রুমা যখন ফাইভে পড়ে তখন একদিন খুব বৃষ্টি হচ্ছিল। রফিক স্যার ক্লাসে ঢুকেই বললেন আজকে পড়াতে ইচ্ছা করছে না রে। তার চেয়ে, তোরা এক এক করে দাঁড়িয়ে বল, বড় হয়ে কী হতে চাস? বেশিরভাগই বললো ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার, কেউ কেউ বললো বিজ্ঞানী। রফিক স্যার উদাস চোখে জানালা দিয়ে বৃষ্টি দেখতে থাকলেন। কিন্তু রুমা যখন বললো, আমি বড় হয়ে কবি হতে চাই আর আনিকা, দিশা আর পিহু খুব হাসছিল তখন বিরক্ত হয়ে বললেন, এত হাসাহাসি কীসের? ক্লাস ক্যাপ্টেন মুন তখন গম্ভীর গলায় বললো, স্যার রুমা বলেছে ও বড় কবি হতে চায় তাই ওরা হাসছে। রফিক স্যার কিছুক্ষণ অবাক চোখে রুমার দিকে তাকিয়ে থাকলেন, তারপর বললেন, বৃষ্টি নিয়ে কবিতা বলতো একটা।
Published : 07 Feb 2015, 12:52 PM
দিনের আলো নিভে এল সূয্যি ডোবে ডোবে ।
আকাশ ঘিরে মেঘ জুটেছে চাঁদের লোভে লোভে।
মেঘের উপর মেঘ করেছে, রঙের উপর রঙ।
মন্দিরেতে কাঁসার ঘন্টা বাজল ঢং ঢং।
ও পারেতে বিষ্টি এল, ঝাপসা গাছপালা
এ পারেতে মেঘের মাথায় একশ মানিক জ্বালা।
বাদলা হাওয়ায় মনে পড়ে ছেলেবেলার গান-
বিষ্টি পড়ে টাপুরটুপুর, নদেয় এল বান।।
হুম, হয়েছে। কবিতা লিখছিস একটাও?
রুমা বললো, না স্যার।
একটাও কবিতা লিখিস নাই! তাইলে কবি হবি কীভাবে?
স্যার, ওরাও কেউ ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারিং--এর কিছু করে নাই, তাহলে যদি ওরা বড় হয়ে ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হতে পারে আমিও কবি হতে পারবো।
রফিক স্যার কিছু বলতে গিয়েও চুপ করে গেলেন। তারপর বললেন, তুইতো এই বয়সে একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিস। তারপর বললেন, অ্যাই সোমা সামনে এসে একটা গান গা।
সেদিনের পর থেকে রুমাকে সবাই ডাকতো ‘কবি রুমা’। মাঝে মাঝে রফিক স্যার জিজ্ঞেস করতেন, কিরে কবিতা লিখেছিস দুই-একটা? রুমা কবিতা পড়ছিল খুব, হাতের কাছে যা পাওয়া যায়। উপরে বড় বড় করে ‘কবিতার খাতা’ লেখা একটা খাতা নিয়ে ঘুরে বেড়াতো। বার্ষিক পরীক্ষায় দশম হওয়ায় বাবা ঐ খাতা ছিঁড়ে ময়লার ঝুড়িতে ফেলে দিলেন। রুমাকে থমথমে গলায় বললেন, ‘ফাজিল মেয়ে, আর কখনো যদি এসব বদচিন্তা করো তাহলে চড় দিয়ে দাঁত ফেলে দিবো।’
এরপর একদিন আবার যখন বৃষ্টি হচ্ছিল আর রফিক স্যারের পড়াতে ইচ্ছা করছিল না তখন রুমাকে জিজ্ঞেস করলেন, আরে আমাদের কবির খবর কী? কবিতা-টবিতা শুনবো না আমরা?
রুমা, ছলছলে চোখে বললো, স্যার আমি তো কবি হতে পারবো না, আমাকে বাবা বলেছে ডাক্তার হতে হবে। সেদিন আর ক্লাসে কোনো গান হলো না, কেবল একঘেয়েভাবে বৃষ্টি পড়তে থাকলো।