ধরন বুঝে চর্বি ঝরান

সব চর্বি খারাপ না। আবার দেহের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য চর্বিরও প্রয়োজন আছে।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Sept 2022, 09:41 AM
Updated : 26 Sept 2022, 09:41 AM

দেহে রয়েছে তিন ধরনের চর্বি। তবে সব চর্বি ঝরাতেও হয় না।

চর্বিই তো চর্বিই, এর আবার রকমফের কী? আসলে শরীরে তিন ধরনের চর্বি থাকে। আর সেগুলো শরীরে ভিন্ন ভিন্ন ভূমিকা পালন করে।

শরীরে শক্তি যোগানো, অঙ্গকে সুরক্ষা দেওয়া এবং ‍খাবার থেকে পুষ্টি উপাদান শোষণ করার জন্য একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় চর্বি জরুরি। তবে প্রয়োজনের অতিরিক্ত থাকলেই আবার বিপদ।  

‘হোয়াইট ফ্যাট’ বা সাদা চর্বি: যুক্তরাষ্ট্রের ‘ট্রু ইউ ওয়েট লস’য়ের প্রতিষ্ঠাতা এবং ‘গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট’ ডা. ক্রিস্টোফার ম্যাকগোয়ান ‘ইট দিস’ ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “হোয়াইট আডিপোস সেলস’কেই সাধারণ ভাষায় আমরা চর্বি হিসেবে চিনি। এটি থাকে ত্বকের নিচের স্তরে, তখন তাকে বলা হয়  ‘সাবকিউটেনাস ফ্যাট’।”

আর বিভিন্ন অঙ্গের চারপাশেও এর দেখা মেলে, বলা হয় ‘ভিসেরাল ফ্যাট’।

এই ধরনের চর্বির প্রধান কাজ হল কর্মশক্তি জমা রাখা। অতিরিক্ত ক্যালরি যখন গ্রহণ করা হয় তখন এই চর্বি শক্তি জমা করে ‘ট্রাইগ্লিসারাইড’ হিসেবে। আর মানুষ যখন না খেয়ে থাকে তখন এই ‘ট্রাইগ্লিসারাইড’ ‘লাইপোলাইসিস’ প্রক্রিয়ার ভেঙে কর্মশক্তি যোগায়।

“হজম ও ওজন নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়ায় এই চর্বি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, তৈরি করে ‘লেপ্টিন’ নামক হরমোন যা খাওয়ার পর তৃপ্তি যোগায়”, বলেন ডা. ক্রিস্টোফার।

যুক্তরাষ্ট্রের ‘ভিআইডিএ ওয়েলনেস অ্যান্ড বিউটি’র ‘ব্যারিয়াটিক সার্জন’ ডা. গ্যাব্রিয়েলা রদ্রিগেজ রুইজ একই প্রতিবেদনে বলেন, “সাবকিউটেনাস ফ্যাট’ শরীরের কিছু অংশে প্রবলভাবে চোখে পড়ে। যেমন- উরু, কোময়, নিতম্ব ইত্যাদি। এটি ‘ভিসেরাল ফ্যাট’য়ের তুলনায় কম বিপজ্জনক। তবে অতিরিক্ত মাত্রায় জমা হলে এটাও ডায়াবেটিস, হৃদরোগের কারণ হতে পারে।”

ব্রাউন ফ্যাট: ডা. ম্যাকগোয়ান বলেন, “এই চর্বির কাজ হল তাপ উৎপন্ন করা যাতে প্রচণ্ড শীতে ‘হাইপোথার্মিয়া’ দেখা না দেয়। এই ধরনের চর্বিতে থাকা মাইটোকন্ড্রিয়ার কারণে এর বাদামি রং হয়। নবজাতকদের শরীরে এটি সবচাইতে বেশি মেলে এবং বয়সের সঙ্গে তা কমতে থাকে।”

প্রাপ্তবয়স্কদের শরীরে দুই কাঁধের মাঝে এবং যকৃতের চারপাশে এই চর্বি থাকে। সাদা চর্বি ঠিক বিপরীত, বাদামি চর্বি স্থূলতা ও হজমতন্ত্রের বিভিন্ন রোগ থেকে সুরক্ষা দেয়।

বেইজ ফ্যাট: ডা. ম্যাকগোয়ান বলেন, “সাদা আর বাদামি চর্বির মিশ্রণ হল এই চর্বি। সাদা চর্বি যে স্থানে থাকে, ‘বেইজ ফ্যাট’ও সেখানেই থাকে। এতে সাদা চর্বি কিংবা বাদামি চর্বির পরিমাণ কম কিংবা বেশি হয়ে যেতে পারে জৈবিক বিভিন্ন কারণে। যেমন- প্রচণ্ড ঠাণ্ডায়, মানসিক চাপে কিংবা ব্যায়াম করলে ‘বেইজ ফ্যাট’য়ের গঠনে ‘ব্রাউন ফ্যাট’ বেড়ে যায়। এতে ‘ব্রাউন ফ্যাট’য়ের উপকারিতাগুলো এই চর্বি থেকেও পাওয়া যাবে। আবার সাদা চর্বির মাত্রা বাড়লে হবে উল্টোটা।”

‘হোয়াইট ফ্যাট’ যে কারণে বিপজ্জনক

ডা. ম্যাকগোয়ান বলেন, “চর্বি নিজে বিপজ্জনক নয়। সব ধরনের চর্বিই হজম, কর্মশক্তি উৎপাদন, হরমোন উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয়। কিন্তু ‘হোয়াইট ফ্যাট সেল’ যখন শরীরে বেশি হয়ে যায় তখন তাকে বলা হয় ‘ওবেসিটি’ বা স্থূলতা। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, ক্যান্সার ইত্যাদি রোগ দেখা দেয় ওই ‘ওবেসিটি’ থেকে “

ডা. রদ্রিগেজ রুইজ বলেন, “ভিসেরাল ফ্যাট’ সবচাইতে ক্ষতিকর। কারণ এটি অঙ্গের চারপাশে গড়ে ওঠে এবং তৈরি করে ‘ইন্সুলিন রেজিস্ট্যান্স’। অতিমাত্রায় ‘ট্রাইগ্লিসারাইড’, ‘কোলেস্টেরল’ ইত্যাদি শরীরে জমাতে এই চর্বি গড়ে ওঠে, যাতে থাকে প্রদাহ সৃষ্টিকারী বিভিন্ন উপাদান। শরীরের মোট চর্বির ১০ শতাংশ পর্যন্ত ‘ভিসেরাল ফ্যাট’ নিরাপদ।” 

বুলগেরিয়া’র ‘মেডিকেল ইউনিভার্সিটি’র ‘হাইজিন অ্যান্ড এপিডেমিওলজি’র সহকারী অধ্যাপক ডা. ডিমিতার মারিনোভ বলেন, “হোয়াইট ফ্যাট’ কোথায় বাসা বেঁধেছে এবং কী পরিমাণে- এর ওপর নির্ভর করবে সেটি কতটা বিপজ্জনক হবে।”

সাদা চর্বিকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়, ‘এসেন্সিয়াল’, ‘সাবকিউটেনাস’ আর ‘ভিসেরাল’। এদের মধ্যে শুধু ‘এসেন্সিয়াল’টাই ক্ষতিকর নয়।

‘ভিসেরাল ফ্যাট’ প্রচুর পরিমাণে ফ্যাটি অ্যাসিড উৎপন্ন করে এবং প্রদাহ সৃষ্টিকারী বিভিন্ন উপাদান এতে থাকে।

‘সাবকিউটেনাস ফ্যাট’য়ের ‘হোয়াইট ফ্যাট’য়ের পাশাপাশি ‘ব্রাউন’ ও ‘বেইজ ফ্যাট’ও থাকে। কিন্তু মাত্রা অধিক হলে সেটাও ‘ভিসেরাল ফ্যাট’য়ের মতোই ক্ষতিকর হয়ে ওঠে।

চর্বি ঝরানোর উপায়

ডা. ম্যাকগোয়ান বলেন, “ওজন কমানোই হল শরীরের চর্বির মাত্রা কমানোর প্রধান উপায়। খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ, ব্যায়াম, অস্ত্রোপচার, যেভাবেই ওজন কমান না কেনো তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে শরীরের মোট চর্বির মাত্রাও কমবে। আবার ওজন নিয়ন্ত্রণে আসার আগেই চর্বি কমবে নিয়মিত শরীরচর্চায়।”

রদ্রিগেজ রুইজ বলেন, “ভিসেরাল ফ্যাট’ দূর করার জন্য শরীরচর্চার মতো কার্যকর আর কিছুই হতে পারে না। সাধারণ হাঁটাহাঁটি, সাঁতার, সাইকেল চালানো থেকে ভারি ব্যায়াম পর্যন্ত সবই উপকারী।”

সাবকিউটেনাস ফ্যাট কমাতে হলে যতটুকু ক্যালরি গ্রহণ করছেন তার চাইতে বেশি ক্যালরি খরচ করতে হবে। এখানেও দরকার শরীরচর্চা আর নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস।

আরও পড়ুন

Also Read: স্বাস্থ্যকর চর্বি যোগায় যেসব খাবার

Also Read: যকৃতে অতিরিক্ত চর্বি থাকার লক্ষণ

Also Read: অন্ত্রে চর্বি জমার কারণ