ঈর্ষাবোধ জাগলে কয়েকটি কাজ করা থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে।
Published : 23 Feb 2025, 06:53 PM
অন্যের জীবনযাত্রা বা ব্যবহার্য জিনিস নিয়ে ঈর্ষাবোধ এককথা আর সম্পর্কে এই অনুভূতি জাগার অর্থ ভিন্ন।
এই জটিল মানসিক অনুভূতি সম্পর্কে প্রায় এক বছর ধরে গবেষণা করছেন মার্কিন মনোবিজ্ঞানী ও ঈর্ষাবোধ বিশেষজ্ঞ ডা. জোলি হ্যামিল্টন।
সিএনএন’য়ের আয়োজনে এক পডকাস্টে তিনি বলেন, “আমেরিকান সাইকোলজিকাল অ্যাসোসিয়েশন’য়ের ‘ডিকশনারি অফ সাইকোলজি’তে ঈর্ষাবোধকে নেতিবাচক অনুভূতি হিসেবে বলা হয়েছে। তবে বলেনি এটা রাগ বা দুঃখ।”
এটাকে শুধু অনুভূতি হিসেবে দেখলে, ধরে নেওয়া যেতে পারে অনুভূতিতা তথ্যভিত্তিক।
যুক্তরাষ্ট্রের মানব-উন্নতি-বিষয়ক অভিজ্ঞ মনোবিজ্ঞানী সেবিল হার্ট’য়ের গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে হ্যামিল্টন বলেন, “শৈশবকালের ঈর্ষার দিকে যদি তাকান দেখবেন এটা কতটা সংরক্ষণশীল। এটা আমাদের অন্যান্য মূলবান জিনিসের সাথে সংযুক্ত রাখতে সাহায্য করে।”
ঈর্ষাবোধ আসলে বিকশিত অনুভূতি, যা কোনো না কোনো ক্ষেত্রে কোনো উদ্দেশ্য থাকে। কোনো সময় এটা খুবই সাহায্য করে কোনো সময় ক্ষতির কারণ হয়ে যায়।
তাই ঈর্ষাবোধের সময় পাঁচটি বিষয় না করার পরামর্শ দেন, হ্যামিল্টন।
চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না নেওয়া আর ভয় না পাওয়া
যদি মনে হয় ঈর্ষার জন্ম নিচ্ছে, তবে কার্যকরণে না গিয়ে গোয়েন্দাগীরী করা যেতে পারে।
হ্যামিল্টন বলেন, “ঈর্ষাবোধ কেনো জাগছে, সেটা কীরকম- এসব বোঝার চেষটা করতে হবে দৈহিক সংকেত থেকে।”
সারাসরি কার্যকলাপে চলে গেলে সম্পর্ক নষ্ট হতে পারে। তাই কৌশুলী হয়ে তথ্য বের করার চেষ্টা করতে হবে, আসলে হচ্ছেটা কী?
আর যদি চূড়ান্ত দিকে যেতেই হয় তবে ভয় পাওয়া চলবে না। বরং ধীরস্থির হতে হবে।
“আমি বলবো, সে গল্পটা চলছে সেটার মোড় ঘোরা জন্য অপেক্ষা করুন। কারণ গল্পের উপাদানগুলো হয়ত আসল সত্যগুলো ঢেকে ফেলছে। কারণ বেশিরভাগ সময় ছোটবেলা থেকে পরিবেশে বেড়ে ওঠা হয় সেগুলো অনেক সময় ঈর্ষাবোধ জাগাতে প্রভাব ফেলে।”
তাই ধীরস্থির হয়ে প্রধান বিষয়ের দিকে নজর দিতে হবে। তারপর আবেগ বাদ দিয়ে আসলেই কী হচ্ছে সেগুলো আলাদা করার চেষ্টা করতে হবে।
সরাসরি আঘাতের দিকে না যাওয়া
ঈর্ষায় অন্ধ হয়ে ভাঙাভাঙি করা বা আঘাত করার মতো বিষয়গুলোতে যাওয়ার আগেই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, এমনকি যা দেখছেন সেটা সত্যি হলেও।
হ্যামিল্টন বলেন, “প্রথমেই কোনো ‘অ্যাকশন’য়ে গেলে কী বলতে চাচ্ছেন সেটা আর ঠিকমতো প্রকাশ হবে না। এমনকি পরে ফিরে আসা বা নতুন সম্পর্ক গড়ার ক্ষেত্রে সমস্যা হবে।”
তাই, নিজের শরীর ও অনুভূতি নিয়ন্ত্রণ করার পরামর্শ দেন তিনি। এটা হয়ত বলা সহজ, করা কঠিন।
তবে সেজন্য আত্মনিয়ন্ত্রণের কৌশলগুলো রপ্ত করতে হবে। স্নায়ু শান্ত রাখার বিষয়গুলো জানতে হবে।
এক্ষেত্রে প্রথমেই বিরতি নিতে হবে। ধীরে শ্বাস নিতে নিতে রাগের প্রাথমিক স্তর কমিয়ে আনতে হবে। হাত-পা কাঁপাকাঁপি হলেও সেসব কমাতে হবে।
এভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে, প্রথমেই ভুল সিদ্ধান্তে যাওয়ার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। আর কৌশলের সাথে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা সম্ভব হয়।
এভাবে নিজেকে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্তরে নিয়ে যাওয়া যায়।
লজ্জা পাওয়া যাবে না
“ঈর্ষাবোধ করা মানেই আপনি বাজে লোক না”- বলেন হ্যামিল্টন।
এজন্য লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই। সবাই কোনো না কোনো পরিস্থিতিতে ঈর্ষাবোধ করে, আর এটা খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার। এটা একটা অনুভূতি মাত্র, যার কোনো উদ্দেশ্য থাকে।
তাই এই বোধ জাগলে, সেটার কথা শোনা বোঝার প্রয়োজন রয়েছে।
এই অনুভূতি নিজের বা অন্যজনের মধ্যে দেখলে শয়তান আখ্যা দেওয়ার প্রয়োজন নেই।
ঈর্ষাবোধকে রোমান্টিক করা যাবে না
“গল্প, সিনেমা বা উপন্যাসে ঈর্ষাবোধকে প্রায়ই রোমান্টিসিজমে মেশানো হয়। আর সত্যি বলেতে এটা আমরা পছন্দও করি। আর সঙ্গীর কাছ থেকে সেটা আশাও করতে থাকি- মানে বিষয়টা এরকম- সে যদি আমাকে নিয়ে ঈর্ষাবোধ না-ই করে তবে হয়ত সেভাবে ‘কেয়ার’ করে না”- বলেন হ্যামিল্টন।
তিনি আরও বলেন, “ঈর্ষাবোধকে চটকদার করার মাধ্যমে হয়ত সংসতাকেই প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে, আর সেটা আমরা চাই না।”
রোমান্টিকতার জন্য অনেক মাধ্যম রয়েছে। আর ঈর্ষা কমানোর জন্য নানান কর্মকাণ্ড করা যায়।
সঙ্গীর মাঝে ঈর্ষাবোধ জাগানো যাবে না
“মনে হতে পারে ভালোবাসার প্রমাণ হল ঈর্ষাবোধ, আর সেটা খানিকটা সত্যিও। তাই বলে সঙ্গীর মাঝে ইচ্ছা করে ঈর্ষাবোধ জাগানোর কোনো অর্থ নেই”- বলেন হ্যামিল্টন।
যদি মনে হয় সঙ্গীর কাছ মনের মতো যত্ন পেতে, নতুন ‘ডেট আইডিয়া’ করা যেতে পারে। শারীরিক সম্পর্কে নতুন উত্তেজনা আনতে নানান পদ্ধতি গ্রহণ করার পাশাপাশি ‘সেক্স থেরাপিস্ট’য়ের পরামর্শ নেওয়া যায়।
এই মনোবিজ্ঞানী সাবধান করে বলেন, “সঙ্গীর মনোযোগ পেতে তার মাঝে ঈর্ষা তৈরি করলে হিতে বিপরীত হয়ে ফিরে আসতে পারে।”
আরও পড়ুন