অন্ত্রের রোগ থেকে সংক্রমণের ঝুঁকি

‘ইনফ্লামাটরি বাওয়েল ডিজিজ (আইবিডি)’তে আক্রান্ত তরুণ রোগীদের ভাইরাসজনীত সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা সাধারণ জনগোষ্ঠীর তুলনায় পাঁচগুন বেশি।

লাইফস্টাইল ডেস্কআইএএনএস/বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Dec 2019, 01:38 PM
Updated : 8 Dec 2019, 01:38 PM

আর এই সংক্রামক রোগ পরবর্তী সময়ে স্থায়ীভাবে কোনো অঙ্গ নষ্ট হওয়ার দিকে মোড় নিতে পারে। ‘ইউনাইটেড ইউরোপিয়ান গ্যাস্ট্রোএনটেরোলজি’ জার্নালে প্রকাশিত গবেষণার ফলাফলে এরকম ইঙ্গিত দেওয়া হয়। 

এই গবেষণার জন্য গবেষকরা ২৭০০ জন আইবিডি’তে আক্রান্ত রোগীকে নিয়ে কাজ করেন। গবেষণার উদ্দেশ্য ছিল এই রোগের বৈশিষ্ট্য ও এই রোগের ওষুধের কারণে সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কতটুকু ইত্যাদি বোঝা।

‘ক্লিনিকালি অ্যাকটিভ আইডিবি’ এবং ‘থিওপিউরিন্স’কে সংক্রামক রোগের প্রধান প্রভাবক হিসেবে চিহ্নিত করা হয় এই গবেষণায়। ‘থিওপিউরিন্স’ হল এক শ্রেণির ‘ইমিউনোমডিউলেটরস’ যা প্রায় ৬০ শতাংশ ‘আইবিডি’ রোগীর চিকিৎসায় ব্যবহার হয়।

১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সি তরুণ রোগীদের সংক্রামক রোগের আশঙ্কা সবচাইতে বেশি। তবে সকল বয়সের মানুষের মারাত্বক সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও প্রায় তিন গুন বেশি।

ফ্রান্সের সেইন্ট-অ্যান্টোইন হাসপাতালের অধ্যাপক এবং এই গবেষণার প্রধান গবেষক লওরেন্ট বিউগেরি বলেন, “আইবিডি’ রোগের ওষুধের সঙ্গে মারাত্বক সংক্রামক রোগের সম্পর্ক থাকাটা বেশ চিন্তার বিষয়। কারণ বর্তমানে ‘আইবিডি’র কারণে হওয়া জটিল শারীরিক সমস্যায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়াই এই রোগের চিকিৎসার বড় খরচ। আর এই রোগের ক্রমবর্ধমান রোগীর সংখ্যা বর্তমান স্বাস্থ্যসেবা সংগঠনের উপর ক্রমাগত চাপ বাড়াবে।”

‘থিওপিউরিন’ ব্যবহারের সঙ্গে একাধিক জটিল সংক্রামণ রোগের সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায় এই গবেষণায়।

একদিকে, যেসব ‘আইবিডি’ রোগী কোনো চিকিৎসা নিচ্ছেন না তারাও সাধারণ জনগোষ্ঠীর তুলনায় একই মাত্রার ঝুঁকিতে আছেন। অপরদিকে, যাদের ‘ইমিউনোমডিউলেটর’য়ের সাহায্যে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে তাদের সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা ছয় গুন বেশি।

‘আইবিডি’ রোগীদের সচরাচর আক্রান্ত হওয়া সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়ার পেছনে দায়ী ‘এপস্টেইন-বার ভাইরাস (ইবিভি)’, যার সঙ্গে জড়িয়ে আছে ‘গ্রান্ডুলার ফিভার’, ‘হজকিন’স লিম্ফোমা’, ‘সাইটোমেগালো ভাইরাস (সিএমভি)’ ইত্যাদি জটিল রোগ। ‘সাইটোমেগালো ভাইরাস (সিএমভি)’ এমন একটি সংক্রমণ যা নবজাতক শিশুদের আক্রমণ করে।

‘থিওপিউরিন’ ব্যবহারের সঙ্গে ‘ইবিভি’ ভাইরাসজনিত ‘হেমোফাগোসাইটিক লিম্ফোহিস্টিওসায়টোসিস (এইচএলএইচ) সম্পর্ক আছে, যা একটি ভয়ানক রোগ এবং এতে মৃত্যুর হার আশঙ্কাজনক মাত্রায় বেশি।

প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ‘থিওপিউরিন’ ব্যবহারকারী পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ার জন্য ব্যবহার বন্ধ করে দিচ্ছেন। আর এই গবেষণার ফলাফল ‘আইবিডি’ রোগীদের চিকিৎসার জন্য আরও ভালো চিকিৎসা খুঁজে বের করার প্রয়োজনীয়তা আরও গুরুতর আকার ধারণ করছে।

বিউগেরি বলেন, “চিকিৎসকদের ‘আইবিডি’ রোগীদের মারাত্বক সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হওয়া ঝুঁকি সম্পর্কে সতর্ক হতে হবে, যা আগে নিশ্চিতভাবে জানা ছিল না। তরুণ রোগীদের ঝুঁকি বেশি, যেহেতু তাদের ‘ইবিভি’ ও ‘সিএমভি’ ভাইরাসের সংস্পর্শে না আসার সম্ভাবনাই বেশি। তাই তাদের এই ভাইরাসগুলোর বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠার আশঙ্কা কম। এই ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দেয় ‘ইমিউনোসাপ্রেসিভ’ অর্থাৎ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে দমিয়ে রাখার ওষুধ সেবন।”

ছবি: pixabay free picture

আরও পড়ুন