চিনি শুধু শারীরিক নয় মানসিক ভারসাম্যেরও ক্ষতি করে।
Published : 17 Aug 2023, 05:29 PM
চিনি স্বাস্থ্যের শত্রু। আর অতিরিক্ত মিষ্টি দাঁতের ক্ষতি করে, বাড়ায় ওজন।
এই বছর ফেব্রুয়ারি মাসে ‘ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিন’য়ে প্রকাশিত অস্ট্রেলিয়ার ‘কুইন্সল্যান্ড ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজি’ করা গবেষণা অনুযায়ী- অতিরিক্ত চিনি খাওয়া স্থূলতা, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ও বিপাকে সমস্যা সৃষ্টি করে।
এই গবেষণার সূত্র ধরে হেল্থশটস ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ভারতের উত্তর প্রদেশের মোরাদাবাদের ‘উজালা সিগনাস গ্রুপ অব হসপিটাল’য়ের পুষ্টিবিদ একতা সিংঘাল বলেন, “তাই বিস্কুট, পেস্ট্রি, ব্রাউনি, কেক, আইসক্রিম, ডোনাট ও টফি না খাওয়াই উচিত। এছাড়াও কোমল পানীয়, চা, জুস ইত্যাদি গ্রহণের মাধ্যমেও দেহে চিনি প্রবেশ করে।”
উপকারিতা
সুস্থ থাকতে খাবার তালিকা থেকে বাড়তি চিনি বাদ দেওয়া উচিত। সুষম খাবার মানে হল পরিমিত মাত্রায় প্রয়োজনীয় খাবার খাওয়া।
সিংঘাল বলেন, “চিনি ক্যালরি যোগায়। কিন্তু এতে কোনো প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ নেই। অতিরিক্ত চিনি দেওয়া খাবার ওজন বাড়ায় এবং এর থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি ও খনিজ উপাদানের পাওয়া যায় না।”
ওজন হ্রাস
টানা একমাস চিনির তৈরি খাবার বাদ দেওয়া হলে ওজন কমে। কারণ এটা দেহে জমে থাকা বাড়াতি ক্যালরি পোড়াতে ও অতিভোজনের মাত্রা কমাতে সহায়তা করে।
রক্তের শর্করার মাত্রা উন্নত করে
এক মাস চিনি খাওয়া না হলে রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে আসে এবং ইন্সুলিন প্রতিরোধ ও টাইপ টু ডায়াবেটিসের ঝুঁকি হ্রাস পায়।
শক্তি বৃদ্ধি পায়
রক্তের শর্করার ওঠা নামা নিয়ন্ত্রণে থাকায় শক্তির মাত্রা উন্নত থাকে। ফলে সারাদিন প্রাণবন্ত থাকা যায়।
দাতেঁর স্বাস্থ্য ভালো থাকে
চিনি দিয়ে তৈরি খাবার এড়ালে মুখ ও দাঁতের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। ক্যাভিটি ও মাড়ির রোগ থেকে সুরক্ষিত থাকা যায়।
দীর্ঘমেয়াদি রোগের ঝুঁকি কমায়
কম চিনি গ্রহণ দীর্ঘমেয়াদিী রোগ যেমন- হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে বলে জানান এই বিশেষজ্ঞ।
পরিষ্কার ত্বক
অনেকের ত্বকে ব্রণসহ নানান সমস্যা থাকে। অতিরিক্ত চিনি খাওয়া এর সাথে সম্পর্কিত। এক মাস চিনি না খেলে ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নত হয় এবং সমস্যা দূর হয়।
মানসিক স্বাস্থ্য ভালো থাকে
রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে থাকলে মন ভালো রাখে। মুড সুইং-সহ অন্যান্য মন সম্পর্কিত জটিলতা হ্রাস পায়।
অন্ত্রের সুস্থতা
অতিরিক্ত চিনি খাওয়া অন্ত্রে ব্যাক্টেরিয়ার ভারসাম্য নষ্ট করে। তাই অন্ত্র সুস্থ রাখতে চিনি খাওয়া বাদ দেওয়া প্রয়োজন।
খাবার থেকে চিনি বাদ দেওয়ার উপায়
কিছু ফল যেমন- আম, আনারস ও স্ট্রবেরি যথেষ্ট মিষ্টি।
সিংহাল বলেন, “শর্করা নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে খাবার থেকে ফল বাদ দেওয়ার প্রয়োজন নেই। ফলে আছে প্রাকৃতিক শর্করা, অত্যাবশ্যকীয় ভিটামিন, খনিজ, আঁশ ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।”
পরিমিত ফল খাওয়া উপকারী। সিংহালের মতে, পুরো ফলে থাকা শর্করা প্রাকৃতিক ও এর আঁশ রক্তের শর্করা শোষণকে ধীর করে। ফলে রক্তের শর্করার মাত্রা দ্রুত বেড়ে যায় না।
পুষ্টিকর ফল খাওয়া রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত করে। হজমে সহায়তা করে। আর হৃদস্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়তা করে।
অতিরিক্ত ফলের জুস বা শুকনা ফল পরিমিত খাওয়া প্রয়োজনে বাদ দেওয়া উচিত। এসব ফলে আঁশ ছাড়া ঘনিভূত শর্করা থাকে।
চিনি গ্রহণের মাত্রা কমানোর উপায়
খাবারের গায়ে থাকা লেবেল পড়ে নিতে হবে। যদি ‘অ্যাডেড সুগার’ লেখা থাকে তাহলে সেটা বাদ দেওয়া উচিত। সুক্রোজ, উচ্চ ফ্রুক্টোজ, কর্ন সিরাপ ও অন্যান্য শর্করা ধরনের উপকরণ আছে কিনা সেটা দেখে কেনা উচিত।
তাজা খাবার ও অপ্রক্রিয়াজাত খাবার যেমন- সবজি, ফল, চর্বিহীন মাংস, গোটা শস্য ও স্বাস্থ্যকর চর্বি ইত্যাদি খাওয়ার পরামর্শ দেন এই বিশেষজ্ঞ।
মিষ্টি জাতীয় পানীয় যেমন- সোডা, ফলের রস ও মিষ্টি এবং চা বা কফিতে চিনি বাদ দিতে হবে। সাধারণ পানি, ভেষজ চা ও সাধারণ কফি পান করা যেতে পারে।
ঘরে রান্না করা খাবার খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে বেশি। এতে চিনি গ্রহণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়।
স্বাস্থ্যকর নাস্তা যেমন- বাদাম, বীজ, দই বা তাজা ফল ইত্যাদি বাছাই করা যেতে পারে।
আরও পড়ুন