আয়কর রিটার্ন দাখিলের আগে অবশ্যই ৫টি বিষয় নিশ্চিত হয়ে নিন

আপনি কি ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল করতে যাচ্ছেন? কিন্তু আয়কর অফিসে ট্যাক্স রিটার্ন দাখিলের পূর্বে আপনি কী নিশ্চিত যে সবকিছু ঠিকমত হয়েছে? কোন কিছু বাদ পড়েনি?

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Nov 2022, 01:09 PM
Updated : 1 Nov 2022, 01:09 PM

পুরো নভেম্বর মাসজুড়ে আয়কর বিবরণী দাখিল করা যাচ্ছে।

৩০ নভেম্বর পর্যন্ত জরিমানা ছাড়া ব্যক্তি করদাতা রিটার্ন জমা দিতে পারবেন। তার আগে আয়কর রিটার্ন তৈরি নির্ভুল হয়েছে কি-না তা নিশ্চিত হওয়া দরকার।

কারণ কিছু বাদ পড়লে বা ভুল হলে পরে সমস্যা হতে পারে। তাই রিটার্ন দাখিল করার আগে নিচের ৫টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিশ্চিত হয়ে নিন।

করযোগ্য আয় গণনা ঠিক আছে কি?

করযোগ্য আয় গণনা দিয়েই শুরু হয় আয়কর রিটার্ন তৈরির কাজ। প্রথম ধাপেই আপনি যখন সারা বছরের আয় থেকে অব্যাহতি বাদ দিয়ে করযোগ্য আয় বের করবেন তখন লক্ষ্য রাখুন আয়কর আইন অনুযায়ী আপনি অব্যাহতির যে সীমা আছে তা বাদ দিয়েছেন।

খুবই সতর্ক থাকতে হবে করযোগ্য আয় গণনার সময়। কারণ, করযোগ্য আয়ের পরিমাণ যদি বেশি হয় তাহলে আপনার করের পরিমাণ বেড়ে যাবে। আর যদি করযোগ্য আয় কম হয় তাহলে ভবিষ্যতে ফাইল যদি অডিটে পড়ে তখন কর কম দেওয়ার কারণে আইন অনুযায়ী জরিমানা হতে পারে।

তাই আপনার করযোগ্য আয় হতে হবে সঠিক। এজন্য আপনি আগেই নিশ্চিত হয়ে নিন সারা বছর ধরে কোন কোন উৎস থেকে আয় হয়েছে এবং সেই আয়ের বিপরীতে আপনার কাছে যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে।

কারণ রিটার্ন দাখিলের সাথে আপনার আয়ের সপক্ষে কাগজ জমা দিতে হবে। আপনার করযোগ্য আয়ের পরেই আসে করদায় থেকে কর রেয়াত বাদ দেওয়ার বিষয়টি।

কিন্তু কর রেয়াত পাওয়া যায় বিনিয়োগ ভাতার ওপর।

সম্পূর্ণ বিনিয়োগ ভাতা হিসেব করেছেন তো?

ব্যক্তি করদাতার করদায় কমানোর আইনগত উপায় হল কর রেয়াত। একটি নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত করদাতা বিনিয়োগ ভাতা হিসেবে দাবী করতে পারেন। যার ওপর নির্দিষ্ট হারে কর রেয়াত পেয়ে থাকেন। এবং এই কর রেয়াত পরে করদায় থেকে বাদ দিয়ে নীট করদায় যা থাকে তা রিটার্নের সাথে জমা দিতে হয়।

যেহেতু বিনিয়োগ ভাতার ওপর এই কর রেয়াত সুবিধা পাওয়া যায় তাই আপনি সম্পূর্ণ বিনিয়োগ ভাতা দাবী করেছেন কি-না তা নিশ্চিত হয়ে নিন।

ব্যক্তি করদাতা আয়কর আইনে উল্লেখিত খাতে যদি বিনিয়োগ বা দান করেন তাহলে ওই বিনিয়োগ বা দানকৃত টাকা বিনিয়োগ ভাতা হিসেবে দাবী করতে পারেন। তাই বিনিয়োগ ভাতা নির্ণয়ের সময় লক্ষ্য রাখুন, যে বিনিয়োগ বা দান করেছেন তা দেখিয়েছেন কি-না।

আর আপনার দাবীকৃত বিনিয়োগ বা দানের বিপরীতে কাজগপত্র আছে কি-না।

কারণ বিনিয়োগ বা দানের সপক্ষে আপনাকে রিটার্নের সাথে প্রমাণ হিসেবে কাগজ জমা দিতে হবে। যেমন- আপনার যদি ডিপিএস থাকে তাহলে ব্যাংক থেকে জুলাই-জুন ডিপিএস এর বিবরণী সংগ্রহ করে রিটার্নের সাথে জমা দিয়ে দিবেন।

প্রথম ধাপে আপনি আয় থেকে করযোগ্য আয় গণনার পর কর হার ব্যবহার করে মোট করদায় বের করেছেন। তারপর ওপরে বর্ণিত বিনিয়োগ ভাতার উপর কর রেয়াত নির্ণয় করে তাও বাদ দিয়েছেন।

এভাবে আপনি নীট করদায় পেয়েছেন। এই নীট করদায় থেকে আপনার কাছ থেকে যদিও কোথাও উৎসে কর কর্তন করে রাখা হয় তাহলে তা বাদ দিতে হবে।

উৎসে কর কর্তন বাদ দিয়েছেন কী?

আমাদের আয় থেকে আইন অনুযায়ী প্রযোজ্য ক্ষেত্রে উৎসে কর কর্তন করে রাখা হয়।

যেমন- আপনি যদি চাকরিজীবী হয়ে থাকেন তাহলে প্রতি মাসে আপনি যে বেতন পাচ্ছেন তা থেকে আপনার প্রতিষ্ঠান একটি নির্দিষ্ট অংক কর্তন করে তারপর বাকি টাকা আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করে।

আপনি আয়কর রিটার্ন দাখিলের আগেই আয়ের ওপর কর দিয়ে দিচ্ছেন। তাই বছর শেষে যখন রিটার্ন দাখিল করবেন তখন ওই কর্তনকৃত কর বাদ দিয়ে দেখাবেন।

তবে এক্ষেত্রে আপনাকে অবশ্যই নিশ্চিত হতে হবে, আপনি আয়কর বিবরণীতে যত টাকা উৎসে কর কর্তন বা অগ্রিম কর দাবী করছেন তার চালান আপনার কাছে আছে।

কারণ চালান ছাড়া আপনি উৎসে কর বাদ দিতে পারবেন না। তাই যেখানে আপনার আয় থেকে উৎসে কর কর্তন করে রাখা হয়েছে সেখান থেকে আপনি অবশ্যই চালানের কপি সংগ্রহ করুন। এবং এই চালানের কপি ট্যাক্স রিটার্নের সাথে যংযুক্ত করে দিন।

পূর্বের বছরের অতিরিক্ত কর সমন্বয় করেছেন তো?

কোনো সময় দেখা যায়, উৎসে কর কর্তন বা অগ্রিম করের পরিমাণ নীট করদায় থেকে বেশি। অর্থাৎ আপনার কর যোগ্য আয়ের ওপর যে কর এসেছে তা থেকে আপনি বেশি কর ইতোমধ্যেই দিয়ে দিয়েছেন।

তখন আপনার এই অতিরিক্ত কর পরের বছর সমন্বয় করতে পারবেন।

এক্ষেত্রে আপনি আগের বছরের ট্যাক্স রিটার্ন দেখে নিশ্চিত হয়ে নিন গত বছর বা আগের বছরগুলোতে মোট কতো টাকা আপনি অতিরিক্ত কর দিয়েছেন। তা জেনে নিয়ে আপনার করদায় থেকে বাদ দিন। এর ফলে আপনার করের পরিমাণ কমবে।

আয়ের বিবরণ এবং তা থেকে করের তথ্য দেওয়ার পাশাপাশি আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হল ব্যক্তি করদাতার সম্পদ এবং দায়ের পরিমাণ উল্লেখ করতে হয়।

সম্পদ এবং দায় পূর্ণাঙ্গ দেখিয়েছেন কি?

প্রথমেই নিশ্চিত হয়ে নিন পরিসম্পদ, দায় ও ব্যয় বিবরণী আপনার জন্য বাধ্যতামূলক কি-না। কারণ সকল করদাতার জন্য এই বিবরণী বা্ধ্যতামূলক না।

কিছু নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ হলেই কেবল একজন ব্যক্তি করদাতাকে সম্পদ ও দায়ের বিবরণী রিটার্ন ফরমের সাথে সংযুক্ত করতে হয়।

তবে আপনি চাইলে স্বপ্রণোদিতভাবে জমা দিতে পারেন। যেহেতু এই বিবরণী বাধ্যতামূলক না এবং পূরণ করা জটিল তাই না দেওয়াই ভালো।

যদি বাধ্যতামূলক হয় তাহলে গত বছরের আয়কর বিবরণী অনুসরণ করে সম্পদ এবং দায় পূরণ করে নিন।

সাথে সাথে যদি কোনো সম্পদ বা দায় বৃদ্ধি পায় তাহলে আগের বছরের অংকের সাথে যোগ করে দেখাবেন। আর যদি হ্রাস পায় তাহলে গত বছরের অংক থেকে বিয়োগ করে দেখাবেন।

সম্পদ এবং দায়ের তথ্য উল্লেখ করার সময় কয়েকটি বিষয় লক্ষ্য রাখুন। আপনার ব্যাংক ব্যালেন্স যা আছে তা ব্যাংক বিবরণীর সাথে মিলিয়ে নিন। যদি ব্যাংক লোন থাকে তাহলে ৩০ জুন ২০২২ তারিখে ব্যাংক থেকে যে লোন স্ট্যাটমেন্টস নিয়েছেন তার সাথে মিলিয়ে দেখুন।

আর নগদ টাকার পরিমাণ বাস্তবে আপনার কাছে যত থাকে ততই উল্লেখ করুন। বেশি দেখালে বরং ঝামেলা বাড়বে।

এভাবে ওপরের বিষয়গুলো যখন আপনি নিশ্চিত হয়ে যাবেন তখন আয়কর অফিসে রিটার্ন দাখিল করার জন্য সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

তবে তার আগে আপনি রিটার্ন তৈরি করার সময় যে কাগজপত্রের সাহায্য নিয়েছেন তা রিটার্নের সাথে জমা দিয়ে দিন।

আর অবশ্যই পূরণকৃত রিটার্ন ফরম এবং তার সাথে সংযুক্ত সকল কাগজপত্রের এক সেট ফটোকপি করে রাখুন।

উপরে হয়তো লক্ষ্য করেছেন, রিটার্ন তৈরির সময় প্রায়ই বিগত বছরের রিটার্নের কথা উল্লেখ করেছি। এই বছর যেমন ট্যাক্স রিটার্ন তৈরি করতে গত বছরের কিছু তথ্য দরকার পড়েছে তেমনি আপনি আগামী বছর যখন আবার রিটার্ন তৈরি করবেন তখন এই বছরের রিটার্ন প্রয়োজন পড়বে।

এছাড়াও যদি ভবিষ্যতে কোনো সময় ট্যাক্স ফাইল অডিটে পড়ে তাহলে এই সংরক্ষণ করে রাখা ফাইল দেখে আপনি মনে করতে পারবেন আপনি ট্যাক্স রিটার্নে কী উল্লেখ করেছিলেন। তাই অবশ্যই ট্যাক্স রিটার্নের ফটোকপি সংরক্ষণ করুন।

লেখক: জসীম উদ্দিন রাসেল। কর পরামর্শক এবং প্রশিক্ষক।

আরও পড়ুন

Also Read: ট্যাক্স রিটার্ন ২০২২: জেনে নিন পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন