মিষ্টির প্রতি আকর্ষণ কমাতে

অতিরিক্ত চিনি বা মিষ্টি খাবার খাওয়ার লোভ সামলানোর রয়েছে উপায়।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 August 2021, 10:28 AM
Updated : 18 August 2021, 10:28 AM

শর্করা মস্তিষ্কের চালিকা শক্তি হলেও অতিরিক্ত মিষ্টি যে শরীরের জন্য খারাপ একথা এখন সবারই জানা। তাই মিষ্টি খাওয়ার নেশা যাদের বেশি তারা ইচ্ছে করলেই এই আকর্ষণ কমাতে পারেন কিছু পন্থা অবলম্বন করে।

তার আগে জানা প্রয়োজন দেহে কতটুকু চিনির দরকার রয়েছে

যুক্তরাষ্ট্রের স্নায়ুবিজ্ঞানী ও খাবারে আসক্তি-বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ড. নিকোল অ্যাভেনা জানান, মহিলাদের জন্য দৈনিক চিনির চাহিদা ছয় চামচের বেশি নয়। আর পুরুষের জন্য নয় চামচ এবং শিশুদের জন্য ছয় চামচের বেশি নয়।

দিনে প্রতি চা-চামচে প্রায় চার গ্রাম চিনি, অর্থাৎ নারী ও শিশুদের জন্য ২৫ গ্রামের বেশি নয় (দুই বছরের শিশুদের জন্য চিনিমুক্ত খাবার) এবং পুরুষদের জন্য ৩৬ গ্রামের বেশি চিনি গ্রহণ করা উচিত নয়।

‘হোয়াট টু ফিড ইওর বেবি অ্যান্ড টোডলার’ বইয়ের এই লেখক রিয়েলসিম্পল ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে আরও বলেন, “চিনিতে কেবল ক্যালরি রয়েছে এছাড়া কোনো ভিটামিন, খনিজ প্রোটিন বা আঁশ নেই।”

চিনির বিকল্প ক্ষতির কারণ

যদিও চিনির বিকল্প গ্রহণকে নিরাপদ মনে হতে পারে কিন্তু এটা বিপাক ও খাবারের চাহিদা গ্রহণে গোলযোগ সৃষ্টি করে।

অ্যাভেনার মতে, “যারা ওজন কমাতে চান, ডায়াবেটিসে ভুগছেন ও দাঁত ও মাড়ির সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য এটা ক্ষতিকারক।”

একইভাবে, সাদা চিনির মতোই কৃত্রিম মিষ্টি অতিরিক্ত গ্রহণ করলে দেহের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডের ধারায় রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি পায়। আর সেটা জমা হতে থাকে মেদ হিসেবে।

অ্যাভেনার মতে, সাদা চিনির মতোই কৃত্রিম মিষ্টি পরিমিত গ্রহণ করা প্রয়োজন।

তাহলে কী করবেন?

পর্যাপ্ত ঘুম: পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে মানুষের চিনির প্রতি আসক্তি বাড়ে।

‘সুগার শক’ বইয়ের সহ-লেখক পুষ্টিবিদ সামান্থা ক্যাসেটি বলেন, “গবেষণায় দেখা গেছে ঘুমের স্বল্পতা মিষ্টি-জাতীয় খাবারের প্রতি আগ্রহ বাড়ায়।”

খাবার তালিকায় পরিবর্তন আনার পাশাপাশি ঘুম চক্রের দিকেও নজর রাখা জরুরি।

ক্ষুধা ও আকর্ষণের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয়: খিদা পেলে আমরা খাই। তবে সবসময় কথাটা সত্যি নয়।

যেমন একটা চিজ কেক খাওয়ার ইচ্ছে হওয়া মানে ক্ষুধা নিবারণ নয়, বরং সেই মিষ্টি-খাবারের প্রতি আকর্ষণ।

তাই যখন এরকম মিষ্টি-খাবার খেতে ইচ্ছে করবে তখন নিজেকেই প্রশ্ন করুন কেনো সেটা খেতে চাচ্ছেন। আর এই ধরনের খাবারের পরিবর্তে বেছে নিতে পারেন অন্য কোনো বিকল্প খাবার।

‘থ্রাইভস স্টেট’ বইয়ের লেখক ক্যালিফোর্নিয়ার ডা. কিয়েন ভু’র ভাষায়, “খাবারের প্রতি আমার এরকম আকর্ষণ জাগলে হয় আমি হাঁটতে চলে যাই নয়তো ‘স্পার্কলিং ওয়াটার’ পান করি। মানে যে কোনো ভাবেই হোক মিষ্টি খাওয়ার আকর্ষণ জাগলে আমি অন্য কিছু করার চেষ্টা করি। দেখা গেছে কিছু সময় যাওয়ার পর ওই খাবার খাওয়ার ইচ্ছেটা চলে গেছে।”

ক্যাসেডি পরামর্শ দেন, “মনোযোগ সরাতে না পারলে প্রাকৃতিক মিষ্টি খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। যেমন- কেক খাওয়ার ইচ্ছে জাগলে দুএকটা খেজুর খেতে পারেন, অথবা অন্য যে কোনো মিষ্টি ফলও খাওয়া যেতে পারে।”

সকালের নাস্তায় কিছুটা প্রোটিন রাখা প্রয়োজন: ক্যাসেটিয়ের মতে, “গবেষণায় দেখা গেছে সকালের নাস্তায় উচ্চ প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া মস্তিষ্কের ক্ষুধার সংবেদনে ভূমিকা রাখে।”

নাস্তায় প্রোটিন-ধরনের খাবার খাওয়া সারাদিনের শর্করার চাহিদা কমায়। সকালের নাস্তায় প্রোটিন হিসেবে ডিম খাওয়া যেতে পারে।

খাবারের মান নির্ণয়: চিনি বাদ দিতে হবে- এটা নিয়ে বেশি ভাবারই দরকার নেই। বরং দৈনিক খাদ্যতালিকায় পরিবর্তন আনার চেষ্টা করতে হবে।

‘কলেজনিউট্রিশনিস্ট ডটকম’য়ের প্রতিষ্ঠাতা ড. র‌্যাচেল পল বলেন, “খাবারের প্লেটে প্রোটিন, স্বাস্থ্যকর চর্বি এবং আঁশযুক্ত সবজি রাখার চেষ্টা করুন। এই ধরনের খাবার পেটভরা রাখে অনেক্ষণ। ফলে যখন তখন যা-তা খাওয়ার ইচ্ছে হবে কম।”

খাবারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ: চিনির প্রতি আকর্ষণ মানসিক ভাবা হলেও তা আসলে জৈবিক।

চিনিযুক্ত খাবার নিয়ন্ত্রণে উচ্চ শর্করা-জাতীয় খাবার কম পরিমাণে খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।

যেমন ‘ওরিও বিস্কুট’। ঘরে যদি চারটা বিস্কুট থাকে, তবে এর বেশি আপনি আর খেতে পারবেন না।

মিষ্টি নয় এমন শর্করা যুক্ত খাবার বাদ দেওয়া: আইসক্রিম বা চকলেট বাদ দেওয়া সম্ভব না হলে সস বা কেচাপ বাদ দেওয়া শুরু করুন।

ড. ইলেন রুহোয় বলেন বলেন, “শর্করা নানান রকমের খাবার যেমন কেচাপ, সালসা, সরিষার সস, অন্যান্য সসে থাকে। এগুলো নানান রকমের খাবারের সঙ্গে আমরা গ্রহণ করে দৈনিক শর্করা গ্রহণের মাত্রা বৃদ্ধি করে ফেলি।”

যুক্তরাষ্ট্রের এই চিকিৎসক আরও বলেন, “আমরা প্যাকেটজাত খাবার থেকে ৭৭ শতাংশ শর্করা গ্রহণ করে থাকি। আসল ফল এবং গোটা শস্য দিয়ে তৈরি একটি ‘ব্রেকফাস্ট বারে’ ১৫ গ্রাম বা তার বেশি চিনি থাকতে পারে। প্রায় সব খাবারেই শর্করা লুকায়িত থাকে এবং শিশু, প্রাপ্ত বয়স্ক নিজের অজান্তেই চিনির প্রতি এভাবে আকৃষ্ট হয়ে পড়ে।”

শর্করা গ্রহণ নিয়ন্ত্রণে খাবার গ্রহণের আগে তার উপকরণের তালিকা দেখে নেওয়া প্রয়োজন।

পর্যাপ্ত পানি পান: মস্তিষ্কে ক্ষুধা ও তৃষ্ণার সংবেদনে প্রায়ই গোলযোগ ঘটে। অর্থাৎ তৃষ্ণা লাগলেও তা ক্ষুধার সংবেদন হিসেবে মস্তিষ্কে প্রবেশ করে।

ডা. ক্যাসেট্টি বলেন, “চিনির প্রতি আকর্ষণ কমানোর সহজ উপায় হল পর্যাপ্ত পানি পান করা। এতে পেট ভরা থাকে ও অসচেতনতায় মিষ্টি-জাতীয় খাবার গ্রহণের প্রবণতা কমায়। এছাড়াও, গবেষণায় দেখা গেছে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান করা দৈনিক শর্করা গ্রহণের মাত্রা কমাতে সহায়ক।”

তিনি আরও বলেন, “মিষ্টি জুস ও কোমল পানীয় শর্করা গ্রহণের মাত্রা বাড়ায়। তাই যতটা সম্ভব দৈনিক খাবার তালিকা থেকে সোডা, কোমল পানীয় বাদ দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে।”

একবারে বাদ দেওয়া সম্ভব না হলে প্রতি সপ্তাহে একটু একটু করে কমানোর চেষ্টা করতে হবে।

ছবি: রয়টার্স।

আরও পড়ুন