একা থাকার প্রভাবে অকাল মৃত্যুও হতে পারে।
Published : 10 Aug 2023, 01:26 PM
গবেষণা বলছে, একাকিত্ব বোধ বা সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন থাকলে অকাল মৃত্যুর ঝুঁকি অতিমাত্রায় বাড়তে পারে।
‘নেচার হিউম্যান বিহেইভিয়ার জার্নাল’য়ে প্রকাশিত গবেষণা পত্র অনুসারে সামাজিক বিচ্ছিন্নতা ও একাকিত্বের সঙ্গে অকল মৃত্যু হওয়ার মধ্যে সম্পর্কে রয়েছে। তবে এর ফলাফল বিতর্কিত।
কারণ সম্পর্কে সিএনএন ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে নিউ ইয়র্কের ‘স্টনি ব্রুক ইউনিভার্সিটি’র মনোবিজ্ঞান বিভাগের ‘ইন্টেগ্রেটিভ নিউরোসায়েন্স’য়ের অধ্যাপক তুরহার ক্যানলি বলেন, “একটি নির্দিষ্ট দল বা অঞ্চলের ওপর গবেষণা করায় এই বিতর্ক হতে পারে।”
নতুন এই গবেষণা পত্রে ৯০টি পর্যবেক্ষণের একটা ‘মেটা’ বিশ্লেষণ করা হয়; যা ২০ লক্ষেরও বেশি প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে একাকিত্ব, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা ও প্রাথমিক মৃত্যুর সংযোগের তথ্য নিয়ে পরীক্ষা করা হয়।
গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের বিভিন্ন জায়গায় ছয় মাস থেকে ২৫ বছর পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করা হয়েছিল।
যারা সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন থাকার অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন তারা অন্যদের তুলনায় ৩২ শতাংশ অকালে মৃত্যুর ঝুঁকিতে পড়েছেন। অন্যদিকে যেসব অংশগ্রহণকারী একাকিত্ব বোধ করছেন বলে জানিয়েছেন, অন্যদের তুলনায় তাদের মধ্যে ১৪ শতাংশ তাড়াতাড়ি মারা গিয়েছেন।
গবেষণায় জড়িত না থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ইউটাহ’তে অবস্থিত ‘ব্রিগহ্যাম ইয়ং ইউনিভার্সিটি’র মনো ও স্নায়ু বিজ্ঞানের অধ্যাপক জুলিয়ান হোল্ট-লনস্ট্যাড বলেন, “গবেষণায় দেখা গেছে অনেক শিশুই উদ্বিগ্ন। তবে কিছু সংখ্যক সঠিক সহায়তা পাচ্ছে। অকাল মৃত্যুর জন্য একাকিত্ব ও সামাজিক বিচ্ছিন্নতা দায়ী হওয়ার আশঙ্কাকে এই গবেষণা আরও বেশি দৃঢ় করছে।”
সামাজিক বিচ্ছিন্নতা হল- যখন কেউ, অন্যদের সাথে যোগাযোগ করতে অপরাগ হয়ে স্বল্প নেটওয়ার্কে বা একাকী বাস করে। নব্য গবেষণা পত্রে এভাবেই ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
নিউ ইয়র্কের ‘কর্নেল ইউনিভার্সিটি’র মনোবিজ্ঞানের অধ্যাপক ও ‘সেন্টার ফর ইন্টেগ্রেটিভ ডেভেলপমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড জিম্যান হেল্থ ল্যাবস’য়ে পরিচালক অ্যান্থনি অং বলেন, “এই পরিস্থিতিতে কেউ যদি তাদের সম্পর্ক বা ঘনিষ্ঠতার চাহিদা পূরণ না করে তবে সম্পর্কগুলোতে অসন্তুষ্ট বলে মনে হতে পারে।”
অং এই গবেষণার সঙ্গে জড়িত ছিলেন না।
এদিকে হল্ট-লানস্ট্যাড অন্যভাবে ব্যাখ্যা করে বলেন, “অনেক আমেরিকান একা সময় কাটায়। আর সেটা ক্ষতিকর হিসেবে দেখা হয় না যদি সেটা সেচ্ছায় হয়। একাকিত্ব অনুভব না করলে অনেকেই সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকাকে স্বাভাবিক এমনকি আরামদায়ক মনে করেন।”
“তবুও এটা আগের উপাত্তকে নিশ্চিত করে যে, ইচ্ছা বা অনিচ্ছাকৃত একাকিত্ব বা সামাজিক বিচ্ছিনতা ঝুঁকির কারণ হতে পারে।”
একাকিত্ব ও বিচ্ছিন্নতা থেকে দেহের ওপর প্রভাব
কানলির মতে, “সামাজিকভাবে একা বা বিচ্ছিন্ন থাকা এক ধরনের মানসিক চাপ।”
তিনি ব্যাখ্যা করেন, “আমরা সবাই কখনও না কখনও একা অনুভব করি; তবে স্থায়ীভাবে এই অনুভূতি দীর্ঘমেয়াদী চাপ সৃষ্টি করে, যা মোটেও স্বাস্থ্যকর নয়। অনেকক্ষেত্রে ‘স্ট্রেস হরমোন’ বৃদ্ধির ফলে শরীরের ক্ষতি হয়।”
গবেষকরা হৃদরোগ, স্তন বা ‘কোলোরেক্টাল’ ক্যান্সারে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মাঝে একাকিত্ব, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা ও মৃত্যুর মাঝে সম্পর্ক দেখতে পান।
অসুস্থ ব্যক্তিরা অনেকক্ষেত্রেই ঘরকুনো হয়ে পড়েন। তবে এই সময়ে তাদের অনেক বেশি সামাজিক সমর্থনের প্রয়োজন।
গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে যাদের হৃদরোগ ও স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন ছিল তাদের সুস্থ হওয়ার তুলনায় মৃত্যু ঝুঁকি অন্যদের চেয়ে বেশি দেখা গেছে।
ক্যানলি বলেন, “সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন ব্যক্তিদের নানান রকম অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস যেমন- ধূমপান, অ্যালকোহল গ্রহণ বা অস্বাস্থকর খাদ্যাভ্যাসের চর্চা থাকে।”
গবেষণার প্রধান, চীনের ‘হার্বিন মেডিকেল ইউনিভার্সিটি’র অধ্যাপক ফ্যান ওয়াং’য়ের মতে, “যারা একা থাকেন কিন্তু সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন নন তাদের মানসিক চাপ বেশি থাকে কিন্তু সামাজিক যোগাযোগের ফলে তা প্রতিস্থাপিত হয়।”
ক্যানলির মতে, “সামান্য সামাজিক যোগাযোগ বা বাইরের বিশ্বের সাথে সম্পর্ক রাখলে চিকিৎসা গ্রহণের হার এবং সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়।”
সামাজিক সংযোগ বাড়ানো
ওয়াং’য়ের মতে, “সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন ও একাকিত্বে ভোগা ব্যক্তিদের সক্রিয়ভাবে সামাজিক সংযোগ খোঁজা প্রয়োজন।”
ক্যানলি বলেন, “বয়স বাড়ার সাথে সাথে স্বাস্থ্যকর আচরণকে জীবনের অংশ হিসেবে নিতে হবে।”
“সুস্বাস্থ্য রক্ষার অন্যান্য কাজ যেমন- ব্যায়াম করা, সুষম খাবার খাওয়া ইত্যাদির মতো সামাজিক যোগাযোগ রক্ষাকেও অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে নিতে হবে। এছাড়াও কেবল ছুটির দিনের ভরসায় না থেকে প্রতিদিনই সমমনা লোকদের সাথে সময় কাটানো মানসিক শান্তি ও স্বস্তি যোগাতে সহায়তা করে।”
ওয়াং বলেন, “একাকিত্ব ও সামাজিক বিচ্ছিন্নতা মোকাবিলার জন্য জনস্বাস্থ্যের কৌশল ও সচেতনতা বাড়ানো প্রয়োজন। পরিবারের সদস্য ও সম্প্রদায়ের সাথে যোগাযোগ বিস্তার করা জরুরি।”
স্বাস্থ্যসেবা ছাড়াও, সামাজিক যোগাযোগ বাড়ানোর ক্ষেত্রে রোগীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া যথাযথ সহায়তা করতে পারে বলে মনে করেন, ওয়াং।
আরও পড়ুন