ওরা পাঁচ বন্ধু। আকাশ, তারা, ঝিলি, মিলি ও আলো।
Published : 04 Sep 2020, 09:21 AM
আজ বিকেল থেকে তারা অনেক খেলাই খেলল। একটু পরই সন্ধ্যা নামবে। এখনও হাতে কিছুটা সময় বাকি আছে। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি ঘরে ফিরে যেতেও ওদের ইচ্ছে করছে না।
ওরা খেলছিল মাঠের পাশে খোলায় যেখানে ধান মাড়াই করা হয়, শুকানো হয়। একপাশে পুকুর। হঠাৎ আলোর মাথায় একটা বুদ্ধি এলো। সে বন্ধুদের বলল- চল, আমরা লুকোচুরি খেলি। এই অন্ধকার হবো হবো সময়ে লুকোচুরি খেলতে খুব মজা হবে।
আকাশ একটু আপত্তি করলেও শেষ পর্যন্ত রাজি হয়ে গেল। চোর কে হবে সেটা ঠিক করার জন্য মিলি গুণতে শুরু করলো- অবু দশ, বিশ, তিরিশ, চল্লিশ ...। মিলির গোণায় আলো হলো চোর। একটা গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে চোখ বন্ধ করে সে গুণতে লাগল- এক, দুই, তিন, চার ... বিশ। আমি এলাম।
এই বলে আলো চোখ খুলে এদিক-সেদিক খুঁজতে শুরু করলো বন্ধুদের। লুকিয়ে থাকা বন্ধুরা কু কু বলে শব্দ করছিল একটু পর পর।
প্রথমেই ধরা পড়ল মিলি। সে লুকিয়েছিল পুকুরপাড়ের কলাগাছগুলোর পেছনে। ‘এক-টিভ মিলি’ বলতেই হাসতে হাসতে মিলি বেরিয়ে এলো। ধরা পড়েও খুব আনন্দ এই খেলায়। এরপর খড়ের গাঁদার পেছনে পাওয়া গেল তারাকে, আমগাছের ডালে পাওয়া গেল আকাশকে আর সবশেষে লাকরি রাখার ঘরের পেছন থেকে পাওয়া গেল ঝিলিকে। যেহেতু প্রথমে মিলি ধরা পড়েছে, সুতরাং সে-ই এবার চোর।
মিলি গুণতে লাগল- এক, দুই, তিন, চার ... বিশ।
এবার সবার আগে ধরা পড়লো তারা, গোয়াল-ঘর থেকে। দ্বিতীয়তে ধরা পড়ল আকাশ, মুরগির খুপড়িঘরের পেছন থেকে। কিন্তু এরপর মিলি দেখার আগেই আলো দৌড়ে এসে তাকে ছুঁয়ে ধাপ্পা দিল। এরপর সবাই হৈ হৈ রৈ রৈ করে বেরিয়ে এলো। কারণ আবারও মিলিই চোর।
এভাবে খেলা চলছে, সবাই খুব মজা পাচ্ছে। এদিকে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এসেছে। চারপাশে হালকা অন্ধকার। ঠিক হলো এবারই শেষ খেলা। চোর হয়েছে ঝিলি। একে একে তিনজনকে খুঁজে বের করল ঝিলি, তবে বেশ সময় লাগছিল। অন্ধকার অন্ধকার হওয়াতে আগের মতো সহজে দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু আকাশকে অনেকক্ষণ ধরে খুঁজেও পাওয়া যাচ্ছিল না।
ভয় পেয়ে যায় সবাই, কোনো বিপদে পড়ল নাতো আকাশ! ৫/৬ মিনিট ধরে খুঁজে, ডাকাডাকি করেও আকাশের সাড়া পাওয়া গেল না। এদিকে অন্ধকার হয়ে গেছে, বাড়িতে সবার মা-বাবা চিন্তা করবে। কিন্তু বন্ধুকে না পেলে কি করে যাবে সবাই?
সবাই কাঁদতে কাঁদতে আকাশকে ডাকছিল। এদিকে বাচ্চাদের ঘরে ফিরতে দেরি দেখে একে একে সবার মা-বাবা এলো। বাচ্চারা কোথায় কোথায় খেলে, সে কথা সবারই জানা। সবাই এসে শুনলো, আকাশ হারিয়ে গেছে। সবাই মিলে আকাশকে আবার নতুন করে খোঁজা শুরু হলো।
অনেকক্ষণ ধরে সবাই মিলে আকাশের নাম ধরে ডাকাডাকি করল, বাড়ি থেকে হারিকেন, মশাল, টর্চ নিয়ে আসা হলো। কিন্তু আকাশের কোনো সাড়াই পাওয়া যাচ্ছিল না। আকাশের মা এবার কাঁদতে শুরু করলেন- তাহলে কি আকাশকে ছেলেধরা ধরে নিয়ে গেছে?
হঠাৎ গোয়ালঘর থেকে একটা কান্নার শব্দ ভেসে এলো। কে যেন মা মা বলে কাঁদছে। কারোই আর বুঝতে বাকি রইল না যে ওটা আকাশের গলা। আকাশের মা দৌড়ে গেলেন সেদিকে, পেছনে পেছনে আর সবাই। গোয়ালঘরের দরজা খুলে গরুগুলোকে সরিয়ে সরিয়ে সবাই খুঁজতে লাগল। গোয়ালঘরে একটা জায়গায় গরুর খাওয়ার জন্য খড় বিছিয়ে রাখা হয়েছিল। সেখানেই পাওয়া গেল আকাশকে- খড়ের ওপর বসে কাঁদছে।
মা তাকে কোলে করে বাইরে বের করে আনল। আর তাকে সবাই বলল, কেনো সে ওই খড়ের গাঁদায় চুপটি করে ছিল এতক্ষণ? কেউ কেউ বলল- জ্বিন ওকে লুকিয়ে রেখেছিল; কেউ বলল- ভূত দেখে ভয়ে বোবা হয়ে গিয়েছিল নিশ্চয়ই।
কিন্তু আকাশ বলল- জ্বিন-ভূত নয় তো। আমি যে ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম।
ভেবেছিলাম চুপ করে বসে থাকব, কিন্তু কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম টেরই পাইনি। ঘুম ভেঙে দেখি চারপাশে অন্ধকার। আর অন্ধকার হলে যে আমি কিচ্ছু দেখি না। কি করে পথ চিনে বের হব, তাই ভেবেই তো কাঁদছিলাম।
মা আকাশকে বুকে চেপে ধরে চুমু দিলেন- লক্ষ্মীসোনা আমার, আর কখনো যেখানে-সেখানে ঘুমিয়ে পড়ো না। ঘরে তো তোমার নরম বিছানা আর তুলতুলে বালিশ আছেই।
আকাশকে খুঁজে পেয়ে বন্ধুদের বুকের থেকে ভার নেমে গেল। আকাশ যে একটু ঘুমকাতুরে সেটা সবাই জানতো। ঘুমকাতুরে এই বন্ধুটা কি দুশ্চিন্তাতেই না ফেলেছিল ওদের!
কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা [email protected]। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না! |