আকিবকে যখন অংকটা করতে দেওয়া হয়েছিল তখন সে ক্লাসে ছিল। অংকটা সোজা নাকি কঠিন, এটা একটি আপেক্ষিক ব্যাপার। যেহেতু আকিব অংকটা পারেনি তাই বলা যায় আকিবের জন্য অংকটা কঠিন। ক্লাসের পাঁচ-ছয়জন পেরেছিল। তাহলে বলা যায় তাদের কাছে অংকটা সোজা।
Published : 23 Dec 2014, 03:07 PM
আকিব বাসায় এসেও অংকটা নিয়ে চিন্তা করতে থাকল। অংকটাতে সমস্যা কী! সরল একটা অংক। ঠিকমতো গুণ-ভাগ করতে পারলেই উত্তর ১ কিংবা ০ হবার কথা, কিন্তু অংক মিলছে না কেন? আকিব খাতা কলম বের করে আবার অংকটা করা শুরু করল। কিছুদূর করার পর আবার ঝামেলা লেগে গেল। এই নিয়ে আটবার অংকটা করার চেষ্টা করেছে আকিব, কেন যেন মিলছেই না।
আকিবের বন্ধু সজীব একবারেই পেরেছে। আকিবের কয়েকজন বন্ধু তিন-চারবারেই পেরেছে। আকিবের হচ্ছেই না। আকিব একবার ভাবল, গাইড বই দেখে নিবে, কিন্তু সে তা করল না। গাইড বই দেখে করা কাজটা কিছুটা অনৈতিক। আকিব নিজে নিজেই চেষ্টা করেই গেল। ২০ বারের মতো চেষ্টা করার পরেও অংক মিলল না। অথচ এই অংকের উত্তর হবে ‘১’, সবাইই প্রায় এই ফলই পেয়েছে।
পরেরদিন স্কুলে আকিবকে নতুন একটা অংক করতে দেওয়া হল। এটা অবশ্য আকিব প্রথম চেষ্টাতেই পেরে গেল। কিন্তু আকিবের মনের খচখচানি কমল না। তাহলে আগের দিনের অংকটা মিলল না কেন? আকিবের স্কুলের অংকের শিক্ষক হচ্ছেন কামরুল স্যার। প্রচণ্ড রাগী একজন মানুষ। আকিব চিন্তা করল একবার সাহস করে স্যারের কাছে যাবে কিনা। আবার কী মনে করে যেন আর গেল না। আবার চেষ্টা করতেই লাগল। কিন্তু কোনোভাবেই অংকটা পারা যাচ্ছে না।
রাতের বেলা আকিব তার বাবার কাছে গিয়ে বলল, বাবা খাতা শেষ হয়ে গিয়েছে।
বাবা বললেন, বলিস কী! ৩ দিনেই এক খাতা শেষ! কী করেছিস? কাগজ ছিঁড়ে নৌকা বানিয়েছিস?
অংক করেছি বাবা।
কী অংক করেছিস?
সরল।
একটা চ্যাপ্টারেই খাতা শেষ!
নাহ একটা অংকে!
কী সরল ছিল যে এক অংকেই খাতা শেষ! যা তো খাতাটা আন দেখি।
আকিব খাতা আনতে গিয়ে দেখে ব্যাগে খাতাটা নেই। সে কী! খাতা গেল কই তাহলে! সে আবার বাবার কাছে ফিরে গেল,
বাবা খাতা হারিয়ে ফেলেছি।
সেটা বল হারিয়ে ফেলেছিস। মিথ্যে কথা বলিস না। পাপ হবে।
আকিবের খুব খারাপ লাগল। মিথ্যে কথা সে বলবে কেন! কিন্তু খাতাটা গেল কই? আস্তে আস্তে আকিব তার সেই অংক আর খাতাটার কথা ভুলেই গেল।
বেশ কয়েকদিন পর কামরুল স্যার একদিন আকিবকে ডেকে পাঠালেন। আকিব তো ভয়ে অস্থির। সে কী রে বাবা! কী ভুল করে ফেলল আকিব! কামরুল স্যারের রুমে গিয়ে আকিব দেখে স্যার তার সেই খাতা নিয়ে বসে আছেন।
আকিব, এই খাতা তোর?
জ্বি স্যার।
পুরা খাতায় ১২০ পাতা। তুই একটা সরল অংক ৮০ বার করেছিস। ব্যাপারটা কী?
স্যার উত্তর তো মিলেই না।
উত্তর মিলবে কি করে গাধা! প্রশ্নই তো ভুল লিখেছিস!
আকিব ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকল খাতার দিকে।
তাহলে কি আমার সব শ্রম বৃথা গেল?
কামরুল স্যার বললেন, না তা হবে কেন। অভিজ্ঞতা একটা বিশাল জিনিস। এখন বুঝতে পারছিস না, একদিন বুঝবি।
বহু বছর পরের কথা, আকিব এখন একজন বিজ্ঞানী। তার আবিষ্কারের পুরষ্কার নিতে সে এসেছে। তার পুরষ্কার প্রদানের বক্তৃতায় সে বলছে,
সাফল্য হচ্ছে অনেকগুলো ব্যর্থতার সমষ্টি। আমি যখন ছোট ছিলাম আমি খুব সহজ একটা সরল অংক ৮০ বার করেছিলাম। অংকটির উত্তর একবারও মিলাতে পারিনি কারণ প্রশ্নটাই ভুল ছিল। কিন্তু আমি সেই অংকটা করার ৮০টা ভিন্ন উপায় চিন্তা ঠিকই করেছিলাম। সফলতার কোনো শর্টকাট নেই। যখন কেউ কোনো কিছুতে অনেক ব্যর্থ হয়, কিন্তু লক্ষ্যে পৌঁছানোর ইচ্ছাটা থাকে, তখনই সে সফল হয়ই।