শুধু রূপচর্চা করে ত্বক উজ্জ্বল করলেই চলবে না সঠিক খাওয়া দাওয়া আর ব্যায়াম করতেই হবে।সুঠাম, সুগঠিত শরীর আর স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ত্বকের মায়াবি মিশ্রণই পুরুষের রূপ রহস্যের গোপন পাসওয়ার্ড।ছেলেদের রূপ-কড়চা সম্পর্কে বিস্তারিত জানাচ্ছেন হেরোবিক্স সেলুনের রূপ বিশেষজ্ঞ তানজিমা শারমিন মিউনি।
Published : 27 Jan 2013, 10:23 AM
সকাল থেকেই শুরু হয় ছেলেদের বাইরের দৌড়ঝাঁপ।তাদের ঘরের বাইরে বেশি সময় কাটাতে হয়। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে, ধুলোবালির প্রলেপে ত্বকের রঙ তামাটে, রুক্ষ ও ম্লান হয়ে যায়। ছেলেদের ত্বকের এ রুক্ষতা দূর করতে নিয়মিত যত্নের প্রয়োজন। এছাড়া পুরুষের ত্বক মেয়েদের তুলনায় অনেক বেশি পুরু।তাই মেয়েদের ত্বকচর্চা থেকে পুরুষদের রূপচর্চার ধরনটাই আলাদা।ছেলেদের সবচেয়ে বেশি সমস্যার জায়গা হলো ভ্রু’র রেখার ভাঁজ, চোখের কোলের ত্বকে কুঁচকে যাওয়া দাগ, ঝুলে পড়া গাল আর এবড়ো-থেবড়ো ছিদ্রযুক্ত অমসৃণ ত্বক। অবশ্য ত্বকের যত্নে ছেলেরা এখন অনেক সচেতন। পার্লার বা সেলুনগুলোতে তারা শুধু চুল কাটতে নয়, এর পাশাপাশি চুল সাজানো, শ্যাম্পু, মেনিকিউর, ব্লিচ, ফেসিয়াল, বডি ম্যাসাজ, বডি প্যাকও করছেন।এই কারণে শুধু ছেলেদের রূপচর্চার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে আলাদা পার্লার।এসব জায়গায় পুরুষের ত্বকের সমস্যা, চুল পড়া, চুল বেঁকে যাওয়া, খুসকি দূর করা ইত্যাদি জটিলতায় পরামর্শ ও সমাধান দেয়া হয়।হাত পায়ের যত্নের জন্য রয়েছে মেনিকিউর, পেডিকিউর, ব্লিচ, ম্যাসাজ ইত্যাদি।রোদ, বাইরের ময়লা, বিভিন্ন দূষণ ইত্যাদি ত্বককে করে তোলে শুষ্ক ও খরখরে। প্রতিদিন তাই ত্বকের যত্ন নেওয়া উচিত।দাড়ি কামানো প্রায় সব পুরুষের প্রতিদিনকার কাজ।এছাড়াও তাদের ত্বক অনুযায়ী প্রয়োজন প্রতিদিনের যত্ন।
ছেলেদের ফেশাল
ছেলেরা দিনের বেশিরভাগ সময়ে বাইরে কাটান। তাই বাইরে বের হওয়ার আগে হাত মুখ ধুয়ে সানস্ক্রিন লোশন লাগিয়ে নেয়া উচিৎ। সাথের ব্যাগটিতে রাখতে হবে কোন ফেশাল বা ফেসওয়াশ।ব্যস্ত শহরের যানজট আর ধুলোবালির মধ্য দিয়ে অফিসে পৌঁছে প্রথমেই ব্যাগে রাখা ফেশাল বা ফেসওয়াশটি দিয়ে একটু হাত মুখ ধুয়ে এলে কাজে মনোযোগ দেয়া যায় ভালো।ধুলোবালি ও ঘাম থেকেই সৃষ্টি হয় নাকের দুই পাশে, ঠোঁটের কোণে, থুতনির কাছে ব্ল্যাক-হেডসের মতো ত্বকের নানান সমস্যা।যারা সারা দিনে হাত-মুখ পরিষ্কার করার সময় পান কম তাদের মাসে অন্তত একদিন কোন ছেলেদের বিউটি সেলুনে গিয়ে ফেশাল করানো উচিত।যাদের শুষ্ক ত্বক তারা সানবার্ন ফেশাল করাতে পারেন।এটি রোদে পোড়া ত্বকের জন্যেও উপকারী।যাদের ত্বক তৈলাক্ত তারা অ্যালোভেরা ও গোল্ড ফেশাল করাতে পারেন।যাদের ত্বকে ব্রনের সমস্যা রয়েছে তারা আয়ুর্বেদিক ফেশাল করালে উপকার পাবেন।আর যারা ঘরে বসে ত্বকের যত্ন নিতে চান তারা রোদে পোড়া ভাব কমাতে চন্দনের প্যাক লাগাতে পারেন।এখন বাজারে নানা ধরনের স্ক্রাব পাওয়া যায়।এসব স্ক্রাব দুই তিনদিন পর পর মুখে লাগিয়ে কিছু সময় মালিশ করে ধুয়ে ফেলুন।এছাড়া মাঝে মাঝে রাতে ঘুমানোর আগে উপটান লাগিয়ে কিছু সময় রেখে দিন।শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন।ত্বকে ব্ল্যাক-হেডস থাকলে গরম পানিতে কিছু সময় ভাপ নিয়ে আস্তে আস্তে দুই আঙ্গুলের ডগা দিয়ে চেপে ব্ল্যাক-হেডস বের করতে পারেন।
বয়ঃসন্ধিতে ত্বকের যত্ন
এই সময় হরমোনের তারতম্যের ফলে সাধারণত ত্বকে ব্ল্যাক-হেড বা ব্রন বেশি হয়।বেড়ে ওঠার সময় এটি স্বাভাবিক।কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ছেলেরা এদিকে একদমই নজর দেয় না।অথচ একবার যদি ত্বকের সমস্যা বাড়তে শুরু করে তবে সেটিকে কমানো সাধ্যের বাইরে হয়ে যাবে।কেউই চাইবেনা মুখে কালো দাগ কিংবা ব্রনের মতো গোটা তার মুখের সৌন্দর্য নষ্ট করুক।আর তাই মুখে এ জাতীয় কোন গোটা দেখা দিলে কোন ভাবেই তাতে নখ লাগানো ঠিক নয়। যাদের মুখে ব্ল্যাক-হেডস আছে তারা কোন ভাবেই চাপ দিয়ে সেগুলো বের করার চেষ্টা করবেন না।সবসময় চর্ম বিশেষজ্ঞ অথবা দক্ষ বিউটি এক্সপার্টের পরামর্শ নিন।বাড়িতেও কিছু কিছু যত্ন নেয়া প্রয়োজন।এজন্য প্রতিদিন রাতে বাসায় ফিরে অবশ্যই স্ক্রাব দিয়ে ভালোভাবে মালিশ করে ত্বক পরিষ্কার করবেন।ব্ল্যাক-হেডস তোলার জন্য একটি ঘরোয়া পদ্ধতি ব্যাবহার করতে পারেন।যেমন-ডাবের পানিতে অল্প কিছু চাল সারারাত ভিজিয়ে রাখুন।পরদিন সকালে পানি ঝরিয়ে চাল বেটে নিন।বাটা চালের সঙ্গে পরিমান মতো গোলাপ-জল ও ২ থেকে ৩ ফোটা মধু মিশিয়ে ব্ল্যাক-হেডসের উপরে লাগান।কিছুক্ষণ পর আস্তে ঘষে ঘষে তুলে মুখ ভালো করে ধুয়ে ফেলুন।তবে ব্রনের উপর এই মিশ্রণটি লাগাবেন না।
মধ্যবয়সী ছেলেদের ত্বকের যত্ন
এই সময়ে সাধারণত ত্বকের প্রধান সমস্যা স্থিতিস্থাপকতা হারিয়ে ত্বক ঝুলে পড়ে।এজন্য ত্বকের বয়স ধরে রাখতে বিশেষ যত্নের প্রয়োজন।অক্সিজেন, আলট্রাসোনিক, হাইফ্রিকোয়েন্সি, ফেশাল এক্ষেত্রে খুব ভালো কাজ দেয়।এ সময় চোখের নিচে ফোলা ভাবও দেখা দেয়।শরীরে ভেতর কোন সমস্যা যেমন সাইনোসাইটিস বা কিডনির রোগ হলে এমনটা হতে পারে।এক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করা উচিৎ।এছাড়া বেশি পরিমানে পানি খেলে ত্বক ভালো থাকে।অল্প গরম পানিতে লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেলে ভাল ফল পাওয়া যাবে।চোখের নিচের ত্বক অনেক পাতলা ।তাই ক্রিম বা ময়েশ্চারাইজার লোশন ব্যবহার করা ঠিক নয়।প্রয়োজনে আন্ডার আই ক্রিম লাগাতে পারেন।যে কোন বয়সেই ত্বকের যত্ন নেয়া বিশেষ জরুরি।
চুলের যত্ন
যদিও সুন্দর লম্বা চুলে মেয়েদেরই একচেটিয়া অধিকার আছে।তবে চুলহীন পুরুষও কারো কাম্য হতে পারে না। নারী পুরুষ প্রত্যেকের কাছেই চুল শরীরের একটি অত্যন্ত আকর্ষণীয় অংশ।তাই নিয়মিত চুলের যত্ন নেয়া প্রয়োজন।চুলের নিজস্ব কোন রক্তনালী নেই।ত্বকের পুষ্টি থেকেই চুল পুষ্টি পায়।আর আমরা প্রতিদিন যে খাবার খাই তা থেকেই আমরা এ পুষ্টি পেয়ে থাকি।তাই সুন্দর চুলের অধিকারী হওয়ার জন্য পুরুষদেরও খানিকটা কষ্ট করতে হয়।চুলে নিয়মিত তেল দেয়া, চুল শ্যাম্পু করা, কন্ডিশনিং করা খুবই জরুরি কাজ।আর যদি সম্ভব হয় তবে সপ্তাহে অন্তত একদিন চুলে মেহেদি ব্যবহার করলে উপকার পাওয়া যাবে।
খুশকি হলে
এটি একটি সাধারণ সমস্যা।যদি কারো অনেক দিন ধরে খুশকির সমস্যা থেকে থাকে তবে মুখে ব্রন হওয়া, চুল পড়ার মতো সমস্যা দেখা দেয়।চুলের হালকা তেল ম্যাসাজ অনেক ক্ষেত্রেই এ সমস্যার সমাধান করে।মেহেদি খুশকির সমস্যার সমাধানের সহায়ক।এরসঙ্গে ডিমের সাদা অংশ, দই, কফি, অল্প গরম পানি দিয়ে ভালোভাবে পেস্ট তৈরি করে মাথায় লাগান।আধাঘন্টা পর ধুয়ে ফেলুন।
চুল পড়ার কারণ
চুল পড়তে পারে নানান কারণেই।২০-২২ বছর বয়সের পর থেকেই চুল কমতে শুরু করে।পুরুষদের ক্ষেত্রে হরমোন এন্ড্রোজেনই প্রধানত চুল পড়ার জন্য দায়ী।এই হরমোন পুরুষদের ক্ষেত্রে বেশি থাকে।তাই তাদের চুল বেশি পড়তে দেখা যায়।আবার বংশানুক্রমে কোন পরিবারে এই হরমোনের প্রতি হেয়ার ফলিকলের সংবেদনশীলতা বেশি থাকলে সেই বংশের ছেলেদের টাক পড়ার প্রবণতা বেশি দেখা যায়।তবে এখন মাথা কামিয়েও রাখেন অনেকে।বেশি চুল পড়ে টেকো হয়ে ঘুড়ে বেড়ানোর চাইতে মাথা কামিয়ে নতুন স্টাইল ধরাটা কিন্তু মন্দ নয়।
সুদর্শন পুরুষ মানেই আমরা বুঝি সুন্দর ত্বক, সুন্দর চুল, সুস্বাস্থ্যের অধিকারী একজন। আর এ সব কিছুর জন্য প্রয়োজন নিয়মিত যত্ন, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, পরিমিত আহার ও একটি ভালো ঘুম।