ব্যায়ামের পরে অধিভোজন এড়াতে করণীয়

শরীরচর্চার পর ক্ষুধা লাগার নানান কারণ থাকতে পারে।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Dec 2023, 07:09 AM
Updated : 14 Dec 2023, 07:09 AM

ব্যায়ামের কারণে দেহে তাৎক্ষণিক নানান প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এরমধ্যে আছে শক্তির ক্ষয় ও ক্যালোরি খরচ।

যেকারণে যে কোনো ধরনের শরীরচর্চার পর ক্ষুধা অনুভূত হওয়া স্বাভাবিক। তবে বেশি খেয়ে ফেললে ব্যায়ামের সুফল পাওয়ার সম্ভাবনা কমে।

এই বিষয়ে হেল্থশটস ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে ভারতীয় ডা. অর্চনা বাত্রা বলেন, “শরীরচর্চার ক্যালরি পোড়ে আর পেশিতে গ্লাইকোজেন নিঃশেষিত হয়। তাই ব্যায়াম করা পরে শক্তি পূরণের লক্ষ্যে ক্ষুধার সংকেত দিতে পারে। তাছাড়া ব্যায়াম রক্তের শর্করার মাত্রা কমায় করে যা শরীরের গ্লুকোজের ভারসাম্য পুনরুদ্ধারের সংকেত দেয়।”

ডা. বাত্রার মতে, ব্যায়ামের পরে দেহের বিপাকের হার বাড়ে যা ক্ষুধা বৃদ্ধি করে। এছাড়াও পানি পান ও পুষ্টির ঘাটতি ব্যায়ামের পরে ক্ষুধাবোধ বাড়াতে পারে।

বেশি খাওয়ার আগে ব্যায়াম করা: যদি ব্যায়াম করার পরে তীব্র ক্ষুধা অনুভূত হয় তাহলে ব্যায়াম করার সময় নির্ধারণ করে নিতে হবে। সকালে হালকা নাস্তা করে ব্যায়াম করতে হবে এবং তারপর ভারী নাস্তা করতে হবে।

একইভাবে সন্ধ্যায় ব্যায়াম করতে চাইলে রাতের খাবারের আগের সময় বেছে নিতে হবে। ব্যায়ামের পরে তীব্র ক্ষধা মিটাতে রাতে পুষ্টিকর খাবার বাছাই করা যায়।

বায়্যামের সময় আর্দ্র থাকা: ব্যায়ামের পরে ক্ষুধা নিবারণের জন্য আর্দ্রতা রক্ষা গুরুত্বপূর্ণ।

ডা. বাত্রা বলেন, “ব্যায়ামের আগে, ব্যায়মের সময় ও ব্যায়ামের পরে পানি পান দেহের ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখে এবং প্রয়োজনীয় আর্দ্রতার সংকেত দেয়।”

তাছাড়া ব্যায়ামের পরপই এক গ্লাস পানি পান ক্ষুধা ও তৃষ্ণার পার্থক্য বুঝতে সহায়তা করে ফলে অধি ভোজনের ঝুঁকি কমে।

ব্যায়ামের আগে সুষম নাস্তা বেছে নেওয়া: ব্যায়ামের আগে সুষম খাবার খাওয়া দেহে জ্বালানির যোগান দেয় এবং পরে অতিরিক্ত খাওয়ার ঝুঁকি কমিয়ে দেয়।

ব্যায়ামের আগে নাস্তা হিসেবে জটিল কার্বোহাইড্রেইট, চর্বিহীন প্রোটিন ও স্বাস্থ্যকর চর্বি সমৃদ্ধ খাবার বাছাই করা প্রয়োজন।

খাবারে প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেইট যুক্ত করা: ব্যায়ামের আগে ও পরে- খাবারে পুষ্টি প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেইটের সংমিশ্রণ রাখা প্রয়োজন। এতে ব্যায়াম পরবর্তী সময়ে তীব্র ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে থাকে। অতিরিক্ত ক্যালরি গ্রহণ ছাড়াই পুষ্টির সুবিধা পেতে ঘন ঘন পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া প্রয়োজন।

আঁশ সমৃদ্ধ খাবার: আঁশ সমৃদ্ধ খাবার কেবল সার্বিক হজম ক্রিয়ার জন্যই ভালো নয় বরং দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখতেও সহায়তা করে। ফল, সবজি এবং গোটা শস্যজাতীয় খাবার ব্যায়ামের পরে খাওয়া দেহে জ্বালানির যোগান দেয়, অনেকক্ষণ পেট ভরা রাখে এবং অধিভোজনের প্রবণতা কমায়।

আঁশ ধরনের খাবার ক্যালোরি যোগ করা ছাড়াই পেট ভরা রাখতে সহায়াত করে।

সারাদিনে নাস্তা নির্বাচনে সচেতনতা: একবারে অনেক বেশি খাওয়ার চেয়ে বরং বারে বারে অল্প করে খাওয়া ভালো। এতে ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং অধিক ভোজনের প্রবণতা কমে।

শরীরচর্চার পর নাস্তা বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সচেতন হওয়া প্রয়োজন। স্বাস্থ্যকর নাস্তা যা রক্তের শর্করা মাত্রা বৃদ্ধি না করেই শক্তির যোগান দেয় এমন খাবার নির্বাচনে সচেষ্ট হতে হবে।

ক্যালরি পোড়ানোর দিকে অতিরিক্ত মনোযোগ না দেওয়া: শরীরচর্চার সময় ক্যালরি পোড়ানোর মাত্রার দিকে খুব বেশি মনোযোগ দেওয়া ঠিক নয়। না হলে পরে অধিভোজনের ঝুঁকি বাড়ে। তাই প্রকৃত শক্তি ব্যয়ের দিকে মনোযোগ দেওয়া এবং ক্যালরি পোড়ানোর অজুহাতে বেশি খাওয়ার প্রবণতা এড়িয়ে চলতে হবে।

ওজন কমাতে চাইলে ক্যালরি কমানোর তুলনায় কম ক্যালরি গ্রহণ করতে হবে এবং নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে।

মনোযোগ দিয়ে খাবার খাওয়া: মনোযোগ দিয়ে খাবার খাওয়া দেহের ক্ষুধার অনুভূতি ও পরিপূর্ণতা বুঝতে সহায়তা করে। কোনো রকম বিভ্রান্তি যেমন- টেলিভিশন দেখা বা ফোন দেখতে দেখতে খাবার খাওয়া উচিত নয়। খাবার ধীরে ও ভালোমতো চিবিয়ে খেতে হবে, এভাবে মনোযোগ দিয়ে খাবার খেলে পেট ভরবে, পাশাপাশি অধিভোজনের ঝুঁকি কমবে।

নিজের ক্ষুধা নিয়ে প্রশ্ন তোলা: ডা. বাত্রা পরামর্শ দেন, “ব্যায়ামের পরে নাস্তা গ্রহণের আগে কিছুটা সময় নিয়ে নিজের ক্ষুধা অনুভুতিকে পরিমাপ করতে হবে; আসলেই তা প্রকৃত ক্ষুধার অনুভূতি নাকি বিভিন্ন ধরনের কাজের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া যেমন- একঘেয়েমিতা, তৃষ্ণা অথবা অভ্যাসবশত ক্ষুধা- সেসব বিবেচনা করতে হবে।”

এরফলে অনেক অপ্রয়োজনীয় ক্যালরি গ্রহণ থেকে বিরত থাকা যাবে। যদি মনে হয় যে, ক্ষুধার চেয়ে বরং অভ্যাসবশত খাবার গ্রহণের প্রবণতা বেশি কাজ করছে তাহলে খাবারের লোভ সংবরণ করাই শ্রেয়।

আরও পড়ুন

Also Read: ব্যায়াম শুরুর আগে

Also Read: যেসব খাদ্যাভ্যাসে শরীরচর্চা যায় পণ্ডশ্রমে

Also Read: ব্যায়াম ছাড়াও স্বাস্থ্যবান থাকার পন্থা