Published : 13 Dec 2022, 05:55 PM
হৃদরোগ বয়স্কদের হয়। তবে একথা আর ঠিক নয়।
বর্তমানে তরুণ বয়সেই অনেকে হৃদরোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। তাই বয়স ত্রিশের কোঠায় আসার পর থেকেই হৃদযন্ত্রের প্রতি যত্নশীল হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা।
অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, অনিয়মিত জীবনযাপন, ঘুমের অভাব, উচ্চ রক্তচাপ ও কোলেস্টেরলের সমস্যা কিংবা বংশগত কারণ ছাড়াও বর্তমানে হৃদরোগ হওয়া আরেকটি কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে সামাজিক চাপ।
এই বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যানসাস সিটি’র ‘সেইন্ট লিউক’স হেল্থ সিস্টেম’য়ের সহ-সভাপতি ও হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. মিখাইল কোসিবোরাড বলেন, “তরুণ বয়সে বেশিরভাগের হৃদরোগের কারণ হিসেবে আমরা দেখতে পাচ্ছি ‘সোসিওইকোনমি ফ্যাক্টর’, যাকে আমরা বলছি ‘স্বাস্থ্যের সামাজিক ছক।”
এর ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ডা. কোসিবোরাড ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “সামর্থ অনুযায়ী স্বাস্থ্যসেবা না পাওয়া, অর্থাৎ প্রান্তিক জনগোষ্টির স্বাস্থ্যসেবা কম পাওয়া, পাশাপাশি শিক্ষা ও চাকরির সুযোগ কমাও সুস্থ থাকা ও সার্বিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব বিস্তার করে।”
এছাড়াও রয়েছে সুখাদ্য যেমন- নিয়মিত ফল ও সবজি খেতে না পারা এবং ব্যায়াম করার নিরাপদ স্থানের অভাব।
এসব বিষয় মাথায় রেখে ডা. কোসিবোরাড হৃদযন্ত্র ভালো রাখতে তিনটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেন।
বর্তমান অভ্যাসের দিকে নজর দেওয়া, প্রয়োজনে পরিবর্তন করা
বংশগতি সার্বিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেললেও, হৃদরোগ হওয়ার ক্ষেত্রে দৈনিক অভ্যাসও গোনায় ধরতে হয়।
ডা. কোসিবোরাড বলেন, “তরুণ বয়সেই জীবন ধারনের সামান্যতম পরিবর্তনও হৃদরোগের ঝুঁকি কমিয়ে ফেলতে পারে।”
প্রতিদিন কী খাওয়া হচ্ছে, কতটুকু শারীরিক পরিশ্রম হচ্ছে আর কতটা মানসিক চাপে আছেন- এই তিন বিষয় নজরে রাখার পরামর্শ দেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ সংস্থা’র তথ্যানুসারে হৃদরোগ হওয়ার জন্য তিনটি বিষয় হল- উচ্চ রক্তচাপ, উচ্চ কোলেস্টেরল এবং ধূমপান।
এছাড়া বয়স ও পারিবারিক কারণগুলো নিয়ন্ত্রণ করা যায় না।
তবে সুষম খাবার খাওয়া, যেমন- চর্বিহীন প্রোটিন, ফল ও সবজি খাওয়া, প্রতিদিন নড়াচড়া একটু বেশি করা, হতে পারে সেটা হাঁটা- এসব অভ্যাস গড়লে হৃদযন্ত্র ভালো রাখা যায় বলে জানা ডা. কোসিবোরাড।
ঘুম প্রাধান্য দেওয়া
হৃদযন্ত্র ভালো রাখার যতগুলো বিষয় আছে এর মধ্যে ঘুম অন্যতম। ‘আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন’ এই ঘুমের বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছে সম্প্রতি।
হৃদসংক্রান্ত যে কোনো রোগের ঝুঁকি কমাতে রাতে অন্তত সাত থেকে নয় ঘণ্টা ঘুম নিশ্চিত করতে হবে। আট ঘণ্টাতো অবশ্যই। এর ফলে রক্ত চাপ ও রক্তের শর্করার মাত্রা স্বাভাবিক মাত্রায় থাকবে।
পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া ও নিয়মিত শরীরচর্চার বিষয় তো আছেই।
“এসব করতে পারলে উচ্চ রক্তচাপ ও কোলেস্টেরলের সমস্যা, ডায়াবেটিস এবং ঘুমের সমস্যা প্রতিহত করা যায়। যার ফলশ্রুতিতে হৃদরোগ হওয়ার ঝুঁকি কমে”, বলেন ডা. কোসিবোরাড।
নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা
হৃদযন্ত্র ভালো রাখার আরেকটি পন্থা হল নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো। এর ফলে জটিল রোগ বাঁধানোর আগেই সাবধান হওয়া যায়। বিশেষ করে পারিবারিকভাবে যদি হৃদরোগের ইতিহাস থাকে তবে নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার বিষয়টি গুরুত্ব দিতে হবে।
ডা. কোসিবোরাড বলেন, “অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে প্রয়োজনী পরীক্ষা নিয়মিত করাতে হবে। এর ফলে কোলেস্টরল, রক্ত চাপ ও শর্করার মাত্রার পরিমাণ নজরে থাকবে। আর এগুলো হৃদরোগ বাঁধানোর প্রধান কারণ।”
তবে নিয়মিত ডাক্তারের কাছে যাওয়ার উপায় না থাকলে বা খরচের কথা চিন্তা করে পিছিয়ে যাওয়ার চাইতে নিজের রক্ত চাপ নিজেই নজরে রাখার পরামর্শ দেন ডা. কোসিবোরাড।
জাপানের ‘দি হাইপারটেনশন কার্ডিওভাস্কুলার আউটকাম প্রিভেনশন অ্যান্ড এভিডেন্স ইন এশিয়া’ ও ‘জিচি মেডিকেল ইউনিভার্সিটি স্কুল অফ মেডিসিন’য়ের কার্ডিওভাস্কুলার মেডিসিন’ বিভাগের গবেষণার বরাত দিয়ে এই চিকিৎসক জানান, কোনো সেবমূলক প্রতিষ্ঠানে যাওয়ার চাইতে ঘরেই রক্তচাপ পর্যবেক্ষণে রাখার ফলে উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদসংক্রান্ত রোগ প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে।
এই ক্ষেত্রে ডা. কোসিবোরাড পরামর্শ দেন, “নিয়মিত পরীক্ষার পর সেই তথ্য টুকে রাখতে হবে। এমনকি সামন্যতম খারাপ লাগার বিষয়গুলোও নোট করতে হবে। তারপর সময় মতো চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে চলতে হবে।”
এতে যেমন হৃদরোগ হওয়ার ঝুঁকি কমানো যায় তেমনি রোগের প্রাথমিক অবস্থাতেই চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব হয়। ফলে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনাও বাড়ে।
আরও পড়ুন