আপনি একাকী! কারণ...  

বন্ধুদের সবাই জোড় বেঁধেছে। তবে নিজে এখনও ‘একা’? কারণ হতে পারে অনেক। তবে সেসব কারণে মধ্যে প্রায় এক ডজন কারণ থাকতে পারে আপনার জোড় না বাঁধার কারণ।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Nov 2017, 10:31 AM
Updated : 16 Nov 2017, 10:33 AM

নিঃসঙ্গ থাকা আর নিজে একা থাকার মধ্যে পার্থক্য আছে। কেউ সঙ্গী খুঁজে পায়না বলে নিঃসঙ্গ। আবার কেউ নিজের মতো থাকতে পছন্দ করেন। এখানে একা থাকা মানে মানুষ বিবর্জিত নয়, বরং নিজের মতো থাকা।

তবে যারা নিঃসঙ্গ অনুভব করেন, মানে সঙ্গীর খোঁজে হয়রান; তাদের জন্য নিউ ইয়র্ক’য়ের মনোবিজ্ঞানি এবং ‘অ্যাটাচড: দি নিউ সায়েন্স অফ অ্যাডাল্ট অ্যাটাচমেন্ট’য়ের সহলেখক ডা. আমির লেভিন সম্পর্কবিষয়ক একটি ওয়েবসাইটের প্রতিবেদনে কয়েকটি কারণ উল্লেখ করেন। যেগুলো হতে পারে এখনও আপনার সঙ্গী না পাওয়ার কারণ।

কঠিন মনোভাব: কেউ সময় কাটাতে চাইলে আপনি ব্যস্তভাব দেখান? এমনভাব দেখান যেন কোনো কিছুতেই আপনার মাথাব্যথা নেই, এমনকি উপযুক্ত সময়েও না! এরকম করলে সঙ্গী বা সঙ্গিনী খুঁজে পেতে বেগ পেতে হবে। আসলে অনেকে মনে করেন কারও সঙ্গে অন্তরঙ্গ হলে অসুখী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

আপনি নিঃসঙ্গ বোধ করলে এরকম মনোভাবের কিনা দেখুন তো পরখ করে। বরং একটু নমনীয় হওয়ার চেষ্টা করুন।

ধরাবাঁধা সম্পর্কে ভয়: পুরুষ নাকি প্রতিশ্রুতি বদ্ধ হতে ভয় পায়! আর নারীর চাহিদা অনেক!- এই ধরনের ধারণা প্রচলিত থাকলেও সব ক্ষেত্রে ঠিক নয়।

যখন সম্পর্কের কথা আসে তখন মানুষের মধ্যে সাধারণত তিনটির মধ্যে একটি বিষয় কাজ করে।

নিরাপদ- অন্তরঙ্গ হওয়ার মধ্যে ভালোবাসা এবং স্বস্তি খুঁজে পায়।

উদ্বিগ্ন- মানুষ ঘনিষ্ঠ হতে চায় তবে ভয় পায় তার সঙ্গী শুধু দেওয়া-নেওয়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না।

এড়ানো- যেভাবেই হোক অন্তরঙ্গ হওয়ার চাইতে স্বাধীন থাকতে পছন্দ করে।

তবে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, বেশিরভাগ মানুষেই ‘নিরাপদ’ বোধ করেন।

ডা. লেভিন বলেন, “বেশিরভাগ নারী-পুরুষ অন্তরঙ্গ থাকতে চায়, পছন্দ করে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সম্পর্ক, ‘চাই চাই’ করে না বা দূরে সরিয়ে দেওয়ার মতো আচরণও করে না।

এখনও প্রাক্তনের প্রতি অনুরক্ত: অনেকেই মনে করেন নতুন করে সম্পর্ক করা অনেক কঠিন। এটা সাধারণত ‘এড়ানো’ ধরনের মানুষের স্বতন্ত্র সমস্যা। অন্তরঙ্গতা তাদের অস্বস্তিতে ফেলে। ফলে তারা বর্তমান সঙ্গীকে দূরে সরিয়ে রাখতে চায়।

তবে যখনই একটা সম্পর্ক ভেঙে যায় তখনই তাদের ‘ভালোবাসা’ আবার জেগে ওঠে এবং নিজেদের বোঝাতে সক্ষম হয় যে ভেঙে যাওয়া সম্পর্কটা ছিল ভয়াবহ। তারপর তারা নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচয় হওয়া মাত্র প্রাক্তনের সঙ্গে মেলাতে শুরু করে। ফলাফল- কাউকে খুঁজে না পাওয়া।

ভালোবাসা মানেই দখল করে রাখা: ‘ডেট’ করতে গিয়ে যদি মনে হয় সঙ্গী সন্তুষ্ট করতে পারছে না, বরং বলতে চাচ্ছে তার অনেক ‘স্পেস’ দরকার। কিংবা আপোসে চলার ক্ষেত্রে খুব একটা ইচ্ছা নেই- এসব আচরণ থেকে বের হয়ে আসতে না পারলে একাই থাকতে হবে।

পরিস্থিতির শিকার: আপনার সম্পর্ক আছে। তবে এই সম্পর্ক থেকে কোনো ‍কিছুই পাওয়ার নেই। তারপরও শেষ করতে পারছেন না- এই ‘জম্বি’ সম্পর্ক টিকিয়ের রাখার একটাই কারণ হতে পারে অভ্যস্ততা ও পরিস্থিতি মেনে নেওয়া। এই ধরনের সম্পর্কে একাকিত্ব কাজ করতে থাকে। তাই বেরিয়ে আসুন এই ধরনের প্রেম থাকলে।

 ‘পারফেক্ট ওয়ান’য়ের খোঁজে থাকা: হতে পারে আপনি আদর্শ সঙ্গী বা সম্পর্ক করতে প্রস্তুত, তবে ‘পারফেক্ট’ মানুষটাকে না পাওয়া পর্যন্ত েঅপেক্ষা করেই যাবেন। এমনভাব থাকলেও একা থাকার সম্ভাবনা বাড়বে।

“এই ধরনের মানসিকতা থাকলে পরিবর্তন করা উচিত”, পরামর্শ দেন ড. লেভিন। বরং কাউকে পছন্দ করুন, কাছে আসার সুযোগ দিন। তারপর তাকেই না হয় আপনার ‘পারফেক্ট ওয়ান’ করার চেষ্টা করুন।

ই-রোমান্সে বিশ্বাস: অনলাইনে প্রেম করা মোটেই বাস্তব কিছূ নয়। তারা হয়ত আপনার কিছু চাহিদা মেটাতে পারে, তবে সব নয়। তাই ডিজিটাল যুগে ডিজিটাল প্রেম না করে যত দ্রুত সম্ভব আসল মানুষের সম্পর্ক গড়ে তুলুন, আর প্রাচীন পদ্ধতেই প্রেম করুন।

নির্ভরশীল হওয়ার ভয়: কিছু মানুষ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সম্পর্ক এড়িয়ে চলেন। তারা মনে করেন যে, এতে হয়ত সঙ্গীর উপর নির্ভরশীলতা চলে আসবে। তারা মনে করেন যেভাবেই হোক মানুষের উচিত আত্মনির্ভরশীল থাকা।

ডা. লেভিন বলেন, “আসলে নির্ভরশীলতা ছাড়া কোনো সম্পর্কের অস্তিত্ব নেই। আমারা সকলেই কোনো না কোনো ভাবে অন্যের উপর নির্ভরশীল। আসল বিষয় হচ্ছে- নির্ভর করা যায় এমন মানুষকে খুঁজে বের করতে হবে।

মনে করছেন অপেক্ষা করা উচিত: অনেকেই মনে করেন ওজন না কমালে প্রেম হবে না। অথবা নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা না থাকলে সঙ্গী পাওয়া সহজ না।

এসব বাদ দিন। এ মনোভাব আপনাকে একা করে রাখছে। কোনো কিছুর জন্য অপেক্ষা না করে বরং সম্পর্ক গড়ার চেষ্টা করুন। যে কাছে আসার সে আপনার যে কোনো পরিস্থিতিতেই কাছে আসবে। বরং দুঃসময়ে যে সঙ্গী হবে সেই তো আপনার প্রকৃত বন্ধু- তাই নয় কি!

মনে করেন, ভালো মানুষের অভাব: নির্দিষ্ট কয়েকজন মানুষের সঙ্গে মিশে এই ধারণা নেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। বরং অনেক মানুষের সঙ্গে মিশতে শুরু করুন। আড্ডা দিন, সময় কাটান। দেখবেন ভালো মানুষের সংখ্যা নেহাত কম নয়।

ডা. লেভিনের পরামর্শ, “তাদের মধ্য থেকে মনের মতো একজনকে বেছে নিন।”

প্রচ্ছদের ছবি কৃতজ্ঞতায়: আল নাহিয়ান। ছবি তুলেছেন: হিমেল হিমু।

আরও পড়ুন