তেল কমানোর প্রসাধনী ব্যবহারে উল্টো ফলাফল হতে পারে।
Published : 07 Sep 2022, 03:42 PM
তৈলাক্ত ত্বককে অধিকাংশ ক্ষেত্রে নেতিবাচকভাবে দেখা হয়।
অতিরিক্ত তেল উৎপাদন ত্বকে ব্রণসহ নানান সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। তবে সবক্ষেত্রে ঠিক নয়।
সঠিক পরিচর্যা করা হলে তৈলাক্ত ত্বকও সুস্থ ও সুন্দর থাকে।
ক্যালিফোর্নিয়ার পাসাডিনা’র বোর্ড প্রত্যয়িত ত্বক বিশেষজ্ঞ আইভি লি বলেন, “ত্বকের বাইরের অংশে সংক্রমণ, ব্যাক্টেরিয়া ও ভাইরাস থেকে সুরক্ষার স্তর হিসেবে কাজ করে এবং আর্দ্রতা রক্ষা করে।”
ওয়েলঅ্যান্ডগুড ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে তিনি আরও বলেন, “সিবাম উন্মুক্ত রেডিকেলের সঙ্গে যুদ্ধ করার মতো উপাদান ভিটামিন ই সমৃদ্ধ হয় যা প্রাকৃতিক ক্ষয় রোধ করতে সক্ষম। তাই তৈলাক্ত ত্বকে বয়স বাড়ার সঙ্গে কম বলিরেখা দেখা দেয়।”
সিবেইশাস বা তেল গ্রন্থি ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হয়। এই কারণে কারও ত্বক তৈলাক্ত আবার কারও ত্বক স্বাভাবিক হয়ে থাকে।
তৈলাক্ত ত্বক খুব একটা ঝামেলা করে না থাকলে তা নিয়ে মাথা ঘামানোর প্রয়োজন নেই।
তেল উৎপাদন কমাতে অ্যাস্ট্রিনজেন্টস ও টোনারের মতো পণ্য ব্যবহার করে যদি ত্বক বেশি শুষ্ক করে ফেলা হয় তবে তেল গ্রন্থি স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারে না। উল্টো ফলাফল হিসেবে ত্বক আরও বেশি তৈলাক্ত হয়ে যায়।
ডা. লি বলেন, “অনেক সময় তেল উৎপাদন কমানোর জন্য বেশি প্রচেষ্টা করা মস্তিষ্কে তেল উৎপাদনের সংবেদন বাড়িয়ে দেয়। ফলে এই চক্র চলতে থাকে।”
অনাকাঙ্ক্ষিত ব্রণ
ত্বকে অতিরিক্ত সিবাম বা তেল নিঃসরণ ব্রণ সৃষ্টি করে। ত্বক তৈলাক্ত হলে এতে ময়লা, জীবাণূ ও মৃত কোষ জমাট বেঁধে ব্রণের সৃষ্টি হয়। তাই ত্বক তৈলাক্ত হলে ব্রণ হওয়ার প্রবণতা বাড়ে।
মেইকআপ স্থায়ী না হওয়া
তেল মেইকআপ সহজে গলিয়ে ফেলে। তাই অতিরিক্ত তৈলাক্ত ত্বকে মেইকআপ খুব একটা স্থায়ী হয় না।
উজ্জ্বলতা কম
অনেকসময় তৈলাক্ত ত্বক দেখতে চকচকে লাগে।
ডা. লি বলেন, “অনেকের ত্বক সাধারণের তুলনায় বেশি তেল তেলে হয়ে থাকে ফলে দেখতে চিটচিটে লাগে। অনেকে এই তেল চকচকেভাব পছন্দ করেন, আবার অনেকে করেন না।”
তৈলাক্ত ত্বক নিয়ন্ত্রণের উপায়
হরমোন নিয়ন্ত্রণ: তেল বা সিবাম উৎপাদনকারী গ্রন্থির ওপর হরমোন প্রভাব রাখে।
নিউ ইয়র্ক’য়ের ত্বক বিশেষজ্ঞ এলিজাবেথ ক্রিম বলেন একই প্রতিবেদনে বলেন, “সাধারণত ত্বকের তেল বা সিবাম নিঃসরণ হরমোনের ওপর নির্ভর করে।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা সাধারণত প্রাপ্ত বয়স্ক মহিলাদের মুখে ব্রণ দেখা দিলে ‘স্পিরোনোল্যাকটোন’ গ্রহণের পরামর্শ দেই। যা অ্যান্টিজেনিক উপাদান সমৃদ্ধ। এটা দেহের খারাপ ইস্ট্রোজেন ও টেস্টোস্টেরনের কারণে হওয়া ব্রণ কমাতে সহায়তা করে।”
তেল উৎপাদন ধীর করে এমন প্রসাধনী ব্যবহার
তেল উৎপাদনকে ধীর করার একটি উপায় হল রেটিনয়েডস এবং নিয়াসিনামাইডের মতো উপাদান দিয়ে ত্বকের প্রদাহ কমানো।
“স্ট্রেস হরমোনগুলো ত্বকে তেলের উত্পাদন বাড়ায়। তাই প্রদাহ হ্রাস ত্বককে কম তৈলাক্ত করে তোলে”, বলেন দক্ষিণ ক্যালিফোর্নিয়ার বোর্ড-প্রত্যয়িত চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ শার্লি চি।
‘ম্যাটিফাইং’ মেইকআপ প্রাইমার
একটি প্রাইমার তৈলাক্ত ত্বককে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করতে পারে। ত্বককে ম্যাটিফাই করার পাশাপাশি আর্দ্র রাখে এমন প্রাইমার বেছে নেওয়া ভালো।
যুক্তরাষ্ট্রের রূপবিশেষজ্ঞ জেনা মেনার্ড’য়ের ভাষায় ”প্রাইমার ত্বকের তেল নিয়ন্ত্রণে রাখে, ফাউন্ডেশনের স্থায়িত্ব বাড়ায় এবং এটা ত্বকের লোমকূপে একটা মসৃণভাব আনে।”
তৈলাক্ত ত্বকের উজ্জলতা রক্ষার উপায়
ত্বকের তেল খুব বেশি সমস্যা সৃষ্টি না করলে তা নিয়ে মাথা ঘামানোর প্রয়োজন নেই। তবে কেউ ত্বকের তেলতেলে বা চিটচিটেভাব দূর করতে চাইলে ত্বকের স্বাভাবিক পরিচর্যা চালিয়ে যেতে হবে বলে জানান ডা. লি।
হালকা এক্সফলিয়েন্ট: ত্বকের তেলতেলেভাব কমাতে চাওয়া মানে লোমকুপে ময়লা জমতে না দেওয়া। ত্বক পরিষ্কার রাখতে মৃদু এক্সফলিয়েন্ট্ ব্যবহার করা উচিত।
ময়েশ্চারাইজার: সব ধরনের ত্বকেই ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা প্রয়োজন। তৈলাক্ত ত্বককে সতেজ দেখাতে ‘ম্যাটিফাইং’ ফর্মুলাযুক্ত ও নন-কমেডোজেনিক ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা ভালো।
উপভোগ করা: তৈলাক্ত ত্বক থাকা খারাপ কিছু নয়। যত্ন করলে তৈলাক্ত ত্বকেও নিজের আত্মবিশ্বাস বাড়ানো যায়। যদি কেউ নিজের তৈলাক্ত ত্বক পছন্দ করে নিতে পারেন তাহলে তা আর ঠিক করতে চাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই।
আরও পড়ুন
ত্বকে স্বাস্থ্যকর উজ্জ্বলতা পাওয়ার উপায়