ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য ও মলের সাথে রক্ত যাওয়া- এই তিন ধরনের অবস্থার প্রেক্ষিতে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
Published : 21 Apr 2023, 12:36 PM
দেহের নিয়মিত কার্যাবলির মধ্যে বর্জ্য অপসারণ চলে।
তবে প্রক্রিয়াতে গণ্ডগোল হচ্ছে কি-না, বোঝা যায় মলের ধরন থেকে।
সাধারণ সতর্কতা
মলের ধরনে সাধারণ কিছু সমস্যার মধ্যে রয়েছে ডায়রিয়া, মলের সাথে রক্ত যাওয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি।
এই ধরনের সমস্যা সাধারণত বাড়িতে চিকিৎসা করেই ঠিক করা যায়। খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন, ওষুধ ও ভেষজ সম্পূরক খাবার খাওয়া পেটের এসব সমস্যা সমাধানে সহায়তা করে।
তবে কিছু লক্ষণ দেখে এর গুরুতর রূপ বা চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে ধারণা করা যায়।
ডায়রিয়া
মলের সঙ্গে বাড়তি পানি যাওয়ার সমস্যা হতে পারে ভাইরাস বা ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণের কারণে, এটা ছোঁয়াচে। খাবারের বিষক্রিয়া এর অন্যতম কারণ।
তাছাড়া, মানসিক অবসাদ যেমন- উদ্বেগের কারণেও ডায়রিয়া হতে পারে। অনিয়মিত মল ত্যাগ বা প্রদাহজনিত মলের কারণেও এমনটা হয়।
“কারণ যাই হোক না কেনো ডায়রিয়া দেখা দিলে দ্রুত উপশমের চেষ্টা করতে হবে। অন্যথায় তা নানান সমস্যা যেমন- পানিশূন্যতা, ব্যথা, অস্বস্তি বা নিয়মিত জ্বরের কারণ হতে পারে”, বলেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সি’তে অবস্থিত ‘ইন্সপিরা মেডিকেল সেন্টার’য়ে জরুরি মেডিসিন বিভাগের পরিচালক ম্যাথিউ ওয়ার্নার।
ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তিনি আরও বলেন, “স্বাভাবিকের থেকে পরিবর্তন যেমন- ক্লান্তিভাব, দুর্বলতা ইত্যাদি দেখা দিলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তা সারানোর চেষ্টা করতে হবে।”
‘ডিহাইড্রেশন’ শব্দটা শুনতে গুরুতর না হলেও এর প্রভাব মারাত্মক।
এই বিষয়ে সতর্ক করে দিয়ে ডা. ওয়ার্নার বলেন, “ডায়রিয়ার সাথে বমি হলে দ্রুত পানিশূন্যতা দেখা দেয়।”
পানিশূন্যতার লক্ষণের মধ্যে রয়েছে প্রস্রাবের মাত্রা কমা, প্রস্রাবের রংয়ের পরিবর্তন, ঠোঁটের শুষ্কতা ও ফাটাভাব।
শিশুরা এই সময় নিস্তেজ হয়ে পড়ে। কান্নার সময় চোখ থেকে জল পড়ে না। ছোট বড় সকলেরই ডায়রিয়া হলে বা আগের কোনো অসসুস্থতা যেমন- দুর্বল রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা ও ক্যান্সার থাকলে দেহে পানিশূন্যতা দেখা দেয়।
ডায়রিয়া দীর্ঘস্থায়ী হলে বা এক সপ্তাহের বেশি সময় স্থায়ী হলে বা ধারাবাহিকভাবে কয়েকদিন পরপর হয়ে থাকলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
বিশেষ করে এতে যদি কালো রক্ত, দানাদার অংশ, মিউকাস বা পুঁজ থাকলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
মলের সাথে রক্ত যাওয়া
মলের সাথে রক্ত যাওয়া ভয়ানক বিষয় মনে হতে পারে। যদিও এর মানে এই নয় যে, দেহের ভেতরে খারাপ কিছু হয়েছে।
ডা. ওয়ার্নার ব্যাখ্যা করেন, “মলের সাথে রক্ত যাওয়া ভয়ানক। তবে অনেকসময় তা বাহ্যিক অস্বস্তি বা ‘হেমোরইডল’য়ের কারণে হতে পারে।”
‘হেমোরইডল ব্লিডিং’ সাধারণত ব্যথাহীন ও উজ্জ্বল লাল রংয়ের হয়ে থাকে।
মলের সাথে রক্ত যাওয়া অনেক সময় ‘ক্রোন’স ডিজিজ এর মতো রোগের লক্ষণ হিসেবে ধরা হয়, যার জন্য চিকিৎসার প্রয়োজন।
মলের সাথে নিয়মিত রক্ত গেলে খেয়াল করে দেখতে হবে। এর রং গাঢ় লাল, কালো বা কফির গুঁড়ার মতো দানা দেখা দিলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
এক কাপের বেশি পরিমাণ রক্ত গেলে অথবা নিচের লক্ষণগুলো দেখা দিলে ‘জরুরি বিভাগে’ নিতে দেরি করা যাবে না।
লক্ষণগুলো হল- জ্বর, পেটে ব্যথা, দুর্বলভাব ও অচেতন অবস্থা, দ্রুত হৃদগতি, কফির বীজের মতো দানাদার বমি।
কোষ্ঠকাঠিন্য
ডায়রিয়ার মতো কোষ্ঠকাঠিন্যও অনেকসময় অন্তর্নিহিত চিকিৎসার কারণে হতে পারে যেমন- অস্বস্থিকর অন্ত্রের সমস্যা বা হাইপোথাইরয়ডিজম।
ডা ওয়ার্নারের মতে, “এমন অস্বস্তিকর সমস্যা দেখা দেওয়ার অন্যতম কারণ হল- অপর্যাপ্ত পানি পান ও অর্যাপ্ত আঁশ গ্রহণ না করা।”
মলত্যাগের সাধারণ সময়সূচি যেমনই হোক না কেনো, যদি সপ্তাহ পার হওয়ার পরও ঠিক মতো পেট পরিষ্কার না হয়, আর পেটে অস্বস্তি ফোলাভাব অনুভূত হয় তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে জরুরি ভিত্তিতে।
আর দ্রুত চিকিৎসা শুরু করতে পারলে সমাধান করাও যাবে সহজে।
আরও পড়ুন