ঘুম আর সঙ্গমের মতো দৈনন্দিন অনেক কাজের জন্যই হতে পারে ‘ব্যাক পেইন’।
Published : 22 Feb 2015, 05:16 PM
স্বাস্থবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটে জানানো হয়, যেসব কারণে হাসপাতালে মানুষ ভর্তি হয় এরমধ্যে ‘ব্যাক পেইন’ অন্যতম। আর যতগুলো কারণে অপারেশন করার প্রয়োজন হয় এরমধ্যে তৃতীয় কারণ হচ্ছে এই রোগ।
যুক্তরাষ্ট্রের এই ধরনের ব্যথা নিয়ে বহুদিন ধরে কাজ করছেন ‘দ্য ট্রুথ অ্যাবাউট ব্যাক পেইন’য়ের রচয়ীতা ডা. টড সিনেট।
তিনি পিঠের ব্যথাকে ‘আকস্মিক বিপর্যয়’য়ের সঙ্গে তুলনা দিয়ে বলেন, “অনেক কারণেই ব্যথা হতে পারে। তবে অনেক সময় তুচ্ছ অনেক দৈনন্দিন অভ্যাসের জন্যও এই ব্যথা হতে পারে।”
আর সেসব বিষয়ে সাবধান থাকলে এই ব্যথার হাত থেকে দূরে থাকা সম্ভব হয়।
দীর্ঘসময় কুঁজো হয়ে বসে থাকলে
চেয়ারের উপর বাঁকা হয়ে বসলে বুকের মাংসপেশিতে চাপ পড়ে। ফলে কাঁধ সামনের দিকে ঝুঁকে যায়। আর বাঁকা হয়ে বসলে শক্তির অপচয় হয় যার ফলে পিঠে ও ঘাড়ে ব্যথা হয়। টেক্সাস ব্যাক ইন্সটিটিউটের কাইরোপ্যাটিক বিভাগের পরিচালক ডারান ডব্লিউ মারলো, রোগীদেরকে তাদের দেহভঙ্গির দিকে নজর দেওয়ার পরামর্শ দেন।
“এক্ষেত্রে ৯০ ডিগ্রি কোণ করে ও চেয়ারের চাকার কাছাকাছি বসার চেষ্টা করুন। তাহলে আর বাঁকা হয়ে বসতে হবে না” পরামর্শ দেন মারলো।
তিনি আরও বলেন, “তাছাড়া অনেক মানুষই জানেন না যে পা ছড়িয়ে বসার কারণে পিঠ সঠিক অবস্থানে থাকে না।”
কাজের ফাঁকে বিরতি নেওয়া
দাঁড়িয়ে থাকার চেয়ে বসে থাকলে মেরুদণ্ডে ৪০ শতাংশ বেশি চাপ পড়ে। আর কাজ করার সময় সঠিক দেহভঙ্গি বজায় রাখার কথা অনেকেই ভাবেন না। ব্যস্ত সময়ে কাজের ফাঁকে নিয়মিত বিরতি নেওয়াটাও বুদ্ধিমানের কাজ নয়।
এক্ষেত্রে ১৩৫ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে বসে কাজ করলে মেরুদণ্ডের মধ্যবর্তী জায়গা কম সংকোচিত হবে। তাছাড়া আধা ঘণ্টা পরপর কিছুক্ষণের জন্য উঠে দাড়ালে এবং হাঁটাহাঁটি করলে উপকার পাওয়া যাবে। পাশাপাশি অফিসের চেয়ার মেরুদণ্ডের বাঁকা স্থানের ভার ঠিকভাবে নিচ্ছে কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে। কারণ বসার সময় মাথা সোজা এবং মেরুদণ্ড চেয়ারের সঙ্গে লেগে থাকতে হবে। তাছাড়া কম্পিউটার স্ক্রিনে তাকানোর সময় সামনে ঝুঁকা যাবে না।
মানসিক চাপ
দীর্ঘস্থায়ী ও তীব্র মানসিক যন্ত্রণাও পিঠ ব্যথার অন্যতম কারণ হতে পারে। মানসিক চাপে ভুগলে পেশী, ঘাড় ও পিঠে চাপ পড়ে।
তাই প্রতিদিন শান্ত বা চাপ মুক্ত থাকার অভ্যাস করতে হবে। এক্ষেত্রে ভালো বই পড়া যেতে পারে অথবা বন্ধু বা সঙ্গীর সঙ্গে আনন্দদায়ক মুহূর্ত কাটানো যেতে পারে। তাহাড়া গবেষণায় জানা যায় ব্যথা কমাতে গান বেশ কাজ করে।
সালজবার্গের জেনারেল হাসপাতালের মনোবিজ্ঞানী ও গবেষক ফ্রেঞ্জ ওয়েন্ডটনার এই বিষয়ে গবেষণার ফলাফলের ভিত্তিতে বলেন, “সঙ্গীত হরমোনের চাপ ও পেশীর উত্তেজনা কমাতে সাহায্য করে।”
জিম বা ব্যয়াম না করলে
এক্ষেত্রে বেশি করে ব্যায়াম করলে উপকার পাওয়া যাবে। বিশেষত নিয়মিত হাঁটালে আরাম পাওয়া যায়, জানান যুক্তরাষ্ট্রবাসী ভারতীয় স্পাইন সার্জন রাজ রাও।
পুরাতন তোশক
আমেরিকার ন্যাশনাল স্লিপ ফাউন্ডেশনের মতে, একটি ভালো তোশক সাধারণত ৯ থেকে ১০ বছর টেকে। তবে ঠিকভাবে ঘুমাতে না পারলে বা পিঠে অস্বস্তি হলে পাঁচ থেকে সাত বছর অন্তর তোশক পরিবর্তন করা উচিত। ওকলাহামা স্টেট ইউনিভার্সিটির করা এক গবেষণায় জানা যায়, যারা পাঁচ বছর অন্তর তোশক পরিবর্তন করেন তাদের পিঠে তুলনামূলক কম ব্যথা হয়।
এক্ষেত্রে বেশি শক্তও না আবার বেশি নরমও না, এমন তোশক কিনতে বা ব্যবহার করতে হবে। স্প্যানিশ গবেষকরা জানান, শক্ত তোশকে ঘুমালে মেরুদণ্ডে বেশি চাপ পড়ে ব্যথা হতে পারে।
খাদ্যাভ্যাস
যে সব খাবার হৃদযন্ত্র ভালো রাখে এবং শরীরের ওজন ও রক্তে চিনির পরিমাণ স্বাভাবিক রাখে সে সব খাবার পিঠের জন্যও উপকারী।
ফিনল্যান্ডের গবেষকরা দেখতে পান, যাদের পিঠ ব্যথা করে তাদের বেশিরভাগেরই ধমনী ও মেরুদণ্ড ক্ষতিগ্রস্ত।
তবে স্বাভাবিক রক্তচলাচল মেরুদণ্ডে পুষ্টি যুগিয়ে ময়লা পরিষ্কারে সাহায্য করে, জানান সিনেট। এমনটা না হলে, পিঠে প্রদাহ হতে পারে যা স্নায়ুর মাধ্যমে মস্তিষ্কে ব্যথার সংকেত পাঠাবে।
ইয়োগা
যে কোন ধরনের ব্যায়ামই শরীরের রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রেখে ও চাপ কমিয়ে পিঠ ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
ইউনিভার্সিটি অব ওয়াশিংটনের গবেষকরা জানান, প্রচলিত ব্যায়ামের তুলনায় ইয়োগা দ্রুত পিঠ ব্যথা কমায়। কারণ ইয়োগাতে ‘গভীরভাবে শ্বাস নেওয়া ও শিথিলতা’ দুটোই করানো হয়।
ইয়োগা করার সময় ইয়োগা শিক্ষক বা নির্দেশককে পিঠ ব্যথা সম্পর্কে জানাতে হবে। তাহলে পিঠ ব্যথা কমাতে সাহায্য করবে এমন কিছু ব্যয়াম তিনি করাবেন।
ভারি ব্যাগ
কাঁধে প্রতিদিন ভারি ব্যাগ বহন করলে পিঠে ব্যথা হতে পারে। কারণ ভারী ব্যাগ কাধের ভারসাম্যতা নষ্ট করে ফেলে, জানান সিনেট।
এক্ষেত্রে হালকা ব্যাগ ব্যবহার করতে হবে। তাছাড়া ব্যবহৃত ব্যাগের ওজন শরীরের ওজনের তুলনায় কোনোভাবেই ১০ শতাংশের বেশি হওয়া যাবে না। পরিস্থিতি এড়াতে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ভাগ করে দুই ব্যাগে নেওয়া যেতে পারে। এতে করে কাঁধের উপর চাপ কম পড়বে।
বেশি উঁচু বা বেশি নিচু জুতা
এক্ষেত্রে পায়ের জন্য আরাম দায়ক ফ্ল্যাট জুতা বা স্নিকারস পড়া যেতে পারে। আর ফ্যাশনেবল জুতাও বাদ দেওয়ার দরকার নেই। শুধু অনেকদূর হাঁটতে হবে এরকম কোনো জায়গায় যাওয়ার সময় হিল পরা বাদ দিন।
বাইক চালানো
যদি মোটরসাইকেল বা সাইকেল চালানো শুরু করার পর পিঠে ব্যথা হওয়া শুর করে, তবে এই বহন নতুন করে সমন্বয় করতে হতে পারে।
ইউনিভার্সিটি অব পেনিসিলভানিয়ার পুনর্বাসন চিকিৎসাবিদ্যার সহযোগী অধ্যাপক জেনিফার চাও জানান, ৩০ থেকে ৭০ শতাংশ বাইকার পিঠে ব্যথা অনুভব করেন।
এক্ষেত্রে ইউএস অলিম্পিক সাইকেল কোচ ইডি বার্কার, নিজের জন্য আরামদায়ক সাইকেল ব্যবহারের পরামর্শ দেন।
সাধারণ সাইকেলে ক্ষেত্রে উরুসন্ধি থেকে হ্যান্ডেল বার এক থেকে দুই ইঞ্চি সামনে থাকবে। আর মাউন্টেইন বাইকের ক্ষেত্রে তিন থেকে ছয় ইঞ্চি সামনে থাকবে।
প্যাডেল নিচে থাকলে সিটে বসা অবস্থায় পায়ের অবস্থান হতে হবে ঘড়ির ছয়টা বাজার কাঁটার মতো। বাইকের হাতল ধরার ক্ষেত্রে কণুই অল্প বেঁকবে। তবে হাতে কোনো রকম চাপ পড়লে বুঝতে হবে সমস্যা আছে।
সম্পর্কিত আরও খবর: