দীর্ঘমেয়াদী ব্যথায় ভোগার কারণ থাকতে পারে ভিটামিন ডি’র ঘাটতি।
Published : 26 Aug 2022, 05:44 PM
অঙ্গে অঙ্গে ব্যথা, সারা বছর থাকলে ভিটামিন ডি’র ঘাটতি আছে কিনা পরীক্ষা করানো যেতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্রের মায়ো ক্লিনিক জানাচ্ছে, দেহের নির্দিষ্ট জায়গায় যদি প্রতিরক্ষার দরকার হয় তখন রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সেই জায়গায় প্রদাহযুক্ত কোষ পাঠায়, ফলে ব্যথা অনুভত হয়। আর অতিরিক্ত ক্ষতির হাত থেকে এভাবে দেহকে রক্ষা করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা।
তবে কোন কারণ ছাড়াই দিনের পর দিন ব্যথা থাকাকে বলা হয় দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ বা ‘ক্রনিক ইনফ্লামাটেইশন’।
আর সাম্প্রতিক এক গবেষণায়ে দেখা গেছে, দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ কমাতে একটি নির্দিষ্ট ভিটামিনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে সমস্যাটি সমাধান করতে সহায়তা করতে পারে।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, কিছু খাবার আছে প্রদাহকে উন্নত করতে পারে। একারণে যাদের দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহের সমস্যা রয়েছে তাদের উদ্ভিজ্জ তেল ও পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেইট সমৃদ্ধ খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে যেতে হবে।
এই ক্ষেত্রে ভিটামিন ডি দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহের সঙ্গে মোকাবিলা করতে কার্যকর।
গবেষণা
‘ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব এপিডেমাইয়োলজি’তে প্রকাশিত গবেষণার জন্য গবেষকরা ‘ইউকে বায়োব্যাংক’য়ের ২,৯৪,৯৭০ জনের জেনেটিক ডেটা, স্বাস্থ্য এবং জীবনধারা সম্পর্কিত তথ্য পর্যালোচনা করেন।
দেখা গেছে, যাদের মাঝে ভিটামিন ডি’র ঘাটতি ছিল তাদের সি-প্রতিক্রিয়াশীল প্রোটিনের মাত্রা বেশি ছিল যা, প্রদাহের সঙ্গে সম্পর্কিত।
এই গবেষণার প্রধান ‘ইউনিএসএ’র ডা. অ্যাং জৌ সায়েন্স ডেইলিতে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “প্রদাহের প্রতিক্রিয়া হিসেবে যকৃতের দ্বারা উচ্চ মাত্রার সি প্রতিক্রিয়াশীল প্রোটিন তৈরি হয়। তাই যখন শরীর দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ সৃষ্টি হয় তখন সি প্রতিক্রিয়াশীল প্রোটিনের মাত্রাও বৃদ্ধি পায়।”
গবেষকরা আরও দেখেছেন, যাদের ভিটামিন ডি’র মাত্রা বেশি তাদের প্রদাহের মাত্রাও কম।
ডা. জৌ বলেন, "এই গবেষণায় ভিটামিন ডি এবং সি-প্রতিক্রিয়াশীল প্রোটিন পরীক্ষা করে একমুখী সম্পর্কে দেখা গেছে। ভিটামিন ডি’র নিম্ন মাত্রা এবং উচ্চ মাত্রার সি-প্রতিক্রিয়াশীল প্রোটিন সম্পর্কযুক্ত যা প্রদাহ হিসেবে প্রকাশ পায়।”
“ভিটামিন ডি বৃদ্ধি করা দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ কমাতে পারে এবং অনেক ধরনের রোগ এড়াতে সহায়তা করে।”
ভিটামিন ডি কীভাবে প্রদাহের তীব্রতা কমাতে পারে তা নিয়ে, যুক্তরাষ্ট্রের ‘মাই ক্রোনস অ্যান্ড কোলাইটিস টিম’য়ের পুষ্টিবিদি জেসি ফেডার ইটদিস নটদ্যাট ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “ভিটামিন ডি প্রদাহরোধী কোষ এবং রোগ প্রতিরোধ প্রক্রিয়ায় ভূমিকা রাখে।”
ভিটামিন ডি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি শক্তির মাত্রা নিয়ন্ত্রণেও ভূমিকা রাখে। কারণ কম মাত্রার ভিটামিন ডি ক্লান্তি, মেজাজের পরিবর্তন এবং পেশীগত দুর্বলতার সঙ্গে সম্পর্কিত।
খাবারে ভিটামিন ডি যোগ করার উপায়
বেশিরভাগ প্রাপ্তবয়স্করা পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি পান না। যদিও শরীর সূর্যালোকের মাধ্যমে ভিটামিন ডি তৈরি করতে পারে। তবে খাবার এবং পরিপুরকগুলোর মাধ্যমে পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন ডি গ্রহণ করাও গুরুত্বপূর্ণ।
ফেডার বলেন, “ভিটামিন ডি বাড়ানোর অন্যতম সেরা উপায় হল খাবারে মাছ যোগ করা। এছাড়াও দুধের মতো ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া উপকারী।”
ফেডারের মতে, “ভিটামিন ডি’র মাত্রা বাড়াতে সম্পূরক হিসেবে ভিটামিন ডি গ্রহণ করা যেতে পারে।”
খাদ্যাভ্যাসে কোনো বড় পরিবর্তন আনার আগে পুষ্টিবিদের সঙ্গে পরামর্শ করে নেওয়া প্রয়োজন। এতে করে তারা রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে দেহের ভিটামিনের মাত্রা পরীক্ষা করে সে অনুযায়ী, সম্পূরক গ্রহণ করার পরামর্শ দিতে পারবে।
‘ইউনিএসএ’য়ের অস্ট্রেলিয়ান সেন্টার ফর প্রেসিশন হেল্থ’য়ের জ্যেষ্ঠ পরিচালক অধ্যাপক এলিনা হাইপোনেন ‘সায়েন্স ডেইলি’কে বলেন, “আমরা লক্ষ করেছি অল্প পরিমাণে ভিটামিন ডি’র ঘনত্ব বাড়ানো ফলে বিভিন্ন ব্যক্তির উপকার পেয়েছে। তবে একেবারেই উপকৃত হননি এরকম মানুষের সংখ্যা কম।”
আরও পড়ুন
প্রদাহের ঝুঁকি কমায় যেসব পানীয়