শিকার

গ্রামের মেঠো পথ। দুইদিকে গাছের সারি। পথটি এঁকেবেঁকে চলে গেছে অনেকদূর।

ইমরান পরশবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Jan 2019, 10:16 AM
Updated : 22 Jan 2019, 10:16 AM

আদিবা, মাহিম আর রিচি তিনবন্ধু। প্রতিদিন এই পথেই স্কুলে যায়। এই পথটি মাঠের মাঝ দিয়ে চলে গেছে। ঝিরঝির বাতাসে ঢেউ খেলে যায় ধানক্ষেত। ঠিক নদীর মতো ঢেউ তুলে।

মাঠের মাঝখানে একটি বিশাল বটগাছ। এই গাছে অনেক পাখির বাস। সন্ধ্যা হলেই কিচিরমিচির শব্দে মুখরিত হয় এলাকা। দূর দুরান্ত থেকেও অনেক লোক আসে। ছবি তোলে। ভিডিও করে। কেউ আবার পাখির ডাক রেকর্ড করে। গাছটি পাখির অভয় আশ্রম হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। সকাল হতেই পাখিগুলো চলে যায়। সন্ধ্যায় আবার ফিরে আসে।

এই তো কিছুদিন আগে যে ঝড় হলো। সেই ঝড়ে অনেক পাখি মারা গেছে। গাছের একটি বড় ডালও ভেঙে পড়েছিল। এলাকার লোকজন মাটি গর্ত করে পাখিদের কবর দিয়েছে। অনেকে কেঁদেছেও। ওরা তিনজনই দেখেছে সেই দৃশ্য। টিভিতেও দেখিয়েছে খবরটি। সেই থেকে লাহুড়িয়া গ্রামের নাম অনেকেই জেনে গেছে।

প্রতিদিনের মতো তিনজন স্কুল শেষে বাড়ি ফিরছিল। সূর্য তখন পশ্চিমে হেলে পড়েছে। তাদের ছায়াগুলো দ্বিগুন দেখাচ্ছিল। আদিবা তার ছায়া অনুসরণ করে হাঁটছে। স্কুলব্যাগ কাঁধে তাদের। মজা করে যাচ্ছিল বাড়িতে। বড় বটগাছটির কাছে এসেই ওরা থমকে গেলো।

অনেক লোকের জটলা। তারা এগিয়ে গেলো। খুব কাছে। দেখল বন্দুক হাতে দুজন লোক। তাদেরকে ঘিরে রেখেছে উৎসুক মানুষ। তারা গ্রামে বেড়াতে এসেছে। সবাই বলাবলি করছে আজ পাখি শিকার করা হবে। বিদেশি পাখি। গ্রামের ছেলেরা পিকনিক করবে। আহ পাখির মাংসের কী স্বাদ!

এই কথা শুনে ওরা ভয় পেয়ে গেলো। এই বটগাছে শীতের সময় বিদেশি পাখি আসে। সারাবছর তো দেশি পাখি থাকেই। সারাগ্রামের এই একটি গাছেই পাখি থাকে। আর জায়গাটি একটু নিরিবিলি। তাই পাখিরাও স্বাচ্ছন্দে দিন কাটায়। এটি তাদের নিরাপদ আশ্রয়। এটি পাখির বাড়িঘর। গুলির শব্দ শুনলে তো পাখিগুলি ভয় পেয়ে যাবে। কতো বাচ্চা পাখি আছে এখানে। তাদের মা যদি মারা পড়ে! কোথায় যাবে পাখিগুলো। কত দূর থেকে উড়ে আসে পাখিগুলো!

আদিবা আস্তে  আস্তে বন্দুধারীদের কাছে গেলো।

বলল, দেখুন পাখি মারবেন না।

তার কথা শুনে হো হো করে হেসে উঠল সবাই।

আদিবা আবার বলল, হাসবেন না। আমার কথা তো শুনুন।

একজন বলে উঠল, এই মেয়ে তোমার কথা কী শুনব। আমরা কী ছোট? তুমি আমাদের কথা শোনো। এরা অনেকদিন পরে গ্রামে এসেছে। পাখির মাংস দিয়ে পিকনিক করবে। আজ এখানে পাখি শিকার হবে। বিদেশি পাখি। আমরা তো দেশি পাখি মারব না। শালিক, বক মেরে কী হবে। বিদেশি পাখির মাংস অনেক। পিকনিক জমবে ভালো।

প্লিজ আপনারা পাখি মারবেন না। তিনজনই একসঙ্গে বলে উঠল, মারবেন না।

শহর থেকে আসা শিক্ষিত যুবক দুজন চমকে উঠল। গ্রামের এই ছোট বাচ্চাদের সাহস আর মেধা দেখে। একজন বলে উঠল, আমরা পাখি মারবো। তোমরা চলে যাও তো।

ওদের মন খারাপ হয়ে গেলো।

আদিবা বলল, দেখুন এখানে অনেক মা পাখি আছে। তারা যদি মারা পড়ে? তাহলে তাদের বাচ্চাগুলোর কী হবে ভেবে দেখেছেন। আপনাদের মাকে যদি কেউ মেরে ফেলে?

বন্দুকধারী দুজন একে অপরের দিকে তাকালো।

তাছাড়া পাখি শিকার করা সরকারি নিষেধ আছে। পাখি শিকার করলে আইন অমান্য করা হয়। আপনারা যদি আইন অমান্য করেন তাহলে...।

একজন বলল, তাহলে পিকনিক?

আদিবা বলল, পিকনিক হবে। আমরাও আপনাদের সঙ্গে থাকবো।

কিন্তু কিভাবে?

আমাদের তিনজনের বাড়িতে অনেক মুরগি আছে। আপনাদেরকে দশটি মুরগি দেয়া হবে।

কী বলো?

হ্যাঁ যা বলেছি সত্য। উপস্থিত সবাই করতালি দিলো।

কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!

কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!