সুখ একটা চর্চার বিষয়। কিছু বিষয়ে সচেতন থাকলে সুখী থাকা খুব কঠিন কিছু নয়।
Published : 02 Mar 2016, 03:17 PM
একে অপরকে সঙ্গ দিয়ে, সুবিধা অসুবিধা বুঝে সাহায্য করে সহযোগিতার মাধ্যমে দাম্পত্যজীবন কীভাবে সুন্দর ও সুখী করবেন তাই জানিয়েছে সম্পর্ক বিষয়ক একটি ওয়েবসাইট।
সঠিক সময়: দাম্পত্যে মতের অমিল একটা স্বাভাবিক বিষয়। এই জন্য চাই দুইজনের মিলিত আলোচনা। তবে গঠনমূলক আলোচনা এবং সমালোচনা সঠিক সিদ্ধান্তের জন্য খুবই জরুরি। এরকম আলোচনার সময় কিছুতেই একজন আরেকজনের সঙ্গে কঠোরভাবে কথা বলা যাবে না। কোনো একজনের বক্তব্যের মাঝে থামিয়ে সিদ্ধান্ত দিয়ে দেওয়াও একটা ক্ষতিকর প্রবণতা। সঙ্গীকে তার কথা সম্পূর্ণ করার সুযোগ দিয়ে তারপরই কথা শুরু করা উচিত।
দুজনে মোরা দুজনের তরে: মন মতো সঙ্গী একটা আপেক্ষিক ধারনা। কেউই অন্য কারও মন মতো হতে পারে না। তবে একজন যদি অপরজনের কথা ভেবে কিছুটা ছাড় দেওয়ার মানসিকতা রাখতে পারে তাহলে সম্পর্ক অনেক মধুর হয়। দুজনের একজন হয়ত খেলার পাগল, অন্যজন গানের। দুইজনই যদি নিজ নিজ উন্মাদনা নিয়ে ব্যস্ত থাকেন আর অন্যের পছন্দকে মূল্য না দেন তবে একসঙ্গে কখনও সুন্দর সময় কাটানো সম্ভব হবে না। তাই গানের অনুষ্ঠান পছন্দ না করলেও সঙ্গীর কথা ভেবে তা উপভোগ করার চেষ্টা করা যেতে পারে। একইভাবে দুজন মিলে খেলার দেখতে গেলে খেলার পাশাপাশি একে অপরের সান্নিধ্যও উপভোগ্য হয়।
দুজনে মিলে শক্তিশালী: দাম্পত্য বা পরিবার আসলে একটা টিম বা দলের মতো। যে যত বেশি একা একা চিন্তা করবে সে তত বেশি একা থাকবে। তবে দুইজনের সমস্যা এক করা গেলে সমস্যা সমাধান করা অনেক সহজ হয়। তাই সঙ্গীর সম্পদের সঙ্গে তার সমস্যাগুলোকেও আপন করে নেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। ধরা যাক একজনের ওজন বিপদজনক ভাবে বেড়ে যাচ্ছে। তাকে ক্রমাগত ওজন কমানোর কথা মনে না করিয়ে দিয়ে দুজনে মিলে একটা স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপনের চেষ্টা করা যেতে পারে। নাহয় দুজন মিলেই ব্যায়ামাগারে যাওয়া হল। অথবা সঙ্গীর কথা ভেবে নিজের প্লেট থেকে মজার খাবারগুলো সরিয়ে সবজি রুটি নেওয়া হল। এক সঙ্গে করলে কঠিন কাজগুলোও খুব উপভোগ্য হয়।
আসল লক্ষ্য হোক ভালো থাকা: জীবনে চলার পথে কত ভুলই তো হতে পারে। আবার পরিস্থিতির কারণে অনেক অপ্রিয় কিছুও মেনে নিতে হতে পারে। যেমন কোনো একটা বিশেষ দিন কাজের জন্য মিস হয়ে যেতেই পারে অথবা সঙ্গীর কোনো আত্মীয় বন্ধুকে চিনতে ভুল হতে পারে। সব তুচ্ছ করে নিজেদের মধ্যে বিরক্তি বা তিক্ততা প্রকাশ করা ভালো সম্পর্কের চর্চা নয়। ছোটখাটো বিষয় উপেক্ষা করে, দিন শেষে ভালো থাকাই হোক দাম্পত্যের মূলমন্ত্র।
সাহায্য নিতে কুণ্ঠা নয়: সম্পর্ক যদি হাতের বাইরে যেতে থাকে তবে শুধু শুধু ‘ইগো’ পুষে না রেখে সরাসরি কোনো বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কাউন্সিলিং বা মানসিক সহায়তা নেওয়াই ভালো। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যারা বিশেষজ্ঞের সাহায্য নেন তারা না নেওয়ায় বিশ্বাসীদের থেকে বেশি সফল এবং সুখী। একান্ত যদি কোনো বিশেষজ্ঞের সাহায্য নেওয়া সম্ভব না হয়ে তবে কোনো শুভাকাঙ্ক্ষী বা সুহৃদের পরামর্শই গ্রহণ করা যেতে পারে। তবে পরামর্শ যেই দিক না কেনো পরামর্শটা অবশ্যই এমন হতে হবে যা সম্পর্কটিকে জুড়ে রাখে। সম্পর্কের সমস্যা থেকে বাঁচতে সম্পর্ক ভেঙে ফেলাও কোনো ভালো সিদ্ধান্ত না।
একসঙ্গে থাকুক, একসঙ্গে করুন: দুজন মানুষের মধ্যে সাধারণ কোনো পছন্দ অবশ্যই থাকে। হয়ত দুইজনই খেতে ভালোবাসেন অথবা দুইজনই বৃষ্টি ভালোবাসেন অথবা কোনো একজন অভিনেতাকে দুইজনেরই পছন্দ। মিল তা সে যে কাজে বা বিষয়েই হোক— এই মিলকে ধরে দুজন কিছু কাজ একসঙ্গে করুন। খেতে ভালোবাসলে দুইজন একসঙ্গে নতুন নতুন খাবার খাওয়ার পরিকল্পনা করুন। বৃষ্টি ভালোবাসলে একসঙ্গে বৃষ্টিতে ভেজার, বৃষ্টিকে উপলক্ষ্য করে গান শোনার, বেড়ানোর পরিকল্পনা করুন। প্রিয় অভিনেতার পুরাতন সিনেমাগুলোই ঘুরে ফিরে দেখতে পারেন। মোট কথা একে অন্যের সঙ্গে অনেকটা সময় কাটানো যায় এমন পরিবেশ তৈরি করতে হবে। পাশাপাশি থাকলে সম্পর্কের বন্ধন আরও দৃঢ় হয়।
জীবনে বৈচিত্র্য যোগ: একই রকমের কাজ প্রতিদিন করতে করতে মনের মধ্যে একঘেঁয়েমি চলে আসে যার থেকে সৃষ্টি হয় বিরক্তি এবং তিক্ততার। এর থেকে রক্ষা করতে প্রয়োজন জীবনে কিছু বৈচিত্র্য যোগ। পাহাড় আর সমুদ্রের ছুটি কাটানো বাদ দিয়ে একবার মরুভূমিতে বেড়াতে গেলে মন্দ হয় না। ছুটির দিনে হুটহাট বেড়াতে বেড়িয়ে ক্লান্ত না হয়ে ঘরে বসে হা পা ছড়িয়ে মুভি দেখে পার করাও বেশ ভালো বৈচিত্র্য। তবে বৈচিত্র্য আনতে গিয়ে সঙ্গীকে অযথা চাপ দেওয়া, বেশি পরিশ্রম করানো বা সাধ্যের বেশি খরচ করা থেকেও বিরত থাকতে হবে।
ছবি: রয়টার্স।