বিজয়ের গল্প: দাদুর হাসি

বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের শোচনীয় পরাজয়ে মন ভালো নেই কাউসারের। এত্তটুকুন ছেলে তার কী দেশপ্রেম। ভাবতে অবাকই লাগে। আর এই দেশপ্রেম আছে বলেই তো আমরা আজ স্বাধীন।

ইমরান পরশবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Dec 2019, 08:18 AM
Updated : 4 Dec 2019, 08:18 AM

একদিকে লোডশেডিং, জেনারেটরটাও ডিস্টার্ব দিচ্ছে। তাই আজ আর পড়া হবে না। ঘন অন্ধকারে জোনাকিগুলো কি সুন্দও আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে। শাহীন আর কাউসার দাদুর কাছে বায়না ধরেছে গল্প শুনবে। দাদু তো উদগ্রীব হয়ে বসে থাকেন গল্প বলার জন্যে। দাদুর গল্প মানেই মুক্তিযুদ্ধ আর স্বাধীনতা। কতো সুন্দর করে ইতিহাস শোনান গল্পের ছলে।

একটি পা অচল খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলাফেরা করেন। তবু তিনি দমবারপাত্র নন। দেশের বদনামি কেউ করলেই ধমকে ওঠেন। ভীষণ রাগি দাদু। কিন্তু এই রাগি মানুষটার আড়ালে একটি কোমল হৃদয় রয়েছে দাদুর। দুই ভাই জড়োসড়ো হয়ে ঘিরে ধরলো দাদুকে। আর ওদের বোন লিনা খাটের উপর বসে একধ্যানে দাদুর কথা শুনছে। অবশ্য ওর দাদুর কাজে দেয় এসব গল্প। আসলে দাদু যা বলেন তা তো গল্প নয়। এক একটি ইতিহাস। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক কোনো প্রশ্ন এলে ওর উপরে আর নাম্বার পায় কে। দাদু আজ কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনবো। শাহীনের সাথে লিনাও সায় দিলো। আচ্ছা তোমাদের কি এই গল্প শুনতে ভালো লাগে? প্রশ্ন করলেন দাদু।

জ্বি দাদু। সমস্বরে জবাব দিলো ওরা।

আজ কিন্তু দাদু তোমার পা হারানোর গল্প বলতে হবে।

আচ্ছা ঠিক আছে দাদু। মুচকি হেসে জবাব দেন দাদু।

দাদু শুরু করেন তাঁর স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে গল্প বলা।

সময়টা ছিলো তখন অগাস্টের ১০ তারিখ। সাল ১৯৭১। আমরা পনের জনের একদল মুক্তিযোদ্ধা। সিরাজগঞ্জ জেলার কামারখন্দে গেছি। রাত তখন আনুমানিক নয়টা কি সাড়ে নয়টা হবে। আলো আঁধারিতে আমরা ছুটে চলেছি। কিছুদূর এগিয়ে একটি স্কুলঘর চোখে পড়লো। আমরা পাশ দিয়েই যাচ্ছিলাম। হঠাৎ আমরা কান্নার শব্দ শুনি। কৌতুহল নিয়ে আমরা এগোলাম। খুব সাবধানে আরও কাছে আসতেই শব্দ স্পষ্ট হয়।

আমরা তখনও জানতাম না ওখানে পাকিস্তানিরা ক্যাম্প করেছে। অবশ্য ক্যাম্পটি নতুন হয়েছে। অন্ধকারে আমরা টের পাচ্ছিলাম না। স্কুলঘর লাগোয়া একটি ডোবা ছিলো। আমাদের একজন সঙ্গী সেই ডোবায় পড়ে যায়। আর শব্দ হয়। আর দ্রিম দ্রিম করে গুলির আওয়াজে আমরা প্রথমে আমরা ঝোপের আড়ালে লুকোলাম। কিছুক্ষণ পর গুলির আওয়াজ বন্ধ হলো। আমরা বুঝলাম এটি পাকিস্তানিদের ক্যাম্প। ওখান থেকে পিছু হটে আমরা যুক্তি করলাম আজ রাতেই অপারেশন করতে হবে।

যেই কথা সেই কাজ। গাঢ় অন্ধকার ঠেলে আমরা একটি বনের ভেতর গেলাম। তারাদের মিটমিটে আলোয় কিছুটা পথ চলতে হলো। আলো তো জ্বালাবার জো নেই। সাথে জোনাকিরাও যেন পথ দেখিয়ে চলেছে। একটি বড় গাছের নিচে আমরা বসলাম। কাদেরের ঝোলার ভেতর সবসময় রেডিও থাকত। স্বাধীনবাংলা বেতার কেন্দ্রের অনুষ্ঠান শুনতাম আমরা। তেমন একটা ভালো শোনা যেত না। তবুও দেশের গানগুলিতে আমরা উদ্দিপ্ত হতাম।

যখনই রেডিওতে শুনতাম ‘তীরহারা এই ঢেউয়ের সাগর পাড়ি দেব রে’... রক্ত তখন টগবগিয়ে উঠত। শিরা উপশিরায় ঢেউ খেলে যেত। প্রিয় মাতৃভূমির প্রতি ভালোবাসায় আমরা উদ্বুদ্ধ হতাম। অনুভব করতাম ঘরে ফেলে আসা প্রিয়জনদের। গ্রুপ কমান্ডার কবির শেখ সবাইকে জানালেন ভোর রাতে আক্রমন করা হবে। আমরা মানসিক প্রস্তুতি নিলাম। একটি আক্রমণ মানেই যুদ্ধ। আর যুদ্ধ মানেই রক্তক্ষয়। আবার অন্যরকম একটি অনুভূতি। তোমরা হয়ত অনুভব করতে পারবে না যে কি ভয়ানক অবস্থা।

শাহীন বলল, জি দাদু আমরা টিভিতে ইসরাইল আর ফিলিস্তিনের যুদ্ধ দেখি।

না রে দাদু ভাই, আমাদের যুদ্ধ আরও ভয়ানক ছিল। আমাদের এরকম ভারি অস্ত্র ছিল না।

কাউসার দাদুকে প্রশ্ন করল, তাহলে দাদুভাই তোমরা কিভাবে যুদ্ধ করতে?

দাদুভাই একগাল হেসে জবাব দিলেন, আসলে দাদুভাই, যুদ্ধক্ষেত্রে মনোবলই আসল। সাথে অস্ত্রও। আমরা যুদ্ধ করেছি, মাঝে মাঝে হেরেছি। কিন্তু মনোবল হারায়নি। একটি যুদ্ধ আমাদের বিশ সদস্যের যোদ্ধার পাঁচজনই শহীদ হয়েছিল। তবুও আমরা আমাদের লক্ষ্য থেকে সরে আসিনি। আমাদের ভেতরে ছিল দেশপ্রেম। আর এই দেশপ্রেমই ছিল আমাদের মূল শক্তি।

আমরা যখন একটি যুদ্ধ জয় করতাম দেখতাম হাজার হাজার মানুষ আমাদেরকে ঘিরে ধরেছে। আনন্দ উল্লাস করেছে। স্বাধীনতা পেতে এদেশের মানুষ যে কতটা উদগ্রিব হয়েছিল তা সেই আনন্দ উল্লাস থেকেই বুঝা যায়। তাদের সেই উচ্ছ্বাসে মনে হতো সাগরের ঢেউ আছড়ে পড়ছে। তোমরা কি জানো দাদুভাই তোমাদেরকে সত্য ইতিহাস থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে দীর্ঘদিন?

ওরা তন্ময় হয়ে শুনছিল দাদুর কথাগুলি। সবাই তাকিয়ে আছে দাদুর চোখের দিকে। দাদুর চোখ গড়িয়ে বইছিল জলের ধারা।

এই যে দাদুভাইয়েরা শুনছ?

শাহীনের কাঁধে হাত রাখলেন দাদু। শাহীন যেন সম্বিত ফিরে পেল।

জি দাদু।

তোমরা কি আমার কথা শুনছ?

জি দাদু। জবাব দিলো লিনা।

কাউসার বলল, থামলে কেন দাদু, বলো না!

দাদুর চোখ জ্বলজ্বল করে উঠল। বর্তমান প্রজন্ম যে ইতিহাসের স্বর্ণশিখরে পৌছতে চায়। ভেবে খুশির ঝর্নাধারা বইয়ে গেল দাদুর চোখে। এই প্রজন্ম যদি ইতিহাস না জানে তাহলে তো তাদের দেশের প্রতি মায়া তৈরি হবে না। এই দেশটিকে যে আমরা কত ভালোবাসি তা তো বুঝাতে হবে। তাদেরকেও দেশের প্রতি ভালোবাসা বাড়াতে হবে। আর ভালোবাসা তো এমনিতে বাড়বে না। তাদেরকে জানাতে হবে কিভাবে পেলাম আমাদের এই মাতৃভূমিকে। তারা যদি ইতিহাস জানে তাহলে অবশ্যই দেশের প্রতি ভালোবাসা বাড়বে। আবার বলতে শুরু করলেন দাদু।

তোমরা শুনে অবাক হবে। আমাদেরকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর থেকেও ক্ষতি করেছে এদেশেরই লোকজন।

কিভাবে দাদু? প্রশ্ন করে শাহীন।

কিভাবে বলছি শোনো। ১৯৭১ সালে যখন যুদ্ধ শুরু হলো তখন আমাদের দেশের কিছুলোক পাকিস্তানিদের সমর্থন দিয়েছিল।

কেন দাদু?

আসলে তারা এই দেশকে চায়নি। ধর্মের দোহাই দিয়ে পাকিস্তানের সাথে থাকতে চেয়েছিল। অবশ্য তাদের সংখ্যা একেবারেই কম। রাজাকার, আলবদর, আল শামস ইত্যাদি নামে তারা তাদের কাজকর্ম করত। আর তাদের প্রধান কাজ ছিল মুক্তিযোদ্ধারা কোথায় কী করছে সেইসব খবর পাকবাহিনীকে জানানো। আর এদেশের মা-বোনদেরকে ধরে নিয়ে পাকবাহিনীর হাতে তুলে দেয়া। আবার নিজেরাও নির্যাতন করা।

জানো দাদুভাই। তোমাদের দাদিকেও ওই রাজাকাররা ধরে নিয়ে গিয়েছিল, তার আর খোঁজ পায়নি। বলেই দাদু হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন। মুহূর্তেই কান্না থামিয়ে বলতে লাগলেন দাদু। তোমরা দেখছ যে বর্তমান সরকারের আমলে দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালের মাধ্যমে অনেকের বিচার করা হচ্ছে। এরা আসলেই অপরাধি। ভয়ংকর অপরাধি। মুক্তিযুদ্ধের সময় এরা ছিল মূর্তিমান আতংক। শুধু মুক্তিযোদ্ধারাই নয়, সাধারণ মানুষও এদের হাত থেকে রেহাই পায়নি। রেহাই পায়নি তোমাদেও মতো শিশুরাও।

কেন দাদু, শিশুদের মারল কেন ওরা? কাউসার এর প্রশ্ন।

কারণ তখন যারা শিশু ছিল তারা তো এখন অনেক বড়। যেমন তোমদের বাবা।

আমাদের বাবা! হাহাহা......তিনজনই হেসে উঠল।

হ্যাঁ রে দাদুভাই। যুদ্ধের সময় তোমাদের বাবার বয়স মাত্র সাত বছর ছিল। ক্লাস টুতে পড়ত। ওকে নিয়ে তোমাদের দাদি বাড়িতেই থাকত। তোমাদের দাদিকে নিয়ে যাওয়ার সময় তোমাদের বাবা খেলতে গিয়েছিল পাশেই। সেজন্যই আল্লাহর রহমতে বেঁচে আছে।

আর ওই তো আমার বেঁচে থাকার অবলম্বন। এখন যারা বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়েছে, এরা ছিল রাজাকার, আলবদর। যারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল, শুধু তাই নয় আমাদের দেশের বিশিষ্ট সব বুদ্ধিজীবীদের হত্যার পরিকল্পনা করেছিল তারা। যে মুজাহিদের ফাঁসি হলো, এই আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের নেতৃত্বে আমাদের দেশের লেখক, শিল্পী, সাংবাদিক, কবি সাহিত্যিকদের হত্যা করা হয়।

বুদ্ধিজীবী কারা দাদু? আর তাদেরকে কেন মারল? তারা তো অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করেনি। জানতে চাইলো শাহীন।

একটি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে জবাব দিলেন দাদু। দাদুভাই বুদ্ধিজীবী হলেন তারাই যারা জ্ঞানী। লেখক, কবি, শিল্পী, সাংবাদিক এরা হলেন জ্ঞানী মানুষ। এদেরকে অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করতে হয় না দাদুভাই। ওরা জানত দেশ একদিন স্বাধীন হবে। আর সেই স্বাধীন দেশের গান লেখা হবে। ছবি আঁকা হবে। সঠিক ইতিহাস লিখে সবাইকে জানানো হবে। আর তাই তো ঘাতকরা বুদ্ধিজীবী হত্যার নীলনকশা করেছিল।

তোমরা কি জানো এই যে ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি’ গানটি কার লেখা ও কে সুর করেছেন?

লিনা বলল আমি জানি দাদু।

তুমি জানো, কিন্তু আমাদের তরুণ প্রজন্ম। মানে এখন যারা বড় হচ্ছ, তাদের অনেকেই কিন্তু জানে না। এই গানটি লিখেছেন আবদুল গাফ্ফার চৌধুরী। আর সুর করেছিলেন আমাদের বিখ্যাত সুরকার আলতাফ মাহমুদ। তিনি আরও অনেক জনপ্রিয় গানের সুর করেছিলেন। আর এই আলতাফ মাহমুদকে মুক্তিযুদ্ধের সময় যে হত্যা করেছিল তোমরা তার নাম জানো।

কে দাদু? কাউসার প্রশ্ন করল।

মুজাহিদ। যাকে ফাঁসি দেয়া হলো। আমাদের বিজয়ের মাত্র দুদিন আগে। এই মুজাহিদ, নিজামীরাই ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর আলতাফ মাহমুদসহ অসংখ্য বদ্ধিজীবী মেরেছিল।

তাই নাকি দাদুভাই?

হ্যাঁ রে দাদুভাই। তাই তো বর্তমান সরকার তাদেরকে বিচারের আওতায় এনেছেন।

সরকার খুব ভালো করেছেন দাদু। বলল শাহীন।

তা অবশ্য ঠিক দাদুভাই। কিন্তু এতদিন পর বিচার করার কারণে তারা তো অনেক অর্থশালী হয়েছে। আবার তাদের প্রজন্ম রেখে যাচ্ছে। যারা এই দেশটাকে ভালোবাসে না। এদের সংখ্যা এখন অনেক বেড়ে গেছে। তোমাদের জন্য আমরা একটি নিরেট স্বাধীন দেশ রেখে যেতে পারছি না। মনের ভেতর কষ্ট থেকে যাচ্ছে।

কি যে বলো দাদু। লিনা বলল। এখন তোমাদের সেই অপারেশন এর কথা বলো।

বলব দাদু বলব। তোমাদেরকে যদি এই ইতিহাস না বলি। তাহলে তোমরা তো বুঝবে না, এই দেশ আমরা কিভাবে পেলাম। কত কষ্ট আর ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। তোমরা যদি সেই ইতিহাস জানো তাহলে দেশের প্রতি এমনিতেই ভালোবাসা তৈরি হবে। শোনো আমরা যে যুদ্ধ করেছিলাম, সেটি ছিল স্বতস্ফূর্ত ভালোবাসা। কোনো খাদ ছিল না। নিজেদের প্রাণ যাবে ভেবেও সবাই যুদ্ধ করেছি। শোনো সেই অপারেশন কিভাবে করলাম।

কমান্ডারের নির্দেশ মতো আমরা ভাগ হয়ে গেলাম। এমনভাবে পজিশন নিলাম যেন চারদিক থেকে আক্রমণ করা যায়। আর আমরা বেশিরভাগ সময় রাতেই অপারেশন করতাম। এর কারণ হলো আমরা সংখ্যায় তো কম ছিলাম। আবার গোলাবারুদও কমছিল। আর ভোররাতে আক্রমণ করলে ভালো। কেননা সারারাত যারা ডিউটি করে তাদেরও শরীর ক্লান্ত থাকে। অনেকের তন্দ্রাভাব থাকে। তাই হঠাৎ আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়ে।

আমরা চারটি ভাগ হয়ে গেলাম। একদিকে পানি থাকায় সুবিধা হয়েছিল। পানির অংশে যারা ছিলেন তাদের দায়িত্ব ছিল গ্রেনেড মারা। কমান্ডারের সংকেত পেয়ে আমরা তিনদিক থেকে একসাথে আক্রমণ করলাম। পাকসেনারা এই হঠাৎ আক্রমণে ভেবাচেকা খেয়ে গেল। আমরা একরাউন্ড গুলি ছুঁড়লে ওরা ছুঁড়ে পাঁচশ রাউন্ড। পশ্চিম পাশ থেকে করা হলো গ্রেনেড আক্রমণ। ক্যাম্পের টিনের চাল গেল উড়ে।

ওই ক্যাম্পে থাকা পঁচিশ জন পাক-আর্মিকে সেদিন আমরা মারতে পেরেছিলাম। বিজয় নিশ্চিত ভেবে আমি উঠে জয় বাংলা বলে একটি লাফ দিলাম। আর সঙ্গে সঙ্গে একটি গুলি এসে লাগল আমার হাঁটুর নিচে। গুলি খাওয়ার পরও আমি দমে যায়নি। দুই পাক-আর্মির বুক ঝাঝরা করে দিয়েছলাম। আমাকে কাঁধে করে সবাই নিয়ে গেল একটি বাড়িতে। সেখানেই চিকিৎসা নিলাম।

কিন্তু ভালো চিকিৎসার অভাবে পচন ধরেছিল পায়ে। তাই কেটে ফেলতে হলো রে দাদুভাই। দেশের জন্যে তো আমার একটি পা গেছে। আর ত্রিশ লক্ষ লোক যে শহীদ হলো। আমার দেশের প্রায় দুই লাখ মা বোনের সম্ভ্রম নিলো ওরা। আমার জীবন গেলেও তো কোনো দুঃখ ছিল না। এত রক্ত! পুকুর, নদী আর খালে কত যে লাশ ভেসে গেছে। লাশ আর লাশ। কিভাবে ভুলি সেই কাহিনি।

আমরা যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করলাম। যে উদ্দেশ্য ছিল সেটি তো হলো না। স্বাধীন দেশে কি দেখলাম আমরা! রাজাকারদের গাড়িতে উড়ল আমাদের রক্তে কেনা পতাকা। যারা আমাদেরকে হত্যা করল। মা বোনের সম্ভ্রম নিলো। সামান্য স্বার্থের জন্যে তাদের গাড়িতে প্রাণের পতাকা উড়িয়ে দিতেও কুণ্ঠাবোধ করেনি। হায় রে রাজনীতি। ক্ষমতা কি এতটাই প্রিয়? শহীদের রক্তের উপর দাঁড়িয়ে কিভাবে রাজাকারদেরকে দেশপ্রেমী বানানোর চেষ্ট চলছে।

দাদুর চোখ বেয়ে যে কখন লোনাজল গাড়িয়ে পড়েছে কেউ খেয়াল করেনি। পরনের সাদা পাঞ্জাবিটা বুকের কাছে পুরো ভিজে গেছে। চোখের সুরমা লেপ্টে গেছে। লিনা এসে দাদুর গলা জড়িয়ে ধরল। পরম মমতায় দাদুও তাকে বুকে টেনে নিলেন।

লিনা বলল, কেঁদো না দাদু। আমরা আজ তোমার কাছে থেকে বাস্তব ইতিহাস জানলাম। আমরা কখনও তোমাদের এই অবদান ভুলব না। আর রাজাকারদের ঘৃণা করব।

দাদু শোনো আমি তোমার এই কাহিনি নিয়ে একটি গল্প লিখব।

লিনার কথা শুনে দাদু গুমরে কেঁদে উঠলেন।

কি ব্যাপার দাদু তুমি আবার কাঁদছ?

না রে দাদুভাই এ কান্না তো দুখের কান্না নয়। এটি হলো সুখের কান্না। যাকে বলে আনন্দ অশ্রু।

দাদুভাই তিন ভাই-বোনকে বুকে জড়িয়ে জড়িয়ে ধরলেন।

এই লেখকের আরও লেখা

কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!