নিজেকে নিয়ে বলতে কে না ভালোবাসে। ও আচ্ছা, আমার পরিচয় তো দিয়ে নিই আগে! নাম ইশরাক তূর্য, বয়স ১২, পঞ্চম শ্রেণি, স্কুল অ্যাকাডেমিয়া।
Published : 29 Jun 2020, 12:42 PM
আমরা দুই ভাই, বাবা-মা দুজনই ব্যবসায়ী। আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঢাকাতেই। অবসরে আমি গান গাইতে, ঘুড়ি ওড়াতে, বই পড়তে এবং ছবি আঁকতে ভালোবাসি। আর এখন তো অফুরন্ত অবসর।
এবার আসি আমার অভিনয় জীবন নিয়ে। আমি প্রথম কাজ শুরু করি ২০১৮ সালে। সাধারণত আমাদের দেশে বেশির ভাগ শিশুশিল্পী তাদের পথচলা শুরু করে টিভিসি, ওভিসি অথবা মডেলিং দিয়ে। আর আমার যাত্রা হয়েছিল নাটকে অভিনয় করে, আমার প্রথম নাটক ‘শহর থেকে দূরে’, দুরন্ত টিভিতে। চরিত্রের নাম ‘অয়ন’, পরিচালক সাইদ রিংকু।
যদি অনুপ্রেরণার কথা বলি, আমার অভিনয়ের স্বপ্নবীজ মা-ই বুনেছিল প্রথম। আর মজার ব্যাপার হচ্ছে মা কস্টিউমস ডিজাইনে কাজ করেছিল সাইদ আংকেলের সঙ্গে, সে কাজ করার সময় আংকেল আমাকে দেখে পছন্দ করেছিল এবং শুধু আমাকে নিয়ে কাজ করার ইচ্ছে থেকে ‘অয়ন’ চরিত্রটা সৃষ্টি করেছিলো নাটকে, এটা আমার জন্য বড় পাওয়া।
এই নাটক চলার সময়ে আমি ডেটল হ্যান্ডওয়াসের একটি ওভিসি করেছি। দুরন্ততে কাজের সুবাদে আমি দুরন্তর প্রথম জন্মদিনে আমন্ত্রিত হয়েছিলাম এবং ওখানে আমাকে মতিয়া বানু, শুকু আন্টি এবং মেহেদী হাসান সোমেন আংকেল পছন্দ করেছিল আমার অভিনীত পরবর্তী নাটক ‘ভালোবাসার আলো আঁধার’ দীপ্ত টিভির ‘অর্ক’ চরিত্রের জন্য।
ওটা ৩৭৪ পর্বের ধারাবাহিক ছিলো, ওখানে আমি একজন ক্যান্সার সারভাইভরস এবং একলা মায়ের সন্তান ছিলাম। দীর্ঘ ১৭ মাসের এই পথচলায় দীপ্তি টিম আমার দ্বিতীয় পরিবার হয়ে উঠলো। ও হ্যাঁ, তোমাদের তো বলাই হলো না, আমার ভয়েজ বা ডাবিং এর হাতেখড়ি কিন্তু দীপ্ত টিভিতেই।
পরে বিভিন্ন সময়ে আমি অ্যানিমেশন কার্টুন, বিভিন্ন ভাষা থেকে বাংলায় অনুবাদ, টিভিসি, ওভিসিতেও ভয়েস দিয়ে থাকি। এটা আমার পছন্দের একটি কাজ, শুধু কথা দিয়ে একটি শব্দকে নানাভাবে বলার মাঝে একটা অন্য আনন্দ আছে।
এই দীর্ঘপথ চলতে চলতেই আমার অভিজ্ঞতার ঝুলি বড় হতে থাকে একটু একটু করে। কিছু একক নাটক (মৃতের আত্মহত্যা, অপ্রিয় অতিথি), হীরালাল সেন ও গগন হরকরার জীবনভিত্তিক ‘ছায়াবাজি’ ও ‘কোথায় পাবো তারে’ ডকুমেন্টারি ফিল্মে কাজ করেছি। এখানে আরেকজন গুণী মানুষের কথা না বললেই নয়, আবু তাহের টোকন আংকেল, যে কোন কাজের জন্য আগে তূর্যকে খুঁজেছেন ভালোবাসা নিয়ে।
আমার কিছুদিন আগে করা নাটক ‘মেছো তোতা গেছো ভূত’ এখন প্রচারিত হচ্ছে দুরন্ত টিভিতে। পুঁচকে বাচ্চাগুলো আমাকে এখন ‘তোতা’ নামেই চেনে। এবছর আমার আরও দুটো বড় প্রাপ্তি, বঙ্গবন্ধুর জীবনের ওপর নির্মিত বায়োপিকে শেখ কামালের ৮-১২ বছরের চরিত্রে অভিনয়ের সু্যোগ এবং সংস্কৃতি বিদ্যানিকেতন ছায়ানটে সুযোগ পাওয়া, আলহামদুলিল্লাহ।
মজার স্মৃতি হলো এবার শুটিং এর কাজে মানিকগঞ্জ থেকেছি ২০ দিন। গ্রাম আমি ভীষণ ভালোবাসি, কাজ ছাড়া বাকি সময় কেটেছে হাঁস-মুরগী, গরু-ছাগল আর কুকুর-বিড়াল নিয়ে। আমি এই দিনগুলো খুব মিস করি। কষ্টের স্মৃতি যদি বলি শেষ চারমাস জীবন যেনো কেমন থমকে গেছে। কাজ, পড়াশোনা, বন্ধুদের আড্ডা সমস্ত ব্যস্ততার ছুটি। তবে হ্যাঁ, আমি এটা মানিয়ে নিয়েছি। পরিবারের সঙ্গে থাকছি অনেক বেশি সময়, বাবাকে বেশি কাছে পাচ্ছি, গার্ডেনিং করায় সময় দিচ্ছি আর মায়ের কাজেও সাহায্যের চেষ্টা করছি।
ভবিষ্যতে নিজেকে একজন ভালো মানুষ হিসেবে গড়তে চাই, আমার যোগ্যতার মাপকাঠি যাই হোক না কেন তা নিয়েই সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পাশে দাঁড়াতে চাই। একটা সময় মায়ের আগ্রহ ও পরিবারের সহযোগিতায় অভিনয় শুরু করলেও এখন আমার শিল্পী জীবনটাকে ভালোবাসি। কোথায় যেন আরো ভালো করার টান অনুভব করি। পড়াশোনার পাশাপাশি আমি একজন সত্যিকারের শিল্পী হতে চাই।
একদিন এই পৃথিবী সুস্থ হবে, আমরা আবার ডানা মেলবো নীল আকাশে। সেই পর্যন্ত ঘরে থাকবো, সবাই সুস্থ থাকবো ও নিরাপদ থাকবো।
কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা [email protected] । সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না! |