বয়স বাড়ার সঙ্গে বলিরেখা পড়ে। তবে চোখের নিচে বয়সের ছাপ দেখা দেয় নানান কারণে।
Published : 01 Jun 2021, 04:23 PM
অনেক সময় বেশি বয়স হওয়ার আগেই পড়তে পারে বলিরেখা। এক্ষেত্রে চোখের নিচে ভাঁজ পড়ার কারণ হতে পারে অতিরিক্ত দায়িত্ব নেওয়ার চাপ, বংশগতি কিংবা রোদের তাপ।
চোখের নিচে বলিরেখা পড়ার কারণ
ব্রুকলিনের ‘শোয়েগার ডার্মাটোলজি গ্রুপ’য়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও নিবন্ধিত ত্বক বিশেষজ্ঞ নাভা গ্রিনফিল্ড বলেন, “সারা দেহের তুলনায় চোখের চারপাশের ত্বক সবচেয়ে বেশি সংবেদনশীল ও নাজুক। সময় যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ত্বকের নিচের কোলাজেন ভেঙে যায়। স্থিতিস্থাপকতা ও তারুণ্য হারাতে থাকে। এটা বয়স, রোদের তাপ, বংশগতি ও পরিবেশের কারণেও হতে পারে।”
‘ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তিনি আরও বলেন, “যাদের গায়ের রং তুলনামূলক হালকা তাদের চোখের নিচে বলিরেখা বেশি দেখা দেয়। কারণ যাদের গায়ের রং অপেক্ষাকৃত গাঢ় তাদের ত্বকে ‘পিগ্মেন্ট’ বা রঞ্জক বেশি থাকায় তা প্রাকৃতিকভাবেই সূর্যের প্রতিরক্ষাকারক হিসেবে কাজ করে। ফলে দ্রুত ‘কোলাজেন’ ভাঙা রোধ হয়।”
সামাজিক ও মানসিক-বিষয়ক বিশেষজ্ঞ এবং ‘দ্যা ওয়েল পাথ’ বইয়ের লেখক ডা. জেমে হেস্কেট বলেন, “বলিরেখা তৈরি ও তা ধরে রাখার পেছনের কারণ হল কোলাজেন ও ত্বকের নিচে থাকা প্রোটিন ‘ইলাস্টিন’এর উপদান গুলো বাঁকা হতে থাকে। বয়স বাড়ার সঙ্গে যতটা বাঁকা হয় ততই সেটা স্থায়ী হতে থাকে।”
তাই বয়সের ছাপ কমাতে বালিশের দিকে পিঠ দিয়ে বা পাশ ফিরে শোয়া উচিত। এতে চোখের চারপাশে ভাঁজ সৃষ্টি হয় না।
সাধারণত, যাদের ত্বক খুব শুষ্ক ও অ্যালার্জি প্রবণ তাদের মাঝে চোখের নিচে ভাঁজ বেশি দেখা দেয়।
ডা. হেস্কেট বলেন, “অ্যালার্জি প্রদাহ সৃষ্টি করে। প্রদাহ ফোলাভাব বাড়ায় ও রক্ত সঞ্চালন কমায়। ফলে ত্বকের কোলাজেন ও ইলাস্টিন ক্ষতিগ্রস্ত হয়।”
এছাড়াও, চোখের চারপাশে চুলকানো বা ঘষা চোখে ব্যথা ও ভাঁজের সৃষ্টি করে।
চোখের নিচের ভাঁজ পড়া রোধ করতে
যদিও চোখের চারপাশের বলিরেখা পড়া অবশ্যম্ভাবী। তবে এই প্রক্রিয়াকে ধীর করা সম্ভব। নিচের পদ্ধতিগুলো এক্ষেত্রে কার্যকর।
ত্বকের পরিচর্যায় রাতে সঠিক প্রসাধনী ব্যবহার: ডা. গ্রিনফিল্ড বলেন, “চোখের পাতার ওপরে ব্যবহার করা যায় এমন ময়েশ্চারাইজার ও সেরাম নির্বাচন করতে হবে। রাতে রেটিনল ব্যবহার বলিরেখা ও বয়সের ছাপ কমায় এবং কোলাজেন উৎপাদন করে।”
সবসময় এসপিএফ ব্যবহার: জিঙ্ক-সমৃদ্ধ সানস্ক্রিন ও প্রতিদিন সানগ্লাস ব্যবহার করা এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ক্রিম ব্যবহার ত্বককে উন্মুক্ত ‘রেডিকেল’ থেকে সুরক্ষিত রাখে এবং বয়সের ছাপ কমায়।
ঘুমের অভ্যাস নিয়ন্ত্রণ: ত্বকে পরিচর্যার উপকরণ ব্যবহারের পাশাপাশি সুনির্দিষ্ট জীবনযাত্রা চোখের বলিরেখা দূর করতে সাহায্য করে।
তাই, পর্যাপ্ত ঘুম, বালিশে সিল্কের কভার ব্যবহার, ল্যাপটপ বা কম্পিউটার ব্যবহারের সময় কমানো বলিরেখা পড়া রোধ কর ইতিবাচক ভূমিকা রাখে।
ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ব্রাশ ব্যবহার: ডা. হস্কেট বলেন, “মুখের চারপাশে শুকনা ব্রাশ দিয়ে চক্রাকারভাবে ব্রাশ করা রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়। যা চোখের চারপাশের বলিরেখা ও ভাঁজ পড়া রোধ করতে পারে।
চোখের নিচে বলিরেখা দেখা দিলে যা করণীয়
হাইয়ালুরনিক অ্যাসিড ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ব্যবহার: সঠিক উপাদান ব্যবহার করলে চোখের চারপাশের বলিরেখা দূর করা সম্ভব।
ডা.হেস্কেট বলেন, “হাইয়ালুরনিক অ্যাসিড কোলাজেন এবং ইলাস্টিনের মাঝে স্ফিতভাব তৈরি করে। ফলে ত্বক মসৃণ ও টানটান হয়।”
ত্বক মসৃণ করার জন্য ‘ক্যাভিয়ার এক্সট্রাক্ট’ ও ‘রেসভেরাট্রোল’য়ের মতো মৃদু অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বক পুনর্নিমাণের জন্য উপকারী। যা কোলাজেন ক্ষত করে এমন জারণকে প্রতিহত করে।
ডা. গ্রিনফিল্ডের মতে, “ত্বকের বলিরেখা কমাতে রেটিনল সমৃদ্ধ ময়েশ্চারাইজার কার্যকর।”
চোখে সুগন্ধি ক্রিম ব্যবহার না করা: চোখের চারপাশের ত্বক খুব সংবেদনশীল এবং দেহের অন্যান্য অংশের তুলনায় বেশি অ্যালার্জিকাতর হতে পারে। তাই এখানে সুগন্ধিজাতীয় কোনো ক্রিম ব্যবহার করা ঠিক নয়” পরামর্শ দিলেন ডা. গ্রিনফিল্ড।
তিনি আরও বলেন, “কোনো উপকরণের প্রতি যদি সংবেদনশীলতা থাকে তাহলে তা চোখে প্রকাশ পায়।”
ইঞ্জেকশন ও লেজার বলিরেখা কমাতে সহায়তা করে: ডা. গ্রিন ফিল্ড বলেন, “ত্বকে স্থায়ীভাবে বলিরেখা পড়ার আগে সামান্য পরিমাণে বোটক্স ব্যবহার করা যেতে পারে।”
‘ফ্রাক্সেল’য়ের মতো লেজার কোলাজেন তৈরি করতে এবং ত্বকের দৃশ্যমান বলিরেখা কমায়।
ছবির মডেল: আরিয়ানা জামান এলমা। মেইকআপ: আরিফ। ফটোগ্রাফার: তানভির খান। ছবি সৌজন্যে: ত্রয়ী ফটোগ্রাফি স্টুডিও।
আরও পড়ুন