তানির দুটো পুতুল। ইমি ও মিমি। ওদের নিয়ে তানি সুযোগ পেলেই খেলতে বসে যায়। রাতে দুজনকে দুপাশে নিয়ে ঘুমায়। তানির বয়স আট পেরিয়েছে। ও এখন একাই ঘুমায়।
Published : 21 Jan 2015, 01:53 PM
তানি ঘুমিয়ে গেলেই মিমি ও ইমি উঠে বসে। সব রাতেই এটা ঘটছে। বিছানা থেকে নেমে ওরা সারা ঘরে ঘুরে বেড়ায়। ইমিটা বেশি ছটপটে। শুধু ছুটোছুটি। তবে ভোরের আলো ফুটতেই ওরা যে যার জায়গায় ফিরে যায়।
একরাতে তানি গভীর ঘুমে। ইমি ও মিমি উঠে বসল। ইমিটা আগের মতোই লাফাতে শুরু করল।
মিমি বলল, “বেশি লাফালাফি করো না, পড়ে যাবে।”
“পড়লে পড়ব।”
এই বলে তরতর করে জানালার গ্রিলে গিয়ে উঠল। কিন্তু টাল সামলাতে না পেরে জানালা গলে পড়ে গেল একেবারে বাড়ির পেছন দিকে।
“বাঁচাও বাঁচাও।”
কিন্তু পুতুলদের কথা মানুষ তো আর শুনতে পায় না!
ওদিকে মিমি দৌড়ে গেল জানালার দিকে। কেঁদে ফেলল। ও তাকিয়ে দেখা ছাড়া কিছুই করতে পারল না।
তানি ঘুম থেকে উঠে বড় একটা হাই তুলল।
“ওমা! ইমিটা গেল কই? মা মা, আমার ইমিকে খুঁজে পাচ্ছি না।”
তানির চেঁচামেঁচি শোনা গেল।
তারপর সারা দিন কত খোঁজা হল কিন্তু ঝোঁপের আড়ালে পড়ে থাকা ইমিকে কেউ দেখতে পেল না।
রাতে কাঁদতে কাঁদতে তানি শুধু মিমিকে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়ল।
মিমি তড়াক করে বিছানা থেকে নেমে পড়ল। তারপর জানালার দিকে দৌড়। ও ঠিকই ইমিকে দেখতে পেল। এত ভয় পেয়েছে ইমি যে নড়তে পারছে না।
“যেমন করে হোক আমি তোমাকে নিয়ে আসব।”
চিৎকার করে বলল মিমি।
পরদিন সকালে তানির দাদুমণি এল বেড়াতে। তানি সব খুলে বলল দাদুমণিকে। দুপুরে খাবারের টেবিলে দাদুমণি বলল, “এতে মন খারাপের কিছু নেই। নিশ্চয়ই খুঁজে পাবে ইমিকে।”
“কিন্তু কীভাবে?” তানির কাঁদো কাঁদো গলা।
“যদি তুমি সবসময় ভালো কাজ কর, নিশ্চয়ই তোমার মনের আশা পূরণ হবে।”
“ভালো কাজ?” মিমি মনে মনে বল।
সেদিন খাওয়ার টেবিলেই ও দাদুমণির গ্লাসে পানি ঢেলে দিল। একটু পর বাবার চশমাটা মুছে দিল। বিকেলে মাঠে খেলতে গিয়ে কারও সঙ্গে ঝগড়া করল না। সন্ধ্যায় একা একাই পড়তে বসল। ব্যাগ গুছিয়ে নিল। রাতে খাবার টেবিলে সবজির তরকারি চুপচাপ খেয়ে নিল। আর দশটা বাজতেই ঘুমুতে চলে গেল। আজ দাদুমণি ওর সঙ্গে ঘুমাবে।
“ওরে আমার জাদুমণি, এত্তগুলো ভালো কাজ করেছ।”
দাদুমণি শুনে দারুণ খুশি হয়ে বলল, “দাঁড়াও, তোমার দুটো পুতুলের জন্য কাল আমি উলের সোয়েটার বানাব।”
বলে ব্যাগ থেকে একটা গোলাপি রঙের উলের বল ও দুটো কাঁটা বের করলেন। এই বয়সেও দাদুমণি উলের কাজ করতে পারে।
দাদুমণি উলের বল ও কাঁটা দুটোকে টেবিলের উপর রেখে শুয়ে পড়লেন। তানিও ঘুমিয়ে গেছে মিমিকে পাশে নিয়ে।
ওরা ঘুমিয়ে পড়তেই মিমি উঠে পড়ল এবং দৌড়ে জানালার কাছে গেল।
ইমি তেমনি করুণভাবে তাকিয়ে আছে। “একটা কিছু করতেই হবে।”
এই বলে ঘুরতেই টেবিলের উপর চোখ পড়ল। দারুণ একটা বুদ্ধি এসে গেল।
ইমি আস্তে আস্তে উল বেয়ে উপরে উঠে এল। ঘরে ঢুকে ও মিমিকে জড়িয়ে ধরে খুশিতে কেঁদে ফেলল।
পুরো উলটা খুলতে মিমির অনেক কষ্ট হয়েছিল। তারপর উলের আগায় উলের একটা কাঁটা বেঁধে নিচে ফেলা। উফ, এখনও মিমি হাঁপাচ্ছে!
কিন্তু সমস্ত কষ্ট দূর হয়ে গেল, যখন ইমি উল বেয়ে উপরে উঠে এল। দুজনে মিলে উলবাঁধা কাঁটাটাকে টেনে তুলল আর সব উল গোল করে পেঁচিয়ে টেবিলের উপর রেখে দিল।
সূর্যের তখন উঁকিঝুঁকি শুরু হয়েছে।
“ইমিকে পাওয়া গেছে।”...সকালে সবার ঘুম ভাঙল ইমির চিৎকারে।