ত্বকের সুরক্ষার স্তর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার লক্ষণ

সুরক্ষার স্তর ক্ষতিগ্রস্ত হলেও নিরাময় করার ব্যবস্থাও আছে।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Nov 2023, 12:51 PM
Updated : 19 Nov 2023, 12:51 PM

ত্বকের সুরক্ষার স্তর বলতে সবচেয়ে বাইরের অংশকে বোঝায়।

এই স্তর ত্বককে বাইরের আবহাওয়া থেকে সুরক্ষিত রাখে এবং আর্দ্রতা রক্ষা করে। বাইরের ত্বক সুস্থ থাকলে ত্বক দেখতে উজ্জ্বল, টানটান ও আর্দ্র দেখা যায়।

বাইরের স্তর ক্ষতিগ্রস্ত হলে ত্বক দুর্বল, আর্দ্রতাহীনতায় ভোগে। ফলে ত্বকে নানান ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। যেমন-জ্বালাভাব, চুলকানি, সংবেদনশীলতা ও শুষ্কতা ইত্যাদি।

বিষয়গুলোর প্রতি সচেতন থাকলে ত্বকের সমস্যার সমাধান পাওয়া সম্ভব।

যে কারণে ত্বকের সুরক্ষার স্তর ক্ষতিগ্রস্ত হয়

ত্বকের বাহ্যিক অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পেছনে নানান কারণ রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি হল ক্ষতিকারক প্রসাধনী ব্যবহার, অতিরিক্ত এক্সফলিয়েট করা, তীব্র গরম, আদ্রর্তার অভাব, দূষণ ইত্যাদি- জানান যুক্তরাষ্ট্রের কানেকটিকাট’য়ে অবস্থিত ‘ইয়েল স্কুল অব মেডিসিন’য়েল বোর্ড নিবন্ধিত ত্বক বিশেষজ্ঞ এবং সহকারী ক্লিনিক্যাল অধ্যাপক মনা গোহারা।

রিয়েলসিম্পল ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তিনি আরও বলেন, “দৈনন্দিন জীবনের কিছু অভ্যাস যেমন- মদ্যপান, মানসিক চাপ ও অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস অথবা নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ গ্রহণ ত্বকের সুরক্ষার স্তরকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এর ফলে অনেকের ত্বকে নানান সমস্যা যেমন- ব্রণ, একজিমা ও সিরোসিস দেখা দিতে পারে যা ত্বকের সুরক্ষার স্তরে বাজে প্রভাব ফেলে।”

ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার লক্ষণ
* শুষ্ক ও রুক্ষ ত্বক * ত্বকের অতিরিক্ত তৈলাক্ততা * চামড়া ওঠার সমস্যা * লালচে-ভাব * জ্বলুনি * সংবেদনশীলতা * চুলকানি * কোনো প্রসাধনী ব্যবহারে জ্বালাপোড়া ও শক্তভাব হওয়া ইত্যাদি।

সুরক্ষা স্তরের ক্ষয় পূরণের উপায়

ক্ষতিগ্রস্ত ত্বকের সুরক্ষা-স্তর সারিয়ে তুলতে এর ক্ষয়ের কারণ খুঁজে বের করতে হবে। এরপরে ত্বক আর্দ্র রাখতে উন্নত মানের ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া আরও কিছু প্রয়োজনীয় ধাপ গ্রহণের প্রয়োজন রয়েছে। যেমন-

মৃদু ক্লিনজার ব্যবহার: খুব বেশি কড়া পরিষ্কারক ত্বকের উপরিভাগের প্রাকৃতিক তেল সরিয়ে ফেলে। যা কিনা ত্বক মসৃণ, নরম, আর্দ্র ও কোমল রাখার জন্য প্রয়োজন।

নিউ ইয়র্ক’য়ের ‘সুপারএগ’য়ের প্রতিষ্ঠাতা নিবন্ধিত সৌন্দর্য বিশেষজ্ঞ এরিকা চই বলেন, “ত্বক ভালো রাখতে মানানসই মৃদু ও আর্দ্ররক্ষাকারী ক্লিনজার ব্যবহার করতে হবে এবং খেয়াল রাখতে হবে যেন কোনোভাবে তাতে ক্ষতিকারক উপাদান না থাকে।”

ত্বকে গরম পানির বদলে কুসুম গরম পানি ব্যবহার করা, মুখ শুকাতে না ঘষে বরং আলতোভাবে পরিষ্কার তোয়ালে দিয়ে চাপ দিয়ে মুছে ফেলা প্রয়োজন। এতে ত্বক ভালো থাকে।

দ্বিগুন ময়শ্চারাইজার ব্যবহার: ত্বকের সুস্থতায় মূল চাবিকাঠি হল ময়শ্চারাইজার। তৈলাক্ত ত্বকেও নিয়মিত ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে।

ডা. গোহারা বলেন, “যদি ত্বকের সুরক্ষা স্তরে জটিলতা দেখা দেয় অথবা শীত বা শুষ্ক আবহাওয়াতে ত্বকে দুবার করে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা ভালো। ‘হায়ালুরনিক অ্যাসিড’ ভিত্তিক ঘন ক্ষয়পূরণকারী ক্রিম সবার শেষে ব্যবহার করা হলে উপকার পাওয়া যায়।”

একই বিষয়কে সমর্থন করে চই বলেন, “যদি সেরামাইভ, গ্লিসারিন ও ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ ময়শ্চারাইজার ব্যবহার করা যায় তবে ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখতে খুব ভালো কাজ করে।”

সকালে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ব্যবহার করা: অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বককে ফ্রি র‌্যাডিকেলস থেকে সুরক্ষিত রাখে। ফ্রি র‌্যাডিকেলস ত্বকে জ্বলুনি ও ফাটা ভাবের সম্ভাবনা বাড়ায়। ফলে ত্বকে অকালে বয়সের ছাপ পড়া, বলিরেখা, ত্বক ঝুলে যাওয়া এমনকি রোদে-পোড়াভাব সৃষ্টি করে।

নিয়মিত ময়েশ্চারাইজার অথবা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ সেরাম ব্যবহার ত্বকের এই ক্ষয় অনেকটাই কমিয়ে আনতে সহায়তা করে।

রোদে যাওয়ার আগে সতর্ক হওয়া: সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মি থেকে ত্বককে সুরক্ষিত রাখতে এসপিএফ ৩০ বা এর বেশি মাত্রায় সানস্ক্রিন নিয়মিত ব্যবহার করতে হবে।

বোর্ড নিবন্ধিত মার্কিন ত্বক বিশেষজ্ঞ অ্যাঞ্জেলো ল্যান্ড্রিসিন বলেন, “রোদপোড়া যে কোনো কিছুর জন্যই খারাপ। এতে অনেক বেশি জ্বলুনি দেখা দিতে পারে। তাই রোদে বের হওয়ার আগে সূর্য থেকে বাঁচতে যথাসম্ভব সুরক্ষার পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে যেমন- জামা, টুপি, ছাতা এবং সানস্ক্রিম।”

হিউমিডিফায়ার ব্যবহার: শুষ্ক বাতাস ত্বকের সুরক্ষার স্তরের জন্য ক্ষতিকর। তাই আদ্রর্তার মাত্রা বাড়াতে হবে। প্রচুর পানি পান করা, ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার এবং সবচেয়ে বেশি যাতায়াত করা হয় এমন স্থানে হিউমিডিফায়ারের ব্যবস্থা করা উপকারী।

“হিউমিডিফায়ার বাতাসে আদ্রর্তার পরিমাণ বাড়ায়। ফলে পরিবেশ ত্বকের উপযোগী থাকে। বিশেষ করে শুষ্ক ও কম আদ্রর্তা যুক্ত পরিবেশের ক্ষেত্রে এটা বেশি প্রযোজ্য”- বলেন চই।

বিউটি রুটিন: ত্বকে কোনো প্রশাধনী ব্যবহারের পরে যদি সব সময়ই জ্বালাপোড়া বা অস্বস্তি হতে থাকে তাহলে হয়ত সেই পণ্যের ফর্মুলা আপনার জন্য উপযুক্ত নয় অথবা খুব বেশি পরিমাণে ব্যবহার করা হচ্ছে।

কোন প্রসাধনী থেকে এই ধরনের সমস্যা হচ্ছে তা খুঁজে বের করতে হবে।

এই বিষয়ে মনে রাখতে হবে, খুব সক্রিয় উপাদান যেমন- এএইচএ, বিএইচএ, এনজাইম, রেটিনয়েড এবং বেঞ্জয়েল পারঅক্সাইড সমৃদ্ধ প্রসাধনী ত্বক সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত ব্যবহার করা যাবে না।

ত্বকের সমস্যা ঠিক হয়ে গেলে ধীরে ধীরে এসবের ব্যবহার বাড়ানো যেতে পারে।

আরও পড়ুন

Also Read: ত্বকের ধরন বুঝে মেইকআপ রিমুভার

Also Read: প্রাকৃতিকভাবে ত্বকের ক্ষতি সারানোর কৌশল

Also Read: দূরে থাক ত্বকের মলিনভাব