ওজন কমাতে মনোডায়েট কতটা উপকারী?

যে কোনো একটি খাবার খেয়ে ওজন কমানোর চেষ্টায় দেখা দেয় পুষ্টিহীনতা।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 May 2023, 12:04 PM
Updated : 17 May 2023, 12:04 PM

শুধু কলা খেয়ে যদি দেহের বাড়তি ওজন কমানো যেত, তবে বিষয়টা কতই না আনন্দের হত।

মানে কষ্ট করে ব্যায়াম না করেই দেহের বাড়তি ওজন ঝরানো যেত।

তবে ওজন কমাতে খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়াম, জীবনযাপনে নিয়ন্ত্রণ- বিভিন্ন বিষয়ে নজর দিতে হয়।

তবে ওজন কমানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের ‘ডায়েট’য়ের প্রচলন রয়েছে। এরমধ্যে একটি হল ‘মনোট্রপিক ডায়েট’ বা ‘মনো ডায়েট’।

এই বিষয়ে চেন্নাইয়ের ‘মাদারহুড হসপিটাল’য়ের পরামর্শক, খাদ্যবিশেষজ্ঞ ও পুষ্টিবিদ হরি লাক্সমি হেল্থশটস ডটকমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “এটা একটা সহজ খাদ্যাভ্যাস, দৈনিক প্রতিবেলার খাবারে একই খাবার খাওয়া।”

ওজন কমাতে মনোট্রপিক ডায়েটের ভালো ও খারাপ দিক সম্পর্কে জানান তিনি।

মনোট্রপিক ডায়েট বলতে যা বোঝায়

এটা খুব সহজ একটা খাদ্যাভ্যাস যেখানে একজন ব্যক্তি প্রতিবেলায় একই খাবার যেমন- কলা খাবেন কয়েকদিন বা সপ্তাহ যাবত।

যারা ওজন কমাতে খুব একটা চাপ নিতে চান না বা সহজ উপায় খোঁজেন তাদের জন্য সেরা উপায়। এটার সবচেয়ে সুবিধাজনক দিক হল দ্রুত ওজন হ্রাস।

ওজন কমাতে মনোট্রপিক ডায়েট কতটা কার্যকর?

মনোট্রপিক ডায়েট ক্যালরি গ্রহণ বন্ধ করে, যা দ্রুত ওজন কমাতে সহায়ক। তাই ওজন কমাতে এটা নির্দ্বিধায় ভালো কাজ করে।

তবে দীর্ঘমেয়াদের জন্য মোটেও ভালো নয়। অনেকেই ওজন কমানোর অন্যান্য পদ্ধতির আগেই এই খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করে থাকেন।

লাক্সমি বলেন, “মনোট্রপিক ডায়েটে নির্দিষ্ট কোনো নিয়ম অনুসরণ করতে হয় না, তবে এর কিছু সীমাবদ্ধতা আছে এবং অনেক উপকারী খাবার বাদ দিতে হবে। সাধারণত, সব ধরনের পুষ্টি উপাদান আছে এমন খাবার নির্বাচনের পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে একাধিক খাবার গ্রহণের নিষেধাজ্ঞা থাকার কারণে দেহে পুষ্টি ঘাটতি দেখা দিতে পারে।”

ফলে পুষ্টিহীনতা ও পেশি হ্রাস দেখা দেয়। যা পরবর্তি সময়ে বিপাকক্রিয়াকে ধীর করে ফেলে। এই কারণে পরে ওজন কমানো আরও কঠিন হয়ে যায়।

বিপাকক্রিয়া কমে যাওয়ায় পরে স্বাভাবিক খাবার গ্রহণ করা শুরু করলে ওজন দ্রুত বেড়ে যায়।

মনোট্রপিক ডায়েটের কছু ক্ষতিকারক দিক রয়েছে। যেমন-

অল্প মেয়াদে ওজন হ্রাস

এক ধরনের খাবার খাওয়া হলে তা ক্যালরি গ্রহণের মাত্রা কমায় এবং এর ফলে দেহে পানি হ্রাস পায় ও ফোলাভাব কমে। এই প্রক্রিয়ায় পেশির ভরও হ্রাস পায় তাই ওজন দ্রুত কমে।

ক্ষুধা বাড়ে

অধিকাংশ খাবার মেনু থেকে বাদ দেওয়াতে খাবারের প্রতি চাহিদা বাড়ে। ফলে অধি আহার ও ঘন ঘন আহারের ঝুঁকি বাড়ে। যেসকল ব্যক্তির নিজেদের প্রতি নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেন না তাদের মাঝে এই সমস্যা বেশি দেখা দেয়।

বিপজ্জনক সীমাবদ্ধতা

মনোডায়েটে খাবারে গুরুত্বপূর্ণ নিষেধাজ্ঞা থাকায় তা ভবিষ্যতে কোষ্ঠকাঠিন্য, অনিয়মিত মাসিক, পানিশূন্যতা, ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্যহীনতা, পিত্তথলির পাথর, ক্লান্তিভাব, বিপাক হ্রাস, পেশি ক্ষয় ও অপুষ্টি থেকে শুরু করে নানা-রকম গুরুতর স্বাস্থ্য ঝুঁকি দেখা দিতে পারে।

অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তুলে

ওজন কমানো একটা প্রক্রিয়া যেখানে সঠিক ওজন ধরে রাখতে হয়। এজন্য খাবার সম্পর্কে সঠিক বিশ্লেষণ থাকা জরুরি।

মনোডায়েটের ক্ষেত্রে কেবল একটি খাবার বাছাই করে নেওয়া হয় বলে এতে ওজন কমে ঠিকই কিন্তু সাথে দেখা দেয় অপুষ্টি।

তাছাড়া, অনেক সময় এর ফলে ‘ইটিং ডিজঅর্ডার’ দেখা দেয়। ওজন কমাতে সুষম খাবারের পাশাপাশি শরীরচর্চা ও পর্যাপ্ত ঘুম উপকারী।

পুষ্টির অভাব

প্রতিদিনে খাবার তালিকায় নানান রকম ফল ও সবজি সমৃদ্ধ হওয়া জরুরি। কারণ এতে করে দেহ সচল থাকতে প্রয়োজনীয় পুষ্টির ঘাটতি দেখা দেয়। নির্দিষ্ট ভিটামিন ও খনিজের অভাবে স্বাস্থ্যঝুঁকি দেখা দেয়।

তাছাড়া, সারা দিনে একই ধরনের খাবার খাওয়া মোটেও ভালো উপায় নয়।

পেশির ভর হ্রাস পায়

মনো ডায়েট অনুসরণ করে চললে দেহে প্রোটিনের ঘাটতি দেখা দেয়। প্রোটিনের অভাবে দেহের পেশির ভর ভেঙে অ্যামিনো অ্যাসিডে পরিণত করতে পারে। চর্বির তুলনায় পেশির ভরে ‘রেস্টিং মেটাবলিজম’য়ের মাত্রা বেশি।

ফলে এটা ক্যালরি পোড়ায়, ওজন কমায়। কিন্তু পেশির ভর কমা ওজন কমার পথে অন্তরায়।

তাহলে মনো ডায়েট কি করা ঠিক?

না। সুস্থ থাকতে চাইলে মনো ডায়েট অনুসরণ করা ঠিক নয়।

লাক্সমির মতে, “শরীর সঠিকভাবে কাজ করতে প্রয়োজনীয় ম্যাক্রো ও মাইক্রো নিউট্রিয়েন্টের ঘাটতি স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করে। তাই এটা অনুসরণ না করাই ভালো।”

আরও পড়ুন

Also Read: কিটো ডায়েট হতে পারে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর

Also Read: ‘ডায়েট’য়ের প্রচলিত ধারণার সত্যতা