স্বাস্থ্যকর চর্বি যোগায় যেসব খাবার

সব চর্বি খারাপ নয়। দেহে স্বাস্থ্যকর চর্বিও দরকার হয়।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Feb 2022, 05:19 AM
Updated : 1 Feb 2022, 05:19 AM

চর্বি খাওয়ার কথা শুনলেই মাথায় আসে মোটা হয়ে যাওয়ার চিন্তা।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের ‘সাস্টেইনেবল ফুড অ্যান্ড নিউট্রিশন’ বিশেষজ্ঞ কেট গিগান বলেন, “চর্বি মানেই শুধু ক্যালরি নয়। এর আছে নানান উপকারী দিক যা মানুষকে দীর্ঘজীবী করতে সাহায্য করে।”

রিয়েলসিম্পল ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তিনি আরও বলেন, ‘মিডটেরেনিয়ান ডায়েট’ যারা মেনে চলেন তাদের খাদ্যাভ্যাসে প্রচুর ‘অলিভ অয়েল’ ও চর্বিযুক্ত মাছ থাকে। আর সেগুলোই দেখা গেছে হৃদরোগের ঝুঁকি ও কোলেস্টেরল কমায়।”

তিনি আরও বলেন, “মস্তিষ্কের সুস্বাস্থ্যের জন্যও চর্বি জরুরি। মস্তিষ্কের ৬০ শতাংশই চর্বি। ‘ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড’ মূলত মস্তিষ্কের মূল উপাদান। খাবারে স্বাদ যোগ করতে চর্বির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই খাবার গ্রহণের পর তৃপ্তি পাওয়া ও পেট ভরার অনুভূতি পাওয়ার ক্ষেত্রেও চর্বি জরুরি।”

প্রাধান্য দিতে হবে স্বাস্থ্যকর চর্বি

যুক্তরাষ্ট্রের ‘স্ট্রিট স্মার্ট নিউট্রিশন’য়ের প্রতিষ্ঠাতা পুষ্টিবিদ কারা হার্বস্ট্রিট বলেন বলেন, “চর্বির পরিপূর্ণ উপকারিতা নিতে হলে স্বাস্থ্যকর চর্বি আর অস্বাস্থ্যকর চর্বি চিনতে হবে।”

স্বাস্থ্যকর চর্বির দুটি ধরন আছে যাকে শরীরের জন্য উপকারী বলা যায়। সেগুলো হলো ‘মনো-আনস্যাচুরেইটেড’ আর ‘পলি-আনস্যাচুরেইটেড’।

‘পলি-আনস্যাচুরেইটেড ফ্যাট’য়ে থাকে ‘ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড’ আর ‘ওমেগা সিক্স ফ্যাটি অ্যাসিড’। দুটোই শরীরের জন্য প্রয়োজনীয়। তবে এগুলো অবশ্যই খাবার থেকে আসতে হবে। কারণ শরীর এগুলো তৈরি করতে পারেনা।

হার্বস্ট্রিট আরও বলেন, “অস্বাস্থ্যকর চর্বির মধ্যে ‘স্যাচুরেইটেড ফ্যাট’ আর ‘ট্রান্স ফ্যাট’ এড়িয়ে চলতে হবে। অতিরিক্ত ‘স্যাচুরেইটেড ফ্যাট’ কোলেস্টেরল বাড়ায়, ধমনীতে রক্ত প্রবাহ আটকে দেয়। আর ‘ট্রানস ফ্যাট’কে একেবারে বিষ মনে করতে হবে।”

যতটুকু চর্বি জরুরি

‘ইউনাইটেড স্টেটস ডিপার্টমেন্ট অফ এগ্রিকালচার’য়ের তথ্যানুসারে, “একজন স্বাস্থ্যবান ও প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের খাদ্যাভ্যাসের মোট ক্যালরির ২০ থেকে ৩৫ শতাংশ আসা উচিত চর্বি থেকে। দিনের বিভিন্ন বেলার খাবারের মাঝে এগুলো ছড়িয়ে থাকা উচিত। একবারে পুরোটা গ্রহণ করা যাবে না। আর সেই উৎসগুলোর সঙ্গে যুক্ত থাকতে হবে প্রোটিন ও ভোজ্য আঁশ।”  ‍

বাদাম

সব বাদামই ‘মনো-আনস্যাচুরেইটেড ফ্যাট’য়ের দারুণ উৎস। তবে পুষ্টিবিদ কেট গিগান চিনাবাদামের প্রতি জোর দেন বেশি।

তিনি বলেন, “চিনাবাদাম সস্তা, সহজেই পাওয়া যায়, বহন করাও সহজ। এই বাদামে প্রোটিনের মাত্রা সবচাইতে বেশি। সাত গ্রাম বাদাম যোগাতে পারে ৩০টি প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ উপাদান। রক্তচাপ, রক্তে শর্করার মাত্রা এবং ওজন নিয়ন্ত্রণে অনন্য একটি খাবার এই চিনাবাদাম।”

এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল

প্রচুর গবেষণা হয়েছে অলিভ অয়েল থেকে পাওয়া চর্বি নিয়ে। দেখা গেছে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, ডিমেনসিয়া, উচ্চ রক্তচাপ, স্থূলতা, ‘ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স’ সবকিছুতে নিয়ন্ত্রণেই এই তেল অত্যন্ত উপকারী।

গিগান বলেন, “অলিভ অয়েল’য়ের এই উপকারিতার পেছনে অনেকগুলো উপাদান ভূমিকা রাখে। এদের মধ্যে অন্যতম হল এতে থাকা ‘মনো-আনস্যাচুরেইটেড ফ্যাট। একটি উপকারী ও প্রাকৃতিক ‘অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট’ ও ‘পলিফেনল’ সমৃদ্ধ উপাদান হল ‘ইভু’। এই উপাদান ‘অক্সিডেটিভ স্ট্রেস’ কমায়, যা পক্ষান্তরে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।”

চর্বিযুক্ত মাছ

গিগান ও হার্বস্ট্রিস দুজনই একমত যে চর্বিযুক্ত মাছ ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড’য়ের দারুণ উৎস। এই মাছের মধ্যে আছে স্যামন, ট্রাউট, বারামুন্ডি, ইলিশ, পাঙ্গাস, ভেটকি ইত্যাদি।

গিগান বলেন, “হৃদরোগ ও স্ট্রোক’য়ের ঝূঁকি কমায় ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড। এগুলো মন মেজাজও ভালো রাখে, হতাশা দূর করে। দূরারোগ্য সংক্রমণ দূর করতেও এটি উপকারী।”

আরও পড়ুন