল সাইডার ভিনিগারের সাথে কিছুটা বেশি পরিমাণ পানি মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করতে হবে। শ্যাম্পু করার পরে এই মিশ্রণ দিয়ে চুল ও মাথার ত্বক ভিজিয়ে রেখে কয়েক মিনিট অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলতে হবে।
মধু ও দই: সম-পরিমাণ মধু ও দই মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করে চুলে ব্যবহার করতে হবে। ২০ থেকে ৩০ মিনিট অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলতে হবে।
গ্রিন টি: এক কাপ গ্রিন টি পানিতে ফুটিয়ে ঠাণ্ডা করে নিতে হবে। শ্যাম্পু করার পরে গ্রিন টি চুলের ঢেলে দিতে হবে। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলতে হবে।
উপরে উল্লেখিত উপাদানগুলো প্রাকৃতিকভাবে চুল কোমল করার পাশাপাশি রুক্ষ ও শুষ্ক ভাব দূর করতে সহায়তা করে।
কতদিন পর পর এই প্রাকৃতিক কন্ডিশনার ব্যবহার করা যাবে?
ডা. যতিন মিত্তালেরমতে, সাধারণত এক সপ্তাহ থেকে ১০ দিন পর পর এই প্রাকৃতিক কন্ডিশনে চুলে ব্যবহার করা যায়।
তবে ব্যবহারের সময় খেয়াল করতে হবে যে, চুল এগুলোর প্রতি কেমন প্রতিক্রিয়া করে এবং কতদিন পর পর ব্যবহারে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
অনেকেই সপ্তাহে একবার ডিপ কন্ডিশন করে উপকার পায়। কেউ আবার এর চেয়ে বেশিদিন পর ব্যবহারে উপকার পান।
এটা মূলত নির্ভর করে চুলের ধরন, পরিবেশ ও জীবনযাত্রার ধরনের ওপর।
প্রাকৃতিক কন্ডিশনার ব্যবহারের ক্ষেত্রে যে সকল বিষয় মনে রাখা প্রয়োজন
কন্ডিশনার চুলের সব জায়গায় সমানভাবে ব্যবহার করতে হবে বিশেষ করে যে অংশে শুষ্কতার ভাব বেশি সেখানে।
মোটা দাঁতের চিরুনি ব্যবহার করে সম্পূর্ণ চুলে ছড়িয়ে দিতে হবে।
এগুলো ব্যবহারের পরে চুল শাওয়ার ক্যাপ অথবা তোয়ালে দিয়ে কিছুক্ষণ পেঁচিয়ে রাখলে ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।
যে কোনো উপাদান ব্যবহারের আগেই অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া হয় কি-না সেটা দেখে নিতে হয়। এজন্য ‘প্যাচ টেস্ট’ করা উচিত।
প্রয়োজনে নিজে চুলের সাথে মানানসই অন্য কোনো উপাদান যোগ করা যেতে পারে। মাথার ত্বকে যেন কোনো বাড়তি অংশ বিশেষ থেকে না যায় সেজন্য ভালোমতো চুল ধুয়ে নিতে হবে।
আরও পড়ুন
ঋতু পরিবর্তনের সময় চুলের যত্ন নিয়ে যত ভুল ধারণা