“রাত দুটো বাজলেই বারান্দায় আসে পরিটা ।”
Published : 10 Jan 2015, 01:21 PM
রুমকি দুপুরে খাবার টেবিলে কথাটা বলতেই সবাই হেসে উঠল। বাবলুটা মুখ ভেঙচাল।
ভাইয়ার এক কথা, “ভূত আর পরি বলতে কিছু নেই।”
মা-বাবা মিটিমিটি হাসল।
বড় আপা বলল, “ওটা তোমার কল্পনা রুমকি।”
শুধু হাসল না মিতু আপু। মিতুআপু রুমকির খালাতো বোন। পরীক্ষার ছুটিতে ওদের বাসায় বেড়াতে এসেছে।
খাওয়া শেষে রুমকি মন খারাপ করে বিছানায় বসে রইল। মিতুআপু আলতো পায়ে এসে দাঁড়াল, “সত্যি রুমকি?”
“হুম, কিন্তু কেউ আমার কথা বিশ্বাস করল না।”
“আমি করেছি এবং আমি পরিটাকে দেখতে চাই। আজ আমি তোমার সাথে ঘুমাব।”
এ কয়দিন মিতুআপু বড়আপার সাথে ঘুমিয়েছিল।
ওরা দুজন গল্প করতে করতে এগারটার মধ্যে ঘুমিয়ে গেল। রাত দুটো বাজতেই রুমকি ধড়মড়িয়ে উঠল। দৌড়ে গেল বারন্দায়। রোজকার মতো সুন্দর গন্ধটা ভেসে আসছে না, কোনো ধোঁয়াও নেই। কী ব্যাপার?
“আসেনি, তাই না?” মিতুআপু রুমকির গা ঘেষে দাঁড়াল।
“না।” মুখ কালো করে বলল রুমকি।
দুজন আবার বিছানায় শুয়ে পড়ল। মিতুআপু সাথে সাথে ঘুমিয়ে গেল। কিন্তু রুমকির ঘুম এল না। কিছুক্ষণ পর সেই পরিচিত গন্ধটা অনুভব করল । রুমকি দৌড়ে বারান্দায় এল। ভেসে এল সেই রিনরিনে কণ্ঠ, “আমাকে আগে বলনি কেন রুমকি, আরও কেউ থাকবে?”
“এখন তো জানলে। ডাকব ওকে?” রুমকি চঞ্চল হয়ে বলল।
“না, আজ আর নয়। কাল আসব। তবে ও যদি আমাকে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে তবেই আমাকে দেখতে পাবে। আরও একটা কথা, আর কেউ যেন না থাকে।”
“ওহ, তুমি কী যে ভালো একটা পরি। দেখো, কেউ জানবে না!”
সকালে ঘুম ভাঙতেই রুমকি পুরো ঘটনা জানাল মিতুআপুকে। তারপর সারা দিন চলল দুজনের ফিসফিসানি আর সেই মুহূর্তের জন্য অপেক্ষা।
রোজকার মতো এগারটা বাজার আগেই দুজন ঘুমিয়ে গেল। ঠিক দুটো বাজতেই ঘুম ভেঙে গেল রুমকির। চোখ খুলেই প্রথম কথা, “মিতুআপু, ওঠো ওঠো।”
“কিন্তু না, আজও তো এল না।” রুমকি প্রায় কেঁদেই ফেলল।
হঠাৎ একটা ঠাস্ করে শব্দ হল। কে যেন বলে উঠল, “যত্তসব মশার দল।”
মিতুআপু দৌড়ে ঘরে ঢুকল। খাটের নিচে ঝুঁকে বলল, “আয়, আয় বাবলু, বেরিয়ে আয়।”
“এ জন্যই তো আজও আসেনি পরিটা।” রুমকি ভীষণ রেগে গেল।
বাবলু মুখ নিচু করে বলল, “তোমাদের কথাগুলো আমি আড়াল থেকে শুনে ফেলেছিলাম। তারপর আমিও পরি দেখার জন্য...” বলে ভোঁ দৌড়।
“দাঁড়াও, দাঁড়াও।” বলে বাবলুকে থামাল রুমকি।
“তুমি কি পরি দেখতে চাও?”
“হুম।”
“মনেপ্রাণে পরিদের বিশ্বাস করবে তো?”
“হুমম।...” এবার বাবলুর জোরালো উত্তর।
“ঠিক আছে, আমি দুজনকেই কাল পরি দেখাব। তবে মন দিয়ে বিশ্বাস করতে হবে।আজ যে যার মত ঘুমিয়ে পড়ো।”
পরদিন তিনজন একসঙ্গে ঘড়িতে দুটো বাজতেই বারান্দায় আসল।
একটা মিষ্টি গন্ধ ছড়িয়ে রুপালি জমিনে সোনালি কাজ করা ঝলমলে জামা পরা ধবধবে সাদা পরিটা ওদের সামনে এসে দাঁড়াল।
অনেক কথা হল, গল্প হল, হাসি হল। পরিটা ওর দেশের গল্প বলল। ওদের রাজা-রানিসহ-- আরও অনেক গল্প। তারপর একসময় আকাশের দিকে উড়ে গেল। ওরা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল ।
একটা সুন্দর ঘোরলাগা অনুভূতি নিয়ে ওরা তিনজন ঘুমুতে গেল। তবে কেউ ভয় পেল না। কারণ, পরিটা খুব ভালো ছিল।