প্রাক্তনের সঙ্গে কি বন্ধুত্ব রাখা সম্ভব?

প্রাক্তনের সঙ্গে বন্ধুত্বের তকমা লাগাতে, সে জীবনে কতটুকু প্রভাব ফেলবে সেটা বিবেচনায় নিতে হবে।

লাইফস্টাইল ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 April 2023, 08:52 AM
Updated : 28 April 2023, 08:52 AM

সম্পর্ক-বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সেটা নির্ভর করবে বিভিন্ন পরিস্থিতির ওপর।

সম্পর্কে ভাঙন কষ্টকর- এই বিষয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। তবে সময় পার হতে হতে সেই কষ্টের বোঝাও ফিকে হয়।

তারপর ফেলে আসা সঙ্গীর সঙ্গে ‘শুধু বন্ধু’ থাকার লেবেলে লাগাতে হলে বিভিন্ন দিক বিবেচনার বিষয় চলে আসে।

যেসব বিষয় গোনায় ধরতে হয়

কে কাকে পরিত্যাগ করলো; বিচ্ছেদের কারণ; কত দিনের সম্পর্ক ছিল; বিচ্ছেদের পর কার ওপর কী রকম প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে- এই ধরনের বিভিন্ন বিষয় নির্ভর করবে প্রাক্তনের সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখার ওপর।

এই ধরনের বিষয়গুলো উল্লেখ করে ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে নিউ ইয়র্ক’য়ের মনোবিদ ও ডেটিং-অ্যাপ ‘টিন্ডার’ এবং ‘বাম্বল’য়ের প্রাক্তন সমাজবিজ্ঞানী ড. জেস কার্বিনো আরও বলেন, “প্রাক্তনের সঙ্গে সম্পর্কের গভীরতা কতটা ছিল, কী পরিমাণ একে অপরের প্রতি অনুরক্ত হয়েছিল- এসব বিষয় বন্ধু হওয়ার ক্ষেত্রে বিবেচনায় চলে আসে।”

যেমন- কারও সঙ্গে কয়েকদিনের সম্পর্ক গড়ার পর ভেঙে গেলে, সেখানে বন্ধুত্ব রক্ষা করে চলাটা কিছুটা সহজ হয়। কারণ সেই সম্পর্কে তেমন কোনো ইতিহাস গড়েনি, দায়িত্ববোধের জায়গাও তৈরি হয়নি।

এই তুলনায় দীর্ঘ সম্পর্কে ভাঙনের পর প্রাক্তনের সঙ্গে শুধু বন্ধুত্ব রক্ষা করাটা কষ্টকর হতে পারে।

ড. কার্বিনো বলেন, “বয়স বাড়ার সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে ছেলেখেলা করার পরিমাণ কমে। গভীরতা আসে। পাশাপাশি শারীরিক সম্পর্কও প্রভাব রাখে। এক্ষেত্রে প্রাক্তনের সঙ্গে শুধু বন্ধুত্ব রাখাটা সম্ভব হয়-না বলে আমি মনে করি।”

আবার বহুদিন ধরে যোগাযোগ নেই এরকম প্রাক্তনের সঙ্গে সহজেই বন্ধুত্ব গড়ে উঠতে পারে। যেমন- স্কুল জীবনের প্রেম।

তাছাড়া বন্ধু হওয়া আর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকা- দুটির মধ্যে পার্থক্য রয়েছে।

কার্বিনো বলেন, “একসঙ্গে থাকা দুটি মানুষ নিজেদের পরিচয় ভাগাভাগি করেন, দুজনের বন্ধুদের এক রাখেন। তবে বিচ্ছেদের পরে এই ধরনের বিষয়গুলোতেও ভাঙন আসে।”

দুজনের পরিচয় আলাদা হয়। সব বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ থাকে না, বা বন্ধুরাও ভাগাভাগি হয়ে যায়। এগুলো স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।

তবে প্রাক্তনের সঙ্গে শুধু বন্ধুত্ব রাখতে এই ধরনের বিষয়গুলোতে ঝামেলা শুরু হতে পারে।

“তাছাড়া বিচ্ছেদের কষ্ট থেকে মুক্তি পেতে যে পরিমাণ সময় ও আত্মদর্শনের প্রয়োজন হয়, সেটাতে বাধা পড়তে পারে প্রাক্তন চোখের সামনে থাকলে”, বলেন ড. কার্বিনো।

সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে যেসব বিষয় মাথায় রাখতে হবে

যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো’র ‘লাইসেন্সড ম্যারেজ অ্যান্ড ফ্যামিলি থেরাপিস্ট’ কারা কেইস বলেন, “বিশ্বাস, সততা এবং সম্মান- এই তিন বিষয়ের ওপর বন্ধুত্ব নির্ভর করে। প্রাক্তনের সঙ্গে এসব বিষয় না থাকলে, তার সাথে বন্ধুত্ব রক্ষা করতে আগানো উচিত হবে না।

আরও বিষয় হল- বিচ্ছেদের পর এখনও প্রাক্তনকে ভুলতে পারছেন না বলেই কি বন্ধুত্বের তকমা দিয়ে তাকে জীবনে রেখে দিতে চাচ্ছেন, নাকি নিজে বিনয়ী ও ভদ্র বলে বন্ধু্ত্ব রক্ষা করছেন- এসবও বিবেচনায় রাখতে হবে।

আসল কথা হল, যদি মন থেকে উঠে না আসে তবে প্রাক্তনকে শুধু বন্ধু হয়ে থাকার প্রস্তাব দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।

তারপরও পরিস্থিতি, সময়ের ব্যবধান, বিভিন্ন বিষয় বিবেচনা করে প্রাক্তনের সঙ্গে যদি শুধু বন্ধুত্ব গড়েই ওঠে তবে কিছু বিষয় করা ও না করার দিকে মনোযোগ দিতে হবে।

যা করতে হবে

বন্ধুত্বের বিভিন্ন ধরন ও বিভিন্ন স্তর থাকে। আগে সিদ্ধান্ত নিতে হবে প্রাক্তনকে কোন স্তরের, কোন ধরনের বন্ধুত্বের সম্পর্কে রাখবেন।

কেইস বলেন, “যদি প্রাক্তনের সঙ্গে বন্ধুত্বের তকমা লাগতেই হয় তবে সে কতটুকু আপনার জীবনে প্রভাব রাখবে, কী পরিমাণ সাহায্য তার থেকে নিলে সেটা অন্য কোনো অর্থ দাঁড়াবে না- এই ধরনের বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে সীমারেখা তৈরি করে নিতে হবে।”

আর প্রাক্তনও একইভাবে ভাবছে কিনা সেটাও দেখতে হবে।

সময় নেওয়া: “সময় সব ক্ষত দূর করে না; কিছুটা লাঘব করে। তাই বিচ্ছেদের পরপরই প্রাক্তনের সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখার মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা একদমই ঠিক হবে না, এক্ষেত্রে সময় নিতে হবে”, বলেন কেইস।

তিনি আরও পরামর্শ দেন, “সময়ে ব্যবধানে সব কিছু পাতলা হলে তখন বোঝা যাবে প্রাক্তনের সঙ্গে কতটা বন্ধু থাকা সম্ভব। এই ফাঁকে বরং পুরানকে সরিয়ে নতুন বন্ধু গড়ে তুলে ভালো সময় কাটাতে হবে।”

প্রাক্তনের ভাষ্যটাও গুরুত্বপূর্ণ: প্রাক্তনও বন্ধু থাকতে চাচ্ছে কিনা, সেই বিষয়টাও মাথায় রাখতে হবে। তারও কিছু বলার থাকতে পারে।

আপনার যেমন শুধু বন্ধু হয়ে থাকার ইচ্ছে হতে পারে, তেমনি তারও সেটা সম্পূর্ণ রূপে প্রত্যাখ্যান করার ক্ষমতা রয়েছে।

তাই প্রাক্তনের ভাষ্যটাও জানা দরকার।

সম্মানজনক সীমারেখা টানা: নির্দিষ্ট এই ব্যক্তির সঙ্গে কি একা বসে শুধু কফি নিয়ে সময় পার করতে চান, নাকি বিশাল বন্ধুদের আড্ডার মাঝে তার সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক রাখার জন্য এই বন্ধুত্ব- এই ধরনের বিষয়গুলো সময় নিয়ে বিবেচনা করতে হবে।

স্বাস্থ্যকর সীমারেখার টানার মাধ্যমে প্রাক্তনের সঙ্গে নতুন সম্পর্কের মাত্রা যেমন ঠিক থাকবে তেমনি শারীরিক আকর্ষণের বাইরে থাকাও সম্ভব হবে।

তাছাড়া মনে রাখতে হবে, সম্পর্ক থাকা অবস্থায় যেসব বিষয় তার কাছ থেকে নিয়েছেন, শুধু বন্ধু থেকে সেগুলো নেওয়া যাবে না, প্রত্যাশা করাও ঠিক না।

ড. কার্বিনো বলেন, “প্রাক্তনের সঙ্গে শুধু বন্ধু থেকে, নিজেরা আলাদাভাবে দেখা করা কফি খাওয়ার থেকে অন্যের সাথে সম্পর্ক হওয়ার সুযোগ যেমন নষ্ট হবে তেমনি একসঙ্গে এভাবে থাকার পরে আবার শারীরিক আকর্ষণ থেকে পানি ঘোলা হওয়ার সম্ভাবনাও বাড়বে।”

যা করা যাবে না

একসঙ্গে থাকতে অনেক কিছুই করতেন সেগুলো করা যাবে না। হতে পারে সেটা- একজন আরেকজনকে পৌঁছে দেওয়া, বাজার করা, শারীরিক সম্পর্ক, মন খারাপে পাশে থাকার চেষ্টা- এই ধরনের বিষয়গুলো থেকে বিরত থাকতে হবে।

নতুন রোমান্টিক সম্পর্কে বাধা হওয়া: এটা দুই পক্ষের জন্যই প্রযোজ্য। শুধু বন্ধু হয়ে যেমন প্রাক্তনের সঙ্গে অন্যের গড়ে ওঠা রোমান্টিক সম্পর্কে ভেজাল পাঁকানো যাবে না তেমনি নিজেরও কোনো সম্পর্ক গড়ে ওঠার ক্ষেত্রে প্রাক্তনের কথা চিন্তা করে পিছিয়ে আসা যাবে না।

ড. কার্বিনো বলেন, “যদি নতুন সম্পর্ক গড়ার ক্ষেত্রে, প্রাক্তনের সঙ্গে বন্ধু থাকার বিষয়টা সমস্যা তৈরি করে তবে সেটা ‘সিরিয়াস ইস্যু’। বরং প্রাক্তনকে এক্ষেত্রে ছেঁটে ফেলাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।”

আরও পড়ুন

Also Read: শারীরিক সম্পর্কও যখন ক্লান্তিকর

Also Read: সুখের জন্য স্বার্থপর সঙ্গীর লক্ষণ

Also Read: সম্পর্কে সততারও সীমা আছে