মুখের মতো মাথাতেও ব্রণের সমস্যা হতে পারে। নিরাময়ে রয়েছে নানান পন্থা।
Published : 21 Jan 2025, 02:51 PM
খুশকি, চুলকানি ছাড়াও মাথার ত্বক অর্থাৎ ‘স্ক্যাল্প’য়ে ব্রণ ওঠার সমস্যাও দেখা দেয়।
আর সেটা হয়তো বোঝা যায়, মাথায় আঙ্গুল বুলাতে গিয়ে, কিংবা হঠাৎ চুলাকানির অস্বস্তিতে।
মাথার ত্বকে এই ছোট ফোড়া ওঠাকে বলা হয় ‘স্ক্যাল্প একনি’ বা মাথার ব্রণ।
এই তথ্য জানিয়ে ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্রর বেভার্লি হিল্স নিবাসী চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ওহারা আইভাজ বলেন, “বিভিন্ন কারণে মাথায় ব্রণ উঠতে পারে। যেমন- অতিরিক্ত তেল নিঃসরণ, প্রদাহ, হরমোনের পরিবর্তন, লোমকূপের আবদ্ধতা এবং ব্রণ তৈরির জন্য দায়ী ‘প্রোপিওনিব্যাক্টেরিয়াম’ ব্যাক্টেরিয়ার অতিবৃদ্ধি।”
চুলের ব্যবহৃত প্রসাধনী থেকেও এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।
“চুলে ব্যবহার যোগ্য প্রসাধনীতে থাকা কিছু উপাদানও মাথায় ব্রণ তৈরি করতে পারে”- একই প্রতিবেদনে ব্যাখ্যা করেন নিউ ইয়র্ক সিটি ভিত্তিক ত্বক-বিশেষজ্ঞ ডা. শিরিন টেমোর।
তিনি ব্যাখ্যা করেন, “এই ধরনের ব্রণ সাধারণত চুলের রেখা ধরে এবং গোড়ায় যেখানে প্রসাধনী জমে থাকতে পারে, সেখানে দেখা দেয়।”
‘স্ক্যাল্প একনি’ নাকি ‘স্ক্যাল্প ফলিকিউলাইটিস’
‘স্ক্যাল্প ফলিকিউলাইটিস’ হলেও মাথায় ছোট ফোড়ার মতো হয়। তবে সেটা আবার ব্রণ নয়।
ডা. আইভাজ ব্যাখ্যা করেন, “লোমকূপ, তেল নিঃসরণ এমকি হরমোনের পরিবর্তন থেকে মাথায় ব্রণের সমস্যা দেখা দেয়। আর ‘স্ক্যাল্প ফলিকিউলাইটিস’ হয় ইস্ট বা ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ থেকে।”
দুটার মধ্যে পার্থক্য করাও সহজ।
ডা. টেমোর বলেন, “মুখের মতোই দেখতে হয় মাথার ব্রণ। ওঠে চুলের রেখা বরাবর এবং মাথার ত্বকে। উঁচু ও গোটার মতো হয়। আর ‘ফিলিকিউলাইটিস’ হয় চুলের ফলিকল বা লোমকূপ যখন ব্যাক্টেরিয়া বা ফাঙ্গাসের মাধ্যমে সংক্রমিত হয়।”
ফলে আকারে সমান ও ছোট হয়, চুলকায় এবং সাধারণ ব্রণের থেকে বেশি ব্যথাযুক্ত হয়।
“তবে ভালো খবর হল, দুটোর চিকিৎসা পদ্ধতি এক।”- বলেন ডা. আইভাজ।
সমাধান
বেশ কয়েক রকম উপাদান দিয়ে মাথার ত্বকের ব্রণ নিরাময় করা যায়।
স্যালিসাইলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ শ্যাম্পু: এই ধরনের শ্যাম্পু মাথার লোমকূপ বা চুলের গোড়ার আবদ্ধতা পরিষ্কার করে আর্দ্রতা দূর না করেই।
ডা. টেমোর বলেন, “স্যালিসাইলিক অ্যাসিড হল ‘বেটা-হাইড্রোক্সি অ্যাসিড (বিএইচএ), যা মরা চামড়া দূর করে আর তেল নিঃসরণ কমায়। এই দুইটাই ব্রণের সমস্যা কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখে।”
কিটোকোনাজল সমৃদ্ধ শ্যাম্পু: ব্রণ নিরাময়ের ক্ষেত্রে এটা আরেকটি শক্তিশালী উপাদান।
ডা. টেমোর বলেন, “এটা ব্রণ দূর করার পাশাপাশি চুল বৃদ্ধিতেও ভূমিকা রাখে। আমি বলবো সপ্তাহে তিনদিন ব্যবহার করতে। আর মেখে তিন মিনিট অপেক্ষা করতে হবে ভালো মতো কাজ হওয়ার জন্য।”
প্রাকৃতিক সমাধানে হিসেবে টি ট্রি অয়েল: ব্যাক্টেরিয়া রোধী প্রাকৃতিক উপাদান থাকে। আর প্রদাহ কমায়। যা মাথার ত্বকের জন্য উপকারী।
তবে সংবেদনশীল ত্বক হলে ব্যবহারের আগে খানিকটা পরখ করে নেওয়ার পরামর্শ দেন, ডা. টেমোর। কারণ কারও কারও ক্ষেত্রে টি ট্রি অয়েল ত্বকে অস্বস্তি তৈরি করে।
নির্দিষ্ট পণ্য ব্যবহার: মাথার ত্বকের ব্রণ নিরাময়ের জন্য সরাসরি ব্রণে ব্যবহার করা যায় ‘বেঞ্জয়েল পারোক্সাইড স্পট ট্রিটমেন্ট’। তবে মনে রাখতে হবে এটা চুল পাতলা করে দিতে পারে।
সালফেট যুক্ত শ্যাম্পু: সাধারণত বলা হয়, সালফেট মুক্ত শ্যাম্পু ব্যবহার করতে।
তবে ডা. আইভাজ বলেন, “মাথার ময়লা পরিষ্কারের জন্য সালফেট যুক্ত শ্যাম্পু কার্যকর। অনেক সালফেট মুক্ত শ্যাম্পু মাথার ত্বকের তেল ভালো মতো পরিষ্কার করতে পারে না। যে কারণে মাথায় ব্রণ দেখা দেয়।”
এছাড়া রোগের মাত্রা বেশি হলে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ গ্রহণের মাধ্যমেও মাথার ব্রণ নিরাময় করা সম্ভব।
দূরে রাখার পন্থা
লোমকূপ যাতে আটকে না দেয় সেজন্য ‘অয়েল ফ্রি’ বা তেলহীন শ্যাম্পু, কন্ডিশনার এবং স্টাইল করার পণ্য ব্যবহার করতে হবে।
যারা টুপি পরেন বা মাথা নিয়মিত ঢেকে রাখেন তাদের মাথায় তেল নিঃসরণ বেড়ে ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ দেখা দেয়। তাই তাদের নিয়মিত মাথা পরিষ্কার করতে হবে।
নিয়মিত এক্সফলিয়েট, মানে মাথা ভালোমতো ঘষে মেজে পরিষ্কার করতে হবে। সাধারণত যাদের ত্বক ও চুল তৈলাক্ত তাদের মাথায় ব্রণের সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এক্ষেত্রে ‘গ্লাইকোলিক অ্যাসিড’ সমৃদ্ধ শ্যাম্পু দিয়ে নিয়মিত মাথা ভালোমতো এক্সফলিয়েট করলে ব্রণ দূরে রাখা সম্ভব হবে।
আরও পড়ুন
শুষ্ক ও রুক্ষ মাথার ত্বকের জন্য ‘স্ক্যাল্প অয়েল’
মাথার ত্বকের সুস্থতার ওপর নির্ভর করে চুলের স্বাস্থ্য