মুজিব নগর থেকে আমঝুপি নীলকুঠির দূরত্ব ১৮ কিলোমটিারের মতো। দেখতে হলে যেতে হবে মেহেরপুর।
Published : 02 Dec 2016, 01:30 PM
কী দেখবেন কীভাবে যাবেন? সেই এলাকা ঘুরে এসে বিস্তারিত জানাচ্ছেন পরিব্রাজক ও চিত্রগ্রাহক ফারুখ আহমেদ।
এখানে প্রচুর পাখি আছে প্রথম দিন বের হয়েই বোঝা হয়ে গেল। দুইটা হাড়িচাচা এক সঙ্গে বসে আছে দেখতে পেয়ে ক্যামেরা হাতে আবু জাফরের সেকি দৌঁড়। যখন সে ফিরে এল তখন তার চোখে-মুখে একরাশ হতাশা। সে ক্লিক করার আগেই নাকি হাড়িচাচা ফুরুত। অনেক চেষ্টা করলো একটা হলদে পাখির ছবি তুলতে, পারল না।
ভাদ্র শেষ হয়ে আশ্বিন মাস চলছে। এমন সময় কাটা হয়ে গেছে এলাকার বেশির ভাগ পাট। চারিদিনে পাটের গন্ধ। এলাকার একজনকে বললাম উফ দারুণ গন্ধ।
তিনি উত্তরে বললেন দুইদিন থাকেন, এই ভালো লাগা হাওয়ায় উড়বে। সত্যি বলতে আমাদের অবস্থানের তিনদিন হলেও পাট ও তার গন্ধের মোহ একটুও কমেনি।
আমাদের আজকের গন্তব্য মেহেরপুরের আমঝুপি নীলকুঠি। এতক্ষণ বলছিলাম মুজিব নগরের দিনগুলির কথা। চলুন তাহলে ঘুরে আসি মেহেরপুরের আমঝুপি নীলকুঠি থেকে।
মুজিব নগর থেকে আমঝুপি নীলকুঠির দূরত্ব ১৮ কিলোমটিারের মতো। আমরা ঠিক আধা ঘণ্টায় আমঝুপি নীলকুঠি পৌঁছে গেলাম।
আমঝুপি নীলকুঠির ইতিবৃত্ত
মেহেরপুর মানেই নীলকরদের ইতিহাস ও অত্যাচারের কাহিনি। এদেশে ব্রটিশ রাজত্বকালে ইংরেজরা সে সময় দেশের বিভিন্ন স্থানে নীল চাষ করার জন্য যে সব কুঠি গড়ে তুলে ছিলেন, সেসব কুঠিবাড়িই নীলকুঠি নামে পরিচিত।
মোঘল সেনাপতি মানসিংহ এবং নবাব আলীবর্দি খাঁর স্মৃতি বিজোড়িত এই আমঝুপিতেই পলাশীর পরাজয়ের নীলনকশা রচিত হয়েছিল। কথিত আছে এই নীলকুঠিই ইংরেজ সেনাপতি ক্লাইভ লয়েড ও মীলজাফরের সঙ্গে ষড়যন্ত্রের শেষ বৈঠক হয়েছিল। যার পরের গল্প অত্যাচার আর নির্যাতনের।
আমঝুপি ষড়যন্ত্রের ফলাফল সিরাজ-উদ-দৌলার পতন। ফলাফল বাঙালিদের স্বাধিনতা হারিয়ে পরাধীনতা গ্রহণ। তারপর সেই যে অত্যাচার শুরু হল সেই অত্যাচারের রক্তেই একদিন এখানে আমঝুপিতে নীলকুঠি গড়ে উঠল।
আবার গৌরব গাঁথা হচ্ছে বঞ্চিত এবং অত্যাচার আর নির্যাতিত নীলচাষিরাই এক সময় দূর্বার আন্দোলনের মাধ্যমে ইংরেজদের পরাজিত করে বন্ধ করে নীলচাষ।
নীলকুঠি বন্ধ হয়ে এরপর সেটি রূপান্তরিত হয় মেদীনিপুর জমিদারের কাচারীতে। এরপর দেশভাগ হলে উচ্ছেদ হয় জমিদারি প্রথার।
১৯৭৯ সালে সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হয়। আমঝুপি নীলকুঠির পূননির্মাণ ও এখানে একটি আমবাগান গড়ে তোলার জন্য সে সময় ব্যয় করা হয় প্রায় ১৯ লক্ষ টাকা।
আমঝুপি নীলকুঠি দর্শন
আমঝুপি প্রবেশ মুখেই দেখা হয়ে গেল সারিসারি আমগাছের সঙ্গে। এটা হল আম্রকানন বা আম বাগান। আমরা আম্রকানন ও কিছু প্রাচীন ভবন পেরিয়ে আমঝুপি নীলকুঠিতে পৌঁছি। প্রবেশ মুখে জটলা করে অনেক এলাকাবাসিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম। তবে সেদিন কোনো দর্শনার্থী ছিলনা।
আমাদের সামনে এখন আমঝুপি নীলকুঠি লেখা যে ভবনটি দাঁড়িয়ে সেখানে নাকি এক সময় ক্লাইভ লয়েড বসবাস করতেন মতান্তরে এটা তার অফিস বা কাচারি ছিল। নির্বিঘ্নেই আমরা সে ভবনটি ঘুরে দেখলাম। ভবনটির সামনেই লেখা রয়েছে আমঝুপি নীলকুঠির ইতিহাস।
ইতিহাস পড়ে তার একটা ছবিও তুলে নিলাম। নীলকুঠি থেকে হাতের বাম দিকে রয়েছে বিশাল মাঠ। তার পাশে বয়ে চলেছে কাজলা নদী। আমরা সেদিকটায় না গিয়ে ডানপাশের পথ দিয়ে নীলকুঠির পেছনের অংশে প্রবেশ করি।
তারপাশের যে ভবনটিতে আমরা বৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্য আশ্রয় নিয়েছিলাম, সেটি দেখে বিস্ময় জাগলো। নীল কুঠির সম্মুখ ভাগে দেখে এলাম এক রকম স্থাপত্য নিদর্শন, পেছনে অন্যরকম। দুইদিক থেকে দেখলে উভয়কেই মনে হবে মূল ভবনের মূল ফটক।
আমাদের স্থপতি বন্ধু আসিফের কাছে জেনে নিলাম ব্রিটিশ ও ইউরোপ স্থাপত্যশৈলীর সংমিশ্রনে আমঝুপি নীলকুঠি স্থাপিত।
বেশি ভালো লাগছিল নদীর বুকে সারিসারি পাটখড়ি দাঁড়িয়ে থাকার দৃশ্য।
কীভাবে যাবেন ও বেড়াবেন
আমঝুপি মেহেরপুর উপজেলায় অবস্থিত। আমরা মুজিবনগর থেকে মেহেরপুর গিয়েছিলাম। আপনি সরাসরি মেহেরপুর চলে যেতে পারেন। মেহেরপুর সদর থেকে আমঝুপির দূরত্ব সাত কিলোমিটারের মতো।
খাওয়াদাওয়ার চিন্তা নেই। মেহেরপুরে খাবারের ভালো ব্যবস্থা আছে। আর এখানকার দধি ও মিষ্টর স্বাদ একবার নিলে বারবার নিতে মন চাইবে!
কী দেখবেন
মেহেরপুরে আমঝুপি ছাড়াও আছে ভাটপাড়া ও সাহারাবাটি নীলকুঠি। আমদহ স্থাপত্য নিদর্শন, সিদ্দেশ্বরী কালি মন্দির এবং ভবানন্দপুর মন্দির।