‘চোখ ওঠা’ রোগে ভয় নয়, চাই সচেতনতা

চোখ লাল হওয়া, ব্যথা, খচখচর করা, পানি পড়া ‘চোখ ওঠা’ রোগের লক্ষণ।

মামুনুর রশীদ শিশিরবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Oct 2022, 11:20 AM
Updated : 1 Oct 2022, 11:20 AM

ছোঁয়াচে রোগ। শুধু স্পর্শ নয়, বাতাসের মাধ্যমেও চোখ ওঠা রোগের ভাইরাস ছড়ায়।

চোখের মনির সাদা অংশের আবরণ ‘কনজাঙ্কটিভা’তে হওয়া প্রদাহ হল এই চোখ ওঠা, চিকিৎসাশাস্ত্রে যার নাম ‘কনজাঙ্কটিভাইটিস’।

প্রচণ্ড ছোঁয়াচে প্রকৃতির রোগ এটি। ফলে দ্রুত আশপাশের মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে।

উত্তরার আইচি হাসপাতালের চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ ও ফ্যাকো সার্জন প্রফেসর মো. নুরুল আলম এই বিষয়ে বলে, “কনজাঙ্কটিভাইটিস’য়ে চোখ লাল হবে। ব্যথা, খচখচ করা বা অস্বস্তি হবে, পানি আসবে, নিচের অংশ ফুলে যাবে।”

জ্বলুনি ও চুলকানিও থাকতে পারে। প্রথমে এক চোখ আক্রান্ত হয়, তারপর অন্য চোখেও ছড়িয়ে পড়ে। আলোতে চোখে আরও অস্বস্তি হয়।

এই রোগ আক্রান্ত ব্যক্তির স্পর্শ থেকে ছড়ায়। তাই রোগীর ব্যবহার করা কোনো কিছু অন্যরা ব্যবহার করলে তারাও এতে আক্রান্ত হবেন।

এছাড়া কনজাঙ্কটিভাইটিস’য়ের জন্য দায়ী ভাইরাস বাতাসের মাধ্যমেও ছড়ায়। ফলে আক্রান্ত ব্যক্তির আশপাশে যারা থাকেন, তারাও এ রোগে আক্রান্ত হয়।

ডা. মো. নুরুল আলম সতর্ক করে দিয়ে বলেন, “কোভিড’য়ের এই সময় চোখ ওঠা নিয়ে আরও সতর্ক হতে হবে। কারণ করোনাভাইরাস সংক্রমণে কারও কারও চোখে প্রদাহ হতে দেখা যাচ্ছে। কাজেই এই সময়ে চোখ উঠলে করোনার অন্য উপসর্গ রয়েছে কি-না, তা খেয়াল করতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে প্রয়োজনে পরীক্ষা করাতে হবে।”

প্রতিকার

কিছু নিয়ম মেনে চললেই এটি থেকে সহজেই নিরাময় পাওয়া যায়। সেই নিয়মগুলো জানিয়েছেন চট্টগ্রাম চক্ষু হাসপাতাল ও প্রশিক্ষণ কমপ্লেক্স’য়ের ‘ক্লিনিকাল অপ্টোমেট্রিস্ট’ এবং চট্টগ্রামের দিশারি চক্ষু হাসপাতালের চক্ষু বিশেষজ্ঞ এটিএম ইখলাছুর রহমান।

- আগেকার দিনে ব্যাক্টেরিয়া ঘটিত কনজাঙ্কটিভাইটিস বেশি হতো। সেক্ষেত্রে চোখে পানি দেওয়ার নিয়ম ছিল। ফলে গুরুজনরা আপনাকে পানি দিতে বলতে পারেন। বর্তমান ভাইরাসজনিত ‘কনজাঙ্কটিভাইটিস’য়ের ক্ষেত্রে পানি দেওয়া কোনোভাবেই উচিত নয়। তবে মুখ ধোয়া বা ওজু করার সময় চোখ বন্ধ করে ধুয়ে ফেলুন অথবা মাসেহ করুন।

- ভাইরাস সংক্রমণের কারণে চোখে চুলকানি হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু চোখ চুলকানো আবার জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।

- এই রোগ সাধারণত এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিন, সুষম খাবার, বিশেষত ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খান ও পর্যাপ্ত পানি পান করুন। প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চোখের ড্রপ ব্যাবহার শুরু করা যেতে পারে। তবে ভুলেও স্টেরয়েড ধরেনের ওষুধ ব্যবহার করা যাবে না।

- স্বপ্নে প্রাপ্ত ওষুধ, পানি-পড়া বা হাতুড়ে ডাক্তারের কাছে চোখের ময়লা পরিষ্কার করা যাবে না।

- রোগের তৃতীয় দিনে অনেকময় চোখের মনিকে আক্রান্ত করে ফেলতে পারে। সেক্ষেত্রে দ্রুত সঠিক চিকিৎসা নেওয়া জরুরি। তাই, তিন দিনের মধ্যে উন্নতি না হলে শিগগিরই বিশেষজ্ঞ চক্ষু চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

- চোখে সানগ্লাস বা রোদ-চশমা ব্যবহার করুন। এটা কিছুটা আরাম দেবে, সহজে চোখে হাত দেওয়া যাবে না। আর সংক্রমণ ঠেকাতে সাহায্য করবে।

- এই সময়ে শারীরিক দূরত্ব মেনে চলুন। আক্রান্ত চোখে ওষুধ দেওয়ার পর অনাক্রান্ত চোখে যাতে হাত না যায় সেদিকে অবশ্যই নজর রাখুন এবং ওষুধ দেওয়ার পর সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলুন। মাস্ক পরুন ও হাঁচি কাশির শিষ্টাচার মেনে চলুন।

এছাড়াও যা মানা উচিত

আরও কিছু পরামর্শ তুলে ধরেন প্রফেসর মো. নুরুল আলম।

- সাবান পানি দিয়ে কিছুক্ষণ পরপরই হাত পরিষ্কার করতে হবে।

- কোনো কারণে চোখ ভেজা থাকলে চোখ টিস্যু পেপার দিয়ে মুছে নিতে হবে। ব্যবহারের পর টিস্যু পেপারটি অবশ্যই ময়লার ঝুড়িতে ফেলে দিতে হবে। নইলে ব্যবহার করা টিস্যু পেপার থেকে সংক্রমণ ছড়াতে পারে।

- নিজের ব্যবহার করা প্রসাধনসামগ্রী ও ব্যক্তিগত কাপড়চোপড় অন্য কাউকে ব্যবহার করতে দেওয়া যাবে না। একইভাবে অন্যের ব্যবহৃত প্রসাধনসামগ্রী ও ব্যক্তিগত জিনিসপত্র রোগীর ব্যবহার করা চলবে না।

- চোখ ঘষে চুলকানো যাবে না। অন্য কারও আই ড্রপ ব্যবহার করা উচিত হবে না। এতে আবার কনজাঙ্কটিভাইটিস হতে পারে।

আরও পড়ুন

Also Read: চোখের নিচে ভাঁজ রোধ করতে যা জানা থাকা দরকার

Also Read: চোখের ক্লান্তিভাব দূর করতে