ঘন ঘন ব্লিচ করলে চুল ভঙ্গুর হয়ে যায়।
Published : 25 Feb 2024, 12:08 PM
আমাদের চুল কিছুটা তাপ সহিষ্ণু হলেও এর একটা সহনীয় মাত্রা আছে। যা অতিক্রম করে গেলে চুলে ক্ষয় ও ফাটাভাব দেখা দেয়।
ব্লিচিংয়ের কারণে চুলের প্রাকৃতিক গঠন ভেঙে যায় এবং সুরক্ষার স্তর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যদিও চুলে ব্লিচ ব্যবহার করা যায়। তবে কত ঘন ঘন ব্যবহার করা যাবে সে বিষয়ে ধারণা থাকার প্রয়োজন রয়েছে।
ব্লিচ যেভাবে চুল ক্ষতিগ্রস্ত করে
ব্লিচিং করা হলে, এর রাসায়নিক উপাদানগুলো চুলে প্রবেশ করে রং হালকা করে।
এই বিষয়ে নিউ ইয়র্ক’য়ের ‘এলআরএন বিউটি’ স্যালনের দক্ষ কেশসজ্জাকর লরেন পাইয়োনিকো রিয়েলসিম্পল ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলেন, “চুলের কিউটিকেলকে সাপের খোলসের মতো ভাবুন। ব্লিচ চুলে প্রবেশ করে এই খোলস উন্মুক্ত করে। ফলে কিউটিকেলের রং হালকা হয়।”
ব্লিচিং শুরুতে চুলের কিছুটা ক্ষতি করে। তবে নিয়ন্ত্রিত, দক্ষ ও নিয়ম মতো পরিচর্যা করা হলে কয়েকদিনের মধ্যে চুল আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে।
প্রথমদিকে চুল কিছুটা শুষ্ক মনে হলেও পরে স্বাভাবিক হয়ে যায়। তবে বার বার ব্লিচ করা হলে চুল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর চুলের গঠনে পরিবর্তন আসে।
শিকাগোর ‘দ্যা হেয়ার রিট্রিট’য়ের কর্ণধার ও রঞ্জক শিল্পী ইলাইসি ক্লার্ক বলেন, “চুলের ক্ষতি ও প্রোটিন কমা এড়াতে যত্ন সহকারে ব্লিচি করা উচিত।”
“ব্লিচের ক্ষতি স্পষ্ট হয়ে ওঠে যখন চুলের সম্পূর্ণ প্রোটিন শুষে নেয়। ফলে আগা ফাটার সমস্যা দেখা দেয়”- বলেন তিনি।
ব্লিচের কারণে ক্ষয় হওয়ার লক্ষণগুলো হল
চুলে নিস্তেজ ভাব, রুক্ষ ভাব, আগা ফাটা বা ফেটে যাওয়া, স্থিতিস্থাপকতার অভাব, চুল পড়া এবং চুল গলে যাওয়া, অতিরিক্ত জট পড়া।
চুলে পুনরায় ব্লিচ করার জন্য কতদিন অপেক্ষা করতে হবে?
সাধারণত চুলে তিন থেকে আট সপ্তাহের মধ্যে একবারের বেশি ব্লিচ করা উচিত নয়।
সম্পূর্ণ চুলের বিচিং
সম্পূর্ণ চুলে পুনরায় ব্লিচ করতে চাইলে, আধা ইঞ্চি চুলের বৃদ্ধি পর্যন্ত অপেক্ষার পরামর্শ দেন, ক্লার্ক। আর চুলের নতুন যে অংশ বের হয়েছে, শুধু সেখানেই ব্লিচ করার কথা বলেন তিনি।
হাইলাইটস: ব্লিচিংয়ের মাধ্যমে ‘ফয়েল হাইলাইট’ করতে চুলে ‘ওভারল্যাপ’ বা একই চুলে বারবার ব্লিচ করা এড়াতে এবং চুলের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে ছয় থেকে আট সপ্তাহ অথবা চুল প্রায় এক ইঞ্চি বড় হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করার পরামর্শ দেন, ক্লার্ক।
এই পরিমাণ সময় অপেক্ষা করা চুল ও মাথার ত্বক পুনরুদ্ধারের সময় পায়। চুলের প্রাকৃতিক তেল ও মাথার ত্বকের আর্দ্রতা পুনর্গঠনের সহায়তা করে।
একই দিনে কি দুইবার চুলে ব্লিচ ব্যবহার করা যাবে?
মাঝারি থেকে কালো রংয়ের চুলে ব্লিচের রং বসানো সহজ কথা নয়। এক্ষেত্রে চুলের রং হালকা করতে অনেক সময় দুই বা তারও বেশি বার ব্লিচ ব্যবহারের প্রয়োজন পড়ে।
তবে কি দিনে দুইবার ব্লিচ করা যাবে? এর উত্তর নির্ভর করে কোন পদ্ধতিতে এবং কতটা দক্ষতার সাথে ব্লিচ করা হচ্ছে তার ওপর।
পেশাদারদের মাধ্যমে চুল রং করানো হলে তারা চুলের ধরন অনুযায়ী ব্লিচ করেন। আর রক্ষণাবেক্ষণ ও সুস্বাস্থ্যের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
ব্লিচ করা চুলে কি আবার ব্লিচ করা যায়?
ব্লিচ করা চুলে ব্লিচ করা ঠিক নয়। বরং চুল একটু বড় হলে নতুন যে চুল বৃদ্ধি পেয়েছে তাতে ব্লিচ করা যেতে পারে।
ক্লার্ক বলেন, “চুলের গোড়াতে ব্লিচ করা ক্ষতিকর। এতে চুল ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং ভেঙে পড়তে পারে। তাছাড়া সম্পূর্ণ চুলে ব্লিচ করা হলে এর রং দ্রুত মলিন হয়ে যায় এবং অসামঞ্জস্যতা দেখা দিতে পারে।”
ব্লিচ করা চুলের যত্ন
কন্ডিশনার প্রয়োগ, তাপীয় যন্ত্রের সীমিত ব্যবহার এবং আলতোভাবে চুল আঁচড়ানোর মাধ্যমে ব্লিচ করা চুলের যত্ন নেওয়া যায়।
ব্লিচ করা চুলের যত্ন নেওয়ার কয়েকটি উপায় হল-
প্রোটিন ট্রিটমেন্ট: পেশাদার প্রোটিন ট্রিটমেন্টের মাধ্যমে চুল মজবুত, চকচকে ও মসৃণ হয়।
ডিপ কন্ডিশনার: ব্লিচ করা চুলে বেশি আর্দ্রতার প্রয়োজন হয়। তাই ডিপ কন্ডিশনার ব্যবহারের মাধ্যমে চুলের আর্দ্রতা ধরে রাখা যায়।
তাপ প্রতিরোধী ব্যবস্থা গ্রহণ: যে কোনো তাপীয় স্টাইলিং যন্ত্র ব্যবহারের আগে তাপ প্রতিরোধী স্প্রে ব্যবহার করে নিতে হবে।
ঘন ঘন ট্রিম করা বা ছাঁটা: ক্লার্ক বলেন, “ব্লিচ করা চুল অনেক বেশি ভঙ্গুর হয়ে থাকে। কারণ ব্লিচ চুল দুর্বল করে দেয়। ঘন ঘন ‘ট্রিম’ করা চুলের আগা ফাটাভাব কমায়।”
ছবি: পেক্সেল্স ডটকম।
আরও পড়ুন