তিনি অনেকটা পথ হেঁটে এলেন। গাছের ছায়ায় বিশ্রাম নিলেন, তারপর ঘুমিয়ে পড়লেন।
Published : 12 Nov 2019, 02:37 PM
বনের পশুরা তাকে চিনতে পারেনি। কেউ কখনও এমন পশু আর দেখেনি। বনের পশুরা দূরে থেকে তাকে দেখছে আর ভাবছে এ কোন পশু এলো আমাদের বনে!
পশুটার ঘুম ভাঙলো। ক্ষুধায় তার পেট চোঁ চোঁ করছে। তারপর এক দৌড়। পশুরা কিছু বোঝার আগেই সে ধরে ফেলল এক খরগোশকে।
শিকারের চেঁচামেচিতে অন্য পশুরা ভয়ে ছুটে পালালো। পশুদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ল আতঙ্ক।
যার ভয়ে বনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ল তিনি আর কেউ নন, একজন সিংহ। এই বনে এসে সিংহ মশাইয়ের দিনকাল ভালই কাটছে। সিংহ যখন বিশ্রাম নেয় তখন মনে পড়ে তার আগের বনের কথা। সেখানে অনেক সিংহ। রাজা তো হবে মাত্র একজন। সে তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে কুলিয়ে উঠতে পারেনি। তাই সে চলে আসে এই বনে।
এই বনে ছোট ছোট পশুরা বাস করে। সিংহের ক্ষুধা লাগলেই দানবের মতো ছোটে। যাকে পায় তাকেই ধরে-মারে-খায়। আর পশুরা ভয়ে চিৎকার করে চারদিকে ছোটাছুটি করে পালায়। ছোট ছোট পশুদের ছোট ছোট প্রাণ যায় যায় করে!
বনের পশুরা গেলো শেয়াল পণ্ডিতের কাছে। তারা কাঁপতে কাঁপতে বলল, হয় আমাদের এই দানবের পেটে চলে যেতে হবে নয় আমাদের এই বন ছেড়ে চলে যেতে হবে। কোনটা করব আমরা!
শেয়াল বলল, কোনো চিন্তা করো না তোমরা। বুদ্ধির কাছে গায়ের জোর টিকবে না।
শেয়াল সবাইকে নিয়ে পরামর্শ করে একটা ভালো বুদ্ধি বের করল।
দুই.
সিদ্ধান্ত হলো, সিংহ মশাইকে এই বনের রাজা বানানো হবে। প্রতিদিন তাকে খাবার দেওয়া হবে। বনের মাঝে যে গুহা আছে সেখানে রাজা আরাম-আয়েশে থাকবে। আর বানরের মাধ্যমে এই প্রস্তাব দেওয়া হলো সিংহের কাছে।
বানরের মুখে সিংহ এই প্রস্তাব পেয়ে আনন্দে লাফিয়ে উঠল। সিংহের লাফ দেখে বানরও লাফাতে লাগল। সিংহ বলল, বিষয় কী! আমি লাফালাফি করছি রাজা হওয়ার আনন্দে, তুমি লাফাও কেন?
আমি লাফাচ্ছি আপনার মতো মহান পশুকে রাজা বানানোর খুশিতে। দুজনেই হেসে-কেশে কুটিকুটি।
প্রতিদিন খাবার আসে আর সিংহ রাজা মজা করে খায়। গুহার ভেতরে অলস সময় কাটে রাজার। খায়-দায় আর ঘুমায়।
একদিন শিকার হয়ে এলো এক আহত শেয়াল। সে সিংহকে বলল, আমি আর এগুতে পারছি না। দয়া করে আপনি গুহার বাইরে এসে আমাকে নিয়ে যান।
ক্ষুধার্ত সিংহ ছটফট করতে লাগল। সে হুংকার দিয়ে বলল, গুহার মুখ দিয়ে আমি বের হতে পারছি না।
শেয়ালের আর বুঝতে বাকি রইল না। সিংহ অলসভাবে শুয়ে বসে মজার খাবার খেয়ে নাদুস নুদুস হয়েছে। আর গায়ের বলও গেছে কমে। এই গুহার মুখ দিয়েই সে একদিন ঢুকেছিল। আর এখন সে বের হতে পারছে না।
সিংহ রাজা গুহা থেকে আর বের হতে পারছেন না, খবরটা ছড়িয়ে পড়ল বনে। আর হইহই করে বনের পশুরা এলো ছুটে।
তারা বুদ্ধিমান শেয়ালকে তাদের নেতা বানাল। তারপর নেতার গলায় মালা পরিয়ে দিয়ে আনন্দে বন মাতিয়ে তুলল।
লেখক পরিচিতি: প্রধান শিক্ষক, মির্জাকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দত্তেরগাঁও, শিবপুর, নরসিংদী
এই লেখকের আরও লেখা
কিডস পাতায় বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনী, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা [email protected]। সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না! |