এক সময়, আমি যখন ছোট ছিলাম, ছিলাম গ্রামে-- তখনকার কথা। খুব ভোরে উঠে পুকুরে যেতাম হাত-মুখ ধুয়ে আসতে।
Published : 24 Mar 2014, 04:47 PM
পুকুরে যাওয়ার পথে উঠোনের দুই পাশে সব্জিবাগান। আর একটু সামনে গেলেই পুকুর পাড়। সেই পুকুর পাড়েও সবুজ গাছপালা। আর সেই সবুজের সঙ্গে নানান রংয়ের ফুলের অপরূপ মাখামাখি। এমন সুন্দর সবুজের সঙ্গে এখন আমাদের কমই দেখা হয়।
আমি দেখেছি, আমাদের সব্জিবাগানে কেমন লকলক করে বেড়ে উঠেছে পুঁইয়ের লতা। কয়েক দিনের মধ্যে কেমন করে লাউয়ের মাচান ছেয়ে যায় বড় বড় লাউ পাতায়। এসব আমি রোজ রোজ দেখতাম। তাদের বেড়ে ওঠাকে উপভোগ করতাম। খেয়াল করতাম ফুলের কলি আসছে কি না। কলি থেকে ফুল কয়দিনে ফুটছে। আবার এক সময় ফুল নষ্ট হয়ে ঝরে যেত। ঝরেপড়া ফুলের গোড়া থেকে ছোট্ট একটা ফল বেরিয়ে আসত।
আমাদের বাড়িতে ছিল বেশ কয়েকটি পেয়ারা গাছ, বরই গাছ, জাম্বুরা গাছ, গাবগাছ, নারিকেল গাছ। সব গাছেই একই ঘটনা ঘটত। তা দেখে মজা পেতাম। একদিন পেয়ারা বড় হলে গাছে উঠে পেয়ারা পেড়ে খেতাম।
গাছকে সবাই ভালোবাসে। গাছের প্রতি সবাই কিছু না কিছু যত্নশীল। যারা থাকে শহরে, তারা হয়তো দেখে না অবারিত সবুজ মাঠ। কিন্তু শহরে এক চিলতে জায়গা পেলেই ফুলের বাগান করা হয়। অনেকের হয়ত সেই জায়গাও নেই। এক টুকরো বারান্দা থাকলে, সেখানে টবে চাষ করা হয় ফুলের। আবার অনেকেই বাড়ির ছাদেও ফুলের বাগান করে। করে ফলের চাষ, এমনকি সবজি-চাষও।
কিছু গাছ আছে, যা মানুষ পরিকল্পিতভাবে বাড়াতে পারছে। কিছু গাছ আছে, পরিকল্পনা ছাড়া বাড়বেই না। কিছু কিছু গাছ আছে, যা আপনাআপনিই বাড়ে। বাড়তে বাড়তে জঙ্গল হয়ে যায়। যাকে আমরা আবার বনও বলি।
আমরা যে গ্রামের এখানে-সেখানে ঝোপঝাড় দেখি তাও বনের অংশ। বিভিন্ন গ্রামে আমরা যে দেখি নানা ধরনের বাঁশঝাড়, আমবাগান, লিচুবাগান, কাঁঠালবাগান, পেয়ারাবাগান, হিজল-শিমুল-কদমের বাগান, নারকেল-সুপারি-খেঁজুরের বাগান, এসবও বনের অংশ।
এই বন আমাদের অনেক কাজে লাগে। অনেকে মনে করে বনজঙ্গল মানে, নেহায়েত অনাবাদি জংলা। পড়ে আছে এমনি এমনি, অকাজে।
আসলে কিন্তু তা নয়। এই বনজঙ্গল না থাকলে অনেক বিপদ হত আমাদের। এসব বনজঙ্গল না থাকলে আমরা খেতে পারতাম না ফলমূল, রান্নাবান্না করার লাকড়ি পেতাম না। আমাদের ঘরে যেসব আসবাবপত্র আছে তাও আসে বনজঙ্গল থেকে। বনজঙ্গলের বড় বড় গাছই আমাদের প্রধান ভরসা।
এসব নানা কারণে আমাদের বন দরকার। বেশি বেশি বন দরকার। বিশুদ্ধ অক্সিজেন পাওয়ার জন্য বন দরকার। মানুষকে সুস্থ্যভাবে বেঁচে থাকার জন্য চার ভাগের এক ভাগ বন থাকা উচিত। কিন্তু আমাদের দেশে সে হারে বন আছে অর্ধেক। তাই আরও বন চাই। আরও গাছপালা চাই। গাছপালা রোপন করে বন সৃষ্টি করতে আমাদেরই উদ্যোগ নিতে হবে। আজই।