দেহ যেভাবে জানান দেয় ভিটামিন এ’র অভাব

যে কোনো পুষ্টির অভাব দেহে ফুটে ওঠে। আর সেসব লক্ষণ জানা থাকলে অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেওয়া যায়।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Nov 2022, 10:43 AM
Updated : 14 Nov 2022, 10:43 AM

দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখার পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অটুট রাখতেও সাহায্য করে ভিটামিন এ।

অথচ অন্যান্য যত ভিটামিন নিয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয় সেভাবে ভিটামিন এ নিয়ে আলোচনা হয় কম।

এই বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিবন্ধিত পুষ্টিবিদ লরেন মানাকার বলেন, “চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিন এ যেমন দৃষ্টিশক্তি ভালো রাখে। তেমনি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ঠিক রাখতে এই ভিটামিনের প্রয়োজন হয়।”

ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তিনি আরও জানান, সঠিকভাবে দেহের বৃদ্ধি, ত্বকের সুস্বাস্থ্য এবং বিভিন্ন অঙ্গের সঠিক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে ভিটামিন এ মুখ্য ভূমিকা পালন করে।

যে পরিমাণ ভিটামিন এ প্রয়োজন

বয়স, লিঙ্গ ও বিভিন্ন অবস্থার ওপর নির্ভর করে একজনের কতটা ভিটামিন এ প্রয়োজন।

মানাকার বলেন, “পূর্ণবয়স্ক পুরুষের ৯০০ এমসিজি আরএই এবং নারীর ৭০০ এমসিজি আরএই পরিমাণ ভিটামিন এ প্রয়োজন। অন্তঃস্বত্ত্বা নারীর জন্য প্রয়োজন হয় ৭৭০ এমসিজি আরএই এবং স্তন্যদানকারী মায়ের জন্য দরকার ১,৩০০ এমসিজি আরএই ভিটামিন এ।”

ভিটামিনের এই একক সবার বোঝার কথা না।

তাই মানাকার এই পরিমাণের উদাহরণ দিতে গিয়ে বলেন, “যেমন- অর্ধেক মিষ্টি আলু থেকে মিলবে ৭০০ এমসিজি আরএই এবং একটি আম থেকে পাওয়া যাবে গড়ে ১১০ এমসিজি আরএই পরিমাণ ভিটামিন এ।”

ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার

আম ও মিষ্টি আলু ছাড়াও ভিটামিন এ’র দারুণ উৎস হল পালংশাক। আধা কাপ রান্না করা পালংশাকে পাওয়া যায় ৪৭১ এমসিজি।

নিউ ইয়র্ক’য়ের আরেক পুষ্টিবিদ বিয়াঙ্কা টাম্বারেলো বলেন, “এছাড়াও পালংশাকে রয়েছে ক্যালসিয়াম, যা হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।”

এছাড়াও তিনি জানান, প্রোটিনের উৎস হিসেবে ডিম যেমন ভালো তেমনি একটি বড় ডিম থেকে পাওয়া যায় ৯০.৫ এমসিজি পরিমাণ ভিটামিন এ।

ভিটামিন এ সমৃদ্ধ সবজির জন্য এই পুষ্টিবিদ গাজরের কথাও বলেন।

তার ভাষায়, “আধা কাপ রান্না করা গাজর থেকে পাওয়া যাবে ৬৪০ এমসিজি ভিটামিন এ। আর কাঁচা অবস্থার চাইতে রান্না করা গাজর থেকে ভিটামিন এ শোষণ করা দেহের জন্য সুবিধাজনক।”

এই পুষ্টিবিদ আরও জানান, ভিটামিন এ’র উৎস বোঝার একটি সূত্র হল কমলা রংয়ের খাবার। যেমন- আধা কাপ ফুটি বা চালকুমড়া থেকে পাওয়া যাবে ১৮০ এমসিজি পরিমাণ ভিটামিন এ।

ভিটামিন এ’র অভাব বোঝার লক্ষণ

দেহ বিভিন্নভাবে ভিটামিন এ’র অভাবের কথা জানান দেয়।

হতে পারে শুষ্ক ত্বক: এই ভিটামিনের অভাব হওয়ার মানে হল ত্বকে পর্যাপ্ত পুষ্টি পৌঁছাচ্ছে না।

মানাকার বলেন, “এর ফলে ত্বক হয়ে যায় শুষ্ক। আর মরা চামড়া ওঠার সমস্যা দেখা দেয়।”

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হওয়া: ভিটামিন এ দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অটুট রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

মানাকারের ভাষায়, “যথেষ্ট পরিমাণে এই ভিটামিনের অভাব থাকলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতায় বাজে প্রভাব পড়ে।”

চোখের স্বাস্থ্য: শুষ্ক চোখ ও রাতকানা রোগে ভোগা মানে ভিটামিন এ’র অপর্যাপ্ততা। তবে রাতকানা অবস্থা অবশ্যই অতিরিক্ত মাত্রায় চোখের বাজে একটি রোগ। আর সেটার জন্য আরও অন্যান্য কারণ থাকতে পারে।

মানাকার বলেন, “কারও শুষ্ক চোখের সমস্যা থাকলে তাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন এ গ্রহণের পাশাপাশি চোখের ড্রপ ব্যবহার করতে হবে। আর এসবই করতে হবে চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে।”

কাটাছেড়া বা ক্ষত সহজে সারবে না: ‘কোলাজেন সিন্থেসিস’য়ের ক্ষেত্রে ভিটামিন এ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আর স্বাস্থ্যকর ত্বকের জন্য প্রয়োজন কোলাজেনের উৎপাদন।

মানাকার বলেন, “ক্ষত সারানোর ক্ষেত্রে অন্যান্য পুষ্টি উপাদান যেমন- প্রোটিন, জিঙ্ক এবং ভিটামিন সি’র সঙ্গে ভিটামিন এ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।”

যেভাবে বুঝবেন ভিটামিন এ’র ক্যাপ্সুল বা ট্যাবলেট খেতে হবে

“খাবার থেকেই যে কোনো পুষ্টির চাহিদা পূরণের চেষ্টা করা উচিত প্রথমে”, বলেন মানাকার।

তবে খাবার থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে না পেলে, এই ভিটামিনের সাপ্লিমেন্ট বা ট্যাবলেট কিংবা ক্যাপ্সুল গ্রহণ করা যেতে পারে। তবে যে কোনো নতুন ওষুধ নেওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।

মানাকার বলেন, “আর এটা যেহেতু চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিন তাই বড় বড় ডোজ খেলেও শরীরে হয়ত পর্যাপ্ত পরিমাণে শোষিত হবে না। সে কারণে এই ধরনের ভিটামিন গ্রহণের ক্ষেত্রে আরও কী কী ব্যবস্থা নিতে হবে তা চিকিৎসকই বলে দিতে পারবেন।”

আরও পড়ুন

যেসব ভিটামিন খাওয়ার মানে অর্থের অপচয়

ভিটামিন ই’র অভাব বোঝার উপায়

কমলার চাইতেও ভিটামিন সি বেশি যেসব খাবারে

বয়সের সঙ্গে ভিটামিন ডি’র চাহিদায় পরিবর্তন