ডেঙ্গু জ্বর ভালো হওয়ার পরেও নানান জটিলতা দেখা দেয়।
Published : 04 Dec 2023, 05:47 PM
ডেঙ্গু একটি ভাইরাস জনিত রোগ যা এডিস মশার কামড়ের মাধ্যমে ছড়ায়।
এডিস মশা কামড়ানোর তিন থেকে ১৫ দিনের মধ্যে সাধারণত ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গগুলো দেখা যায়। এই মশা সাধারণত ভোরবেলা ও সন্ধার আগে কামড়ায়।
এই জ্বরের উপসর্গগুলো হচ্ছে
হঠাৎ ১০৪ ডিগ্রি থেকে ১০৫ ডিগ্রি জ্বর
তীব্র মাথা ব্যথা, চোখ বা চোখের পেছনে ব্যথা করা
বমিভাব বা বমি হওয়া
খাওয়ায় অরুচি হওয়া
ডায়রিয়া বা পাতলা পায়খানা হওয়া
মাংসপেশি ও হাড়ের জোড়ে ব্যথা হওয়া
শরীরে চামড়ার নিচে র্যাশ হওয়া
গলা ব্যথা হওয়া
রক্তচাপ কমে যাওয়া
ব্রাশ করতে গেলে মুখ ও দাঁতের গোড়া থেকে রক্ত পড়া
নাক দিয়ে রক্ত পড়া
প্লাটিলেট বা অনুচক্রিকার পরিমাণ কমে যাওয়া
কোমরে ব্যথা হওয়া
অতিরিক্ত ক্লান্তিবোধ হওয়া।
এই জ্বরে শরীরে এত তীব্র ব্যথা হয় যেন মনে হয় হাড় ভেঙে যাচ্ছে। অনেক সময় এই জ্বরকে ‘ব্রেক বোন ফিভার’ বলে।
এমনকি ডেঙ্গু জ্বরে হৃৎপিণ্ড, কিডনি ও মস্তিষ্ক আক্রান্ত হচ্ছে।
ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা বাড়িতে রেখেও করা সম্ভব। আবার রোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে হাসপাতালে ভর্তি করার প্রয়োজন হয়।
ডেঙ্গুতে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দিক হল- অনুচক্রিকা বা প্লাটিলেট কমে যাওয়া। প্লাটিলেট কমে গেলে রোগীকে রক্ত দেওয়ার প্রয়োজন হয়।
প্লাটিলেট বেশি কমে গেলে রোগীকে শরীরে রক্ত দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে। আবার রোগীর প্রেশার এত কমে যায় যে, ‘শক’য়েও চলে যেতে পারে। এমনকি রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
সঠিক ও দ্রুত চিকিৎসার মাধ্যমে ডেঙ্গু জ্বর ভালো হয়ে যায়। তবে পরবর্তিতে কিছু জটিলতা দেখা দেয়।
ডেঙ্গু পরবর্তী জটিলতা
চুল পড়ে যাওয়া: শরীর দুর্বল থাকার কারণে, ক্ষুধামন্দা, পুষ্টির ঘাটতি থাকার কারণে চুল পড়ে যাওয়া শুরু করে।
দুর্বলতা ও ক্লান্তিবোধ: পানির ঘাটতির জন্য এবং ঠিক মতো খাবার না খাওয়ার জন্য শরীর দুর্বল হয়ে যায়। সবসময় ক্লান্তিবোধ হয়।
দেহের কাজ করার ক্ষমতা কমে যাওয়া: শরীর এতটাই দুর্বল থাকে যে কাজ করার ক্ষমতা কমে যায়।
এছাড়াও হতে পারে
মাংসপেশিতে ব্যথা, কোমরে ব্যথা, গিরায় ব্যথা।
মাথাব্যথা।
চোখ ব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, ঝাপসা দেখা।
ক্ষুধামন্দা হওয়ার ফলে দ্রুত ওজন হ্রাস পাওয়া।
ফুসফুসে পানি জমতে পারে। নিউমোনিয়া হতে পারে, শ্বাসকষ্ট ও বুকে ব্যথা হতে পারে।
পেটে পানি জমা, পিত্তথলির দেওয়াল মোটা হয়ে যাওয়া।
রাতে ঘুম না হওয়া, কাজে অমনোযোগী থাকা। ডিপ্রেশন বা উদ্বিগ্নতায় ভোগা।
শরীরে র্যাশ হতে পারে।
ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া।
এমনকি ‘ব্রেইন ইনফেকশন’ হতে পারে। ফলে ‘প্যারালাইসিস’ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া।
যা করলে দ্রুত আরোগ্য লাভে সহায়ক হয়
প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার যেমন - মাছ, মাংস্, ডিম ও দুধ খেতে হবে।
তরল ও সুপ ধরনের খাবার গ্রহণ করতে হবে যা দ্রুত হজমে সহায়তা করে।
খাবারগুলো অবশ্যই আঁশযুক্ত, ভিটামিন ও খনিজ সমৃদ্ধ হতে হবে।
ফল ও ফলের রস গ্রহণ করতে হবে। এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা শরীরের দীর্ঘমেয়াদি শারীরিক দুর্বলতা কমাতে সহায়তা করে।
এ সময়ে অবশ্যই ফাস্টফুড, ভাজা-পোড়া, জাংক ফুড, অতিরিক্ত চর্বি ও মসলাদার খাবার পরিহার করতে হবে।
প্রয়োজনে বিভিন্ন মাল্টিভিটামিন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, জিংক, গ্লুকোসামাইন কনড্রোটিন সালফেট, হায়ালুরোনিক অ্যাসিড এবং ভিটামিন ডি চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী খাওয়া যেতে পারে।
মাংসপেশি, হাড় ও জোড়ার ব্যথা কমাতে প্রাথমিক ভাবে ১৫-২০ দিন বিশ্রাম নিতে হবে।
পরবর্তী সময়ে ‘ফিজিওথেরাপি’ চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিতে হতে পারে। এক্ষেত্রে চিকিৎসক বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক ব্যায়াম ও ইলেক্ট্রোথেরাপি যেমন- ইলেক্ট্রোম্যাগ্নেটিক রেডিয়েশন, হাই ফ্রিকুয়েন্সি সাউন্ড, লেজার, ম্যাগনেটো থেরাপি-সহ রোগীর অক্ষমতা অনুযায়ী চিকিৎসা দিয়ে থাকেন।
ঘুমের সম্যসার জন্য ‘জেনারেল বডি রিলাক্সেশন এক্সারসাইজ’ ও ‘ফোকাল রিলাক্সেশন এক্সারসাইজ’ খুবই উপকারী।
বুক ও ফুসফুসের অক্ষমতা কমাতে ‘চেস্ট থেরাপি’ অত্যন্ত কার্যকর। এক্ষেত্রে ফিজিওথেরাপি ও পুনর্বাসন চিকিৎসার প্রধান উদ্দেশ্যই হল রোগীর বিভিন্ন ব্যথা-বেদনা, শারীরিক অক্ষমতা, প্যারালাইসিস প্রতিরোধ, মানসিক অবসাদ প্রতিরোধ ও চিকিৎসা-সহ রোগীকে সুস্থ অবস্থায় ফিরিয়ে আনা।
লেখক পরিচিতিডা. মো. সফিউল্যাহ প্রধান। ফিজিওথেরাপি, ডিজেবিলিটিস ও রিহেবিলিটেশন স্পেশালিস্ট, সহযোগী অধ্যাপক (আইআইএইচএস) ও কনসালটেন্ট, ডিপিআরসি হসপিটাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ল্যাব।
আরও পড়ুন