ব্যস্ত নগরজীবনে ঘরে বসেই কেনাকাটার উপায় করে দিয়েছে অনলাইন শপিংসাইটগুলো। যানজট ঠেলে বাজারে না গেলেও চলবে। শুধু থাকতে হবে ইন্টারনেট সংযোগ।
Published : 08 Jul 2014, 08:20 AM
ডিজাটাল যুগে কষ্ট কমিয়ে দিচ্ছে অনলাইন শপিং সাইটগুলো। পিছিয়ে নেই সোশাল নেটওয়ার্কিং সাইট ফেইসবুক। কম্পিউটারে ব্রাউজ করলেই ঘরে বসে পাওয়া যাচ্ছে নিজের পছন্দমতো পোশাক, গহনা বা নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী।
অনলাইন শপিং শুনলেই অনেকে মনে করেন, টাকা দিতে হবে ডেডিট বা ক্রেডিট কার্ডে। তবে সেই সমস্যাও এখন বলতে গেলে নেই। বেশিরভাগ অনলাইন শপই ‘ক্যাশ অন ডেলিভারি’ সার্ভিস দিয়ে থাকে।
স্বামী-স্ত্রী দু’জনেই চাকরি করেন বা, যারা বাজারের ভীড় ঠেলে আর দরদাম করে চাল, ডাল, তেল, সবজি কেনার ঝামেলা এড়াতে চান তারাও এখন ঘরে বসে পেতে পারেন প্রতিদিনকার অপরিহার্য বাজার-সদাই। আর এর জন্য প্রায় এক বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে chaldal.com।
মাউসের ক্লিকেই কেনা যাবে চাল, ডাল বা সবজি। গ্রোসারি, স্টেশনারি এবং বেবি প্রোডাক্ট সবই রয়েছে এই অনলাইন দোকানে।
ওয়াসিম বলেন, “প্রায় ১ বছর হতে চলল আমাদের সাইটের বয়স। প্রতিদিনের চাল ডাল, সবজির পাশাপাশি, বর্তমানে স্টেশনারি এবং বেবি প্রোডাক্টসও সরবরাহ করে থাকি আমরা। মূলত কর্মজীবি এবং বাজারে যেতে পারেন না এমন মানুষের পছন্দের তালিকায় রয়েছে আমাদের সাইট।”
তিনি আরো বলেন, “মাসে প্রায় ১ হাজার অর্ডার পাই। পুরো ঢাকাতেই হোম ডেলিভারি সার্ভিস দেওয়ার চেষ্টা করছি। তবে পুরান ঢাকা, যাত্রাবাড়ি এলাকাগুলোতে এখনো সার্ভিস দিতে পারছি না। প্রধান কারণ এসব এলাকার রাস্তাঘাট।”
ওয়াসিমের কাছ থেকে জানা গেল, চালডাল ডটকম বাজার মূল্যেই সরবরাহ করে প্রতিদিনকার প্রয়োজনীয় পণ্য। প্রতিদিনকার শাকসবজি কারওয়ান বাজার থেকে সংগ্রহ করেন। আর তিন ধরনের মিনিকেট চাল তাদের গোডাউনে স্টক করে রাখা হয়।
ছেলে ও মেয়েদের পোশাক, বেবি প্রোডাক্টস, কসমেটিকস, খাবার এসব মিলিয়ে বিশাল এক সম্ভার dreamshopbd.com। বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ফোন, ট্যাবলেট, পেনড্রাইভ এবং কম্পিউটার সংশ্লিষ্ট উপকরণও পাওয়া যাবে এখানে।
এ সাইটে রয়েছে নানান ব্র্যান্ডের বুটজুতার পাশাপাশি বিভিন্ন দলের জার্সি। আরও আছে ছেলেদের শার্ট, পাঞ্জাবি, বাচ্চাদের পোশাক এবং রেপ্লিকা ঘড়ি, সানগ্লাস, কিয়ামি অল ইন ওয়ান সেটসহ আরও অনেক কিছু।
চামড়ার বেল্ট এবং মানিব্যাগও কেনা যায় এই সাইট থেকে। অর্ডার করতে নিজের ই-মেইল আইডি দিয়ে খুলতে হবে অ্যাকাউন্ট। আর সেই অ্যাকাউন্টের মাধ্যমেই ঘরে বসে কেনাকাটা করতে পারবেন গ্রাহক।
এই অনলাইন দোকানের প্রতিষ্ঠাতা শায়লা কাজি বলেন, “যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং থাইল্যান্ড থেকে প্রসাধনীগুলো আনাই। তাছাড়া ভারতে আমি নিজে গিয়ে সাইটের জন্য জুয়েলারি নিয়ে আসি। তাই বাজার মূল্যের তুলনায় এসব পণ্য কম দামে দিতে পারি।”
“শ্যাম্পু, বডি স্প্রে, ডে ক্রিম, নাইট ক্রিম, শাওয়ার জেল, মেনজ আইটেম এমন অসংখ্য প্রোডাক্ট দিয়ে সাজানো এই অনলাইন দোকানে রয়েছে নিজস্ব ডেলিভারি ম্যান। যারা অর্ডার করার ২৪ ঘন্টার মধ্যে গ্রাহকের হাতে পণ্য পৌঁছে দেয়।” বললেন শায়লা।
প্রথমে প্রসাধনী দিয়ে শুরু করলেও পরে নিজের নকশা করা কিছু পোশাক এবং গহনা সাইটে রাখা শুরু করেন শায়লা। ঈদ উপলক্ষ্যে তার সাইটের সব পণ্যের উপরে ১০% ছাড় দিচ্ছেন।
প্রায় আড়াই বছর আগে শুধু বই নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও গ্রাহকদের জন্য ভিন্ন ধরনের পণ্য দিয়েও সাইট সাজানোর পরিকল্পনা করছেন তারা। এমনটাই জানালেন এই সাইটের একজন উদ্যোক্তা সোহাগ।
তিনি বলেন, “প্রতিদিন প্রায় ২শ’ থেকে ৫শ’ অর্ডার পেয়ে থাকি আমরা। শুধু ঢাকা শহরে নয়, বরং পুরো দেশজুড়ে ‘ক্যাশ অন ডেলিভারি’ সুবিধা দেই।”
সাইটে নেই, এমন কোনো বইয়ের অর্ডার করা হলেও সেটি বাইরে থেকে এনে দেয় তারা। এক্ষেত্রে বইয়ের দাম পড়বে কিছুটা বেশি।
সোহাগ বলেন, “দু’বছর আগে শুধু বই দিয়ে রকমারি ডটকমের যাত্রা শুরু করেছি। তবে আমাদের উদ্দেশ্য আমাজন ডটকমেরমতো একটি সাইট তৈরি করা। আমরাই প্রথম ‘ক্যাশ অন ডেলিভারি’ সুবিধা দিতে শুরু করেছিলাম। তাছাড়া বই বা অন্য যেকোনো পণ্যে যদি সমস্যা থাকে তাহলে আমরা তখনই সেটি বদলে দেই।”
এমনই আরও অনেক সাইটের মধ্যে আছে aponzone.com, kudoro.com, wristbands-house.com, AmarGadget.com, feriola.com, banglashoppers.com, akhoni.com, goponjinish.com, biponee.com, priyoshop.com, dam.com.bd, bdebazaar.com, ajkerdeal.com ইত্যাদি।
শুধু মাছ কেনাকাটার জন্য রয়েছে fish.com.bd।
দেশি ব্র্যান্ডের বিভিন্ন পোশাক কেনার জন্য রয়েছে bangladeshbrands.com।
রঙ, এক্সট্যাসি, সাদা-কালো, মেন্জেক্লাব, প্রবর্তনা, নগরদোলাসহ ৩৯টি ব্র্যান্ডের ২১ হাজারেরও বেশি রকমের কাপড় রয়েছে। আরো আছে ১০ হাজারেরও বেশি বই, বিভিন্ন ইলেকট্রিনক্স ও কম্পিউটারসহ নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য।
এখান থেকে ভিসা কার্ড, মাস্টার কার্ড, ব্রাক ব্যাংকের কার্ড, ডাচ-বাংলা ব্যাংকের নেক্সাস কার্ড, কিউ-ক্যাশ কার্ড অথবা আপনার যে কোনো ব্যাংকের একটি এটিএম কার্ড অথবা বিকাশ-এর মাধ্যমে কেনা যাবে।
দেশের সুপার শপ মিনা বাজারও গ্রাহকদের অনলাইন সার্ভিস চালু করেছে। meenabazar.com.bd থেকে মিনা বাজারের যাবতীয় পণ্য কেনা যাবে।
অনলাইন শপিংয়ের ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই সোশাল নেটওয়ার্কিং সাইট ফেইসবুক। প্রায় তিন বছর ধরে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে অনলাইন শপিংয়ের ফ্যান পেইজগুলো। ফেইসবুকে পেইজ তৈরি করে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা তাতে দেশি বিদেশি নানান ধরনের পণ্য বিক্রি করছেন।
ফেইসবুক ভিত্তিক অনলাইন পেইজগুলো বেশিরভাগই বিদেশি জুয়েলারির জন্য জনপ্রিয়। তাছাড়া দেশীয় বাজারে সহজলভ্য নয় এমন ‘এক্সক্লুসিভ প্রোডাক্ট’ কেনার জন্যও দারুণ মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে ফেইসবুক পেইজগুলো।
বিক্রেতার সঙ্গে ফেইসবুক পেইজে বা ফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করা যায়। কোনো পণ্য না থাকলেও ফেইসবুকের ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা তা আনিয়ে দেয়।
অনেক পোশাক নকশাকর তাদের নকশা করা পোশাক বিক্রির জন্য বেছে নিয়েছেন ফেইসবুক। আবার দেশ বিদেশের বিভিন্ন পোশাকের রেপ্লিকাও তৈরি করে দিচ্ছেন অনেকে। এমনই কিছু ফেইসবুক পেইজের মধ্যে আছে facebook.com/ButterflybyShagufta, facebook.com/pages/Violaby-Fariha/212123002184038), facebook.com/bdhijibiji, facebook.com/Aungona, facebook.com/fashion.world.dhaka.bd?ref=profile, facebook.com/tdrram?ref=profile, facebook.com/Gutipokacom ইত্যাদি।
তাছাড়া ফেইসবুকেই চামড়ার তৈরি জিনিস কিনতে চাইলে ঘুরে দেখতে পারেন facebook.com/viperleather
ভিন্নধর্মী সাইটের মধ্যে আছে facebook.com/pages/Trendybogra/353733991387700। ছেলেদের টি-শার্টের জন্য আছে facebook.com/Heavy.Metal.T.Shirt, utsho, facebook.com/CivvyStreetbd?hc_location=timeline, facebook.com/crackjack12?hc_location=timeline ইত্যাদি।
একটু ভিন্নধর্মী গিফট আইটেম চাইলে আছে facebook.com/enliven.me, facebook.com/vaj.binnash ইত্যাদি পেইজ।
তাছাড়া বিদেশি কসমেটিকস পাওয়া যায় এমন পেইজেরও কমতি নেই। একটু ‘সার্চ’ করলেই পেয়ে যাবেন পছন্দসই জিনিস।
তবে ফেইসবুকে কেনাকাটা করার সময় বা আগে, যে পেইজ থেকে কিনতে যাচ্ছেন বা অর্ডার করছেন সেই পেইজ এবং এর কর্ণধার সম্পর্কে ভালো করে জেনে নেওয়া ভালো। কারণ অনেক সময়ই ‘ফেইক পেইজে’র পাল্লায় পড়ে ভুগতে হয়েছে অনেককেই।
ডিজিটাল যুগে কেনাকাটা ডিজাটাল পদ্ধতিতে হলেও ঘরে আসছে আসল পণ্য। ফলে করতে হচ্ছে না খাটনি, বেঁচে যাচ্ছে সময়।